Monday, May 25, 2020

শিল্প সাহিত্য ৩১

বৃহস্পতিবার ৩১শে বৈশাখ ১৪২৭, ১৪ই মে২০২০



কবিতা
সিদ্ধার্থ সিংহ
ঘটনাটা ওদেশের

ভদ্রমহিলা গেছেন শপিংমল-এ।
সারা সপ্তাহের জন্য কিনছেন চাল-ডাল, আলু-পটল, তেল-লঙ্কা
শো-কেস থেকে জ্যাম-জেলি, সেন্ট, দুধের কৌটো
ঝুড়ি থেকে মুরগি, জিইয়ে রাখা মাছ
কোণের কাউন্টার থেকে ওষুধপত্র।
যেতে যেতে নজরে পড়ল সামনের খাঁচায় কতগুলো বালক।
স্বামী ভীষণ ব্যস্ত, তিনি আরও।
ফাইফরমাস-খাটা রোবটদের থেকেও এগুলো অনেক সস্তা
তাই এক পলকেই পছন্দ করে ফেললেন তাগড়াই একটা।

বাড়ি ফিরে ছেলেটাকে বললেন, জল দিতে
ছেলেটি দিল না।
এটা করতে বলেন, সেটা করতে বলেন
কিন্তু কে শোনে কার কথা!

ভদ্রমহিলার কেমন সন্দেহ হল
তিনি এক হ্যাঁচকায় খুলে নিলেন ছেলেটার জোব্বা
পিঠে চোখ পড়তেই--- এ কী!

তিনি আলু-পটল, জ্যাম-জেলি, মুরগি-মাছ
এমনকী, ওষুধগুলোও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন
--- নাঃ, সব ঠিক আছে, শুধু এই একটা জিনিসেই
দোকানদার তাকে বড্ড ঠকিয়েছেন
এর ডেট এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছে অনেক আগেই।

ভদ্রমহিলা ছুটলেন দোকানে
এই ত্রুটির জন্য ক্ষমা-টমা চেয়ে
দোকানদার তাঁকে বেছে নিতে বললেন অন্য একটা বালক।
তার পরে হাঁক পাড়লেন।
ধুমসো মতো দুটো লোক এসে
ছেলেটাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল ভেতরে।
সেটা দেখে ভদ্রমহিলার বড় মায়া হল, তিনি জিজ্ঞেস করলেন---
ওকে কি আপনার মেরে ফেলবেন?
নির্বিকার ভাবে দোকানদার বললেন---
না না, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আছে না...

শুভ্র সরখেল
গোল্লাছুটের দিনগুলো 

শব্দ
এসো আরেকবার দগ্ধো করো আমার রাষ্ট্র
বিচ্ছিন্ন করো ----
নিদ্রার মাঝে কিছুটা খানিক স্বপ্ন
দীর্ঘায়ু করো -----
মস্তিষ্কে নিকোটিনের আহ্বান
শব্দ
তুমি আরেকবার এসো !

গন্ধ
চলো আরেকবার যাই মায়ের কোলে
স্পষ্ট করো -----
রোদের উঠানে জলপাইয়ের রঙ
নষ্ট করো ------
ব্যাবহারিক ক্লাসের সোডিয়াম মুহূর্ত গুলো
গন্ধ
চলো আরেকবার যাই !

অনিয়ম
এসো আরেকবার আমার ল্যাপটপে
ছবি এঁকো -----
সবুজ খাসে গোল্লাছুটের কাহিনী
মেরে ফেলো -----
জীবিকার তাগিদ কিংবা কর্পোরেট জুতা
অনিয়ম
আসো আরেকবার !

রুদ্র সাহাদাৎ
শূন্যতায় ভেসে যাই

উদ্বাস্তু মানুষ হারাচ্ছি সবই
ঘর-বাড়ি, সংসার, সমাজ, প্রিয়জন
আকস্মিক জিততে জিততে হেরে যাই
শূন্যতায় ভেসে যাই, মধ্যবিত্ত জীবন।

বালুচরে চেয়ে দ্যাখি পুড়ে যায় রোদ্দুর 
নগ্ন পায়ে শামুক খোঁজে কিশোর বালক।
উল্টোপথে হাঁটার লোকই শুনি বিশ্বজয়ী 
বড়কর্তার ইশারা বোঝে না পুড়া চোখ।

উদ্বাস্তু মানুষ হারাচ্ছি সবই
বুঝি না পৃথিবীর লীলাখেলা 
হাঁটছি মাইলের পর মাইল, দৌঁড়াচ্ছি
শূন্য খাতায় শূন্যতা আঁকছি...

শামীম সৈকত
জীবন ও মৃত্যু বিষয়ক

মৃত্যু খুব ভয় পেয়ে আঁকরে বেঁচে আছি।
দুঃখবিলাসী ফুল ফোঁটে, ঝরে যায়, শুধু
প্রজাপতি টিকে থাকে অন্য ফুলে।

পায়ের নীচের মাটিও স্থির নয়
জেনে ফুলের কাছে আমার কোনো
দাবি নেই।

তলানিতে কিছু রেখো, জলের উপরে
ভেসেই যাচ্ছি শুধু! সাঁতারে
আলসেমি আছে। ক্রমশ ডুবেই যাচ্ছি,
আঁকরে ধরা জনজীবন, হাতের মুঠো
খুলে দাও।

চরম জলসত্য ভেবে, ডুবে গ্যালো
লোকটা। আমিকে ভাগ করে হারিয়ে
গ্যালো লোকটা। এখনও ডুবে যায় নি
লোকটা। শুধু সাঁতারের আলসেমি।

ফুলটির স্বীকৃতি ছিলো না, বসন্ত
আসার আগেই ঝরে গ্যালো হলুদ কুঁড়ির!

গোলাম মোস্তফা
খুঁজে ফেরা

কত খুঁজি--- এথায় খুঁজি সেথায় খুঁজি
খুঁজে খুঁজে পথে মরি
একে বলি ওকে ধরি
তবু খোঁজা হয় না যে শেষ ।
আকাশ খুঁজি পাতাল খুঁজি, পেলাম না কোথাও লেশ।

বুকের মধ্যে করে হু হু
আশেপাশে আছে বহু।
তবু খোঁজা হয় না যে আমার শেষ।

মনের কথা মনেই থাকে হয় না ব্যক্ত যে
কারে বলব এ কথা কখন আসবে সে।

মাঝে মাঝে গুমরে ওঠে লুকানো হয় দায়
ধারেকাছে কত আছে, তবু পাই না সায়।

তরুলতা-পশুপাখি সবার কাছে জিজ্ঞেস করি
কোথায় আছে সে
সবকিছুর বিনিময়ে তাকে এনে দে।
মনের জ্বালা করতে দূর তোদের আমি পায়ে ধরি।

তোরা আমায় তাকে এনে দে। 

সুদীপ্ত ভৌমিক শান্তনু
অন্যরকম দিনযাপন

খোলা জানালার কার্নিশে দাঁড়ালে, বিস্তৃত এক আকাশ দেখা যায়।
ভোরের আলো পরিষ্কার হলে কোরানের তেলাওয়াত কানে আসে।
অদূরের বারান্দায় রোজ সকালে ভেজা লুঙ্গি শুকোতে দিয়ে চলে যায় এক তরুণ। 
পাশের খোলা ছাদের ঝুলদড়িটায় কাপড় নাড়ে এক মাঝবয়সি নারী।
রাস্তার ধারে ঝাঁকাভরা সব্জি নিয়ে কোথা থেকে এসে জোটে কতক রোজদোকানি।
এলুমিনিয়ামের টুংটাং শব্দে জেগে ওঠে পাড়ার রেস্তোরাঁটা।
পাশের টংদোকানটায় বাংলা সিনেমায় মেতে ওঠে জনাকয়েক চা-খোর।
গলির মাথায় মোটররিক্সা নিয়ে রোজ দাঁড়িয়ে থাকে এক পঙ্গু রিক্সাওয়ালা।
রোজকার মতো জেগে ওঠে এক চলমান চৌকোণো জীবন্ত ক্যানভাস, আমার জানালায়।
এভাবেই ভোর হয়, আসে সকাল। 
দিন গড়িয়ে দুপুর, ক্লান্ত বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যে ঘনায়।
নেমে আসে রাত। 
আলোকিত হয় আমার জীবন্ত ক্যানভাস। তারপর...
ঘনিয়ে আসা অন্ধকার রাতের সাথে আলোগুলোও মিলিয়ে যায়।
আরেক নতুন সকালের অপেক্ষায়।
যায় দিনের পর দিন, রাতের পর রাত।
বয়ে যায় সময়। 
এভাবেই রোজকার জীবন জেগে উঠত প্রতি সকালে, ঘুমাত প্রতি রাতে।
ইদানিং কেমন যেন বদলে গেছে সব। 
কোনো এক বিস্ময় আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা পৃথিবী।
আজন্মের ধুলো ধুয়ে প্রকৃতি যেন সাজতে চাইছে এক নতুন মায়ায়।
তাই,
রোজকার মতো জেগে ওঠা চলমান চৌকোণো জীবন্ত ক্যানভাসটা আর জাগে না আমার জানালায়।
গলির মাথায় মোটররিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না সেই পঙ্গু রিক্সাওয়ালা।
পাশের টংদোকানটা বন্ধ। ঘুমিয়ে পড়েছে রেস্তোরাঁটাও।
সব্জির ঝাঁকাওয়ালাদের সংখ্যাও কমছে দিনকে দিন।
ছাদের ঝুলদড়িটাও শুন্য বাতাসে দোল খায়, বারান্দার দরজাটাও বন্ধ কদিন হয়ে গেল।
কেবল,
ভোরের আলো পরিষ্কার হলে কোরানের তেলাওয়াত কানে আসে আজও।
খোলা জানালার কার্নিশে দাঁড়ালে, বিস্তৃত আকাশটা আজও দেখা যায়।

আপন রহমান
ক্ষুধার কথকতা

নুয়ে পড়া বিকেলের-বাদামী রোদ্দুরে বসে; পশ্চিমের সূয্যিটাকে মনে হয় ঝলসানো রুটি!

চেয়ে দেখো;
হালের সুকান্ত আমি নিজেই-
নিয়তির কলম দিয়ে পেটের জমিনে লিখে যাই ক্ষুধার কথকতা!

পড়ে নাও- বুঝে নাও- যদি থাকে অন্তরে আলো।

-না থাকলে?
জনপদে জ্বলা ঐ শোকের মলিন চিতা থেকে আগুন এনে অন্তরে ঢালো; বুঝবে তবে সব...
এ নিঠুর সময় একে একে কেড়ে নিলো নগর - শহরের যত হাসি কলরব - ছন্দ - আনন্দে মোড়া গীতি...

নিতে পারলোনা- শুধু নিতে পারলোনা ; জঠরে জ্বলা ক্ষুধার আগুন; বড়বেশী তেজ বুঝি তার?

ভেসে যাক সে প্রশ্ন মহাকালের দ্বারে...
হালের সুকান্ত লিখুক- ক্ষুধার কথকতা...
আর?
-ক্যামেরায় বন্দী থাক তোমাদের এইসব মেকি মানবতা!

ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: জঁ ককতো
মন্টমার্টির উৎসব

এমন বন্যভাবে দোল খেয়ো না চারপাশে
আকাশ সবকিছুর অধিকারী
বিশুদ্ধ জল নাবিক অন্ধকার রাত্রি
উপহাস করে তোমার সোনার নোঙর
পান করে নীরবে, উঠে দাঁড়াচ্ছে
কাগজে শক্ত দাগ দেয়ার মতো 
সুগন্ধি শক্তিশালী তোমার নীলপিঠ
বীথিকা
মন্টমার্টির উৎসব

অণুগল্প
ঈশ্বর
সোমনাথ বেনিয়া

রাস্তা দিয়ে যেতে-যেতে দেখি একটি গাছের তলায় এক ব্যক্তি মাথা নিচু করে একমনে কী যেনো করছে। চুপিসারে তার পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখি একটি সাদা কাগজে রিফিল দিয়ে হিজিবিজি দাগ টেনে যাচ্ছে। কৌতূহলবশত তার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলাম - এটা কী করছেন?
       তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তার মুখ ভর্তি দাড়ি-গোঁফের মধ্যে একটি স্মিত হাসি ফুটিয়ে বললো - ঈশ্বরের সাথে দেখা হয়েছিল। তার আর আমার মধ্যে যে কথা হয়েছিল সেগুলি লিখছি।
       - তা ভালো কথা। তবে একটু পরিষ্কার করে লিখলে হতো না মানে আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা পড়তে পারতাম। বুঝতে পারতাম আপনার সাথে ঈশ্বরের কী কথা হয়েছিল ...
       একইরকম মুখভঙ্গি রেখে তিনি বললেন - কী বললেন, সাধারণ মানুষ! তা সাধারণ মানুষ কি ভগবানের দেখা পায়?
       তাই তো! আমিও যেমন। যারা ঈশ্বরের দেখা পায়, তারা কি সাধারণ মানুষ!
       বললাম - আমি আপনার মতো অসাধারণ মানুষ হতে পারবো না। তবে ভগবানের সঙ্গে তো আপনার আবার দেখা হবে বলে মনে হয়। তা দেখা হলে বলবেন তিনি যদি আমাদের মাঝেসাঝে দেখা দেন ...
       এই কথা শোনা মাত্রই তিনি সেই কাগজটিকে চার টুকরো করে ছিঁড়ে আমার হাতে দিয়ে বললেন - এগুলো জুড়লে আপনি ঈশ্বরকে পাওয়ার পথ খুঁজে পাবেন। এই বলে তিনি চলে যাওয়ার পর সেখানে বসে সেই চারটুকরো কাগজকে মেলানোর চেষ্টা করলাম। সেই হিজিবিজি রেখাগুলোই ফুটে উঠলো। কী মনে করে সেই কাগজগুলিকে সাবধানে ধরে উলটে দিলাম। দেখি, পিছনে একটি মূর্তির স্কেচ তৈরি হয়ে রয়েছে ...

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক