Tuesday, May 26, 2020

শিল্প সাহিত্য ৪৩

মঙ্গলবার ১২ই জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৬ই মে ২০২০



কবিতা
দুর্গাপদ চট্টোপাধ্যায় 
বুবুন একটি  নদীর নাম 

যেন শীতলপাটির মতো ঘুম পেতে শুয়ে আছে কেউ।
আর দয়ালু  নৌকার জলে বেওয়ারিশ জাগাগুলি
হেঁটে  গেছে নদীদেহ হয়ে নিভৃত জলের খোঁজে।

চিলেকোঠা ছুঁই ছুঁই চাঁদ। আর পদাবলী জ্যোৎস্নায়
বাদামি টিলার মতো যাবতীয় উপকথা
গভীর অসুখ ছুঁয়ে মিশে গ্যাছে লাজুক বাতাসে।

যেন জল থেকে  চুরি করা ঢেউ।
আর ভীষণ নরম কোন নদীটির গভীরতা ছুঁয়ে
মাছেদের ডুব জলে ডুবে  গ্যাছে আকণ্ঠ আখর,
আর মুঠোবন্দী চিঠিটির ডুব ডুব জলকথা-
লেখা আছে খামের গোপনে।

এইসব - একদিন - তারপর নৌকা ভাসানো
কোন বদর বদর রাতে ভেসে যাবে বুবুনের ঘুম
নিষিক্ত বৃষ্টির জলে।
শরীরের চরাচর ধূুমজ্বরে চলে যাবে
চুপকথা পার হয়ে রূপকথা ঠোঁটের গোপনে।

একটু সময় আমাকে দিও

রাজলক্ষ্মী
মনুষ্য

চমকে উঠে বাজপাখি অস্বস্থির সঙ্গে চারিদিকে তাকায়। আঃ শয়তানে ঠেলে নিয়ে যায় নৌকা দাঁড় টানে শোধখোর। লজ্জায় বিলুপ্ত হয় বাজপাখি।

রওশন রুবী
আমাকেই খোঁজ অবশেষে

আমাকে আহত করে এমন তীরের চেয়ে একখন্ড মেঘ দাও ডুবি, আমাকে পোড়ায় শূন্যতা,
খাঁচায় ফেরত পাখি ডানায়
মেখে যায় কাল সকালের রোদ,

আমাকে মাড়িয়ে যাবার আগে জেনে নাও এ মাটির ইতিহাস,
জেনে নাও শ্যাওলারা কতকাল আগে চুমুকে নিয়েছে স্বাদ,

আর কতো বিস্বাদের তরী ভাসানে যাবে তার দেশে
আমাকে আহত করে
আমাকেই খোঁজ অবশেষে।

আরণ্যক টিটো
বন্দীর জবান

মাননীয়,
ইতিহাসের অনেক মহানের হাত রক্তে রঞ্জিত...
সে হিসাবে
ঘোষিত অপরাধ(!) আমার
লঘু...
হতে পারে
একদিন
হব আমি
প্রদীপের ফেরিঅলা
কিংবা পথহারা নাবিকের দিশাময় বাতিঘর
কিংবা আলোর একাডেমী...
যার মাঝে
প্রদীপের আলোর নীচের অন্ধকার নিয়ে গবেষণা করে
আচার্য্য হবেন আগামীর সন্তানেরা,
পৃথিবীর মঙ্গলযাত্রায়...
মাননীয়,
সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটানোও অপরাধ!
যার কারণেও
একদিন কাঠগড়া প্রস্তুত হতে পারে...

অনির্বাণ ঘোষ
প্রেমিকের প্রতি

পুলিশ যখন মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গেলো,
আনন্দে চোখ বন্ধ করে হাসছিলো সে
শরীরে যত গহনা ছিল; সব এক এক করে খুলে ফেলেছিলো রাস্তার ধারে।
হয়তো ধীরে ধীরে তাতে ময়লা পড়বে
দূষণের কালো আস্তরণ মিশিয়ে দেবে আবর্জনাদের সাথে,
মুষলধারে বৃষ্টি পড়লে, কিংবা তীব্র রোদ উঠলে
পথের ধারে ভিড় জমবে।
কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়বে যত অচেনা মুখের দল...
এসব খবর শুনে হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে আসবে তুমি,
শক্ত দু'হাতে ভিড় সরিয়ে যেই না সামনে এসে দাঁড়াবে-বিস্ময়ে ছিটকে যাবে তুমি
গহনাগুলোও তখন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে একে অপরের
আর বলছে- ‘এতো ভালোবাসা আগে তো দেখিনি।’           


ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: : জঁ ককতো 
ঘুমন্ত বন্ধুর প্রতি   

তোমার হাত ছড়ানো চাদরে
যেখানে আমার মৃত পাতারা
যেভাবে আমার শরৎ ভালোবেসে ছিলো তোমার বসন্ত!
স্পন্দিত স্মৃতির বাতাসে একটি দুয়ার
আঘাত করে, বন্ধ করে দেয় সবকিছু
তোমাকে ছেড়েছি, স্বার্থপর, তোমার মিথ্যেঘুম
যেখানে স্বপ্ন ধ্বংস করেছে তোমার সমস্ত চিহ্ন
কিন্তু তুমি বিশ্বাস করেছো তাদের মধ্যেই,
দুঃখজনক হীনতা
একজন স্বপ্নদর্শীর জগতের অসত্য সম্পর্কে
এবং যেভাবে তুমি এই অন্যলোক হয়ে উঠলে
তোমার সঠিক গঠন থেকে বিমূর্ত
তুমি ছিলে পাথর, প্রেমিকের কন্য কষ্টকর
পুষে রাখা নিছক নামেন স্মৃতি
সজাগ, অবিচল, করেছি চূড়ান্ত আহ্বাণ
পরিচিত সব জায়গায় প্রতি একবার
এরকম শৌখিন প্রত্যাবর্তন মোটেও নাড়া দেয়না আমায়
এখানে আমার হাত দিয়ে
আমারই মুখে করেছি রক্তমোক্ষক কাচপ্রয়োগ
এবং ফিরে এসেছি আমি এমন মৃত যাত্রা থেকে
পুনরায় সন্ধান করা বেদনার
তোমার দুর্দান্ত ও অবারিত হাত, সীসার চোখ
আমার প্রেমিকার মুখে রাত্রি
আমরা ছিলাম ঐ দু’মাথার ঈগলের মতো
কিঙবা দু’মুখো জেনাস দেবতার মতো
শ্যামদেশীয় স্বাধীন জমজ শিশুর মতো
কিঙবা জায়গাতে সেলাই করা বইয়ের মতো
আমরা ছিলাম প্রেমখেলা থেকে তৈরী আনন্দ নামের
পশুপ্রকৃতি, উসকোখুসকো কোকড়া চুলের গিজগিজ,
সে কেঁদেছিলো এবং
তার নিজের বলি হতে নিজেই উন্মাদ
ধীরে ধীরে মরে যাওয়া আত্মহুতি দিয়ে
উদ্বিগ্ন প্রেমীদের হামাগুড়ির মধ্য দিয়ে
তবে হতাশার বন্ধুত্বের এককগুলো কী?
গোলকধাঁধাঁটা ই বা কী
যেখানে আমাদের সমস্ত সতর্কতা
ঘুমের সাথে পুনরায় সংযোগ করা
তারপর, কি খুঁজে পেয়েছি আমি এবঙ কি হবে?
আমি ঘুমাই, ঘুমোতে না পারা বাকী ঘুম
কিন্তু বিশ্রাম নিলে আমার জানা হয়
স্বপ্ন থেকে মুক্ত হতে পারি আমি
যার মাধ্যমে আমি হারাচ্ছি তোমায়
ও ঈশ্বর, অবারিত মুখটি কতো সুন্দর!
যেখানে ঘুম পুরানো মৃত্যুর অনুলিপি
সুবাসিত করে, উজ্জ্বল করে, স্বর্ণের মধ্যে আবদ্ধ
মিশরের ঘুমন্তদের অনুগ্রহ রঙ করে পুনরায়
কিন্তু তোমাকে দেখলেই মুখোশ পড়েছি
তোমার নিজের চামরা দিয়ে
আমাদের সকল করিতকর্মারা অনুভূতিশূন্য
তোমার ছায়ার অবশিষ্টাংশ সরু হয়ে ঝরে
লুকিয়ে পড়ে হৃদয়ের মাঝে
অনুপম বন্ধুত্ব এই পৃথিবীর হয় না কখনো
সব সময় খুঁজে পাওয়া যা আশ্চর্য
ছুঁড়ে দেওয়া হয় ধ্বংসের অপূরণীয় গর্ত
পাওয়া গেলো সব বন্ধুত্ব, প্রেমময় সব ছদ্মবেশ
গণনা করা হয় না আর সময় আমাদের আশ্রমে
সময় কী আর দিন কী?
যখন প্রেম আসে নিগূঢ়তার পরিবর্তে
দ্রুত দোষারোপ করে যাই আমরা যেখানেই পারি
দৌড়তে থাকি আমি, আর তুমি অন্য উপায়ে
কোথায় যাচ্ছো তুমি, আমিই বা কোথায়?
হায়রে, আমরা ক্যাথের কোনো দৈত্য নই
নই হিন্দু আকাশের বংশীবাদক
চরম পরিণতির ক্রন্দনের জট তোমার
আহ...প্রেমিক...প্রেমিকা...আনন্দেন ব্যথা...
তুমি পাথরে খোদাই করা কিম্ভুতকিমাকার গারগোয়েল
মধ্যযুগীয় মন্দিরের উপর ঘুপসি
আমরা হৃদয দিয়ে গ্রন্থিবদ্ধ একটি দেহ
( এভাবে দেহিিট আত্মবিশ্বাসে প্রদর্শিত )
আমাদের একমাত্র যন্ত্রণাদায়ক নরক
এমন একটি নরক
যেখানে জ্বলে না কোনো অগ্নিশিখা
অপ্রত্যাশিতভাবে মরে যাওয়াদের জন্য
একটি শূন্যস্থান
কাছাকাছি শেখা,
দেখেছি তোমার মন্দিরে করা আঘাত
এবং দেখাই যে তুমি রক্তের ভাবনা
তোমার রক্ত সেই লাল সমুদ্র
যেখানে আমার আত্মার বহর
নোঙর দিয়ে বাঁধা, তুমি তাকাচ্ছো না সেই প্লাবনে
যদিও আমি পুনরায় সংগ্রহ করেছি ইতিহাসের বরফ
তুমি সেখানে গিয়েছো
যেখানে দেখেছিলে স্বপ্ন তোমার
চকচকে সমুদ্রের উপর সূর্যের আলো জ্বলছে
সিলিং এ প্রতিফলিত, ঠাণ্ডা
তোমার অভ্যন্তরীণ দৃষ্টি তা ই দেখতে পেতো
নাড়া দিতে হয়েছিলো তোমার বাহু
তোমাকে জাগাতে এবং ধ্বংস করতে একেবারে
গঠিত হয় পরিপূর্ণতা নিদ্রাকারীর প্রশান্তি থেকে
চুপ করে বসে রইলাম তোমাকে দেখে, তোমার হাঁটু
কনুইর উপর, বাতাসে চিবুক, আমি পাইনি তোমায়
ঝালাই করেনি আমায় কিছুই
তোমার যান্ত্রিক শরীরের প্রতি
স্বপ্ন দেখেছি আমি, স্বপ্ন দেখেছো তুমি
বৃত্তাকার হয়ে গেছে সবকিছু
উভয় রক্ত এবং নক্ষত্র যুক্ত
যখন এই সময়টি লাভ করেছিলো স্থল
এবং
নিজেদের ধ্বংস করেছিলো জাতিগত যুদ্ধে
তোমার কাপড়ের ভাঁজগুলো দুলতে থাকে
অলসভাবে
ছোট্ট ভাঁজ যেখানে চলাচর করে ছায়া
যেখানে সেই দেহগুলির মতো ধ্বংসযজ্ঞ
পরিবর্তিত হয়েছে সবাইকে ভয় দেখানোর জন্য
এবং সেখানে বিছানা থেকে দূরে একটিমাত্র জুতো
মরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ছিলো একটি ছোট্ট জীবন
কীভাবে এ ধরনের ব্যাধিগুলো দেখায়-
আহত তুমি!
নিদ্রকারী এই কলহের মেরামত করতে পারে কি?
এটা প্রসারিত করেছে তোমাকে, অনুলিপি করেছে তোমার পথ
এর মাধ্যমে বুঝতে পেরেছিলাম আমি তোমাকে
একজন যে কিনা তোমার অন্তর্বাসের দিকে তাকিয়েই বলতে পারে
এটি চালাতে যাচ্ছিলো বন্দুক
এবং কখন আমাদের আত্মহত্যা বা চুরি
একটি ভিলাকে পরিণত করেছে সমাধিতে
শোষণ করে ভয়,
তোমার শান্ত মুখটি বাকী ছিলো শুধু
 ধ্বংসের অগ্রদূতের জন্য একটি আশ্রয়
এখন চলেছি আমার পথে স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে
যখন আমি গাইলাম সন্ন্যাসীর সুর
আমার জীবনব্যাপ্তি চুক্তি করে
যখন দেখা পায় রৌদ্রের
দীর্ঘায়িত করতে আমার ছায়ার তীর্যক হয়ে পড়া
হাতে আসা এই ছায়ার সব জানতাম আমি-
যা ছিলো আমার
তার চলন বলন সবই জানতাম আমি
এবং
সন্ধ্যায় মরুভূমির বালিতে আমার আগে সেখানে
প্রসারিত ও বিমর্ষ হয় আমার ছায়া
আমার শরীরের দুর্দশাকে এখন দোষ দেয় ছায়া
কিন্তু কী পূরণ করতে পারে এর অভাব
পেছনে ফেলে দিতে পারেছায়া
যদিনা সূর্য বা চাঁদ ওঠে আলো নিয়ে?
ঝাঁঝরা করা আকাশ অতিপ্রাকৃত তারায়
মানবিক ঈগলের শংকার সাথে
আত্ম-ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে পরিণত করবো না তোমাকে
কিন্তু সূর্যের আলো তোমার ক্ষতি করুক পুরোপুরি

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক