বুধবার ২০শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৩রা জুন ২০২০
ক বি তা
আবু জাফর সৈকত
ওয়াক্ থুঁ
তোমার সামনে একটা মদ পাত্র
ঢেলে দিই-
সম্পাদিত আলো
কুয়াশা
তুমি বিকৃত মুখে মুর্ছিত
একদলা রক্ত
ওয়াক্ থুঁ
বুকে
মুহুর্মুহু করেছ আঘাত
রাষ্ট্র
আমিও জানি আসমানী কিতাব
ওয়াক্ত হয়েছে তোমার
ফোঁটা ফোঁটা ঝড়েছে
নখ
আঙ্গুল
পা
নীচ থেকে উপরে
গলে গলে পড়ে চোখ, কপাল, চুল
তোমাকে আবারও ওয়াক্ থুঁ
রেহমান আনিস
নিশীথ প্রদীপ
আঁধার বনের রাত জাগা কোড়া পাখি,
মানস গহীনে আরো বেশি আলো জ্বালো।
এ চোখ তো নেশা ভরা মাঝনিশি
ভরা যৌবন, তুমি আনমনে জেগে ওঠো!
ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকে অবিরাম, আহা
জেগে ওঠো! জেগে ওঠো !
হাতের তালুতে নাড়াবো তোমাকে সাধে
মেলে রূপ তুমি বারবার জেগে ওঠো।
অমাবস্যার ঘোর রাত্রির ঘোরে
এসো, জাগো মশারির কোণে।
মিটিমিটি তবু সবুজ পিদিম জ্বেলে
আলোকিত করো, জেগে ওঠো হৃদ, মনে।
তারকাবিহীন মেঘলা আকাশ দেখে
অকারণ কেন বারবার মনে পড়ে!
ক্ষণজীবি পাখি! নিষ্প্রভ আলো জ্বেলে
স্বপ্নেরা কেন অকারণ মরে পুড়ে!
প্রেমময়ী দেবী! আছি পথপানে চেয়ে
কখন আসবে, কখন জাগবে তুমি!
এন. সত্যেন্দ্রনাথ
তবুও বয়ে চলে... ১
মানুষ...
জবজবে পোষাক,
বাচ্ছাটাকে কাঁধে পলিথিন জড়িয়ে, বৃদ্ধ মাকে একহাতে টেনে হিঁচড়ে ,
হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলমুখী,
ঝড়ের কোপে ধনুক,
অর্ধউলঙ্গ, -বাঁ-চা-ও...
মানুষ...
সুতারবাগ টপকে নোনাজল হুহু করে ঘরের দিকে,
কোনরকমে পালিয়ে এসেছি ইস্কুলে;
আমার গরু ছাগলগুলো বাঁধা
গোয়ালে গো...
ওরা আর..... বাঁচবে না গো।
মানুষ...
নির্বাক, কে কোথায় বোসে...
ধনী নির্ধন একাকার,
একটাই পরিচয়- শিকার, দুর্গত।
জলের তোড়,
দোতলায় ওঠা হিড়িক হুড়মুড়িয়ে,
ছাত্রছাত্রী-অভিভাবক-গ্রামবাসী,
বাঁচার লড়াই।আতঙ্ক।
মানুষ...
দেখলো, আমিও নিস্পন্দ...
উড়ে গেল তিনতলার শেড...
ভেঙে পড়লো সাইকেল শেড,
পাঁচিলগুলো একে একে,
বিরাট বিরাট গাছ
ওরাও যেন বলছে-
বাঁচতে চাই, বাঁচাও...
আমার জয়কৃষ্ণপুর এ.এন.বিদ্যাপীঠ।
তবুও বয়ে চলে... ২
আমাদের ম্যানগ্রোভ...
শুকনো কঙ্কাল, পুড়ে গেলে যেমন;
আমাদের পুকুর খাল বিল...
পচামাছে দুর্গন্ধময়,
আমাদের সুতারবাগ...
বিধ্বস্ত হারানো সুর,
ব্যর্থতার দায় নিয়ে এবড়োখেবড়ো নত মাথা, হয়তো লজ্জায়...
আমার পশ্চিম পুরকাইত পাড়া,
বাউর পাড়া, পয়লাঘেরী, বৈদ্যপাড়া-মিস্ত্রীপাড়া,
পূর্ব পুরকাইতপাড়া...
চোখে মুখে আতঙ্ক-
আমার ঘোষপাড়া, মন্ডলের ঘেরী, খাঁয়ের ঘেরী, ছাতুয়া...
ব্যস্ত...
যে যার ভাঙা ঘরে তালি দিতে;
পেটে কিল মেরে।
আবার গাছগুলো ডানা মেলবে,
আমরাও....
এটাই জীবন।
যদি কখনও এক দুই করে হা হুতাস গুনতে ইচ্ছে করো...
এক নিমেশে গুনে নিতে পারো ইট বালির ছাদওয়ালা অস্তিত্বগুলো,
হিসেব পেয়ে যাবে....
সঙ্গে নিও তেষ্টার জল।
ব্যস্ত যে যার ভাঙা ঘরে তালি দিতে,
জীবন বয়ে চলে।
প্যাঁচাল
মীর সাহাবুদ্দীন
কিছু কবিতা কিছু গান সাময়িক
একটা ভালোলাগা চিরদিন
অথচ চোখদুটি কত কত টানে কত নজরে ছুঁয়ে যায় প্রতিদিন
একটা পছন্দের ছায়াছবি কতবার ভালোলাগে
একাধারে একটা গান কতবার শুনলে তিতো লাগে
একটা মানুষ কতবার চাইলে ফিরিয়ে দিলে আর আসেনা
ভিক্ষুক বা প্রেমিক।
কখন মানুষ বলে মানুষ একটি জীবিত লাশ
কখন শেষ বেঞ্চের ছাত্রটা দেশের সর্বোচ্চ পদে পেয়ে যায়
প্রেমিক প্রেমিকার মহামারী কখন আসে?
কত বয়স হলে মানুষের চাকুরি জুটে
যৌগ্যহীন মানুষ সার্টিফিকেট অর্জন করে
কখন না জানা অ আ ক খ মানুষটি সবার প্রিয় হয়ে উঠে
মানুষের মন কেনবা সরকারি চাকুরি জন্য লাইন ধরে
কিছু অবহেলিত মানুষ
কিভাবে অমরত্ব লাভ করে
তানহিম আহমেদ
কমলালেবু
হঠাৎ.... কখনো- কমলালেবুর খোসার মত- তুমি
লেগে থাকো অবহেলিত মূক পুষ্পের গায়ে। অমৃত
ভাঙা বিক্ষত ধাতব খণ্ডের ভেতর কোনো বিরল
একক হেমন্তের অর্কেস্ট্রা। হারানো ভাষায়। বিমূর্ত
বেহালার সুরে- শোনায় কাক্সিক্ষত ধ্রুপদী সংগীত।
তার বুক থেকে উড়ে গিয়ে শিকারী ঈগল। কেবলি
জানিয়ে যায় মূলত পৃথিবী এক বৃহৎ কমলা লেবু।
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: জঁ ককতো
মারি লোরানসঁন
ফাউস ও কিউবিস্ট
এদুয়ের মধ্যে ফাঁদে পড়ে
ছোট্ট এক হরিণী
ফ্যাঁকাসে বনভূমি
বিবর্ণ বন্ধুর
নাক
অসংখ্য ফ্রান্স যুবতী
ক্লারা ডি’এলবিউজ
সোফি ফিচিনি
শীঘ্রই শেষ হবে যুদ্ধ
অনুরাগী প্রাণীসম্পদ পালনের জন্য
সামান্য ঝাপটায় তোমার পাখনার
দীর্ঘজীবী হও ফ্রান্স!
ধীরগতির রণতরী টরেইন
বাষ্পচালিত জলযান দ্বারা
অগ্রগমন করে অন্তহীনভাবে
এর উন্মুক্ত বাতাসের সমস্ত গৌরবের স্বর্ণ
দিতে হবে একে
কুণ্ডলিত জলের ভ্রমণ পূর্বাবস্থায় ফেরাতে
অ ণু গ ল্প
সত্যিকারের বন্ধু
সিদ্ধার্থ সিংহ
রিকির বাবা জিজ্ঞেস করলেন, কীরে, এরা তোর বন্ধু?
রিকি ওর বাবার মুখের দিকে তাকাল, হ্যাঁ।
--- এরা তোর বন্ধু! যাদের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে তুই ক'পা এগিয়ে গেলে, যারা তোর জামার পিছন ধরে টানে?
--- হ্যাঁ, টানে।
--- তুই আরও একটু এগিয়ে গেলে, যারা ঝর্ণা কলমের মুটকি খুলে তোর পিঠে কালি ছিটোয়?
--- হ্যাঁ, ছিটোয়।
--- তার থেকেও আরও একটু এগিয়ে গেলে, যারা নর্দমা থেকে দলা দলা নোংরা তুলে তোর পিঠে ছুড়ে মারে?
--- হ্যাঁ, মারে।
--- আর তখন তুই ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য পড়ি কি মড়ি করে প্রাণপণে পা চালাস? কী, তাই তো?
রিকি বলল, হ্যাঁ বাবা, একদম ঠিক বলেছ। আমি চাই, ওরা এ সব আরও করুক। ওরা যত এ সব করবে, আমি তত ওদের ও সবের হাত থেকে বাঁচার জন্য জোরে জোরে পা ফেলে ওদের থেকে আরও একটু এগিয়ে যাব।
ছেলের কথা শুনে বাবা তো অবাক, কী বলছিস!
রিকি বলল, হ্যাঁ বাবা, আমি ঠিকই বলছি। এরা এগুলো না করলে আমি এগোতেই পারতাম না। এরাই আমার আসল বন্ধু। সত্যিকারের বন্ধু।
No comments:
Post a Comment