পলিয়ার ওয়াহিদ
সফেদা, সরপুটি ও জিহবার কল্যাণ
আপনি সফেদা খাচ্ছেন কিন্তু স্বাদ পাচ্ছেন গাবের। ফলে ধূসর রঙের সঙ্গে হালকা হলুদের মিল পেলেন কোথায়? কিংবা আপনি কি ভুলে গেছেন জিহবার কল্যাণ? এবার আসুন একত্রে বাতাবিলেবুর আঙিনা পেরিয়ে যাই!
আপনার স্বপ্নের ভেতের ভেসে বেড়াচ্ছে একটা সরপুটি। কিন্তু বিছানায় আবিস্কার করলেন লেপ্টে আছে আরশোলা! কে বলছে, আপনার চুমুর কোনো ঠিকানা সঠিক নয়!
Sapodilla, olive bard and tongue welfare
You are eating Sapodilla, but getting test of
mangosteen. Here where did you find light yellow with gray color? Or have you
forgotten the welfare of the tongue? Now let's cross the pomelo yard together.
An olive bard is floating inside your dream. But you
discovered a cockroach is crushed on your bed! Who says, address of your kisses
is incorrect!
শান্তম
আকাঙ্খা
হারিয়ে গেছে তোর খুঁজে পাওয়া
আর কুড়িয়ে নিতে হয়েছে আমাকে
তোর ঘর ছিল না তাই এত ঘর ঘর
নেই তোর ঘর । নেই ঘর আমার
খড়কুটো খসে পড়েছে । খসে পড়ছে
আমার ঠোঁট থেকে
মীর সাহাবুদ্দীন
প্রতিশ্রæতি
ইচ্ছে থাকলে বাস ট্রাক গাড়ি ছাড়া আসা যায়
এখানে স্বপ্নের কথা বলছিনা
তোমার চলে যাবার আবাস পেয়ে বলেছিলাম
শুধু দশ দিক নয় দশটা পুরুষ দেখে এসো..
পায়ের পা দিলে তোমার শূন্যতা বেড়ে যায়
অথচ পৃথিবীও জেনে গেছে একদিন পুরুষের আকাল হবে।
অভাবের দিনে তুমি থাকলেও আমি থাকছিনা
ক্ষুদ্র সময় পর তোমাকে আসতেই হবে
সেসব প্রতিশ্রæতির কথা সাজিয়ে রোপণ করছি
অণুগল্প
কালিচরণ এর দেশ
অতনু রায়
প্রতিদিন একবার পাহাড় এর উপর আসা চাই কালির। এখানেই ওর নিজের রাজত্ব। পাথর দিয়ে নিজের মতো সিংহাসনও তৈরি করেছে। পাহাড়ের এই জায়গাটাতে কালি রাজা। কালিচরণ সোরেন বাজারপুর গ্রামের এক আদিবাসী শিশু। গ্রামের বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র । কয়লাখনির দেশের ছোট্ট একটা গ্রাম বাজারপুর। মাঝখানে রয়েছে জাতীয় সড়ক আর দুই পাশে বিরাট বিরাট খাদ আর পাহাড়। জাতীয় সড়কের একপাশে ছোট্ট গ্রাম বাজারপুর।
আজকাল কালি’র মন ভালো নেই। সে শুনেছে তাদের গ্রামটাও নাকি উঠে যাবে। আশেপাশের দশ-বারোটি গ্রাম ইতিমধ্যেই কয়লাখনির পেটে চলে গেছে। এখন যেখানে পাহাড় আর খাদ দেখছি। একসময় সেখানে মানুষ থাকতো। যদিও কতৃপক্ষ প্রতিটি গ্রামের জন্য বিকল্প জায়গা দিয়েছে। চাকরি দিয়েছে। সেই কয়লাখনি এখন এগিয়ে আসছে কালিচরণ এর বাজারপুরের দিকে। কালি টাকা পয়সা বোঝে না। ওর মন খারাপ ওর নিজের দেশ এই পাহাড়ের এই জায়গাটাকে নিয়ে । এখানেই তো ওর সব আনন্দ লুকিয়ে।
যদিও কালিচরণ এর বাড়িতে খুশির আমেজ। গরীব মানুষ গুলো দুটো পয়সার মুখ দেখবে। তারা কেউই কালির মনের দুঃখ টা অনুভব করতে পারে না। শিশু মন একরাশ মন খারাপ নিয়ে বসে থাকে পাথরের সিংহাসনে। গ্রামের বিদ্যালয়ও নতুন জায়গাতে তৈরী হচ্ছে। কালির বন্ধুরাও সব নতুন গ্রামে চলে যাবে। তবে সবার জন্য যে একই গ্রামে জায়গা হবে তা নয়। অনেকেই জায়গার বদলে টাকা নিয়ে শহরে বাড়ি তৈরি করবে। তবে কালিচরণদের মতো গরীবরা নতুন গ্রামেই থাকবে।
কালির প্রিয় বন্ধু রাজেশরা শহরে চলে যাবে। সেখানে রাজেশ শহরের নতুন বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। রাজেশ মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ের ছুটির পর কালির সাথে পাহাড় এর উপর আসতো। খেজুর, কুল, আম , পেয়ারা কত কিছুর আয়োজন করেছে দুজন মিলে। আর মাত্র একমাস পর এই সবকিছু ইতিহাস হয়ে যাবে। একটি শিশুর রাজত্ব বন্ধুত্ব সব কিছু পরে থাকবে কয়লাখনির পরিত্যক্ত খাদানের মধ্যে। কালিচরণ নিজের দেশ হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যাবে . . .
দাউদ হায়দারের কবিতা ও তার কাল
জারিফ এ আলম
বাংলা কবিতা তার বয়সের দিক থেকে হাজার বছর অতিক্রম করেছে। আর এই অতিক্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলা কবিতার একটি উজ্জ্বলতম দিক পরিদৃষ্ট হয়। ১৯৪৭ সালের বিভাগত্তোর সময়ে পূর্ব-বাংলায় সাহিত্যচর্চার বিষয়, চিন্তা, প্রকরণ নতুন রূপ লাভ করে। এ সময় আমরা অনেক কবি-সাহিত্যিককে নতুন ভাবনাচিন্তা নিয়ে সাহিত্যচর্চা করতে দেখি। সেই সময়ে আহসান হাবীবের(১৯১৭-১৯৮৫) ‘রাত্রিশেষ’(১৯৪৭) কবিতাগ্রন্থের মধ্য দিয়ে নতুন সম্ভাবনার বীজ বপন হতে দেখি। এছাড়া আবুল হোসেন এবং ফররুখ আহমদও তাদের স্বকীয়তা নিয়ে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেন। তাই ১৯৪৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাহিত্যের স্বরূপ বিবেচনা করে বাংলাদেশের সাহিত্যের কাল গণনা করা হয়। ৫০ এবং ৬০ দশকে বাংলা সাহিত্যে এক ঝাঁক কবি-সাহিত্যিকের আবির্ভাব লক্ষ্য করা যায়। শামসুর রাহমান (১৯২৯-২০০৬), আল মাহমুদ (১৯৩৬-২০১৯), হাসান হাফিজুর রহমান ( ১৯৩২-১৯৮৩), সৈয়দ শামসুল হক (১৯৩৫-২০১৬), রফিক আজাদ (১৯৪৩-২০১৬), সানাউল হক (১৯২৪-১৯৯৩) আরো উল্লেখযোগ্য কবিবৃন্দ বাংলা সাহিত্যকে অনেক সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। এরপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ বছর। গল্প উপন্যাসেও হয়েছে অনেক বাঁক বদল।
দাউদ হায়দার (১৯৫২) বাংলাদেশের একজন সমাজ সচেতন এবং প্রতিবাদী কবি। তাঁর কবিতার বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বিভিন্ন বৈচিত্র্য চোখে পড়ে। ব্যক্তিগত চিন্তা, প্রেম, নৈরাশ্যবোধ, মিথ-পুরাণের ব্যবহার ইত্যাদিকে প্রধান বিষয় হিশেবে তার কবিতায় দেখতে পাওয়া যায়। তার কবিতায় ক্ষয়ে যাওয়া সমাজ কাঠামোর নানা রকম অসঙ্গতি থাকলেও তা তাঁর উপস্থপনার শৈলীতে নিজস্বতা অক্ষুণœ থেকেছে। এখানে কবির শ্রম ও মেধার সমন্বয় ঘটেছে সে-কথা বলাই যায়। বাংলা সাহিত্যে কবি দাউদ হায়দারের আবির্ভাব ‘জন্ম আমার আজন্ম পাপ (১৯৭৩)’ কবিতাগ্রন্থটির মধ্য দিয়ে। তিনি মূলত সত্তরের দশকের কবি হিশেবে পরিচিত। ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি; সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার কবিতা ‘কালো সূর্যের কলো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায়’। এই কবিতাটি তার জীবনের জন্য দুর্নিবার ঝড় আর কালো অমাবস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যার কারণে তৎকালীন সময়ে মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েন। আর এরই রেশ ধরে অবধারিতভাবে নির্বাসিত হন। দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তখন তার বয়স মাত্র বাইশ।
দাউদ হায়দার তার দেখা সমাজ আর যাপন করা সময়কে কবিতায় তুলে ধরেছেন নির্মোহভাবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তিনি দেশের ভঙ্গুর অবস্থা, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির বেহাল দশা ইত্যাদিকে তুলে ধরেছেন তার কবিতায়। আর সময়কে তুলে ধরাই যে প্রকৃত কবি-সাহিত্যেকের প্রধান লক্ষ্য সেটা অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে করেছেন কবি দাউদ হায়দার। তিনি তার নির্বাসন-পূর্ববর্তী সময়ে লিখেছেন একটিমাত্র কবিতাগ্রন্থ ‘জন্ম আমার আজন্ম পাপ’। এই কবিতাগ্রন্থটিতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের সমাজচিত্র দৃশ্যমান; যখন কিছু সুবিধাবাদী এবং স্বার্থান্বেষী মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে সচেষ্ট ছিলো। আর সেই সময়ে অনেক ভীতি আর বিরূপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এদেশের মানুষকে। যার কারণে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছিলো। আর এতে করে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ হয়ে পড়েছিল অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিক‚ল। সে বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন কবি দাউদ হায়দার। আর তাই তিনি বলেনÑ
হে দিন, হে রাত্রি /আমাদের দিনগুলি ঘোর ঘূর্ণি-লাগা চৈত্রের মতো কঠিন;
আর, রাত্রি / উদ্ধত বাঘের মত ভয়াল হিংস্র, / রাত্রির জঠর জুড়ে প্রেতের সঞ্চরণ।
(জন্মই আমার আজন্ম পাপ: আমাদের দিনগুলি)
কত্রুর দেখা নেই; অথচ আমারি শত্রু আমি-/ জ্বলন্ত যৌবনে ছুটি ফ্যামিলি প্ল্যানিং কোথায়
কোথায় ডাক্তার কমপাউন্ডার? /যারা আমার অপারেশ করবে?/ পুরুষত্ব বিলিয়ে ভাবি কুড়ি টাকায় একসের চাল ও একদিনের অন্যান্য/সামান্য দ্রব্যাদি মিলবে তো?
(জন্মই আমার আজন্ম পাপ: জন্মই আমার আজন্ম পাপ)
কবিতা দুটিতে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি লেখকের সচেতনমূলক মানসিকতার। যা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থার অধোগতির কথাই মনে করিয়ে দেয়। কবি নির্বাসন-পূর্ববর্তী সেই সময়ের স্বাধীন বাংলাদেশকে যেভাবে দেখেছেন, উপলব্ধি
করেছেন সে-সব দৃশ্যেরই বয়ান করেছেন তার কবিতায়। যার মাধ্যমে তিনি আমাদের সেই
সময় সম্পর্কে একটি টোটাল ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছেন।
দাউদ হায়দারের কবিজীবনকে মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো তার নিজদেশে থাকাকালীন জীবন; অপরটি হলো, নির্বাসিত জীবন(প্রবাস জীবন)। যখন তিনি নিজদেশে অবস্থান করেছেন তখন তার দেখা সমাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে কবিতা লিখেছেন। আর কবিতাও হয়ে উঠেছে বাস্তবানুগ। তার নির্বাসিত জীবনের (১৯৭৪) পর থেকে কবিতার অনেক পরিবর্তন লক্ষণীয়, সেটা বিষয় কিংবা কবিতার কাঠামো যার কথাই বলি না কেনো। নির্বাসনকালীন সময়ে কবির দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ ‘সম্পন্ন মানুষ নই (১৯৭৫)’। এই কবিতাপ্রন্থে স্বদেশের প্রতি যে হাহাকার তা খুব স্পষ্ট। স্বদেশকে ছেড়ে যাওয়া মানে তো পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র আর প্রিয় নানা বিষয়ের সঙ্গে বাহ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাওয়া। কিন্তু আত্মিক বন্ধন দৃঢ় করে আগের তুলনায় অনেক বেশি। সে-সব বিষয়-আশয় কবির কবিতায় প্রতিভাত হয়েছে। বর্তমানে ফরধংঢ়ড়ৎধ (ডায়াসপোরা) সাহিত্য নিয়ে আলোচনার বিষয়টি লক্ষ্য করার মতো। ডায়াসপোরা অর্থ করলে দাঁড়ায়, বীজের ছড়িয়ে পড়া। স্বদেশ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে কিংবা স্বেচ্ছায় যদি কেউ স্থায়ীভাবে অন্যদেশে বসবাস করে তাকে ডায়াসপোরিক মানুষ বলে আর তার রচিত সাহিত্যকে ডায়াসপোরা সাহিত্য বলে। এক্ষেত্রে, আইজাক সিঙ্গার, সালনান রুশদি, ভি এস নাইপল এদের নাম করতে পারি। আবার যাদের জন্ম এ বাংলাতে কিন্তু জীবন কাটান অন্য দেশে গিয়ে তাদের মধ্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, শহীদ কাদরী, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত উল্লেখযোগ্য।
কবি দাউদ হায়দারও একজন ডায়াসপোরিক সাহিত্যিক। এ কারণে তার কবিতা সে-রকম উপলব্ধি দেখতে পাওয়া যায়। তার চিন্তায় চেতনায় স্বদেশের কথাই বারবার উঠে এসেছে। তিনি শেকড় সন্ধানী তাই তার কবিতাও হয়েছে মূলানুগ। আর এ কারণেই বলেন,
আমি যাই, নৌকো ভর্তি যাত্রীর সঙ্গে আজ আমার রাত্রী যাপন/ খোলা আকাশের নিচে গঞ্জে গঞ্জে-
আমি যাই, যাবার আগে শুধু দেখে যাই/এদেশের মানুষের মুখে কতখানি হাসির মহিমা লেগে আছে!
(সম্পন্ন মানুষ নই: যাই)
রাখিতে মহৎ আশা সুন্দর ভালোবাসা/ জ্যোৎস্নায় শুদ্ধ পবনে গান ধরি-/ সুবর্ণ পাহাড়ে যাই-/ জননীর হাতছানি বড় মায়ার/তবু নৈসঙ্গবোধ কোথাও পারি না যেতে/ -বিচ্ছিন্ন সবকিছু আমার থেকে!
(সম্পন্ন মানুষ নই: এ নয় রক্তস্নাত বিজয় বৈজয়ন্তী সখী)
‘সম্পন্ন মানুষ নই’ কবিতাগ্রন্থটি যেহেতু নির্বাসন পরবর্তী সময়ে রচনা আর সঙ্গত কারণে লেখকের মনে বিচ্ছিন্নতাবোধের বিষয়ই সর্বোপরি পরিলক্ষিত। ‘আমি ভালো আছি, তুমি? (১৯৭৬)’ এই কবিতাগ্রন্থটিও দেশের প্রতি মমত্ববোধেরই বহিঃপ্রকাশ যা কবির একই বোধ আর ভাবনাচিন্তার রিপিটিশন বলা যেতে পারে। যেখানে বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে আর নস্টালজিয়া কাজ করেছে দেশের প্রতি আর সেখানকার মানুষের প্রতি। এখানে তার নিজদেশে ফেরার প্রবল আকুতিও লক্ষ্য করার মতো। আর সেসব তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে এভাবে,
হয়তো আবার বাড়ি ফিরে আসব, ভেবেছিলে। কিন্তু আমার/ ফেরা হয় না। যখন রাত্রি অতিক্রান্ত, তুমি হয়তো/ “এই আসবে আসবে করে” দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলে!/ তোমার অস্থির চিত্তে তখন নানা ঘটনা ও দুর্ঘটনার সম্ভার!
কবি দাউদ হায়দারের কবিতার বিষয় আর প্রকরণের প্রতি যেমন সজাগ তেমনি কবিতায় ছন্দের সার্থক ব্যবহারও করেছেন। তার কবিতায় প্রেম ঈর্ষার বিষয় নয়, নিজের দুঃখকে জয় করবার মাধ্যমে বরং প্রিয় মানুষটির সুখের কথাই ভেবেছেন। এবং তা কবিতায় আলাদা ব্যঞ্জনাও তৈরি করেছে। তিনি বলেন,
যে আমাকে দুঃখ দিল সে যেন আজ সুখেই থাকে’-/ আমার বাঁধন-ছেঁড়া ভালোবাসা বেঁধেছিল দুর্বিপাকে/ আমি ছিলাম স্বেচ্ছাচারী, আউল বাউল তীক্ষèধার/ এক নিমিষে বাঁধলো আমায় কী জানি কী দুঃখ তার।
যে আমাকে দুঃখ দিলো সে যেন আজ সুখেই থাকে। (এই শাওনে পরবাসে: যে আমাকে) কিংবা
সমস্ত দুঃখের মধ্যে সমস্ত শিল্পের মধ্যে পুনরায় যখন প্লাবিত ঘর/ বৈতরণী পার হয়ে চলে যাও অনন্তের দিকে; সমস্ত নীলিমা জুড়ে/ সমস্ত পৃথিবী ও বনাঞ্চল জুড়ে/ তোমার শুভ্রতা তোমার শিল্প তোমার বিন্যাস / অনন্ত অরুন্ধতি, বহুদিন পড়ে আছি অন্ধকারে। (আমি পুড়ছি জলে ও আগুনে: অনন্ত অরুন্ধতী তুমি, অন্ধকারে)
কবিতা দুটি যে কবির পুষে রাখা দুঃখের ক্যানভাস তা স্পষ্ট। আর এই স্পষ্টতা নিয়ে কখনো তিনি প্রতিবাদী, কখনো দুঃখে কাতর, কখনো প্রেমে আকুল। এই সাবলীলতাই মূলত কবি দাউদ হায়দারকে অন্য অনেকের থেকে পৃথক করে তুলেছে। তার কবিতা মানুষকে স্বপ্ন দেখায়। তার কবিতা সংঘাতহীন, বৈষম্যহীন এক সুন্দর পৃথিবীর কথা বলে। মানসলোকে সত্য ও সুন্দরের দৃশ্যপট আঁকতে প্রেরণা জোগায়। কবির মতো আমাদের মনে নানা রকম প্রশ্ন উঁকি দেয়। প্রাসঙ্গিক নানা কথা, ভাবায় প্রতিদিন। যার কারণে কবির সচকিত উচ্চারণ,
রক্তাপ্লুত দেশ, বারবার স্বাধীনতা চাই-/ মানুষের স্বাধীনতা চাইÑ/ কেন এত রাবণের ভিড়/ কেন এত অসুরের ভিড়/ কেন দেশব্যাপী পলাশীর উত্থান?/ (ধূসর গোধূলি ধূলিময়: ঝরাবে নবীন রক্ত আ-মরি বাংলাদেশের?)
কবি দাউদ হায়দার যিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপোষকামী নন। সকল প্রকার নৈরাজ্যের বিপক্ষে যার অবস্থান। এ কারণে তার লেখা হয়ে ওঠে জাগ্রত মনের কথকতা। তিনি তার কবিতায় সত্য আর প্রতিবাদী চেতনার দিক থেকে মেরুদÐ সোজা রাখার কথাই বলেছেন বারবার। এ কারণেই তার কবিতা বর্তমান সময়ে এসেও অনেক প্রাসঙ্গিক।
No comments:
Post a Comment