Monday, May 25, 2020

শিল্প সাহিত্য ৩৯

শুক্রবার ৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২২ই মে ২০২০



সাম্য রাইয়ান
লোকালয়ে

এত রক্তপাত ভেঙে- আধোলীন পথ 'রে
কার কাছাকাছি যাবো, কার ঘুমের মধ্যে ঢুকে পড়বো,
কারই বা হৃদয় থেকে ছিঁটকে পড়বো তুমুল;
আলোড়িত শীতের সকাল!

বন্দুকের গভীর থেকে বেরিয়ে তোমার কাছে
ছুটে যাবো বলে ঘুম থেকে উঠি!

ইচ্ছে করছে প্রতিটি ভোরের কানে মুখ লুকিয়ে
বলি, সমূহ ঢেউ থেকে ছিঁটকে যাচ্ছে তুষারখÐ মন।
পাড়ার মসজিদে মিনার থেকে মর্মতলে দীর্ঘ হাহাকারে
সকালভর্তি বেদনাদানা বিপুল আহ্লাদে ভেসে যাচ্ছে।
অনন্ত উন্মোচনের মধ্যপথে আশ্চর্য নিপুনতায় ভাঙা কাচ
লুকিয়ে ফেলছে পুরোনো প্রেমিকের জুতো।

তবু অলৌকিক পালকের মহিমাগাঁথা ধরে হাজির হলে
সমাধিমন্দিরে, আমি ভিন্ন উচ্ছ্বাসে লোকালয়ে ফিরে যাবো।

রুদ্র সাহাদাৎ
বালুচরে রোদ পুড়ে যায়

বালুচরে রোদ পুড়ে যায়
সাগরলতা গুছিয়ে নেয় সংসার
ওরে নীল দরিয়া- গান শুনি বিরহী মাঝির কণ্ঠে
ঝাউবন সুর তোলে গীতিকবিতার।

পর্যটক দ্যাখে অবাকচোখে নব উল্লাস
ডলফিন নাচে ঢেউয়ে ঢেউয়ে  জলে জলে।

শামুক ঝিনুক হাসে জোয়ার ভাটার টানে।

বালুচরে রোদ পুড়ে ছাই
কবির কানে দ্যাখি চোখ নাই।

সেলিম রেজা
মিলনের সাধ

আকাশে মেঘ থমথম নিকষকালো বৃষ্টিথামা নেই অবসর,
থামো ঝড় উত্তাল হাওয়া আসিতে দাও চাঁদবদনী প্রিয়তমা মোর।
যখনি রাখিবে চরণকমল মোর মন্দিরে নূপুরগুঞ্জনে সম নৃত্যধারায়
অঝরে ঝড়ো বাঁদলধারা খুশিতে বাঁধ হারা মেঘপুঞ্জ এসো মিলন মুদিরায়।
অঙ্গের বসন যদি খসে পড়ে উঠে যুগল চাঁদ তিমিরবরণ দুর নিবারে
গলে গলে জোছনা মাখা আবির ঝরাবে নিষাদী রাত ইন্দুনিভাননে।
ভেজা ভেজা রাতে বৃষ্টির পাহারায় পূবাল হাওয়া এসে বলে কানেকানে
রূপের গ্রহণে সদানন্দময় অনুরাগে কি আনন্দঘন নির্জন বিজনে।।

সাজ্জাদ সাঈফ
তমা সিরিজ: মনপড়া

তুমি জানো নাকি মনপড়া?
দাওয়ায় হেলান তেঁতুল গাছের হাওয়ায়
যে দুপুর বিলের পানিতে, আকাশের চকমকি দ্যাখে
আর, হাস্যময় হয়ে ওঠে খুব; তুমি জানো নাকি তর্জমা তার?
জানো শিরস্ত্রাণ?

আমি শুধু খোড়ল থেকে
পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখি
আর দেখি ধান্যময় ফিরে আসা গাছে;

সকল সুবাতাস পেলে, হৃদয়েরা
আড়মোড়া ভাঙে নাকি তমা? জানো?

শো
আমার স্বপ্নগুলো ফসলে বোনা শস্যদানা মতো

যার মুঠোয় লুকানো ছিলো চাষাবাদের অবাক চারুকৌশল
ছিলো পূর্বপরম্পরা চিরন্ময় ভালবাসাÑ
একবিন্দু জল থেকে কত সহজে ফোটাতো সে বীজের অঙ্কুর
সরল চাষাবাদ, নিবিড় জলসেচ, বীজের আবাদ;
তাঁর কাছেই শেখা আমারÑ
মুক্তোচাষের গোপন অব্যক্ত কৌশল ...
একদা আমিও হালচাষ করবো বলে
সাজিয়ে নিলাম বীজতলা, চেষ্টা জল-জীবন ঘষে জুম-চাষাবাদ
তবু অঙ্কুরোদগমের দেখাই পেলাম না,
তিরতির মাটি ফুঁড়ে বেরুলো না দুটো সবুজ মঞ্জুরী
পোকা-মাকড়েই খেয়ে নিলো
বীজের জীবন সুখসারোৎসার;
এভাবেই কেটে গেলো অব্যক্ত যৌবন ...
এখন শস্যদানাদের ছুঁলে বুক কাঁপে!
ভালবাসা যুগলবন্ধী খেলা করে শেকল তোলা ঘরে
কাঁচের চুঁড়ির ছন্দমায়ায় বাজে ওপারের আঁধার,
আর আমার শুকিয়ে যাওয়া শস্যক্ষেতে
বাসা বেঁধেছিলো একদা নীলজলে ডুবেমরা পানকৌড়ি;
ঘোলাজল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে
স্থাবর-অস্থাবর অব্যক্ত আমার সকলি ...


ধারাবাহিক (দ্বিতীয় অংশ)
দ্য সাইন্টিফিক লাভ
রঞ্জনা বিশ্বাস
                      
ভেন্ট্রাম এবং কডেট অংশ উদ্দিপ্ত হচ্ছে এবং সেখান থেকে প্রচুর রাসায়নিক পদার্থ ডোপামিনের নিঃসরণ ঘটছে। জন্য দেখা যায় ভালোবাসায় আক্রান্ত মানুষের আচরণ অনেকটাই অসংলগ্ন। নেকটা গাজা, কোকেন সেবন করলে যেমন হয়  তেমন। ঘোর লাগা, টাল মাতাল অবস্থা।
 এছাড়া নোরপাইনফ্রিন নামের একধরনের রাসায়নিকও তার শরীরে প্রভাব ফেলে যার কারণে ঘাম বাড়ে, হার্টবিট বেড়ে। আর সেরোটিন তাদের মধ্যে একধরণের উন্মাদনা তৈরি করে।  হেরেন ফিশার তার গবেষণায় দেখতে পান যে, পাখিসহ সবধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্রিয়াশীল। এর প্রভাবে তাদের মধ্যেও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে। ইঁদুরের ক্ষেত্রে তা কয়েক মূহুর্ত, হাতির ক্ষেত্রে  তিন দিন আর কুকুরের ক্ষেত্রে একমাস কাল তা স্থায়ী হয়ে থাকে।
তৃতীয় পর্যায় হচ্ছে সংযুক্তি পর্ব। আর্কষণ যখন সংযুক্তিতে রূপ নেয় তখন সঙ্গী সঙ্গে একধরনের বন্ধন তৈরি হয় যার ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় পরবর্তী প্রজন্ম। পর্যায়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অক্সিটোসিন  ভেসোপ্রসিন হরমোন। নারী পুরুষের কামাকাক্সক্ষার জন্য এই হরমোন দুটি দায়ী। সন্তান জন্মদানের আগে মায়ের শরীরে অক্সিটোসিন বেড়ে যায় যার ফলে মা সন্তানের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হয়। তাই অক্সিটোসিনকে বলা হয় ভালোবাসার হরমোন।
বিজ্ঞানীরা বলেন যে, একটি সম্পর্ক কতটা স্থায়ী হবে  তা নির্ভর করে ডোপামিন, অক্সিটোসিন ভেসোপ্রসিনসহ অন্যান্য উপাদানের ভিত্তিতে। এমন কি এই হরমোনগুলোর তারতম্যের  ওপর নির্ভর করে কে মনোগামী হবে আর কে হবে বহুগামী। দেখা গেছে রিসিপটর বা গ্রাহক জিনে ভেসোপ্রসিন হরমোন বেশি মাত্রায় থাকলে তা পুরুষকে  করে তুলবে একগামী মনেবৃত্তির। বিজ্ঞানীরা প্রেইরী ভোলস মন্টেইন ভোলস নামক দুই ধরনের ইঁদুর নিযে গবেষণা করেছেন। প্রকৃতিতে একদল ইঁদুর হচ্ছে মনোগামী অপর দল হচ্ছে পলিগামী। বিজ্ঞানীরা মনোগামী ইঁদুরর মস্তিষ্কের  ভেসোপ্রসিন প্রবাহ আটকে দিয়ে  তাদের পলিগামী করেছেন আবার পলিগামী ইদুররের শরীরে বেশি মাত্রায় ভেসিপ্রোসিন প্রবেশ করিয়ে তাদের মনোগামি করতে পেরেছেন। তারা অতপর এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, একগামীতা বহুগামীতা অনেকাংশেই হরমোনের ক্রিয়াশীলতার ওপর নির্ভরশীল। তা হলে দেখা যাচ্ছে মানুষের শরীরে বিদ্যমান হরমোনই তাকে বিচিত্র সব অনুভূতিরঅভিজ্ঞতা দান করে যা ক্রমে জিনের সারভাইব করার প্রবণতা তৈরির উদ্দেশ্যে চালিত হয়। কামনা সবসময়ই যৌন তৃপ্তির ইচ্ছাকে প্ররোচিত করে এবং প্রজননের মাধ্যমে নিজের জিনকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরবর্তী প্রজন্ম সৃষ্টি করে। আর তাই বংশ রক্ষার জন্য যে কোনো প্রাণীর দুটো জিনিস প্রয়োজন- .প্রজননক্ষম বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা . বংশগতি রক্ষার জন্য যোগ্য যৌন সঙ্গী নির্বাচন করা। দেখা যাচ্ছে ২য় ধাপে- নারী-পুরুষের প্রনয়াকাক্সক্ষা তীব্র ভাবে কাজ করে। যে সব  হরমোন এই আকাক্সক্ষার জন্য দায়ী তার উৎপাদন বয়ঃ সন্ধি কালেই শুরু হয়। আর এর প্রভাবের কারণে তখন থেকেই একজন নারী তার সঙ্গীকে উদ্দেশ্য করে গাইতে থাকে Ñ আমার মল্লিকা বনে, যখন প্রথম ধরেছে কলি/ তোমার লাগিয়া তখনই বন্ধু বেঁধেছিনু অঞ্জলি/ তখনও কুহেলিজালে/ সখা, তরুণী উষার ভালে/ শিশিরে শিশিরে অরুণ মালিকা উঠিতেছে ছলছলি। সমাজে এই উঠতি তরুণীর অঞ্জলি দেবার আকাক্সক্ষা বা আবেগের নাম ভালোবাসা। এই আকাক্সক্ষা আরো তীব্র হতে পারে যখন তার সঙ্গী তার জন্য উপহার নিয়ে আসে বা উপহার দেওযার প্রতিশ্রæতি দেয়। যৌনতার নির্বাচনে প্রাণী জগতে এর চল রয়েছে। ১৯৭৫ সালে জীব বিজ্ঞানী আমতোজ জাহাবভি ময়ূরের পেখমকে ফিটনেস ইন্ডিকেটর হিসেবে দেখেন। তার মতে সততার সাথে সুস্বাস্থ্যের বিজ্ঞাপন দিতে হলে এমন একটা কিছুর মাধ্যমে দিতে হবে যাতে খরচের প্রাচুর্য চোখে পড়ে। এটা হতে হবে ¯টলি অর্ণামেন্টস। আর এজন্য জীব জগতে এই জাতীয় যৌনতার অলংকারগুলি হয় বেঢপ, ব্যয়বহুল আর জটিল। ময়ূরীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ময়ূরের পেখম সহজ কিছু নয়। এই অর্ণমেন্ট বয়ে বেড়ানো নীরোগ স্বাস্থ্যবান ময়ূরের পক্ষেই সম্ভব। তাই ময়ূর তার এই ঐশ্বর্য দিয়ে ময়ূরীর মন ভোলায়, মন ভরায়। এদিকে কোকিলের কথাই যদি বলি তা হলে দেখা যাবে সে তার কণ্ঠ সুরেলা করতে অতিরিক্ত ২০ ভাগ শক্তি ব্যয় করে। প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশি বর্ণাঢ্য হয় হরিণের শিং। এর কারণ কী? এর কারণ হলো নিজেকে উপস্থাপন করা- ‘দেখো দেখো আমার কাছে তোমার জন্য প্রয়োজনের অধিক কিছু আছে আর আমি এটা সততার সঙ্গেই তোমাকে দেখাচ্ছি। তুমি এলে সবের অধিকারী তুমিই হবে।  এই পেখম, এই কণ্ঠ, এই শিং বেঁচে থাকার জন্য এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এগুলো শক্তির অপচয়। অথচ এই অপচয় যে বেশি করতে পারে সন্দেহ নেই তার সঙ্গী পাওয়ার সক্ষমতা তত বেশি হবে। এটা নারীর লোভের বিষয় নয়। এটা নারীর অভিরুচি। আর এই অভিরুচি তৈরী হয় তার জিনকে নিরোগ করে...  (চলবে)

