Saturday, May 16, 2020

শিল্প সাহিত্য ০২

বুধবার ২রা বৈশাখ ১৪২৭, ১৫ই এপ্রিল ২০২০



কবিতা
অনিন্দ্য দ্বীপ
বন্দি জীবনে আকাশগুচ্ছ

এবার শীতে কোথাও যাচ্ছিনা সুপর্ণা
পাঠ্যতালিয়ায় যোগ হবে উষ্ণতার শ্লোক
ধীর লয়ে মুখস্ত করবো পাখিপুরাণ
আর রোদের গতর খুলে বিগত ভ্রমণ
জলকুণ্ডলীর ফোঁস থেকে তুলে নিবো
ইউলিসিসের জাহাজ
এক লহমায় গিলে খাবো নাবিকের
যুদ্ধ জয়ের অভিজ্ঞতা
ঋদ্ধতার বর্নে ছবক নিলে প্রেম
বালি  ফেনায় বাঁজে মৈথুন গীত
শীরনাস্ত্র খুলে ফেলে মহাবীর ঈনিড
কোমরে গুঁজে নেয় প্রণয় রুমাল
তার রুমালের ঘ্রাণে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি-
এবার শীতে কোথাও যাচ্ছিনা সুপর্ণা
মির শরীর থেকে খুলে নিয়ে যুদ্ধের ইতিহাস
নির্বাসনে পাঠাবো সমর কৌশল
প্রতিটি বুকের বামপাশে ডাকবাক্স প্রতিষ্ঠা পেলে
আমি তার ডাকপিয়ন হবো....

পলিয়ার ওয়াহিদ
প্রতিকৃতি

একদিন গরুর চোখের মায়া নিয়ে
আমাকেও মাখতে হয়েছিল কলঙ্ক
কিন্তু কি এক অপর মহিমায়
কিংবা মস্ত নাসিকার গুণে
সমাজের নষ্ট দুর্গন্ধও
গ্রহণ করেছি সুঘ্রাণের রাষ্ট্রে

নাজমুল হোসাইন
স্টপএজেন্সি

ফুল আপনারে থামায়া দিলেফুলস্টপ

স্টপ থেকে স্টেশন পর্যন্ত পথ
গাড়ি থেকে রেল
দুইটি ডটের মতো কাছাকাছি আসতে পারে না

শরীর ফিলিংপোর্ট
ল্যান্ডিং স্টেশন

শব্দ তৈরি হয় (নই)শব্দ ভেঙে
আমাদের প্রেমশব্দের পিঠে বসা বাদুড় বয়ে আনুক

স্পর্শহীন শরীরেডট ডট ডট সদৃশ স্টপএজেন্সি

অদিতি শিমুল
দাহ্যগন্ধ-
----------------------------------------------------------------------
আমি রাজহংসী বলছি---
কেটে-কেটে পানির ওপর দিয়ে
ভাসছি আমি---ভাসছে সময়---!
চেনা বীভৎস জগৎ থেকে অনেক দূরে
ভেসে চলে এসেছি। তোমরা কেউ আমাকে
খুঁজে আর পাবে না ---
ছিলাম কোথায়---কোনখানেকোথায় যাব!
আমি রাজহংসীনা-হলে আমার চারিদিকে কেন
এত জলরাশিএকটি পাতা ভেসে যায়---হাত বাড়িয়ে ধরতে যাই--পারিনা---আমার তো হাতই নাই--পুড়ে গেছে---আমি কেবল কান্নার শব্দ পাই!!!
কে কাঁদে!----নাকি কোনও পাখিরাতচরা পাখি!
ঘুমঘুম সুরে --সাপখেলানি মায়ায় কে গায় অশ্রæ এই গানএই অসময়ে কেঁদে লাভ নেই।
তোমরা জানো নাআমিও প্রেমিকা---কারোর স্বপ্নের সাধনার হীরামন পাখি!!! 
এই লওহেমাহফুজের স্বীকৃত মানুষ রূপ ছিল আমার---এতোটুকু সন্দেহ নাই---তোমরা যারা মানুষবিশ্বাস করো---এখন আমি আগুনে পুড়ে---আমি যেন আমি নাচেয়ে চেয়ে দেখি---দূর নাকি নিকটে---বুঝিনা কিছুই।মানুষের গন্ধ পাইদাহ্যগন্ধ উড়ে আসে আশেপাশেঅসহ্য যন্ত্রনা!!!
আমি যেন আমি না ---আমার শরীর জুড়ে যন্ত্রনা-
আমার বাবা নাকি নাকি ভাই---নাকি প্রেমিকপুরুষ!
আমার শিক্ষকসম্ভ্রম লুটে নেয় আমার!
তোমাদেরতো "মানুষ " নাম!
সেই নিয়মে আমিও মানুষ ছিলাম  কিন্তু এখন আমি লাশ---শবদেহ---আমি এখন কবর---মায়ের চোখের আজন্ম পানি!!!
আমি রাজহংসী--নারী--- আমি জননী---আমি কন্যা---
আমি প্রেমিকা কারোর,স্বপ্নের ঐশ্বর্য ---

আমি যেন আমি না--- কারোর কন্যা নই---বোন নই---প্রেমিকা নই---আমি -নে- দূরের কেউ।

শাদা-শাদা হাঁসের স্রোতকাফনে মুড়ে রাখা প্রাণ,
আমিও অপরূপ সেজে ---এক সারিতে!
হতে পারে তোমাদের পৃথিবীতে এভাবে
সারি-সারি রাজহংসী মরে যায় কিংবা তোমরা মেরে ফেলে দাও--- এখানে কেউ আর পারবেনা ছুঁতে আমাকে। 

ভুল দ্রাঘিমা---ভুল প্ল্যানেট---ভুল স্থানে---
যেখানে আমি মানুষ নামক মাংসাশীদের বীভৎস জিভের খাদ্য হই ---অই নরকের আমি কেউ নই---কেউ না।

অণুগল্প
ইনভেলাপঃ দ্য নেক্সট সিনেমা
মোহাম্মদ জসিম

দোতলার সিঁড়ির সাথে তিনতলার সিঁড়ির ঝগড়া এখন তুঙ্গে। কেউ কারো মুখ দেখে না।একেঅন্যের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। মধ্যখানটা ফাঁকাধুলো উড়ছে।এখন চারতলায় পৌছুতেহলে লাফ দিতে হবে।
লাফানোর অভ্যাস নেই গুলজারের। ভারী শরীর নিয়ে এতটা লাফানো যায় না।
ক্যামেরায় চোখ রেখে গুলজার টের পায় তার ভেতরেও এমন বিশাল একটা ফাঁকা জায়গা।সেখানে কতগুলো টবমাটিভর্তি।মৃতপ্রায় ক্যাকটাসভাঙা গোলাপগাছমৃত রজনীগন্ধা শুয়ে বসে সময় পার করছে টবে টবে।
এতদিনে গুলজারের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে বউ-বাচ্চাবন্ধু-কলিগএমনকি শত্রুরাও।ফাঁকা হয়ে গেছেদুভাগ হয়ে গেছে জীবন। বিবাদমান সিঁড়ির মতো।
গুলজার এখানে এসেছিলো সিনেমা বানাতে। অথচ সে চারতলায় পৌছুতে পারছে না।
অগত্যা দালানটি থেকে নেমে এলো সেঅন্য দালানে যাবে।
অভিনেতা দীল মুহম্মদের বাড়িতে উইকেন্ড পার্টি। পাথুরে জমিতে জুমক্ষেতগোলাপ বেলী শিমুল।নেতিয়ে পড়া বয়স্কা ধুতুরাও।গুলজার একটি হাস্না তুলে নিতে চেয়েছিলো,  কিন্তু তার আগেই হাস্নাহেনা নিজেই তাকে তুলে নিলো।
হাস্না কিংবা হেনার গোলাপি শিফন শাড়ীহাতাকাটা øাউজ আর চিকন স্ট্র্যাপের ব্রা।৩৬ বয়স কিংবা বুকের মাপ উভয় ক্ষেত্রেই মানানসই। দু'টো সিঁড়ি একে অপরের দিকে এগুচ্ছে।তারা টেরেসের দিকে চলে গেল।
হেনা যথার্থই রূপসী। ঝলমলে। তার জীবনে অন্য সিনেমা আছে।গুলজার সেইসব সিনেমায় ঢুকতে চাইলেও হেনা ফিরে তাকাতে চায় না।খাম না খুললে যেমন ভেতরের দুঃসংবাদটি পড়া হয় না।গুলজার খামটি খোলেনিবরং না খুলে হাতে ধরে রাখতে ভাল লাগছিলো তার।
খামটিকে স্পর্শ করে পুলক পায় গুলজার। চুমু খায়। কচলায়। দলাই মলাই করে। ৩৬ আদর্শ। পাঁচ আঙুলে খাপ খেয়ে যায়।
একটা আর্টফিল্ম করবো এবার। ইনভেলাপ। তোমাকে কাস্ট করতে চাই।
আমাকে খামে ভরতে চাওআগে নিজে তো ঢোকো মশাই।
হেনার হাসি রিনঝিনিয়ে বাজে। মৃদু মৃদু টুং টাং শব্দ হয়।
গুলজার সরীসৃপ হয়দোতলার ল্যান্ডিংয়ে কারো পায়ের আওয়াজ নেইনির্ভয়ে খামে ঢুকে যায় সে।
ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় শেষ। হেনা যে সিঁড়িগুলো বেয়ে উপরে উঠছে সেগুলোর মধ্যখানটাফাঁকা।গুলজারের সিঁড়িতেও এমন একটা ফাঁকা আছে।অথচ তারা যেখানে সিনেমা করেছিলোসেই সিঁড়িগুলো কেমন একটা আরেকটার উপরে উবু হয়ে পড়েছিলো। এত্ত কাছাকাছি!
আলাদা আলাদা দরজার তালায় প্রায় একই সময়ে চাবি ঢোকায় তারা। যে যার খামে ঢুকে যায়।
ফাঁকা সিঁড়িগুলো পড়ে থাকে যেমন ছিলো।আর সেই শূন্য জায়গায় কয়েকটি টব পড়ে থাকে অযতেœ, টবে টবে শুকনো ঢেঁড়সগাছ।

ভাষান্তরকায়েস সৈয়দ
মূলমাও সে তুঙ
চিং পাহাড়ের দিকে তাকাও

(হি চিয়াং ইউয়েহ এর সুরের প্রতি)
পাহাড়ের নিচে উড়ে আমাদের পতাকা  ব্যানার
পাহাড়ের ড়ায় বাজে আমাদের বিউগল  ড্রাম
আমাদের ঘিরে রাখে হাজারো শক্তিশালী শত্রু
অবিচলিতভাবে আমরা থাকি আমাদের মাটিতে
ইতোমধ্যেই আমাদের প্রতিরক্ষা লৌহাবৃত
এখন আমাদের ইচ্ছেগুলো দুর্গের মতো ঐক্যবদ্ধ
হুয়াং ইয়াং চিহ হতে বন্দুকের বজ্রতুল্য গর্জন
শব্দ আসে রাতের মধ্যেই পালিয়ে গেছে শত্রু

পুনর্পাঠ
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
একটা গাছ তলায় দাঁড়িয়ে

 ...এতগুলো শতাব্দী গড়িয়ে গেলমানুষ তবু ছেলে মানুষ রয়ে গেল
কিছুতেই বড় হতে চায়না
এখনো বুঝলো না ÔআকাশÕ শব্দটার মানে
চট্টগ্রাম বা বাঁকুড়া জেলার আকাশ নয়
মানুষ শব্দটাতে কোন কাঁটা তারের বেড়া নেই
ঈশ্বর নামে কোন বড়বাবু এই বিশ্বসংসার চালাচ্ছেন না
ধর্মগুলো সব রূপকথা
যারা এইরূপ কথায় বিভোর হয়ে থাকে
তারা প্রতিবেশীর উঠোনের ধুলোমাখা শিশুটির কান্না শুনতে পায়না
তারা গর্জন বিলাসী...Õ

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক