বুধবার ৩০শে বৈশাখ ১৪২৭, ১৩ই মে২০২০
সাম্য রাইয়ান
উজ্জয়িনীকে
তামাক ফুলের দেশ Ñ রসুনের বন
ক্লান্ত কুটোপণ্যের পসরা অথবা
নবীন মৃত্যুগন্ধা বিছানায়; কোথাও
থেকোনা লীন। এমনই কতোদিন
নদীফলের দেশে কতো মেয়ে ঢেউয়ের
চূঁড়ায় ভেসে Ñ চলে গেছে দূর-তেপান্তর।
তোমারই মতো তারা ঘুমের ভেতরে নেমে এসেছিলো
বেড়ালের ডানা থেকে রূপোলী রাত্রিতে।
অচেনা ডাকাতেরা লুট করে গেছে
আমাদের
অগণিত
গোলাপী পাপড়ির মতো ভোর।
সেইসব বেদনা ফোটার দিনে একটা দূরাগত
প্রতীককে সঙ্গীতে রূপ দিতে দিতেই
অনাহুত দিনগুলো পেরিয়ে যাচ্ছে!
মাহফুজুর রহমান লিংকন
শিরোনামহীন
যাই হোক, অবশেষে তোকে মনে পরেছে...
ফুয়াদ ক’দিন আগে বললো-
‘তোর ঘরে ঢুকলেই,
পেতাম বিড়ির অসহ্য গন্ধ’
সেই যে ভুলে যাওয়া, ক্ষয়েও যাওয়া...
মৃত্তিকার বসতি ক্ষয়ে গিয়েছিল
তুমুল হট্টগোলে।
বয়োবৃদ্ধ অচিন পাখিটা নুইয়ে গিয়েছে
বাজারি রঙ্গের আচ্ছাদনে।
শহরে রেডিয়েশনের মাত্রা এপার-ওপার
শহুরে কবির কাপড়ের ব্যাগে এখন শুধুই শ্লোগান
তাই তোকে মনে পরেছে...
সোমের কৌমুদী
একই বৃত্তে বন্দী
এই চলমান স্থির রাজপথের
আদি থেকে বর্তমানের সব যাত্রী ছুটছে শুধু ছুটছেই।
এই রাজপথে ছুটেছে
আমার পূর্বপুরুষগণ, ছুটবে আমার পরবর্তী প্রজন্ম যারা।
মিলেছে এবং মিলবে তারা একই বৃত্তে।
মিলব আমিও এবং আমার পরবর্তী প্রজন্ম
মিলবে ঐ প্রজন্মের পরে যারা নিবে জন্ম।
তাই আদি ও ইতি --- একই বৃত্তে বন্দী।
অনুবাদ: মাজহার জীবন
আমিরাহ আল ওয়াসিফ মিশরীয় ফ্রিল্যান্স লেখক, কবি ও উপন্যাসিক। পাঁচটি গ্রন্থ আরবীতে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া লেখা স্পেনিশ, কুর্দিশ, হিন্দিতেও অনুদিত হয়েছে। তাঁর কবিতার সংকলন ঋড়ৎ ঞযড়ংব ডযড় উড়হ'ঃ কহড়ি ঈযড়পড়ষধঃব এবং শিশুতোষ গ্রন্থ ঞযব ঈড়পড়ধ ইড়ু ধহফ ঙঃযবৎ ঝঃড়ৎরবং ইংরেজিতে প্রকাশ হয়েছে।
আমরাই আয়শা ক্যাথেরিন এলিজাবেথ র্যাচেল
আমরা সবাই বাসনকোশন মাজি
ঘরদোর পরিস্কার করি
তবু আমাদের আছে এখনও বড় বড় ইচ্ছে
প্রিয় ফুল বইয়ের পাতায় গুজে রাখার মতোন করে
বালিকা কাল থেকে আমরা আমাদের স্বপ্ন পুষেছি
আমরা সবাই এক এক জন অন্বেষী - রয়েছে অভিপ্রায়
সবাই আমরা একই পাথর ভাঙ্গছি নিরন্তর!
আমরা সবাই বাসনকোশন মাজি
কাপড় সেলাই করি
চেষ্টা করি আমাদের "কারণ" খুঁজে বের করতে
আমরাই আয়শা, ক্যাথেরিন, এলিজাবেথ, রেচেল আর লিলি
আমরাই তারা যাদেও তোমরা বলো ভয়ঙ্কর আর মুর্খ
একজন যোদ্ধা হিসেবে তুলে নাও অস্ত্র
সর্বত্র জানিয়ে দাও আর বলো:
আমি একজন নারী
আমাকে অবশ্যই যুদ্ধে নামতে হবে
আমাদের দাদীদের অশ্রæজলে আমরা সবাই স্নান করেছি
কর্তাব্যক্তিরা আমাদের বলেছে-
বোনেরা ভাইয়েদের সমান না
পুরুষের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত
তোমরা পেছনে করবে অপেক্ষা
প্রতিবাদ আর কাউকে দোষারোপ না করে
তোমাদের পরাজয় মেনে নেবে
আমরা সবাই স্বপ্নভরা-হাসিমুখে গাজর কাটছি
আমরা সবাই ভীতিকর গুজব শুনি
কিন্তু, আমরা এখনও সম্মান আশা করি
হ্যাঁ, আমরা এখনও সম্মান আশা করি
সা ক্ষা ত কা র
লেখার শুরুটা কিভাবে ?
এই প্রশ্নটা যতবার সামনে আসে, ততবারই উত্তর বদলে যায়। আগে কি বলেছি, মনে থাকে না। নতুন করে কিছু বলতে হয়। এটার বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। হয়তো অক্ষরজ্ঞানের শুরুটাই লেখালেখির শুরু। আবার বন্ধুরবান্ধবীর জন্য লেখা প্রেমের চিঠিকেও প্রথম সাহিত্য বলে চালিয়ে দেয়া যায়। এমনও হতে পারে যে প্রতিদিন নতুন করে শুরু করছি লেখা। আগে যেখানে থেমেছিলাম, তারপর আবার যখন লিখতে বসি, সেটাও শুরু নয় কি!
আপনার মতে শিল্প সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কি?
আমি বলি, শিল্প-সাহিত্য যদি মানুষকে নিদেনপক্ষে শিল্পীকে স্পর্শ না করে, তাহলে এর কোনো প্রয়োজন নেই। আবার আরেকটা দিক থেকে ভেবে দেখলে প্রয়োজন ছাড়াও প্রয়োজন তৈরি হয়। এই যে শিশুরা দেয়ালে ইচ্ছেমতো আঁকিবুঁকি করে, এটা আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন হলেও, এই ব্যাপারটা শিশুটিকে ঠিকই আনন্দ দেয়।তারমানে এটারও প্রয়োজন আছে।
কবিতার এলেমেলো বিন্যাস। তুমুল চিত্রকল্প। বাঁধনহারা প্রাণ আপনার লেখাকে আপনার লেখা করেছে। প্রথম দশকের নিজস্ব স্বর দিয়েছে । কবিতার ধ্রæপদী প্রকরণ আপনাকে কতটা টানে বা টানেনা?
আমি যখন কবিতা পড়তে শুরু করি, তখনকার সময়ে আমার পাঠ্য কবিতা থেকে আমার লেখা কবিতার ভাষা কিন্তু অনেক আলাদা। আমি নিজস্ব ভঙ্গিতে আমার কথাগুলো লিখতে চেয়েছি। আমার মধ্যে যে বাক্যগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোকে আমি আমার চেনা ব্যাকরণের স্কুলে পাঠাই নি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো সাজিয়ে দেখেছি, কেমন লাগে। দিনশেষে এই সাজানোতেই আনন্দ পেয়ে গেছি।
শূন্য ও প্রথম দশকের কবিতার কোন মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করো। যা দিয়ে দুটো দশককে আলাদা ভাবা যায়?
কবিতায় দশকের যোগ-বিয়োগটা কখনোই ভালো লাগেনি। শূন্য দশকে নিজের খাতায় লেখা লোকটা যদি প্রথম দশকে এসে পাঠকের কাছে প্রকাশিত হয়, তাকে আমরা কোন দশকের কবি বলবো? তবে আমাদের এখানে প্রচলিত দশকের যে ভাগাভাগি হয়ে থাকে, সেই অনুসারে কথা বলা যায়। শূন্য দশকের কবিগণ বড় কবিদের ছায়ায় ছিলেন। তাই হয়তো তাদের অনেকেই বড় না হয়ে বনসাই হয়েছেন। তাদের নিজস্ব ভাষা তৈরির লড়াইটা যে ছিলো না, তা নয়। কিন্তু সেই লড়াইটা করতে গিয়ে তারা নিজস্ব একটা জায়গা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রথম দশকের কবিদের কাছে শূন্য দশকের এই কবিরা আদর্শ হয়ে উঠতে পারেন নি। তাই তারা নিজের মতো করে লিখে গেছে। কেউ তাদের শুধরে দেবার নাম করে তার অনুসারী বানিয়ে ফেলতে পারেনি। যদিও দুই-একজন ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। আমার মনে হয় প্রথম দশক থেকেই দীর্ঘযাত্রার কবি বের হয়ে আসবেন।
হাংরি, শ্রæতি, নীম, কৌরব, রৌরব, নতুন কবিতা এইসব আন্দোলন কবিতাকে কতটা বদলেছে?
আন্দোলন মানেই মিছিল। আর মিছিল মানেই নতুন দিনের শ্লোগান। মিছিল মানেই অগণিত কন্ঠস্বর। অনেক অনেক কথা। এতো এতো স্বর মিলে অবশ্যই বদলেছে অনেক কিছুই।
পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তখন কি করতে চান?
পরজন্মকে আমি সমুদ্রজন্ম বলি। আবার যদি সমুদ্রজন্ম হয়, আমি কবিতাই লিখবো আর অসংখ্যবার প্রেমে পড়বো।
কবির স্বাধীনতা বলতে আপনি কী মনে করেন?
কবি তার প্রথম উচ্চারণেই নিজের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এই সময়ের তরুণ-তরুণী কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে ‘বোকাচোদা’ সম্বোধন করে। কবিদের মেরুদÐ, স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ হারিয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে?
মজার বিষয় হলো, সবাই অদৃশ্য একটা লড়াই করছে যেনো। বাতাসের সাথে তরবারি যুদ্ধের মতো। আমার যতটুকু মনে হয়, এটার মূল কারণ অস্তিত্ব সংকট। নিজের লেখা বাক্যগুলোর প্রতি আস্থাহীনতা। নইলে কে কার কবিতা কেড়ে নিচ্ছে, কে কাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে! কবিতার এই মিছিলটা পাশাপাশি হাঁটবার কথা, এতোটা দূরত্বে নয়। তবে যতটুকু জানি অথবা দেখি, এই বিবেদের কারণ কিন্তু কবিতা নয়। স্রেফ ব্যক্তিগত দ্ব›দ্ব!
লিটিল ম্যাগাজিন না ফেসবুক কোনটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম , আপনার মতে? কেন?
লিটিল ম্যাগাজিন আর ফেসবুকের মধ্যে তুলনা চলে না। ফেসবুকে আজকাল আর সব কিছুর পাশাপাশি সাহিত্যও করা যায়। আর লিটিল ম্যাগাজিন শুরু থেকেই কেবল সাহিত্যের। যদিও এখন ফেসবুকের মাধ্যমে লেখক আর পাঠকের নিয়মিত যোগাযোগের কারণে আমরা ফেসবুকেই বেশি লিখি। এই জায়গাটায় লিটিল ম্যাগাজিনের ব্যর্থতা রয়েছে। আমাদের (বাংলাদেশের) আগের সাহিত্যিকগণ লিটিল ম্যাগাজিন আন্দোলনের নামকরে ফাঁকা একটা ময়দান সাজিয়ে রেখে গেছেন! অথচ আমাদের সাহিত্যে লিটিল ম্যাগাজিনের এভাবে খুচরো পয়সার মতো পকেটের এক কোণে পড়ে থাকার কথা ছিলো না। আমি এখনও বিশ্বাস করি, সাহিত্যের প্রয়োজনে লিটিল ম্যাগাজিনের আধিপত্য ফিরে আসা উচিত।
এই সময়ের কবিদের লেখা পড়েন? কার কার লেখা ভাবায়-মুগ্ধ করে?
এই সময়ের যার লেখা পাই, তার লেখাই মুগ্ধ হয়ে পড়ি। কতদিন আর জীবনানন্দ, রুদ্র আর আবুল হাসান পড়ে ক্ষিধে মেটে! তারচেয়ে বরং নতুন কবিতাগুলো পড়তে বেশ লাগে। কি দারুণ সব কবিতা তারা লিখে যাচ্ছে, ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে কবিতায়! আলাদা করে কারও নাম বলবো না। আমি সবার কবিতা পড়ি। সবার কবিতাই ভালো লাগে। যে কবি গতকাল প্রথম কবিতাটা লিখলো, তার কবিতা পড়ে দেখুন। ভাবুন, সে কি বলতে চায়। মুগ্ধ হবেন।
একজন কবি ও দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
কবি আর দার্শনিক এই শব্দদুটোয় আমি কোনো পার্থক্য দেখিনা। আমার কাছে সমার্থক শব্দ মনে হয়।
এপার বাংলার কবিতার ভাষা এবং ওপার বাংলার কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু এবং কেন?
দুই বাংলার মানুষের জীবন খুব একটা আলাদা নয়। কিন্তু এটাও সত্য যে পৃথিবীর সব দেশেই মৌলিক অধিকার একই, কিন্তু প্রাপ্তির খাতাটা একই থাকে না। তখন দেখা যায় এক জায়গার কবি যেই অধিকারের জন্য কবিতা লিখছে, আরেক জায়গার কবি হয়তো অন্য আরেকটা অধিকারের দাবীতে কলম ধরছে। আবার প্রেমের জায়গায় এসে একই সুরে কথা বলছে। কিন্তু সুর এক হলেও ভাষার প্রকাশভঙ্গী আলাদা। সেটা এই বাংলাতেও। এখানকার কবিরাও একই ভাষার ভঙ্গিমায় কবিতা লেখেন না।
কবিতায় ছন্দ ও উপমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন।
কবিতা যদি নারী হয়, ছন্দ আর উপমা তার অলংকার। অলংকার সহকারে প্রিয় নারীকে যেমন সুন্দর করে বর্ণনাকরা যায়, তেমনি অলংকার ছাড়াও তাকে পৃথিবীর সুন্দরতম নারী হিসেবে বর্ণনা করা যায়। এটা কবির একান্ত নিজস্ব কৌশল। তিনি কিভাবে তার কবিতা লিখবেন।
আপনি কি মনে করেন প্রত্যেক কবিই শুরুতে কোনো না কোনো কবির দ্বারা প্রভাবিত হন, যা তার কবিতায়ও প্রকাশ পায়। যদি একটু ব্যাখ্যা করেন।
প্রভাবিত শব্দের চেয়ে অনুপ্রাণিত শব্দটা ব্যবহার করা উচিত। কবিতা পড়েন না, এমন কবি আমি দেখিনি। অন্য কারও কবিতা পড়তে গিয়ে তার কোনো শব্দ অথবা উপমা হয়তো হুট করে ঢুকে পড়লো মাথায়। এরপর লিখতে গিয়ে সেই শব্দটা, উপমাটা এসে যায়। এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এটাকে অস্বীকার করে কবিতা লেখা যায় না।
কিভাবে একজন তরুণ লেখক তার জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেন?
তরুণ লেখক যে জীবনে আনন্দ পাবেন, যে জীবনে কবিতা খুঁজে পাবেন, সে জীবনের বাইরে দাঁড়িয়ে জীবনটাকে নিয়মিত দেখবেন। আর যাপিত জীবনের ভাবনা থেকে তৈরি হওয়া দর্শনকে বিশ্বাস করতে শিখবেন।
No comments:
Post a Comment