Monday, May 25, 2020

শিল্প সাহিত্য ৩৬

মঙ্গলবার ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ১৯ই মে ২০২০




জাবেদ ভ‚ঁইয়া
দোয়া ছাড়া 

একটা পাখি বিমান হয়ে গেলো!
উড়তে উড়তে অবতরণ চাইলো
মসজিদে আল আকসার কাছে
অস্ত্র, বোমা মাইনে পরিখাবেষ্টিত!
তারপরে শান্তিময় নগরের দিকে
গেলামÑ নামতে দিলো না আরব
ক্ষুধার্তকে ক্ষোভ দেখালো অনেক!

চীনের আকাশে এলো পাখিটি!
প্রচুর পরিমাণে  ধোঁয়া ও অন্ধকারে 
থামাতে চাইলেÑ ওরা আমার ক্ষত
স্থান দেখে বললোÑ ভিতরে
উইঘুরের পোঁকা। ওদের মারো! 

ব্যাবলিনের সভ্যতার কাছে এলাম
এরা আমার পাসপোর্ট দেখে চিনলো না!
তার আগে অনশনে শহীদ হয়েছেনÑ 
গানে পাখি সূর্যালোক কমরেড! যারা
অনায়াসে চিনতো। নিতে আসতো বিমানবন্দরে!
যারা ঠোঁটে ভরে দিতো শস্যের ভান্ডার
গলায় দিতো হয়তো একটি পরিচিত লাল রুমাল

যারা আমাকে আজ চিনতে পারছে-না! তারা 
জানেন আমি কোনো অর্থহীন ছদ্মবেশী নই
তবুও তারা আমাকে ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছেন আকাশে!
কারো দোয়া ছাড়া উড়তে শিখেছি পূর্ব বাংলায়!
আমি খেতাম যে চাউল তা আজ তা চোরের ঘরে
পাতা আর লতার তৈরী ঘর এবং শস্য ছিলো আমার 
দখলদার এলোÑ ডাকতে চায় আকাশের মুখ! জিগ্যেস করো মৌসুমী পাখিদের কে তাদের ডানা ভেঙেছে!

আমার হৃদয়ে লিপিবদ্ধ আছে  চাল চোরদের পরিচয়!

সুমন মন্ডল
ভাঙন 

সম্পর্ক গুলো কেমন আলগা হতে শুরু করেছে
জানিনা কেন
শত আঁকড়ে ধরতে চাইলেও 
ধরতে পারছিনা 
শুধুই মনে হচ্ছে কোনো অতৃপ্ত আত্মা পিছু নিয়েছে 
সবকিছুই নিরস লাগছে 
সত্যিই কি তবে ভাঙনের ঢক্কানিনাদ বেজে উঠলো ?

মাহমুদ আল হেলাল উজ্জামান 
ঘরে'ই থেকো
ভালোবাসা পৌঁছে দেবো তোমায়

তুমি শুধু 
বোশেখ এর সানকি ভরা পান্তা 
তোমার দুয়ারে দাঁড়ানো মানুষের মাঝে 
হাসিমুখে বিলিয়ে দাও !

আয়োজক বন্ধুকে বলো
ধরলা নদীর পাড়ে স্থগিত চড়–ঁইভাতির চাঁদার অঙ্কটায়
চাল, ডাল, নুন, তেল, সাবান কিনে
ওপারের চরে ঘরবন্ধ মানুষের সাথে
আত্তীকরণ হয় যেন!

রাতের আঁধারে চোখ-কান খোলা রেখো
লজ্জায় যাচে না যারা, শুনতে পারো যদি 
প্রতিবেশীর সকরুণ আর্তনাদ
সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিও দু'চোখ বুঁজে 
কাউকেই বলো না জেনো সে কথা!

যারা ঋণী আছে তোমায়
তাড়া নয়, ভরসা দাও আবার
ফিরে আসবে ঠিক ভালোবাসা পৌঁছে দিতে।

হা-হা'কার বিষণœতার এই চৈত্র, মৃত্যুভয়ের
কালবৈশাখী কেটে যাক। ক'দিন পরেই
আরেক চৈত্র শেষে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে
আসলে বৈশাখ- আমি আসবো আর সকলে মিলে
ফুলডালা হাতে ভালোবাসার নৌকো চড়ে।
তুমি ঘরেই থেকো
ভালোবাসা পৌঁছে যাবে তোমার ।

আদিবা নুসরাত
সরলরেখা

দুপুরের রোদ নিভে গেলে
আচমকা চৈত্রের বিকেল
ভর করে আমার উঠানে,
তুমি আর আমি পাশাপাশি শুয়ে
ক্রমশ দূরত্ব ঘনিয়ে আসছে
পৃথিবীর সাথে আমাদের।
শীত চলে যায়
তবুও কুয়াশা জমে থাকে
কেন?-
সেসব অজ্ঞাত কারণ
তোমার জানা নেই বলে
তুমি শুকনো ধূলো উড়াতে উড়াতে
ছুটে যাও...
আমি ঘোলা চোখে মাছিদের উড়াউড়ি দেখি
অত:পর
সময় জমে জমে ঘড়ির কাটা ক্ষয়ে গেলে
মহাপ্রলয়ের ঘন্টা বেজে উঠে।

সমীর রায় কল্যাণী
পুনশ্চ প্রত্যয়

আমি অনুভব করি, সব আছে আমার,
আসলে কিন্তু কিছুই নেই আমার।
অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো
সব হারিয়ে ফেলেছি
আমার শ্বাস, প্রশ্বাস উষ্ণ তরঙ্গের মতো,
জীর্ণ পোশাকের মতোই শীর্ণ,
রক্তে অভাব লোহিতকণিকার।
নির্জনতার এই রহস্যময়তা
একান্তই আমার নিজস্ব।
কেননা ভালোবাসার বিকল্প
“মৃত্যু”।
“মৃত্যু”?? নারীর আলিঙ্গনের মতো পেলব,
মহাজাগতিক, সুচারু ও প্রগাঢ়।
একটি জীবাণু কখনো কখনো শহীদ হয়,
সুগন্ধি সাবানের ফেনায়,
স্যাভলনের তীব্রতায়।
আমার মধ্যে যে শাশ্বত শয়তান বাস করে,
সে কোনো মোহিনীর সংকেত বোঝে না।
খোলা সাহস বুকে নিয়ে
প্রতিটা সম্ভাব্য নৈশব্দকে
করমর্দন করি।
মুখোশে আমার বয়েস বেড়ে যায়
একটা প্রতারণা থেকে আরেকটায়,
নির্বাসিত আকাশ ও চমৎকার ভোরের জন্য,
নিঃসঙ্গ প্রতারিত প্রেমিক
সাঁজিয়ে রাখে একটা মৃত সকাল।
বিহঙ্গ, সম্পর্কের সুর সৃষ্টি করে,
কারোর সৌন্দর্যের ঐশ^র্যকে লুঠ করেনা,
বে- হিসেবির মতো উড়িয়ে দেয়না কারোর সুখ।
অমৃতেও আমার সমান ভাগ আছে
শুধুমাত্র সেই চাওয়াতেই
কি আমার শিরোচ্ছেদ?
প্রত্যেক ক্ষত চিহ্নের পিছনে
একটা করুণ ইতিহাস আছে।
প্রতারণা, ভালোবাসা ও
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের।
বারান্দার জানালায়
কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ
হাওয়ায় রজনীগন্ধ্যার সুবাস
ছুঁয়ে দেওয়া ঠোঁট বলে দিলোÑ
বসন্ত আসেনি।
চৈত্রের দমকা দাবদাহ
আশ্রয় খোঁজে নীরবতার
উপচে পড়া অতীতের বর্ণহীন
গন্ধ মেখে...

অণুগল্প
শূন্যতা
শামসুল কিবরিয়া

এটা কোনভাবেই বিশ্বাস হয় না  যে প্রিয় বন্ধু পার্থ আর কোনদিন আমাদের সাথে কথা বলবে না। বিশ্বাস হবেই বা কেমন করে। গতকাল সন্ধ্যায়ও আমরা একসাথে বসে মনা ভাইয়ের চায়ের দোকানে বসে কত উজির নাজির মেরেছি।  সে আড্ডায় পার্থ তার তীব্র প্রাণশক্তি নিয়ে বরাবরের মতোই হাজির ছিল। আমাদের দেয়া যুক্তিগুলোর অনেকগুলোকেই পাল্টা যুক্তি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল।

সে এমনই। মাঝে মাঝে তার এমন আচরণ খারাপ লাগলেও তা আমাদেও বন্ধুতার সাথে খাপ খাইয়ে গিয়েছে। আর এটা বলতে আমাদের কারোরই কখনও দ্বিধা হয়নি যে তার পড়াশোনা জানার ব্যাপ্তি আমার, রওশন আর প্রাঙ্গণের চেয়ে বেশি বলে তার কথার ওজন অন্য বন্ধুদের কথার চাইতে বেশি  হয়। তবু কেউ কাউকে ছেড়ে দিতে রাজি হই না। এসব তর্কÑবিতর্ক, যুক্তি পাল্টা যুক্তির ভেতর দিয়ে আনন্দ হিল্লোলে ভেসে যাওয়া আমাদের জীবনযাপনেরই অংশ হয়ে উঠেছে। এই পার্থ এখন আর মনা ভাইয়ের চায়ের দোকানে  বা কলেজ রোডে বা স্টেশন রোডে আমাদের সাথে বসে আর কথা বলবে না এটা কিভাবে মেনে নেবেন?

ভোরে রওশনের ফোনে এমন একটি খবর পেয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি। তার কথা যেন আমার সবকিছু এলোমেলো করে দেয় মূহুর্তেই। বারবারই রওশনকে বলতে থাকি এটা সত্য হতে পারে না। কিন্তু ব্যক্তিগত আবেগই  কি সব? পার্থ যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে এটাই বাস্তবতা। পাগলারে এমন কাজ কেন করতে গেলি। কেন নিজের হাতে নিজেকে মারতে গেলিÑ ফোন না কেটেই আমি বলে ফেলি। ওপাশ থেকে রওশনের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। তাড়াতাড়ি বের হয়ে পার্থদের বাসায় যাওয়ার কথা বলে সে কল কেটে দেয়।

পার্থদেরবাসায় পৌঁছে দেখি এই ভোরেই লোকজন এসে গেছে। এরা তাদেরই প্রতিবেশী। পার্থর ঝুলন্ত দেহটা ইতোমধ্যে কেটে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ এসে ঝামেলা করতে পারে তবু তাকে বীভৎস অবস্থায় ঝুলতে দেখে তার বাবাই নাকি কাকে দিয়ে নামিয়ে এনেছেন। আশেপাশে জড়ো হওয়া মানুষগুলোর মনে যেন একটি প্রশ্নই ঝুলে আছেÑ ছেলেটা কেন এভাবে মরতে গেল? ঘটনার আকস্মিকতা যেন সবাইকে বিমূঢ় করে দিয়েছে।

পার্থ কোন সুইসাইড নোট রেখে যায়নি। তার মুখ দিয়ে কোনদিন ভুলেও বেরিয়ে আসেনি যে সে আর বাঁচতে চায় না। বন্ধুরা এক অপরের বথা অনেক কিছু জানলেও গোপনতম কথাটি কি আর জানা সম্ভব হয়? পার্থর কথাও আমরা জানতে পারিনি।
এখন আমরা ভাবছি এটা কি হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নাকি দীর্ঘদিন ধরেই সে এ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। নিজের সাথে এমন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল যাতে সে পরাজয় বরণ করে।

কলেজের পড়াশোনা ভালো যাচ্ছিল না বলে একাধিকবার বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে আর বাবার টাকার শ্রাদ্ধ করেছে। এটা কি তার মনে গভীর কোন প্রভাব ফেলেছিল? নাকি একই সাথে কলেজে ভর্তি হওয়া অবন্তিকে নিজের করে পাওয়ার ব্যর্থতা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল? নাকি বাবার সাথ চাচাদের সম্পর্কের জটিলতাÑ যা দীর্ঘদিনের বন্ধু হওয়ার কারণে আমরা অনেকটাই জানিÑ তার মনে কোন বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল? তার আত্মহত্যার জন্য কোন কিছুরই আসলে যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাই না।

এরপর পুলিশ আসে । আইনি প্রক্রিয়াগুলা শেষে তার দাফন হয়। আমরা শেষহওয়া পর্যন্ত থেকে একত্রে বেরিয়ে আসি এরপর হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের অজান্তেই চলে যাই মনা ভাইয়ের দোকানে। পার্থর সাথেএখানেই একান্ত সময় বেশি কাটানোর কারণেই হয়তো আমাদের পা সেদিকে চলে যায়। এরপর আমরা চলে যাই কলেজ রোডে, সেখান থেকে  হেঁটে হেঁটে চলে আসি স্টেশন রোডে। আমরা টের পাই আমাদের সাথে সাথে চলছে এক বিশাল শূন্যতা।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক