শুক্রবার ৪ঠা বৈশাখ ১৪২৭, ১৭ই এপ্রিল ২০২০
কবিতা
আশিক আকবর
বেশ্যালয়ে এসো
তীর্থ প্রবেশ কালে প্রার্থনা করো। প্রস্থান কালে হাতাও পকেট। দ্যাখো,
খুচরো টুচরো আছে কিনা বিড়ি ধরাবার। নারীসঙ্গে ঐ স্থানই শ্রেষ্ঠ দেবালয়। কোআরেনটাইন সাঙ্গ হলে,
ওখানেই কবিসঙ্গে আড্ডা পেটাবো।
সর্বজনে আদরে কহিবো। স্বাক্ষাৎ যদিবা চাহ,
বেশ্যালয়ে এসো। মদ মাংসে নিষেধাজ্ঞা নেই। সস্তাতেই মিলে জিলে সব। অনিষিদ্ধ পৃথিবীর মতো বড় বড় পাত্তি লাগে না। শিখতেও হয় না নারীর ব্যাকুল বোবা ভাষা। সরব এখানে নারী পুরুষ অধিক। এইস্থলে কমরেড রিক্রুট অতিব সহজ। যদি চাহ কমরেড ভ্রাত!
অম্বরীশ ঘোষ
তবুও
অবেলার গ্রীবা বেয়ে ঘাম নেমে গেছে
শামুকের খোলে খেলছে সূর্যাস্তের প্রতিবিম্ব
কর্মহীনের পথফেরায় বাজছে মৃত্যুনিষাদ
অভিশাপ কুড়াবো বলেই এতো বসন্ত আসে
যাপনজুড়ে কেউ মাখিয়ে দেয় অন্ধবিলাপ
অজান্তে অসীম কুড়িয়ে জমা করে ফেলি সীমাবাক্সে
ক্লাইম্যাক্সের দিকে যাত্রা অন্য পথে গোছানো থাক
বোসবাড়ির তালপুকুরিয়া চাঁদ আমাকে চেনে না
আমি মিলনের গান গাইতে গিয়ে ছাই মেখে এলাম
ভালোবাসার কামাতুর জিভের স্বাদে ঘৃণা চুষে খেয়েছি
তবুও অমাবস্যার তারার আলোয় আকাশগঙ্গা খুঁজে রাখবো
আবু জাফর সৈকত
চেতনা
ডিসেম্বরের কবিতা বলে কী বোঝালেন
বোঝলাম না তা শেষ লাইনেও
হাত বাড়িয়ে বিব্রতই হতে হলো
পেলাম না কোথাও ৭১
প্রাচীনের গন্ধ পাচ্ছি খুব
ওদিকে দরজা বন্ধ করে আছেন মহাশয়
কিছু বলব তারও উপায় হয় না
চেতনার সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে সব
স্ট্যাটাস সিম্বল
আমিও কিনতে চেয়েছিলাম একটি সার্টিফিকেট
গিয়েছিলাম সদরের সোনার বাংলা মার্কেট
একটা হলেই চলে যেত আমার চৌদ্দপুরুষ
বাদল শাহ আলম
অতপর তুমি আমাকে নির্বিচার হত্যা করেছিলে
সেদিন ছিলো পিদিম জ্বালা ঘর । চোখে চোখ রাখতেই হৃদয়ের গভীরে ঝড়
দিনে সূর্য রাতে নক্ষত্র । চলার পথ ছিলো না অন্ধকার
সবকিছুকে হার মানাতো আমাদের মিলিত সংগ্রাম ।
একদিন সভ্যতা এলো । সভ্যতা
!
সেটিও তোমার আমার হাত ধরেই ।
অংকে বেশী বেখেয়ালি ছিলাম । লাভ ক্ষতি ধার ধারিনি কখনো ত
তুমি বেশ চতুর ছিলে । ভীষণ চতুর
!
সভ্যতার দোহাই দিয়ে র্ধম বানালে । শ্রেণী রাষ্ট্র ঈশ্বর
সভ্যতা এবং ঈশ্বরের দোহাই দিয়েই তুমি সব কিছু অধীন করে নিলে । নির্লজ্জ অধীন
বলেছিলাম শুধু প্রকৃতিতে সবাই সমান।
সেদিন তুমি প্রকৃতি ও আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলে । সভ্যতার ও বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলে
হত্যাপর্বে মেতে উঠলে ধর্মে অধর্মে রাষ্ট্রে অরাষ্ট্রে শ্রেণী আরো কতকিছুতে ।
মনে পড়ে কোন এক দিন আ্যনসাইনট ম্যারিনারের গল্প শুনিয়েছিলাম
তুমি বিদ্রæপ এবং ক্রুর হাসি হেসেছিলে ।
গ্যালিলিওর বাটনে হাত রেখে এর পর আ্যরো এন্ড দা সং শুনিয়েছিলাম
অতপর তুমি আমাকে হত্যা করেছিলে । একাট নির্বিচার হত্যা
উদয়ার্ণব
সংলাপ
আমার কবিতার বুকে ভর করে আছে
ব্যর্থ হৃদয়ের সংলাপ,
জীবনের খুনসুটি
ঘুমের মধ্যে এক মস্ত দানবকে দেখে আমি শিউরে উঠি
শিউরে উঠি এই কথা ভেবে,
আগামীকাল আমাকে আবারো একটা যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে
একটা ছাদের নিচে বহু মানুষের বসবাস
একটা ছাদ উড়ে গেলে বহু মানুষ বেঘর হয়ে পড়েন
তবু একটা কিনারা খুঁজতে খুঁজতে যখন সামান্য ডিঙি পাল তুলে অন্ধ ভবিষ্যতে দেশে পাড়ি জমায়
আমাদের হাড় বিশ্বাসের আঙ্গুলে আস্তানা খোঁজে
অণুগল্প
মায়া
মোহাম্মদ জসিম
ঘুম ভাঙতেই এক ছুটে ওয়াশরুমে-
না করার মতো কোনমতে ব্রাশ করে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেডরুমে ফিরে এলো আনিকা।
তার মন এখন নতুন আনন্দ,
উত্তেজনা ও ভয়ের দোলচালে দুলছে।
চিলের মতো ছোঁ মেরে সাইড ব্যাগটি তুলে নিলো সে। গতরাতে গুছিয়ে রাখা জামাকাপড় আর টুকটাক দরকারি জিনিসপত্র একে একে ব্যাগে ভরতে লাগলো। সবকিছু ভরা হয়ে গেলে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কিছু বাদ পড়লো কি না।
বারবার ঘড়ি দেখছে আনিকা। ঘড়িতে তখন ৫টা ২৩।
এতটুকু ব্যাগে খুব বেশিকিছু নেয়ার সুযোগ নেই। গত জন্মদিনে বাবার দেয়া হলুদ ড্রেসটির জন্য মনখারাপ হয় আনিকার। ড্রেসটিকে বের করে ব্যাগের পাশে রাখলো সে। মনখারাপ হলো দাদীমার দেয়া জরিপাড় মেরুন শাড়ীটির জন্য। সেটিকেও এনে হাতের কাছে রাখলো।
সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে মনখারাপের মাত্রা। এ বাড়িতে আর তো ফেরার সম্ভাবনা নেই,
অথচ-স্মৃতিবিজড়িত মাল-সামানগুলো যেন করজোরে মিনতি করছে সঙ্গে যাবে বলে। আনিকাও তাদেরকে হাতছাড়া করতে চায় না।
আনিকার স্মৃতিকাতর চোখের সামনেই ক্ষুদ্রায়তন ব্যাগটি যেন ভূঁইয়াবাড়ির বড় দীঘি হয়ে যায়!
আনিকা ঘোরের মধ্যে দাদুর দেয়া নীল ফ্রক,
ভাইয়ার দেয়া মেকাপ বক্স,
মায়ের দেয়া গহনা,
জন্মদিনে পাওয়া কয়েকটি প্রিয় উপহার,
প্রিয় লেখকদের বই;
এমন অনেক প্রিয় প্রিয় জিনিস জড়ো করতে থাকে। কিন্তু ব্যাগটি সেগুলো গিলতে অস্বীকার করছে তীব্রভাবে।
বাইরে পাখি ডাকছে। পাখিদের এই ডাক আনিকার খুব প্রিয়,
আরো প্রিয় এই বাড়িটা। বাড়ির ছাদ আর কাঠবাদাম গাছের সাথে ঝুলতে থাকা দোলনা। আর এ বাড়ির মানুষগুলো?
তারা কি কম প্রিয়?
আনিকা থমকে দাঁড়ায়। মন বদলে যায়। ফোন বাজে। রুদ্র ফোন দিয়েছে।
আনিকা ফোনটি রিসিভ করে। বলে—স্যরি রুদ্র,
আমি আসছি না। আমাকে পেতে হলে বাবা-মাকে রাজি করানোর চেষ্টা করো।
চাল চোর
রফিকুল নাজিম
একদম হাতে নাতে ধরা পড়েছে। তাও এমন মহামারীর দিনে!যখন পৃথিবীর সব মানুষ ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করছে।ঠিক তখন হেকিম মেম্বারের ঘরের মেঝে থেকে একে একে ত্রাণের আঠারো বস্তা চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ।বাতাসের গতিতে খবরটা ছড়িয়ে গেলো পুরো শান্তিরহাট গ্রামে। লোকজন দৌঁড়ে আসছে মেম্বারের বাড়ি দিকে।ইতোমধ্যে খবরের কাগজ ও টিভির লোকেরাও চলে এসেছে। কেউ কেউ পুরো ঘটনা মোবাইল লাইভে প্রচার করছে।
দু'জন কনস্টেবল হেকিম চোরাকে গরুর দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। কুরবানির গরুর মতো গ্রামবাসী তাকে আগাগোড়া দেখছে। মেম্বারের সকল কাজের সহকারী মজিদ হেকিমকে কানেমুখে বললো,'কইছিলাম হুজুর,এই গজবের ভিত্রে চুরি কইরেন না। হুনছেন আমার কতা?যান,এহন জেলে গিয়া পঁইচা মরেন।'
মাথা নিচু করে লাটিমের মতো ঝিম ধরে আছে হেকিম। হঠাৎ সে মজিদের টুটি চেপে ধরে,'হারামির বাচ্চা মজিদ,
তুই আমার লগে ইমুন নিমুকহারামি করতে পারলি?'
ভাষান্তর:
কায়েস সৈয়দ
মূল:
মাও সে তুঙ
কুয়াঙচঙ রোডে
(চিয়েন জু মু লাল হুয়া এর সুরের প্রতি-
ফেব্রæয়ারি ১৯৩০)
বিস্তীর্ণ সমস্তপৃথিবী সাদা
তুষারের পথ অধীর আগ্রহে নিঙড়িয়ে যাই আমরা
আমাদের মাথার উপর আবছাভাবে আবির্ভূত হয় দুরারোহ পাহাড়
পার হই সুবিদিত গিরিপথ,
বাতাসে দোল খায় লাল পতাকা
কোথায় আবদ্ধ আমরা?
তুষার বয়ে গেছে কান নদীর কাছে
গতকাল আদেশ দেওয়া হয়েছে
এক লক্ষ শ্রমিক ও কৃষক লং মার্চ করে কিয়ানে
পুনর্পাঠ
হুমায়ুন আজাদ
সাহস
এখন,
বিশ শতকের দ্বিতীয়াংশে,
সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
কথা বলা সাহস,
চুপ করে থাকাও সাহস।
দলে থাকা সাহস,
দলে না থাকাও সাহস।
এখন,
এ-দুর্দশা গ্রস্থ গ্রহে,
সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
তোমাকে ভালোবাসি বলা সাহস।
তোমাকে ভালোবাসি না বলাও সাহস।
এখন,
বিশ শতকের দ্বিতীয়াংশে,
সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
ঘওে একলা থাকাটা সাহস।
আবার রাস্তায় অনেকের সঙ্গে বেরিয়ে পড়াও সাহস।
এখন,
এ-দুর্দশা গ্রস্থ গ্রহে,
সব কিছুই সাহসের পরিচায়ক।
ঝলমলে গোলাপের দিকে তাকানোটা সাহস।
তার থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়াও সাহস।
এখন,
বিশ শতকের দ্বিতীয়াংশে,
সবকিছুই সাহসের পরিচায়ক।
আমি কিছু চাই বলাটা সাহস।
আবার আমি কিছুই চাইনা বলাও সাহস।
এখন,
এ-দুর্দশা গ্রস্থ গ্রহে বেঁচে থাকাটাই এক প্রকাÐ
দুঃসাহস।
No comments:
Post a Comment