অণুগল্প
স্বর্ণাভরা
ব্রতী মুখোপাধ্যায়

- কি চাও আমার কাছে?
- কিছু না।
কিছু না যদিও বলল, স্বর্ণাভ  অজিতেশের কাছ থেকে কোনো কিছু চায় কিংবা চায় না জানে অথবা জানে না, তার রক্তে একধরনের দোলা লাগে, নাভির নিচে কেমনকেমন শিরশিরানি।
- কি চাও আমার কাছে?
- কিছু না।
কিছু না অজিতেশ যদিও বলল, তার ঠোঁট, কাচাপাকা গোঁফের নিচে পুরু আর চওড়া, স্বর্ণাভর কপাল, কপাল থেকে চোখ, তারপর ঠোঁটে এসে সশব্দ হয়।
- সেক্স করবে?
- না।
স্বর্ণাভর মুখ অজিতেশের বুকে।
- আমি তো ছেলে।
- আমিও মেয়ে নই।
অজিতেশকে স্বর্ণাভ কাকু বলে ডাকে। একই পাড়ায় বাড়ি। অজিতেশ আনন্দপুর হাইস্কুলে গণিতের শিক্ষক। স্বর্ণাভ অন্য স্কুলে ইলেভেনে পড়ে।।
- তাহলে?
ঝড় এখনও থামেনি। জানলার পাল্লাদুটো নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে।
- কেন তুমি ডাকো?
- জানি না।
- কেন তুমি আসো?
- জানি না।
স্বর্ণাভ অজিতেশের মুখখানা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে।
- বললে না?
- জানি না।
অজিতেশ আবার একবার ঠোঁটে চুমু দেয়।
- তুমি?
- জানি না।
তারপর।
তারপর স্বর্ণাভ আর অজিতেশ। তারপর অজিতেশ আর স্বর্ণাভ।
তারপর...

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক