সোমবার ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৫ই মে ২০২০
রহমান মুজিব
আমরা
আমাদের কক্ষপথগুলি লোহা আর পাথরের গ্যালাক্সি
এখানে সহস্রাব্দের মরিচায় অস্তের শুধুই অচল উদয়
আমাদের মাপকাঠিগুলি মিটার কিংবা সেন্টিমিটারে
ইচ্ছেকৃত রেখে যায় ভুলের চ‚ড়ান্ত তারতম্য আর
গোজামিল সম্পাদ্যে প্রতিদিন আমরা হোচট খাই
আমাদের মেনে নিতে হয়Ñ সবুজহীন উলঙ্গ বৃক্ষে
ফুটে থাকা পাথরের ফুল, ফুলের গন্ধে আমারা ভুলে যাই
আমাদের সটান মেরুদন্ডের কথা, মৃত্যুর গান পয়েন্টে
দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিবাদী লাইফকোডের কথা
এভাবে প্রতিদিন আমরা সমুদ্রে রেখে আসি আমাদের
চোখের ভাষা, পাখির গানে ক্রন্দন, জীবনে মরণ
এভাবে জয়ী হতে হতে অবশেষে আমরা হেরে যাই
অনার্য নাঈম
প্রশ্নবোধক
এই প্রশ্নটি ব্যকরণের নয়, জীবনের।
এক অমিমাংসিত প্রশ্নের জন্ম দিয়ে
আমাকে দার্শনিক বানিয়েছেন আমার পিতা।
শুক্রানু হিসাবে আমার উৎপত্তি;
তারপর প্রতিস্থাপন এক মহাকালের গর্ভে;
আমার অন্ধত্ব আমাকে জানতে দেয়নি কিছুই।
সীমাহীন মহাকাশের নক্ষত্রগুলো
আমার জন্মের মতো প্রশ্নবোধক।
প্রতিটি অপ্রত্যাশিত ভবিষ্যত-
অন্ধের অনিশ্চিত পদক্ষেপ।
ধীরে ধীরে বড় হই আর পিতাকে প্রশ্ন করি
জীবনের উৎপত্তি কিভাবে?
পিতার কাছে কোন উত্তর নেই
মহাকালের কাছে কোন উত্তর নেই; অথবা
যার ভাষা আমার বোধগম্য নয়;
ভাষার অপরিহার্যতার সন্ধানে
জন্ম দিই গণিতের
গণিত আমাকে ছেড়ে দেয়
অগণিত সংখ্যাতত্তে¡র মাঝে;
প্রশ্ন আমাকে ঠেলে দেয় সূর্যাস্তের দিকে
তারপর অন্ধকারে ‘প্রশ্নবোধক’ শব্দটি
আমার দিকে তাকিয়ে থাকে
আমার পিতা ও মাতার দিকে তাকিয়ে থাকে।
সা ক্ষা ৎ কা র
কবি সোয়েব মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালের ২৩ নভেম্বর, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায়। এখন মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটিতে চার বছর যাবত। ১৯৯১ সাল থেকে ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ হাইস্কুল, এরপর আদমজী ক্যান্টঃ কলেজ, এরপর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, এরপর কলেজ অফ ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, সাইপ্রাস। এখন অব্দি তাঁর পাঁচটি কবিতার বই ও একটি সম্পাদিত কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে।
লেখার শুরুটা কিভাবে ?
লেখালিখির শুরুটা মায়ের হাত ধরে কালোবোর্ডে লেখা প্রথম স্বরে অ - লেখা থেকেই আর সিরিয়াস ভাবে কবিতায় আসা আমার, সম্পূর্ণভাবে কবি রাকিবুল হায়দারের কৃতিত্ব। আমি শুধু রাকিব ভাইয়ের কথায় লিখে গেছি যা আমার ভালো লাগে মন্দ লাগে।
আপনার মতে শিল্প সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কি ?
কোন প্রয়োজনীয়তা নেই - প্লেটোর অনুসারীরা তাই বলবে। কারণ প্লেটোতো বলেই গেছেন আদর্শ রাষ্ট্র চাইলে কবিদের বের করে দিতে হবে হা হা হা হা হা। মায়ের প্রয়োজনীয়তা লিখে বোঝানো যায় না, শিল্প সাহিত্য বিষয়টা তেমনই।
শূন্য ও প্রথম দশকের কবিতার কোন মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করেন । যা দিয়ে দুটো দশককে আলাদা ভাবা যায় ?
প্রথমত বলে নেই কবিতার এইসব দশকওয়ারী পেটিবুর্জোয়া শব্দে আমার আপত্তি। যেহেতু এটা একটা সাক্ষাৎকার একটু জ্ঞানী ভাব নিতে হয়, আভিধানিক হয়ে তাই বলছি
আমার মতে নব্বই এর একটা নতুন স্বর শুন্যদশক ধরতে না পেরে নিজেদের স্বর তৈরীতে গিয়েছিলো যা দূর্দান্ত হতে পারতো হয় নি কারণ যারা নিজেদের প্রভাবশালী ভাবে শুন্যের সবাই সরকারী বেতনভুক্ত এবং পত্রিকার বিনোদন সাংবাদিক তাই শূন্যের কবিতা আমাদের অহেতুক কিছু ভারবাহি সময় দিয়েছে যা সত্তরের আর নব্বইয়ের গার্বেজ।
আর প্রথম দশক অফুরন্ত প্রাণসঞ্চারী এখানে সাংবাদিক একাডেমির পা চাটা দালাল কবি কম, মনের আনন্দে লিখছে সবাই, চেষ্টা করছে না তবুও হয়ে উঠছে যার যার কবিতা নিজস্ব কন্ঠস্বরের। কোন দশকের সাথে আপনি প্রথম দশককে মেলাতেই পারবেন না।
সত্তর বা নব্বইÑ এর কোন কোন কবির কবিতা আপনাকে ভাবায়, থমকে দেয় ?
সত্তরের কবিতা বাংলায় (বাংলাদেশ, ভারতের বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল) একসাথে মানুষের কথা বলেছে প্রচুর শ্লোগান এসেছে, মানুষের পাশে বসেছে। রাষ্ট্রের খেলা হাসতে হাসতে উড়িয়েছে, নব্বই অনেকটা গোছানোর প্রথম অধ্যায়। টেবিল চেয়ারে বসা। আমার কাছে দুইদশক মিলে নবারুণ ভট্টাচার্য, আবুল হাসান, ভাস্কর চক্রবর্তী, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, মৃদুল দাশগুপ্ত, সুনীল সাইফুল্লাহ, মজনু শাহ, ওনীল ওসমান, অগাষ্টিন গোমেজ এদের কবিতা টানে।
লিটিল ম্যাগাজিন না ফেসবুক কোনটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম, আপনার মতে ? কেন ?
লিটল ম্যাগ একটা আন্দোলন, যদিও এ আন্দোলন স্থিমিত দ্বিধাগ্রস্ত এখন। আর ফেসবুক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যখন লিটলম্যাগ তার অবস্থান তুলে ধরতে ব্যর্থ এবং একে অপরের গুষ্ঠি উদ্ধার করছে কিলিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক হয়ে উঠলো একটা স্বয়ংক্রিয় আলাদা কবিতার প্ল্যাটফর্ম।
আপনার প্রিয় কবি, প্রিয় ঔপন্যাসিক ও প্রিয় গল্পকার কে এবং কেন?
প্রিয় কবি তো সবাই - এ প্রশ্নের একটা ভাগ করে নেই কবিদের নাম উপরে বলেছি, তাই উপন্যাসিক আর ছোটগল্পকারের নাম বলি ইশতিয়াক আহমেদ, মাহতাব আহমেদ, সুহান রেজওয়ান, মাহবুব ময়ুখ রিশাদ, হামিম কামাল, এনামুল রেজা,তানভীর মেহেদী, আহমেদ মওদুদ।
কবিতায় কি গল্প বলা যায় ?
কবিতায় কি কবিতা লেখা যায় প্রশ্নটা করছি বলুন তো।
এই সময়ের তরুণ-তরুণী কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে 'বোকাচোদা' সম্বোধন করে। কবিদের
মেরুদÐ , স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ হারিয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে?
এটা একটা হাস্যকর প্রশ্ন হলো, এর উত্তরে শুধু এতটুকুই বলা যেতে পারে যখন বানিজ্য আর প্রতিষ্ঠার লড়াই থাকে কবিতা থাকে না তখনই আড়ালে একে অপরকে এই টাইপ সম্বোধন করে।
কবিদের মেরুদÐ হারিয়ে যাচ্ছে মানে? কবিদের মেরুদÐ এজ আ ক্লাসিফায়েড অকুপেশন কবিদের মেরুদÐ ছিলোনা। যেটা দেখা যায় কালক্রমিক ভাবে সবজায়গাতেই কিছু বেয়াদব ছেলেরা আসে এবং মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পেছনে শুধু ফুটো নয় মেরুদন্ড বলে অনমনীয় কিছু থাকে, থাকতে হয়।
এই সময়ের কবিদের লেখা পড়েন ? কার কার লেখা ভাবায়-মুগ্ধ করে ?
দেখুন আমি বুদ্ধিজীবী নই কিংবা হঠকারী মকিংবার্ড নই যে শুধু অতীতের আশ্রয়ে পরে থাকব। আমি খুব অহংকার নিয়ে বলতে পারি এই বাংলায় আজ ২০২০ সালে কবিতা লিখছে যারা তাদের প্রায় ৮৬% কবি আমি চিনি তাদের টেক্সট চিনি এবং নিয়মিত পড়ি। আমার কাজ কি, কবিতা পড়া। আমি যদি আমার সময়ের ভাষা না চিনি না বুঝি না পড়ি তাহলে কিভাবে হবে বলুন তো? আমি আমার সময়ে আন্দালিব, রাকিবুল হায়দার, সাম্য রাইয়ান, রাজীব দত্ত, হাসনাত শোয়েব, হাসান রোবায়েত, হিমেল হাসান বৈরাগী, রাইসুল নয়ন, শুভ্রজিৎ বড়–য়া, কুশল ইশতিয়াক, শাহরিয়ার শুভ, কৌশিক শুভ, ইবনে শামস, মাহমুদুর রহমান, কার্তু সরকার, অর্ক অপু, তামান্না তুলি, ইলতুত মন্ডল, লিংকন, শুভ্র সরকার (সিনিয়র, ময়মনসিংহ) , খান রহুল রুবেল এদের কবিতা পড়ি চমকাই।
পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তখন কি করতে চান ?
পরজন্ম বলে কিছু থাকলে আমি সকল বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের প্রতিষ্ঠান এবং প্রাতিষ্ঠানিক কবিদের যারা বিক্রি হয় হয়েছে বারবার রাষ্ট্র আর প্রতিষ্ঠার কাছে অবনত মস্তকে তাদের কান ধরিয়ে দাড় করিয়ে রাখতে চাই রাস্তায়।
সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি; এ বিষয়ে আপনার মতবাদ কী? এ হতে কবি ও কবিতার সংজ্ঞা কী হতে পারে?
আমার কাছে লাইন হচ্ছে
প্রায় অধ্যাপকেরা এবার একটা কবিতা লিখে দেখাও,
অনেক তো ডুগডুগি বাজালে,
বাজালে বগলে বিউগল
এবার অন্তত কবিতার সংজ্ঞা না লিখে
একটা কবিতা লিখে দেখাও।
কবির স্বাধীনতা বলতে আপনি কী মনে করেন?
কবি'র স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা এক জিনিস নয়, যোণী আর জরায়ুর মধ্যকার সুক্ষ ফারাক আমাদের বুঝতে হবে।
এপার বাংলার কবিতার ভাষা এবং ওপার বাংলার কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু এবং কেন?
প্রতিটা অঞ্চল যেমন একই সাথে সূর্য উদয় আর অস্তমিত হয় না তেমনি দু দেশের ভাষাতেই রয়েছে বিশাল দূরত্ব যদিও দুই বাংলাই বাংলায় কথা বলে। কলকাতার ভাষাটা কেতাবী বাংলা, বাংলাদেশের বাংলাটা ঝরঝরে, রক্ত দেয়া বলেই হয়তো এ পার্থক্যটা।
সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্বকোথায়?
বিশ্বাস শব্দটাই তো ধর্মীয়, সাহিত্য আর ধর্মীয় বিশ্বাসের কোন ফারাক নেই দিনশেষে দুটোই আপামর জনগনের কথা বলে আর দিনের বেলায় হয় অর্থ উপার্জনের পথ।
কবিতায় ছন্দ ও উপমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন।
কবিতা যেকোনো ভাবে হতে পারে, ছন্দ উপমা কবিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় আবার ফেলনাও নয়। মূল বিষয় হচ্ছে জানা থাকলে ভালো না জানা থাকলে মরে যেতে হবে তাও নয়।
কিভাবে একজন তরুণ লেখক তার জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেন? এবং কবি কি সারা জীবন একটা কবিতাই লেখেন?
প্রচুর পড়তে হবে আমাদের প্রচুর হাটতে হবে জীবনের ভেতর ঢুকে পরে দেখে এসে মৃত্যু লিখতে হবে চোখে চোখ রেখে একটাই কবিতা।
No comments:
Post a Comment