বুধবার ২৩শে বৈশাখ ১৪২৭, ৬ই মে ২০২০
সুদেব চক্রবর্তী
বাজিকর
আমি তো চ্যাং পুং করা শাং বংশীয় নাগড়!
অন্তঃপুরে রমনীদের কাছে শিখেছিলাম
ক্যাসিনোর যাবতীয় ফাটুস ফুটুস...
লোডশেডিংয়ের বাংলায় কে বসে আছো সলিটেয়ার খুলে? সেট হয়ে থাকো- উপসেট হবার জন্য মগজে চলছে
গরিষ্ঠ সাধারণ গুনিতকের লাল দৌড়।
স্পেডের টিক্কা জুটলেই চলে আসব
গ্যাম্বলিং টেবিলে- এসো পাঞ্চালী,
মিটিয়ে দেবো কুরুক্ষেত্রের সব অপমান।
সাম্য রাইয়ান
বরই পাতার দেশ
অসুস্থ্য ভোরের মুখে দাঁড়িয়ে
ভাবি, কার কাছে যাবো!
বরই পাতার দেশ, উপ-দেশ
এ কেমন ঝরণাধারা?
জ্বরের মূর্ছনা! ভোর থেকে রাত।
কবরভূমিতে দাঁড়িয়ে
থাকে, অন্ধকার ফলানো
চুপচাপ গাছ।
মরহুম পাতাগুলি শুধু
আটকে তাকে জীবনের পরে।
সহজ বেদনা নিয়ে
অর্ঘ্যডালা জাগে
জ্বরের মৌনতা ভেদ করে।
অপার অরণ্য
পা দুটো পদ্মচিহ্নযুক্ত জন্মের দিকে
কয়েকটা পদ্মপাতার নিচে জমিয়ে রাখছি ঘুম
মাঝরাত্তিরে এসে আলো নিবিয়ে যাও
পুনরায় আলোর টানে হাটুঘেরে স্তব্ধ অন্ধকারের চোখ
বাইরে শ্রাবণের জল
কদমে চুপচুপ শহর ও মনমিয়া গ্রাম
ভিতরে খর চৈত্রের মত কারো বুক পুড়ে অপরাহ্নে,
ভিজে না।
সমস্তরাত পোষা বিড়ালের ম্যাও-
বুকের মাঠে কানঘেষে বকুল ঝড়া শব্দ
শব্দের বুকে আরও কিছু নৈঃশব্দ
সমস্তরাত কড় গুনছি আঙুলে আঙুলে
উপহারগুলো তুলে নাও গোপনে
হয়ত ফুটব পদ্মজাত হয়ে।
অনুবাদ : মাজহার জীবন
মূল : আলেমু তাবেজী
ইথিওপিয়া থেকে বহিস্কৃত ব্লগার, কবি ও সাংবাদিক। তিনি আদ্দিস আবাবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইথিওপিয়ান ভাষা ও সাহিত্য এবং ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার উপর পড়াশুনা করেছেন। লন্ডনে বাস করছেন।
সাব্বাস! পশ্চিমা গণতন্ত্র!
তোমাদের গুন গাই -
ইথিওপিয়ার বর্বর শাসকের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ-অভিনয়ের জন্য
বিলাসী কোচে এই গ্লিনইগলস্ এ
আমাদের নিয়ে এসেছো যারা
তোমাদের গুনগান গাই আমি।
হোটেল থেকে দু'মাইল দূরে
আমাদের নামিয়ে দিলে
ফাঁকা এক মাঠের পাশে,
যদিও বর্বরেরা শুনতে পাবে না
তারপরও আমরা স্বাধীন, ইচ্ছেমত শুন্যে
স্লোগান দিলাম ছুঁড়ে:
“রাজনৈতিক বহুত্ববাদ!” বলে হুঙ্কার দিলাম
“মানবাধিকার!” বলে চিৎকার করলাম।
সুর্যের তেজ কম এখানে ঠান্ডা একটু তাই।
পুলিশ বুটের শব্দ করলো।
আমাদের ভাষণ শুনলো কিছু কাক
আর অবাক হয়ে তারা দেখলো আমাদের।
এই কথা তারা বয়ে নিয়ে গেল
তোমাদের কনফারেন্সে
যেখানে বিজ্ঞজনেরা মগ্ন আত্মপ্রশংসায়
তোমাদের মধুর কথায় ডুবে,
আর খোঁচা খেল তোমাদের হালকা প্রতিশ্রæতি।
তাই এই অন্ধকারে তোমাদের গুনগান গাই-
গুন গাই স্বাধীন মতপ্রকাশের এই ঝকঝকে মহাসড়কের
গুন গাই তোমাদের শুন্য মাঠ আর বশংবদ কাকের
দানবদের খাইয়েছ যে শুকনো বিস্কুট তার গুন গাই
অণুগল্প
তিনি ও তিনি
মানস চক্রবর্তী
ঐ তিনি ঢুকলেন। 'কী হোল' দিয়ে যে আলো আসছিল এবার লক খুলতেই বাইরের তেরছা আলো পাপোষ অবধি লুটিয়ে পড়লো। সুইচ টিপতে প্রথমেই দেয়াল ঘড়ি আলোকিত এবং তা জানান দিলো এগারোটা পনেরো। হাউসিং মোটের ওপর নিস্তব্ধ।
অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েল থেকে চিকেন দুটো প্লেটে, রুটি একটা প্লেটে দুটো আরেকটায় একটা সাজিয়ে শশা কাটতে বসলেন আর গুনগুন করে গান গাইছেন" পুরনো সেই দিনের কথা"।
তিনি এদিকের চেয়ারে বসে দুটো রুটি একপিস চিকেন দুটুকরো শশা খেলেন। বোতল থেকে ঢকঢক করে জল খেলেন। তারপর ওদিকের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। একটা রুটি, একটুকরো চিকেন, দুটুকরো শশা খেলেন। ঢকঢক করে জল খেলেন। টপ টপ করে ডিনার ম্যাটের ওপর জল পড়লো কয়েক ফোঁটা।
তিন রকমের ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়লেন। অ্যালজোলাম এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। উনি ঘুমিয়ে পড়লেন ।
ঊর্মিলার বেল। ঘুম ভাঙলো। আজ শনিবার। ঊর্মিলা ঢুকে ডাইনিং টেবিল থেকে প্লেট তুলে মাজতে গেল। চা করলো। দুকাপ। এবার ঊর্মিলা একটা মুখোশ পড়লো। দুজনে বারান্দায় বসে চা খেলো। ঊর্মিলার নাম এখন প্রণতি। উনি বোল্লেন, প্রণতি তুমি আজ লুচি ভাজো বেগুন ভাজা দিয়ে খাবো। প্রণতি শুধোলো, এ মাসে কিন্তু আর লুচি হবে না। আজ লাস্ট।
উনি বোল্লেন, তুমি মরে গেলে এসব কে বোলবে আমাকে। হাসলেন। প্রণতিকে কাছে টেনে চুমো দিলেন। আরো কাছে টানতেই প্রণতির আড়াল থেকে ঊর্মিলা মুখ বাড়ালো। অমোন কোরো না গো, আমার ভয় করে।
সুখ-অসুখ
লোকমান হোসাইন
রফিক মিলির ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে যাকে বলে আমি স্বর্গীয় সুখ অনুভব করি। আহ্। দারুণ।
কেন, কেন? ডা. মুহিত কামালের চোখে জিজ্ঞাসা।
আহা, অস্থির হচ্ছেন কেন? এমনি।
এমনি এমনি আপনি খুশি হবেন কেন? আপনার কি রফিকের সাথে কোন শত্রুতা আছে?
না।
ওয়েট, ওয়েট, তবে কি আপনার মিলির সাথে কোন...
হাহাহা, হাসালেন। তাও না।
তবে...
শুনুন ডক্টর, রফিক আমার বন্ধু। ওর বাসায় আমি নিয়মিত যেতাম। ওর সাথে আমার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। ওদেরকে সবসময়ই দেখতাম হাসিখুশি। আনন্দে উল্লাসে, হৈ-হুল্লোড়ে মত্ত। সম্পর্কের বিয়ে। তাছাড়া মিলিও ছিল ঝকঝকে সুন্দরী। ওদের দু'জনকে আমার কাছে মনে হত সিনেমায় নাচতে থাকা জুটির মত।
তো?
আর কি জানার আছে? অন্যের সুখ কত সহ্য করা যায়...আশ্চর্য!
বই আলোচনা
পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর পড়ে যা মনে হলো
জারিফ এ আলম
কবি ওবায়েদ আকাশের কবিতাগ্রন্থ 'পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর(২০২০)। কবিতাগ্রন্থটিতে তার বেড়ে ওঠা গ্রামের (সুলতানপুর) যে চিত্র তুলে ধরেছে তা বাংলার প্রতিটি গ্রামেরই এক অপরূপ ছবি। মধ্যযুগের কাব্য অন্নদামঙ্গল চÐীমঙ্গল মনসামঙ্গলে যে টোটেম ট্যাবুর পরিচয় পাওয়া যায় সে-রকম পরিচিতি 'পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর' কবিতাগ্রন্থেও পাই। সে-সময়কার কবিতাগুলোতে কবিরা তাদের কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা হিশেবে বিভিন্ন দেবীর স্বপ্নাদেশের কারণে কবি তার কাব্য সৃজনে ব্রতী হয়েছেন; কাব্যসূচনাপর্বে এটা উল্লেখ করেছেন। তারপর তার নাম তার ধাম তার বংশপরিচয় বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। আধুনিকমনস্ক কবিরা তা উল্লেখ করেন নিজস্ব চিন্তাকল্প দিয়ে। কবি ওবায়েদ আকাশ তার কবিতাগ্রন্থের প্রথম কবিতায় নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে,
'আমার পক্ষে দাঁড়ালো সুলতানপুর
আর প্রতিপক্ষ-
কুমার নদের পার, ১২ নং ইউনিয়ন পরিষদ, ধুলো-ওড়া পথ, ষড়ঋতু অন্তবর্তী প্রাচীন বিদ্যালয়, তেমাথা, বোর্ড অফিস, খেয়াঘাট
ডাকঘর-খলিলপুর বাজার, উপজেলা-রাজবাড়ী সদর, আর
জেলা: রাজবাড়ী।
(সুলতানপুর প্রতিপক্ষ) টোটেমের যে ব্যবহার তা কবি নিয়ে গেছেন অনন্য মাত্রায়। একারণেই কবির কবিতায় দেখতে পাওয়া যায়,
'আমার ঘুমের ভেতর বিভোর নাচিয়ে এক
হরিয়াল ঠ্যাং
ধূসর নকশার ভাঁজে, নিভৃতে
দুচোখ মুদ্রিত মুকুর, কিশোর বয়স
ঝাঁকবাঁধা হরিয়াল-দিনে
মগ্নপাঠে উড়ে যায় পালকের ছুঁতায়
(হরিয়ালের ঠ্যাং)
ট্যাবুর কথা মধ্যযুগের কাব্যে অনেকভাবে তার পাশাপাশি টোটেমও ছিলো। বিভিন্ন গাছপালা, নদী, পশুপাখি টোটেমের অন্তর্ভুক্ত হতে দেখা যায়। ট্যাবু বিষয়টি হয়ে উঠেছিল বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ওপর। কবি ওবায়েদ আকাশ তাই উল্লেখ করেছেন। তেমনি একটি কবিতা এরকম,
'সে তো সেউ নিতান্ত চারা-বেলা
বুঝেছি কি শুভঙ্করের ফাঁকি!
তবু মনে পড়ে-গা ছমছম
বাটিচালানের রীতি, আজব হাত-খোলা!
(বাটিচালানের ভীতি)
এছাড়া মাধুকরী ভয়, সুলতানপুরে ওঠে আততায়ী চাঁদ, বাত খসাই, শিঙ্গা লাগাই এই পর্যায়ের কবিতা।
'পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর' কবিতাগ্রন্থ নানা স্বাদের কবিতার সন্নিবেশ; যা লৌকিক-অলৌকিক বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কৈশোর-তারুণ্যের নানা ঘটনার এক মোহময় জীবনের আখ্যান। আর কবির কাছে তাবৎ পৃথিবী নয় নিজগ্রামকে মনে হয় রঙিন মনে হয়েছে। তার ভাষায়,
'আর আমি জানি পৃথিবীটা সাদাকালো আর
সুলতানপুর অবাধ রঙিন।'
(ফিরে যাওয়া তার চেয়েও রঙিন)
আর কে না জানে, নিজ গ্রাম, জন্মভূমি রঙিন আর বিচিত্র অনুভবের! 'পৃষ্ঠাজুড়ে সুলতানপুর' কবিতা গ্রন্থটিকেও বলা যায় নানারঙের বহুবর্ণিল চিত্র ও ভাবনার মেটাফর।
No comments:
Post a Comment