Monday, May 25, 2020

শিল্প সাহিত্য ৪১

রবিবার ১০ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৪ই মে ২০২০



হাসানুজ্জামিল মেহেদী
বৃষ্টি ফিরিয়ে দেয় আমাকে

মূহুর্তগুলোকে সহজ করে দেয় বহুদিনের পুরানো বৃষ্টি,
ভরদুপুরের কালোমেঘ- হঠাৎ বৃষ্টি।
দখিনা বাতাসের তোড়ে বৃষ্টিতে বিছানা ভিজে গেলে
জানালা বন্ধ করে অস্বস্তিতে ভুগি,
দরোজা খুলে দেই।

এই দরোজা আমাকে নিয়ে যায় পুরানো সেই দরোজায়,
দুফোঁটা বৃষ্টিতে খুলে যেতো যার পাল্লা,
আমাকে ছুটিয়ে নিয়ে যেতো অদূরের কোন জলজমিনে,
যেখানে বৃষ্টির ফোঁটায় আকাশ জমিন মিলেমিশে একাকার।

বিস্ময়ে দেখি-
দরোজা বদলে গেছে
মানুষ বদলে গেছে
বৃষ্টিটা কেবল আছে সেই-ই।

প্রচন্ড বৃষ্টি কাঁচের দেয়ালের মতো ভেসে উঠে,
দরোজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো বয়সাক্রান্ত দু'চোখ সে দেয়ালে দেখে চলে-
বোরোকাটা ধানক্ষেত, ডিয়ার ফুটবল,
বাতাসের তোড় কাটিয়ে দৌঁড়ে আসা দূরন্ত বন্ধু,
হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে শিকারমগ্ন কয়েকটি ধলিবক, গোবোরে শালিকের কলরব।
দেখতে থাকে-
বৃষ্টি লাগছে গায়ে, বৃষ্টি লাগছে মুখে,
বহুদূরের থেকে হাফপ্যান্ট পড়ে দৌঁড়ে আসছে শৈশব।

পার্থসারথি ঘোষ
কলমে

বাবলিসরিতা.... বাবলিসরিতা তুমি বইতে থাকো
! বাবলিসরিতা তুমি বইতে থাকো..
বইতে থাকুক জীবনের স্বপ্ন
স্বপ্নের সব রং ভরতে থাকো, শুধু ভরতে থাকো
এই চঞ্চল ঢেউ কখনও মাঝদরিয়ায় যাবে মিশে
এই চুলের কালো রং সময়ের অন্তরে হবে
হাসতে হাসতে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে
শরতের ধারায় বইতে থাকো...
ঝড় নিয়ে আসে জল, আর জলেই জীবন
কখনও ধ্বংসে কখনও তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা মেটাও
সাজতে থাকে মেহেন্দি; হাত ভর্তি রঙের মেলা! দুঃখী জীবনের স্বপ্ন সাজাতে থাকে
! বাবলিসরিতা তুমি বলতেই থাকো
চোখের জলও তো জল এই...
কষ্ট বয়ে যায় জলের ধারায়
বিন্দু বিন্দু ইচ্ছে দিয়ে তৈরী স্বপ্ন
এভাবেই বাবলিসরিতা তুমি বইতে থাকো।

আপন রহমান
আগুন

শুধু একবার-
আর একটি বার;
জ্বালাতে অথবা জ্বলে উঠতে চাই,
একটু আগুন হবে?

বরফশীতল মরুজমিনে
জন্ম নেওয়া আমার শরীর জুড়ে আজ উষ্ণতার তীব্র পিয়াস
তাই হাত পেতেছি, একটু আগুন হবে?

বরফশীতল এই জীবন-জগৎ নিয়ে
আমি বড্ডবেশি নাজেহাল।

তাই বহুবার ;
বহুবার আমি প্রতীকলতার পাহাড় ঠেলে, নতজানু  হয়েছি অগ্নির কাছে
বুকে নিয়ে আগুনিয়া গান।

ততোবারই-আগুন আমাকে করেছে পরিকল্পিত প্রত্যাখান।
বিদ্রæ স্বরে বলেছ;
-সরাও তোমার শীতল কায়া
দায় আমার নয় অন্য কারও
ফিরে যাও পথিক, তুমি ফিরে যাও।

হ্যাঁ; আমি ফিরে যাবো না হয়, জন্মের ঠিকানায়......

তবে বলে যাচ্ছি;
-তুমি জ্বলে ওঠো আগুন
আপন তেজে, আপন অন্তরে, জ্বলে ওঠো মানুষের বিবেকে-মেধায়-মননে।

বড্ডবেশি শীতল হয়ে গেছে
আজকের পৃথিবী!
প্রচণ্ড রকম জমে গেছে সবকিছুই।
পাহাড়ের ড়া থেকে নেমে এসে
সমতল মি-পিচঢালা রাস্তায় এমনকি মানুষের রক্তকণিকায়
স্রোতবাহী নদীর স্রোতধারার মত
নেমে এসেছে বরফ।

তাই এগুলো গলাতে একটু আগুন চাই।
বলছি; একটু আগুন চাই-
আর একবার;
আর একটিবার
জ্বালাতে অথবা জ্বলে উঠতে চাই
একটু আগুন হবে?

অণুগল্প
শেষ কর্তব্য
প্রণবকুমার চক্রবর্তী

     - যাহ্। এবারে কান্না থামা। রান্নার দেরি হয়ে যাচ্ছে। সারাটা জীবন যে তোর ভাত কাপড় দেয়নি, খোঁজ খবর রাখেনি, সে মরলে কী যায় আসে ? মরেছে, আপদ গেছে। এবারে রিস্কি দিদির মতো আর একটা বিয়ে করে জীবনটা নোতুন করে উপভোগ কর। বলিস তো এই হাউজিঙের নেপালী দারোয়ানটার সাথে কথা বলতে ....
     সবিতা রঞ্জাদেবীর বাড়ির কাজের মেয়ে। স্বামী পরিত্যক্তা, স্বল্পভাষী, বছর তিরিশেক বয়স। তুই  তো আমার ছোট মেয়ে রিঙ্কিও থেকেও বয়সে অনেক ছোট স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে আরেকটা বিয়ে করেছে রিঙ্কিই আজ সবিতাকে ওর স্বামী মরার খবরটা টেলিফোনে পেয়ে জানিয়েছে খবরটা শোনা মাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলো
     বাড়ির গিন্নীর কথায় সবিতা আর চুপ কওে থাকতে পারলো না। কান্নাভেজা গলায় বলে উঠলো- ছিঃ ! বৌদি ছিঃ ! হাজার হোক সে আমার বিয়ে করা স্বামী একটা দায়বদ্ধতার অঙ্গিকারে আমরা দুজনে বাঁধা পড়েছিলাম। নাহয়, ওর কর্তব্য করেনি। তাই  বলে, আমি কেন আমার কর্তব্য করবো না ? শেষ কর্তব্যটা আমাকে করতেই হবে। চললাম বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো

বমি
সোমনাথ বেনিয়া

মেয়েটি বাসে করে অফিস যাতায়াত করে। সে বাসের পিছনের দিকে মুখ করা সিটে কিংবা চাকার ঠিক উপরের সিটে বসতে চায় না কারণ তার বমি পায়। এমন কী সিট ফাঁকা পেলেও বসে না। এই বমি করাটা একটি প্রমাণিত সত্য ঘটনা হওয়ায় এখন সে ব্যাগের ভিতর পাতলা প্লাসটিকের ক্যারি ব্যাগ রাখে যাতে বমির সময় কাজে লাগাতে পারে। তবে এই বমি ব্যাপারটি শুধু ওই দু-ধরণের সিটের ক্ষেত্রেই ঘটে। অন্যান্য সিটে অসুবিধা হয় না।
ইদানীং মেয়েটি অতিআশ্চর্যজনক ভাবে বাসে উঠলে ওই দু-ধরণের সিট খুঁজে বসতে চায় এমনকী সিট ভর্তি থাকলেও সে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে এই ভেবে যে ফাঁকা হলে বসবে। অন্যান্য সিটের দিকে সে এখন একবারও ফিরে তাকায় না কারণ বমিটাই তার এখন একমাত্র ভরসা।
        কেন? সে চায় তার বমি হোক। এই বমির ব্যাপারটা সে মনে জানবে বাসের ওই দু-ধরণের সিটের কারণে হচ্ছে অথচ অন্তরে জানবে রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা ওই বমির উপর ভেসে আছে তার গর্ভে বেড়ে ওঠা অবৈধ সন্তানের পিতার মুখ ...

পাঠ অনুভূতি
অসমাপ্ত আত্মজীবনীঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
কামরান সরকার

আমি সাধারণত গল্প উপন্যাস ছাড়া আন্য কোন বই পড়ি না। এই বইটি বাসায় অনেক দিন থেকে পড়ে আছে, আতœজীবনী বিধায় পড়া হয়নি। এইবার লকডাউন এর চক্করে বই নিয়ে বসলাম। প্রথম কিছু পৃষ্ঠা একটু বোরিং লাগলেও আস্তে আস্তে বইটির মধ্যে এমন ভাবে আটকে গেছি যেনো মনে হচ্ছে আমি সব সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে থেকে রাজনীতি দেখছি। বইটি না পড়লে বুঝতাম না যে, রাজনীতিতে মানুষ এতো ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। আমার ধারনা ছিল রাজনীতি টাকা দিয়ে হয়, কিন্তু এই বইটি পড়ে বুঝতে পেরেছি মানুষের ভালোবাসা কাকে বলে। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত লিখা আছে। যত শেষের দিকে যাচ্ছে তত মনে হচ্ছে যেহেতু বইটি অসমাপ্ত সেহেতু বইটি শেষ হবে না। বই শেষে মনে হচ্ছে আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে থেকে বইটি লিখে শেষ করতে পারতে ভালো হত। জানি যে, বাংলাদেশ  মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করেছে তারপরেও মনে হচ্ছে যে বইটিতে সব ঘটনা লিখে রেখে গেলে ভালো লাগতো। বইটির অনেক স্থানে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিজের পরিবারকে ছেড়ে থাকা কতটা কষ্টের তা আপনার না পড়লে বুঝবেন না। সবাইকে বলবো একবার বইটি পড়তে। আপনাদের পাঠ আনন্দময় হোক।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক