শনিবার ১৯ শে বৈশাখ ১৪২৭, ২রা মে ২০২০
কবিতা
চন্দন মিত্র
ধাইরা ফুলের মতো
ধাইরা ফুলের মতো
প্রস্ফুটিত হয়ে উঠি বসন্তের আগে
মগডালে থাকি যার
তার কেউ নই বলে মনে দ্ব›দ্ব জাগে
আগুনের ফুল যেন
এমন ঝিলিক মারি ধেন্ধে যায় চোখ
পথিক তথাপি দ্যাখে
আড়চোখে বাধ্য থাকে অসামান্য লোক।
আমাকে যতন করে
বটের গহীন ছায়া অমল বাতাস
আমাকে তাপিত রাখে
সহজিয়া সূর্যের তরতাজা শ্বাস
ধুলোট খেলার ঊর্ধ্বে
আমার এ থাকা ভালোবাসে লোকজন
আমিও তাদের জন্য
রাখি শুভ ইশারার স্নিগ্ধ আয়োজন।
মোকলেছুর রহমান
ধ্রুপদী জীবন
অনন্ত কান্না যেন ঝর্ণাধারা
অন্তর্নিহিত কষ্টগুলি পুঞ্জিভ‚ত
নীল পাহাড়,
আকাক্সক্ষাগুলি দৃঢ় সাহসী
উদার আকাশ।
আমার বিস্ফোরণ তীক্ষ্ণ সুচালো তীর
বিদ্ধ করে, চৌচির করে, ভেদ করে
ক্ষত-বিক্ষত করে, ঢেউ খেলে।
অভিজ্ঞতাগুলি ধ্রুপদী জীবন
অর্জনগুলি পরম সুগন্ধ।
আমার রঙ বেনিআসহকলা
চোখজোড়া রক্তবর্ণ
সরলতাসমূহ অবিচ্ছিন্ন জল
জীবনের গাছ-পাথর নেই
বাঁচি তুমুলভাবে প্রচণ্ডভাবে।
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: জঁ ককতো
ঢেউয়ের উপর
ডোরাকাটা পোশাকের ছেলেগুলো
প্ররোহিত করে ঢেউ---এটা কি ঝড়?
সব কিছুই ঠান্ডা
স্নানের মেয়েরা পরামর্শ করে আকাশের আয়নায়
দুজনে আনন্দনৃত্য, পান্না বহন
গোলাপের ঝাড় যেমন করেচারদিকে ছড়িযে যায়
আরেকবার রাধাচক্র-
সমুদ্রের তলদেশে বসন্ত
অণুগল্প
লকডাউন দৃশ্যকল্প
দূর্বা চক্রবর্তী
বাজার থেকে বহুদিন পর পাওয়া গেছে একখানা নধর মুরগি। আমি আর মা আলোচনায় রত.. কীভাবে ওটাকে বেশ তরিবত করে রাঁধা যায়। একটানা নিরামিষ খেতে খেতে মুখ একেবারে পচে গিয়েছিল।
এদিকে একঘেয়ে সুরে কেউ একটা ডেকেই চলেছে তখন থেকে, ‘মাসি, ও মাসি..’ ‘কোন্ বোনপো আবার দরজায় দাঁড়িয়ে কে জানে’------- আমি ফোঁড়ন কাটি। পাশের বাড়ির ঋতা বৌদি দেখি চাল দিচ্ছে বারো তেরো বছরের ছেলেটিকে।
পরনে শতচ্ছিন্ন একটা শার্ট, ট্রাউজার্স তিন চার জায়গায় ফেটে গেছে, কাঁধে একটা বিবর্ণ ঝোলা, মুখ শুকনো, চোখে পিঁচুটি, চুল উসকো খুসকো। ছেলেটি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বৌদির সুডৌল হাতে ধরা চালের বাটির দিকে। একটু নাক টানে, বাঁ হাতের উলটো পিঠে নাকের সর্দি মুছে নেয়, এবার কাঁধের ঝোলাখানা মেলে ধরে। যতক্ষণ চাল বাটি থেকে ঝরে, তার শেষ দানাটুকুর পড়ে যাওয়াও সে একদৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখে।
আমি জানালায় উঁকি দিয়ে দেখতে দেখতে প্রমোদ গুনি---- এই রে এবার আমাদের বাড়ির পালা। এমনিতেই গতকাল রাতে আড্ডা দিয়ে আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে, দেড়টা বাজতে চলল, আমার মাংস কষাতে দেরি হয়ে যাবে। প্রচণ্ড বিরক্ত মুখে বাইরে যাই আমি। ওই ছেলের আমার কাছে আর কী চাওয়ার থাকতে পারে! সে তো কারো খোঁজে আমার বাড়ি আসেনি। তার দরকার ছিল না আমাদের বাড়ির কারো কাছে কোন দরকারে আসার।
তবু আমি তাকে ঝামরে উঠি, ‘কী হে? কী চাই এখানে?’ ছেলেটি আমার মারমুখী মূর্তি দেখে চমকে ওঠে। ভয়ে ভয়ে বলে, ‘গত একসপ্তা ধরে কিছু খাইনি দিদি। ঘরে আমার একটা দানাও নেই।’ এমন সময় ঘরের ভেতর থেকে শেফালি
এসে জিজ্ঞেস করে ‘দিদি, মাংসে টক দৈ দেবে নাকি ভিনিগার?’ আমার ভুরুতে বিরক্তির ভাঁজ বাড়ে। আমি শেফালিকে বলি, ‘তুমি ভেতরে যাও। বলছি।’ আড়চোখে ছেলেটির মুখে চেয়ে বুঝতে পারি ইতিমধ্যেই তার কানে ‘মাংস’ শব্দটি গেছে। ছেলেটি জুলজুল চোখে একবার আমার একবার শেফালির মুখের দিকে তাকায়। আমি অস্বস্তিতে পড়ি। এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিছু না দিয়ে পারা যায়! ঘরে ফিরে আসার পর মা বলেন, ‘শুনেছি দেশভাগের পর নাকি উদ্বাস্তুরা এভাবে দোরে দোরে দাঁড়িয়ে ভাতের ফ্যান চাইত। এই লকডাউনের ফলে দেশের এক বিশাল অংশের মানুষ প্রায় না খেয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। এখন হয়তো এভাবে আমরা প্রতিদিনই দেখতে থাকব।’ আমি বিরক্ত হয়ে বলি, ‘রিলিফ তো প্রতিদিনই দেওয়া হচ্ছে শুনি এখানে ওখানে। ফালতু আসে নাকি এরা কে জানে!’
শেফালি তখন কাঁচা মাংসের টুকরো জল থেকে চিপে চিপে গামলায় তুলে রাখছে। বাবা বললেন, ‘দিয়ে দে দশ টাকা ছেলেটাকে।’ আমি খুচরো নেই বলে শেফালির হাত দিয়ে বাইরে পাঁচ টাকা পাঠালাম। ততক্ষণে টক দৈ মাংস জারিত করতে শুরু করেছে।
বুক রিভিউ
সফিক জামান এর ‘মাসাইমারা ওয়াইল্ড সাফারি’
ইমা নুর
যারা প্রকৃতিপ্রেমী, বন্যপ্রাণী প্রেমী এবং ভ্রমনকাহিনী খুব পছন্দ করেন তাদের জন্য মাসাইমারা ওয়াইল্ড সাফারি দুর্দান্ত একটি বই।
কেনিয়ার মাসাইমারা ওয়াইল্ডদের নিয়ে লেখা চমৎকার একটি ভ্রমনকাহিনী। এই বইটিতে লেখক তার বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার কথা চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
লেখক খুব কাছ থেকে সেখানকার বন্যপ্রাণীদের বিচরণ করতে দেখেছেন, দেখেছেন তাদের হিংস্রতা। দেখেছেন সিংহির শিকার ধরাশায়ী করার জন্য প্রানান্তকর পরিশ্রম ও ক্ষিপ্রতা এবং কোন রকম পরিশ্রম ছাড়াই পশুরাজ সিংহের খাবার গ্রহণের অগ্রাধিকার। আর দেখেছেন হিংস্র হায়েনার সিংহদের খাবার চুরি করার অভিনব পদ্ধতি।
আফ্রিকার মাসাইমারার ওয়াইল্ডবিস্টদের প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রাম খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। মাসাইমারার গ্রেট মাইগ্রেশনের সময় দুর্গম খোরস্রোতা মারা নদী পারাপারের সময় বন্যপ্রাণীরা কিভাবে জলে ওৎ পেতে থাকা হিংস্র কুমিরের খাবারে পরিণত হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনা প্রবাহগুলো আপনারা জানতে পারবেন।
লেখক হট ইয়ার বেলুনে চড়ার নিজের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথাও সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেখানে তিনি কয়েক হাজার ফুট উপর থেকে মাসাইমারার বিস্তীর্ণ বিশাল তৃনভূমি, হাজার হাজার প্রাণীদের বিচরণ এবং সাভানার অন্যরকম একটা বিস্ময়কর জগৎ স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
শুধু ওয়াইল্ড সাফারি নিয়েই নয় সমগ্র কেনিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মাসাই জনগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবনাচরণ খুব দারুনভাবে বর্ণিত হয়েছে।আপনি যখন বইটি পড়বেন তখন এক দারুন ঘোরলাগা কাজ করবে। আপনার কাছে মনে হবে আপনিও কেনিয়ার মাসাইমারার দুর্গম, গা ছমছমে পরিবেশে হিংস্র জন্তুদের সাথে বিচরণ করছেন। এই বুঝি আপনিও যেকোন সময় তাদের খাবারে পরিনত হবেন। আমার সাথে তা-ই হয়েছিলো।
এক কথায় বইটি অসাধারণ লেগেছে! আপনারা যারা এখনো বইটি পড়েননি তারা দেরি না করে বইটি সংগ্রহ করুন এবং পড়ুন। আশাকরি আপনাদেরও অনেক ভাল লাগবে।
No comments:
Post a Comment