Monday, May 25, 2020

শিল্প সাহিত্য ৪০

শনিবার ৯ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৩ই মে ২০২০



বঙ্কিম কুমার বর্মন
একটি ভয়

একটি ভয় জানালা মেখে পারফিউমের তরী হয়ে যায়
যদিও সে কোনোদিনই দিক নির্ণয়ে পারদর্শী  হতে পারেনি

সেইসব গুল্ম বিষণœতার যাবতীয় ক্রিয়াকলাপ
তুমুল সহজ ফর্মুলার বন্ধন গিলে
অথবা নির্বাসনের নরম আঁচে
কোনো প্রতিক পায়নি ফুটপাতের গিঁটে

কয়েকটা মেহেন্দিলাগা স্পর্শ ভান করে চায়ের ঘ্রাণে
ভেতরে ভেতরে সাঁতার দেয় কুসুমিত প্রজাপতি শ্রাবণ
আর নিজেকে শিখবে বলে রোজ
সম্পর্কের খাতায় নিজেকে গোল গোল শূন্যে বসায়।

গোপেশ রায়
আত্মপক্ষ

আত্মপক্ষ সর্মথনের কথা বলেছিলে তুমি,
একা আমি বসে আছি ভাবনার সমুদ্র তীরে।
বড় নির্জন সময় কথা দিয়েছিলে তাই অপেক্ষার ঢেউ গুনি।
তুমি আসনি। কিংবা এসেছিলে যেমনটি চলেও এসেছ তেমনি করেই।
পিছন ফিরে দেখিনি কোনদিন।
আমি আমার মধ্যেই জন্ম নিচ্ছি প্রতিদিন প্রতিক্ষণ।
অবশেষে আমি খুঁজে বেড়াই আমাকেই। আমার শরীর নিয়ে
সুদর্শনারা নাকি ভাবিত ছিলো একদিন। পর্যন্ত। ভুলে গেছে সব।
আসন্ন সময়ের যাত্রাপথে ধূলোবালি রং তুলি সব একাকার।
হাত পেতে বসেছি, ঢেউজল দিয়ে যায় কিছু সমুদ্রফেনা।
কোজাগরির রাতে তোমাকে নিয়ে খেলব খেলা পড়ব।
জাগরণের পাঁচালি। তুমিই আমার সহায় সম্বল।
অন্যকিছু যাতনার কথা।

সিয়ামুল হায়াত সৈকত
জল

নিজেকে নিয়ে কতিপয় বেঁচাকেনা
নিজেকে জানি অন্যের নামে।
যেমন: ধোঁয়াশা-নৈকট্য ঘ্রাণ পায় ঘুমের
এতো দিনের হাঁটাচলা
দোতারা চোখ
কেমন গান শুনিয়ে যায়-

তুমি একজন। দ্বৈতশাসন আমি মানিনা।
যেখানে তোলা থাকে গোপন অভিমান
এমন কোরে, নির্মাণ করি...
উজাড় অপচয়ের মহার্ঘ্য উৎসবে

অরুন সরকার
একটি আঙুল বিপরীত প্রশ্ন

ভিড়ের মধ্যে বিস্তারিত অরণ্য।
প্রজাপতির ডানার ঘ্রাণে ফিরে আসে ঘুম। পিঝে বুকে কেবল স্মৃতিরা জেগে থাকে।
অগোছালো একটি দুপুর শুধু
দিতে পারে ছায়াহীন অস্থির শরীর।
কাঁচের øাসে তৃষ্ণা। ঘন্টা বেজে চলেছেÑ

শীতের ভোরে বিলম্বিত স্রোত
মুছে দেয় অগভীর স্নান।
ভালোবেসে তাকে ধরে রাখি উথল রক্তের ভিতর।
হাতে রক্ত লেগে আছে। ষাট বছর
এত ধুচ্ছি তবুও হাত লাল হয়ে আছে।
হাতে রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক যন্ত্রণার।
একটি আঙুল রেখেছি
চির প্রশ্নের বিপরীতে।

কাশীনাথ মালিক
গোধূলি চোখ

নিয়নবাতি নেভানো শহুরে
রাতে আলো ছায়ায় শেয়ালের রাস্তা কাটে।
ছন্দহীন পিচরাস্তায় মোড়া নিরাপত্তা
লাল সবুজের সংকেত আজ মনমরা।
ফুটপাতের ঝুপড়ি ফাঁকে ফাঁকে ক্ষুধার্ত চাঁদ
মুখে অমাবস্যার অন্ধকার, গলির ভেতর।
ফুসফুসের সংক্রামক শহরের মাটি
ক্যাকটাসের কাঁটা তারের বেড়ায় মরুভমি।
মুখোশে মুখ গুঁজে জীবন মুখী গানঘুমন্ত শিশুর মতো অজান্তে কাঁদে হাসে।
কেউ বাঁচার অভিলাষে ফেন ভাতে
কেউ ফেন ভাতের আশায় মৃত্যুর কাছাকাছি।
কোন অভিশাপের আলো নিয়ে
সূর্য উঠছে অসুস্থ পৃথিবীর বুকে।
উষ্ণ চাওয়া পাওয়ার মাঝে দাড়ি, কমা সেমিকোলন
বিস্ময় সূচক দাগকেটে অসহায় দৃষ্টিতে সূর্য ডোবে
নিমতলার শ্মশানে,
আত্মীয়তা চেয়ে থাকে অবেলা গোধূলি চোখে।

ধারাবাহিক(শেষ অংশ)
দ্য সাইন্টিফিক লাভ
রঞ্জনা বিশ্বাস

টিকিয়ে রাখার আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়ে। এক জন শক্ত সমর্থ পুরুষের জিন যেমন শক্তিশালী নিরোগ হবে তেমনি সেই পুরুষটি আপদ কালে তার সন্তান তাকে আগলে রাখতেও সক্ষম হবে। কিন্তু মানব সমাজে কি এরকম কিছু আছে? না- নেই। মানুষের পেখম নেই , শিং নেই, কেশর নেই। তার আছে কণ্ঠ সে তার সুরেলা কণ্ঠ ছেড়ে  গায় - মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী/ দেবো খোঁপায় তারার ফুল। আদিম সমাজে নিজেকে সাজানোর জন্য শিকারী পুরুষেরা গলায় পরতো পশুর হাড়ের অর্ণামেন্টস। এটা দিয়ে সে প্রমাণ করতো যে সে মস্ত শিকারী। কালে কালে দামী বাড়ি গাড়ী হয়ে ওঠে পুরুষের স্ট্যাটাস নির্ধারণের বিষয়। তবে সম্পদ বলতে তার টাকা পয়সা, গাড়ি, বাড়ি- কেবল বোঝায় না, তার বুদ্ধিমত্তা, সাহস, দৈহিক সৌন্দর্য, সততা ইত্যাদিও বোঝায়। তবে এসবের কোনো মূল্যই থাকবে না যদি কিনা তা সঙ্গীর জন্য অপচয় না করে। আর একারণে একজন প্রেমিক সর্বোচ্চ ত্যাগ করে তার প্রেমিকার জন্য যে হীরে বা সোনার অর্নামেন্ট উপহার হিসেবে বাছাই করে সেই উপহার হয় প্রেয়সীর কাছে অমূল্য কিছু।  উপহার যে হীরে বা সোনার হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, সঙ্গীর পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে উপহার নির্বাচন করতে পারে একজন পুরুষ। তবে একথা ঠিক যে, মেয়েরা পুরুষের কাছ থেকে উপহার পেতে যে পছন্দ করে তা তার যৌনতার নির্বাচনের অংশ লোভ বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।  কিন্তু উপহার দেবার সময় লক্ষ রাখতে হবে যে সেই উপহারের বাড়তি কোনো উপযোগিতা না থাকে অর্থাৎ চাইলেই  যেন সহজে সেটা ব্যবহার করা না যায়। তবে পুরুষকে মনে রাখতে হবে  ভুল করেও সঙ্গীর স্মৃুতি শক্তিকে আন্ডাএস্টিমেট করা যাবে না। প্রতিশ্রæতি দিলে তা রক্ষা করুন গবেষকগণ দেখেছেন নারী পুরুষের মধ্যে কিছু বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে তাদের উদ্দিপনা কাজ করে দৃশ্যমান বিষয় গুলোর প্রভাবে অর্থাৎ কোনো কিছু দেখলে তাদের মস্তিষ্ক উদ্দিপ্ত হয়। এটা তাদের বিবর্তণীয় জ্ঞান। লক্ষ বছর ধরে আদিম মানুষ এভাবে নারীদের দৃশ্যমান দক্ষতার মূল্যয়ণ করেছে। কিন্তু মেয়েদের বেলায় তার মূল্যায়ণ এক বারেই ভিন্ন। মানুষের মস্তিষ্কের প্রধান রিমোট কন্ট্রোল হলো প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স। এটা প্রধান বা গুরু মস্তিষ্কের সামনে বা অগ্যভাগে থাকে। এই অংশটি আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে, বিচার বিশ্লেষণ করতে, কোনো কিছু অনুভব করতে সাহায়্য করে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে স্নায়ু কোষের সাইন্যাপস। এই সাইন্যাপসের গঠনের হার বাড়ে কৈশোরে। এটা খুব দ্রত বাড়ে এবং স্নায়ু কোষের সঙ্গে সংযুক্ত হয় আবার একই সঙ্গে অপপ্রয়োজনীয় কোষগুলি ধ্বংস করে। এদিকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে সমন্বয় রাখে মায়েলিন সীথ। এগুলো সবই ঘটে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে।  বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কৈশোরে কেউ যদি গঠন মূলক কাজে নিযুক্ত থাকে যেমন- বই পড়া, দাবা খেলা,বা ছবি আঁকা ইত্যাদিতে তা হলে সেই সব কাজের জন্য প্রযোজনীয় সাইন্যাপসের সংখ্যা বাড়বে আর সাইন্যাপসগুলো সুদৃঢ় সুগঠিত হবে। কিন্তু কেউ যদি কম্পিউটারে গেম খেলে বা টেলিভিশন দেখে বা অপ্রয়োজনীয় কাজে মস্তিষ্ক ব্যস্ত রাখে তা হলে সেই সব অপ্রয়োজনীয় সাইন্যাপস সংখ্যা বাড়বে। স্মৃতি সংরক্ষণ স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার কাজ করে এই সাইন্যাপস। এছাড়া ওখানে রয়েছে আমীগডালা যা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। কৈশোরে এটা সম্পূর্ণ গঠিত হয় না। ফলে এসময় যা কিছু সে করে সব কিছুই আবেগনির্ভর হয়। গবেষণায় দেখা গেছে  ছেলেদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ২৫ বছরের আগে সম্পূর্ণভাবে সুগঠিত হয় না। তাই ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তারা থাকে আবেগ প্রবণ। সময় তারা যে কোনোধরনের ঝুঁকি নিতে পারে। তাদের বিচার করার দক্ষতা কম হয়। ফলে এই বযসের আগে যে সব ছেলেরা প্রেম করেন তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই সম্পর্ক লং-টার্ম হয় না। দিকে মেয়েরা তাদের আগেই লাভ করে ফেলে বাচনিক শক্তি। তাদের গঠন গত কাজের কারণেই তাদের সাইন্যাপস সুদৃঢ় হয়, বিচার করার ক্ষমতা তাদের স্মরণশক্তি প্রখর হয়। আর তাই মেয়েরা সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের স্মৃতি শক্তিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটাকে বিবর্তনের যুক্তি বলে। আদিম সমাজে টিকে থাকতে আদি মানবীর এমন সঙ্গী দরকার ছিল যে কিনা নিরাপত্তা খাদ্যের যোগান দিতে পারবে। ফলে নারীর দরকার পরে স্মৃতির সাহায্য। সে মনে রাখে যে প্রেমিক পুরুষটি তাকে গতকাল কী অঙ্গীকার করেছিল এবং সে গত সপ্তাহে তাকে কী দিয়েছে এবং কী দেয়নি। ফলে ভালোবাসার ক্ষেত্রে বা সম্পর্ক  দীর্ঘ মেয়াদী করতে নারীর কাছে করা অঙ্গীকার গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বুদ্ধিমান পুরুষ।   মনে রাখতে হবে যে জীব জগতের অন্য সব প্রাণীর সেক্সুয়াল সিলেকশনের অর্ণমেন্ট থাকে তাদের শরীরে আর মানুষের ক্ষেত্রে তা থাকে সংস্কৃতিতে। এই সব অর্ণমেন্ট কোনো পুরুষের শারীরিক সুস্থতার প্রমাণ না হলেও  তা ধনসম্পদের দিক থেকে তার সক্ষমতার প্রমাণ। নারী জানে তাকে তার সন্তানকে টিকে থাকতে এগুলো ভবিষ্যতে তার কাজে আসবে। তাছাড়া অলংকার যে নারীকে যৌন আবেদন ময়ী করে তোলে সেটা সে নিজেও জানে আর তাই সে যখন তার সঙ্গীর কাছ থেকে অলঙ্কার উপহার পায়  তাতে সে খুশি হয়, তার আত্ম প্রত্যয় বেড়ে যায় আর সে সঙ্গীর প্রতি অনুভব করে বাড়তি আকর্ষণ। আর কারণেই বলা হয় - Gold byus honour, gold procures love.

মূল: : জঁ ককতো
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
বারান্দা

একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায় খুব দ্রæ
অন্য কাকতাড়ুয়াটি একটি গাছের ডালে
আকৃতির পরিবর্তনে মনোযোগী খুব

রক্তাক্ত হয়
একটি বাঁকানো পাইন গাছের সম¯ বাঁকল
স্বপ্নের মধ্যে প্রায় পৌরাণিক কাহিনীর মতো
বন্ধ হয় ফাটল
দেবদূতের কান্নাদ্রুত! দ্রুত!
নষ্ট করার মতো সময় নেই এক মিনিটও
নিরীহ জোড়ার একটি জুড়ি চক্কর দেয় চারদিকে
তাদের ফুসফুসের র্শীষে কান্না
পালক হারানো
যা অন্ধ করে দিয়েছে তাকে
এবং দ্রুত আটকে যায় তার ক্ষতে
সবচেয়ে শান্ত
খুনের কলঙ্ক
হাঁটু গেড়েছে পশুরা এবং কান্নারত
সংখ্যা সাত এর নামে জোড়ালো
অলৌকিক ত্রিকোণ চাকা
এক নয় যে হাত
মারাত্মক বিরাগবোধ

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক