শনিবার ১২ই বৈশাখ ১৪২৭, ২৫ই এপ্রিল ২০২০
কবিতা
সৌরভ বর্ধন
সঙ্গনিরোধ
করতলের ভাঁজে ব্যথা জমে আছে
ভাগ্যরেখা ফ্যাকাশে!
যত ভাবি এই হাত দেবো না তোমায়
তত চোখ-মুখ-নাক
কী-এক অজানা অজুহাতে
আপন হতে চায়!
দাঁতে দাঁত চেপে লড়বার এই সময়েই
দাঁতে ব্যথা শুরু হলো তাও
জন্ম জন্মান্তরের মতো যে-কথা
শুনতে চাও
সে-কথা জনমের মতো রয়ে যাবে
মৃত্যুর আগেই তার শ্বেতসার
খেয়ে নেবে জীবাণুরা
অস্ফুট স্বরে তবুও চোখ
তাকায় ভোরের দিকে সঙ্গনিরোধ
সকল গানের দিকে লক্ষ্য রাখা
রিয়ানো
অস্ত্রের মুখে স্বাধীনতা
বৃক্ষটা কেঁদেছিলো
কেঁদেছিলো মাটি
যখন সীমানা অন্য দেশের,
চিহ্নিত হলো।
শিশুটিও কেঁদেছিলো,
বৃক্ষটির একটি ডাল ধ্বসে পড়লো।
পরাজয় বরণ করাটা সুখকর কিছু নয়।
বিস্ফোরিত বোমা আমাদের ঘুম ভাঙ্গায়
ধোঁয়া হয় অক্সিজেন
ঝলসানো মৃতদেহগুলো দেয়া হয় যেন নাশতা স্বরূপ.......
এসব নিয়ে রোজই পত্রিকায় লেখালেখি হয়;
গণমাধ্যমগুলো দু'চার পয়সা কামায়
আদতে কোন পরিবর্তন আসে না।
বিজিত শক্তি রোজ প্রচার করে স্বাধীনতার গল্প!
আসলে অস্ত্রের মুখে,
সীমানা এখন অন দেশের....
পিনাকীরঞ্জন সামন্ত
আত্মদর্শন
(এটা কিন্তু কোনো কবিতা নয়, জাস্ট ডায়েরি থেকে)
A বিন্দু থেকে.................................... B বিন্দু পর্যন্ত একটি সরলরেখার যার ভিতর রাখা আছে আমার শৈশব, শৈশবের হাতে খড়ি, বর্ণ পরিচয়, আমার সে ছোট্ট দোলনা, দোল দোল, মায়ের আদর এবং ছোট ছোট খেলনা থাকা সত্ত্বেও দিনরাত কান্না এবং কোলে চাপি চাপি ভাব- যা আজও মনে আছে আমার ।
ঐ সরলরেখার মধ্যে রাখা আছে আমার সেই কৈশোরের উত্তাল উদ্দিপ্ত চঞ্চলতা, বাবার হাত ধরে স্কুলের যাওয়াা, অচল অধম আলয় থেকে ঐক্য বাক্য মাণিক্য হয়ে জল পড়ে পাতা নড়ে
এবং সুবোধ ভারি মিষ্টি বালক । পরে কিশলয় এবং রবীন্দ্রনাথ হয়ে ঠাকুর মার ঝুলি থেকে দিদিমার কাছ থেকে পাওয়া দুধ মিষ্টি দই, ল্যাবেনচুষ থেকে ঝাণডি ভাজা, বাটার জুতো
উইলসন পেন আরো কতো কী।
এবং অবশ্যই মায়ের সেই কানমলা, বাবার সেই থাপ্পড় ।
সব ঐ সরলরেখার ভিতর রাখা আছে যা
আমার আজও মনে পড়ে ।
তারপর C বিন্দু থেকে .......................upto W
যৌবন থেকে প্রসারিত একটি লম্বা হাত। সে এক ইতিহাস- ঝড়বৃষ্টি জীবন ও যুদ্ধ- এসব কিন্তু না বলাই ভালো। অনেক দোষ, অনেক পাপ জয় করে অবশেষে নিভৃত অবকাশে- চোখ চোখের ভিতর রেখে এখন রঙিন কবিতার আকাশ হয়ে আজ আমি এক বৃদ্ধ দুরন্ত যুবক ।
আপাতত এখন বাকি X Y Z। পাকা চুল, পাকা দাড়ি
এখনো সেই সরলরেখার ভিতর গাড়ি চলছে । চলছে হীরালালের পুরনো Cheverlet -
চুণীলালের পুরনো সেই স্টিম ইঞ্জিন- ধুক পুক
ধুক পুক
with some medicine. Let's see
how long it to be continued.
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: হোর্হে লুইস বোর্হেস
ডেকার্ট
পৃথিবীর একমাত্র মানুষ আমি
সম্ভবত পৃথিবী নেই মানুষও নেই
সম্ভবত আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে একজন বিধাতা
সম্ভবত আমাকে শাস্তি দেয়ার সময়
ঠিক করেছে একজন বিধাতা, যা চিরস্থায়ী বিভ্রম
স্বপ্ন দেখি চাঁদ
স্বপ্ন দেখি চোখ দিয়ে প্রত্যক্ষ করি চাঁদ
স্বপ্ন দেখেছি প্রথম দিনের সকাল ও সন্ধ্যা
স্বপ্ন দেখেছি কারথেজ এবং কারথেজ অকেজো করা সৈন্যবাহিনী
স্বপ্ন দেখেছি লুসানকে
স্বপ্ন দেখেছি গালগাথার পাহাড় ও রোমান ক্রস
স্বপ্ন দেখেছি জ্যামিতি
স্বপ্ন দেখেছি বিন্দু, রেখা, সমতল ও আয়তন
স্বপ্ন দেখেছি হলুদ, নীল ও লাল
স্বপ্ন দেখেছি আমার অসুস্থ শৈশব
স্বপ্ন দেখেছি মানচিত্র, রাজত্ব ও এর আড়ালের দুঃখ
স্বপ্ন দেখেছি ধারণাতীত দুঃখ
স্বপ্ন দেখেছি আমার তরবারি
স্বপ্ন দেখেছি বোহেমিয়ার এলিজাবেথ
স্বপ্ন দেখেছি সন্দেহ
স্বপ্ন দেখেছি অনিশ্চয়তা
স্বপ্ন দেখেছি গোটা গতকাল
হয়তো কোনো গতকাল ছিলোই না
হয়তো কখনো আমি জন্মাই নি
হয়তো আমি স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখছি
অনুভব করি কনকনে ঠাণ্ডা ভয়ের খামচি
স্বপ্ন দেখতে যাই ডেকার্টকে
এবং তাঁর বাবার বিশ্বাসকে
অণুগল্প
রাফীর মা
আবু জাফর সৈকত
ছাড়পত্র নিতে এসেছেন রাফির মা। তিনি জোট বেঁধে এসেছেন অন্য এক ছাত্রের মায়ের সাথে। রাফী এবছর ক্লাস এইটে উঠেছে। রাখবেন না, রাখবেন না, তার এক কথা। তিনি এ স্কুলে তার ছেলেকে রাখবেন না। খারাপ করলেও পাশের স্কুলে ভর্তি করাবেন। নানা রকম অভিযোগ আছে তার। স্কুল ভাল না, শিক্ষকরা ভাল পড়ায় না, ক্লাস টীচার চেঞ্জ করতে বলেছিলেন সেটাও করা হয়নি। প্রতিযোগিতা নেই। তাই ছেলের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তিনি ছেলেকে বিএম স্কুলে ভর্তি করাবেন। শিক্ষকরা নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনভাবেই তিনি বুঝতে চাচ্ছেন না। স্কুলেরই এক শিক্ষক বাসায় পড়াতে যায়। তার ব্যাপারেও অভিযোগ, তিনি ঠিকমতো কেয়ার করেন না। রাখডাক না রেখেই তিনি বলেন, স্কুল ভাল না। আসল কারণটা যদিও অন্য। পড়াশোনার নামে উনিই যে ছেলের সর্বনাস করে চলেছেন, তা কে বোঝাবে ওনাকে।
ঘুম থেকে উঠেই দৌড় শুরু। সকালে মুখ না ধুতেই নাস্তা, তারপর ব্যাগ গুছিয়ে গোসল। স্কুলের ইউনিফরম পড়তে পড়তে টিফিন রেডি। ছোট মেয়েকে নিজে স্কুলে দিতে যান একদিকে, রাফী বের হয় আরেক দিকে। ছুটির পর বিকেলে গণিত ব্যাচ। বাসায় ফিরে হোমওয়ার্ক রেডি করতে হয়। সন্ধ্যার পর বাসায় আসেন প্রাইভেট টিউটর। এতোকিছু কুলিয়ে উঠতে পারেনা রাফী। সারাদিন মুখস্ত আর মুখস্ত। মাথাটা ঝিম মেরে থাকে সারাক্ষণ। মা এতো কিছু বুঝতে চায় না। দাদীর কোলে মাথা গুঁজে চুপচাপ শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে ওর। ভীষণ ভাল লাগে যখন দাদী মাথায় বিলি কেটে দেন কিন্তু উপায় নেই। মা দেখলেই রে রে করে এসে চিৎকার করে বলেন, ‘গল্প করে সময় নষ্ট করো না। সেই সময়টা কাজের কাজ কিছু করলে পার। সামনে জেএসসি পরক্ষিা। পিইসি’তে এ+ পেয়েছ, জেএসসি’তে না পেলে মান সম্মান থাকবে না।’ মা’র কাজের মানেই হচ্ছে সারাক্ষণ পড়া আর পড়া। রাফীর মা নিজেকে ভাবেন রিমোট কন্ট্রোল আর রাফীকে ভাবেন রোবট। ওর যে একটা মন আছে, বিষাদ সবকিছুই আছে, উনি তা বোঝেন না। তারপর দাদীকে শুনতে হয় গঞ্জনা। দাদী তো বড় তবুও কেন মাকে এত ভয় পান?
তবে রাফীকে আর স্কুলে রাখা যায়নি। অনেক ফাইট করেই নিয়ে গেছেন রাফীর মা। শিক্ষকরাও অনেক বিরক্ত হয়েছিলেন। একটা ছাত্র রাখার জন্য চেয়ারম্যান সহ সকল শিক্ষকদের মিটিং শুধু শুধুই।
দুই মাস পর হঠাৎ করেই রাফীকে দেখা যায় ব্যাগ কাঁধে স্কুল ক্যাম্পাসে। কী ব্যাপার? জানা গেলÑ ওখানে যেতে-আসতেই সময় চলে যায় রাফী’র। সকালে গেলে আসতে আসতে সন্ধ্যা। রাফী অসুস্থ্য হয়ে পড়ছিল। তাই বাধ্য হয়েই রাফীকে ফিরে আসতে হল। তাই রাফীর মা’ও নতুন কৈফিয়ত নিয়ে হাজির হয়েছিলেন প্রধান শিক্ষকের টেবিলে।
পুনর্পাঠ
কাজী নজরুল ইসলাম
হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক
ভারতের দুই আঁখি তারা
এক বাগানে দুটি তরু দেবদারু আর কদম চারা।।
যেন গঙ্গা সিন্ধু নদী
যায় গো বয়ে নিরবধি
এক হিমালয় হতে আসে, এক সাগরে হয় গো হারা।।
বুলবুল আর কোকিল পাখী
এক কাননে যায় গো ডাকি,
ভাগীরথী যমুনা বয় মায়ের চোখের যুগল ধারা।।
ঝগড়া করে ভায়ে ভায়ে
এক জননীর কোল লয়ে
এধুর যে এ কলহ ভাই পিঠোপিঠী ভায়ের পারা।।
পেটে ধরা ছেলের চেয়ে চোখে ধরারা মায়া বেশী,
অতিথী ছিল অতীতে, আজ সে সখা প্রতিবেশী।
ফুল পাতিয়ে গোলাপ বেলী
একই মায়ের বুকে খেলি,
পাগলা তা'রা আল্লা ভগবানে ভাবে ভিন্ন যারা।।
No comments:
Post a Comment