শনিবার
১৩ই আষাঢ় ১৪২৭, ২৭ই জুন ২০২০
কবিতা
জাহিদুল মাসুদ সুখের মৃত্যু
তুমি আমার খুনি হতে যদি
যদি নিজ হাতে খুন করতে আমাকে
তবে মৃত্যুর কুৎসিত বিভীষিকা থেকে
আমি রেহাই পেতাম।
খুব সৌন্দর্যময় মৃত্যু হতো আমার
খুব সুখের মৃত্যু হতো
তোমাকে না পাওয়ার সমস্ত বেদনা
তোমার ককৃত খুনে রাঙা হয়ে উঠতো।
রিয়ানো
নতুন পৃথিবী
নতুন পৃথিবী সাজাবো
নতুন আয়োজনে
সকল যাতনা ভুলে
ভালোবাসা ও যতনে
চেনা পৃথিবীর অচেনা রূপ ধুয়ে
কালকেও নয় কেউ একা,
লকডাউনের অভিশাপ পেরিয়ে
মিলেমিশে সকলে আমরা
এ পৃথিবীকে করে যাব বাসযোগ্য
অভিজিৎ চক্রবর্তী
স্বীয়
অসংখ্য মন্দিরের ভীড়ে
মাড়িয়ে যাওয়া ফুল হয়ে পড়ে থাকি।
পূজো নিতে পারছি না বলে
দুধের বদলে মাটিতে দিচ্ছি গড়াগড়ি।
উঠোনে আজ শোভাবর্ধন সভা চলছে!
বিক্রিত পণ্যের মতো দামী নই,
আমাকে কিনে নেবে কে?
কে দেবে ঘন সন্ধ্যার বুকে ধূপের প্রলেপ!
জন্ম থেকেই সেই সলতে হয়ে জ্বলছি
ব্যবহারের আগেই যাকে নাকচ করেছে পৃথিবী।
মোহাম্মদ আবুল হাচান মিয়া
অস্থির আঁধার
ভোরের আলো
সূর্যের নদী
বাগানে ঘুম ঘুম ফুল!
ফুলেরা দুলে ওঠে
নেচে নেচে
বিষাদ পর্ব অলি!
ফুলেরাও নিজেকে নষ্ট করে, অবুঝ হয়!
সেই ভয়ানক সুন্দর
সকাল
রোদে জ্বলে ওঠে রঙের ছোঁয়া
ভালোবাসার প্রতীক লাল গোলাপ!
হাসে পূবের হাওয়া
মধুর অনুরাগ সুবর্ণ কলস ভাসে নদীজল!
দুয়ারি হিসেব
পাল তোলে ঢেউয়ে ঢেউয়ে
বৃষ্টি ধোয়া চাঁদ!
মুগ্ধ হয় সৌখিন বড়শী;
যেভাবেই
বিলাসী উদ্যান;
বন্দী একুরিয়ামে মাছ!
ভোর বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বসা কাক
কাঁদে স্বভাবের শহর!
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী
অমৃত
কেমন করে ঈশ্বর ধরেন কম্পাসের কাঁটা
কেমন করে উগরে ওঠে বাতি
কেমন করে দিনগুলো সব সামনে এগিয়ে যায়
এক ঈশ্বরই জানেন তিনি শুধু ঈশ্বর প্রজাতি...
তাদের পাড়ায় শব্দ ছিল না কোনো
শব্দ যাপনে অক্ষম ছিল পাড়া
শব্দের গায়ে লেবেল ছিল তা মৃত
অমৃত শুধু শব্দখেকো বখাটে লক্ষ্মীছাড়া
বসতগুলো এমনি করেই বেদনা সিরাপ খায়
বাংলা অথবা তাড়িও খায় খিস্তি উঠলে মনে।
একে অন্যের ইট খসিয়ে ভিত ধ্বসাতে চায়
ভিতগুলো সব ঝাঁপিয়ে তখন বাঁচোয়া বীজ বোনে।
সাম্য রাইয়ান এর সাক্ষাৎকার
জন্ম ৩০ ডিসেম্বর
জন্ম ও বেড়ে ওঠা: বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়। সম্পাদনা: লিটলম্যাগ ‘বিন্দু’ (bindu.bangmoy.com)
প্রকাশিত পুস্তিকা:
সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট (গদ্য), বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা (কবিতা), মার্কস যদি জানতেন (কবিতা), হলুদ পাহাড় (কবিতা)।
করোনাকালীন এই সময়ে কেমন আছেন?
ভালো নেই। নিজেকে এখন সার্কাসের ক্লাউন মনে হয়। ভালো থাকার ন্যূনতম আয়োজন এদেশে নেই। জীবন নিয়ে এখানে চলে রাষ্ট্রীয় সার্কাস, যা বন্ধ হওয়া দরকার।
লেখার শুরুটা কিভাবে ?
এলেবেলে লিখতে লিখতেই শুরু। কবে, কীভাবে তা আজ আর মনে নেই। তবে এক দিনের কথা মনে পড়ে, সম্ভবত ২০০৫ এর কোনো এক বিকেল, রাশেদুন্নবী সবুজ আমায় ডেকে বললেন, “তুই তো লিখতে পারিস, এক কাজ কর, ‘স্বাধীনতা তুমি’ নামে একটা কবিতা লিখে দে- একটা প্রতিযোগিতার জন্য।” তো আমি সেদিন ওটি লিখেছিলাম, যদিও শেষপর্যন্ত প্রতিযোগীতায় পাঠানোর তারিখ বেমালুম ভুলে যাওয়ায় আর পাঠানো হয়নি। সম্ভবত ওইই প্রথম, কবিতা লিখবো মনস্থির করে লিখতে বসেছিলাম। এখানে একটি কথা বলে রাখি, ২০১২ পর্যন্ত আমার প্রায় সকল লেখাই আমি ফেলে দিয়েছি।
লিটল ম্যাগাজিন না ফেসবুক কোনটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম, আপনার মতে?
দুইটি ভিন্ন মাধ্যম। একটির সাথে অপরটির তুলনা চলে না।
এই সময়ের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা পড়েন সমসাময়িক কবিদের?
এমনিতে বই তো পড়িই। তাছাড়া, ‘বিন্দু’ সম্পাদনার সুবাদে প্রচুর নতুন লেখা পড়া হয়। পত্র-পত্রিকায় দুই ধরনের ‘জিনিশ’ কবিতা নামে প্রকাশিত হয়, এক হলো: যা কবিতা, দুই হলো: যেগুলো তা নয়। আমি সবই পড়ি, যা নজরে পড়ে যায়। এই সময়ে প্রচুর ভালো কবিতা লেখা হচ্ছে। এখনকার অনেক কবির কবিতাই আমি পড়তে পছন্দ করি।
কবির সাথে অকবির তফাৎ কতোটুকু?
প্রেমিকার সাথে গণিকার তফাৎ যতোটুকু
পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তখন কী হতে চাইবেন?
‘কোয়ালা’ হতে চাইবো। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাণীটি তার জীবনের ৯৯% সময় খেয়ে আর ঘুমিয়ে কাটায়। ১% সময় সে তার জীবনসঙ্গী খোঁজে। খোঁজার জন্য খুব একটা কিছু ব্যতিব্যস্ত যে সে হয়, তাও নয়। কোনো সঙ্গী না জুটলে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
একজন কবি ও দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
কবি মাত্রই দার্শনিক, কিন্তু দার্শনিক মাত্রই কবি না।
কবির স্বাধীনতা বলতে আপনি কী মনে করেন?
কবির জন্য অতিরিক্ত কোনো স্বাধীনতার দাবি আমি করি না। মানুষের বেঁচে থাকবার প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক স্বাধীনতা থাকলেই হলো।
এপার বাংলার কবিতার ভাষা এবং ওপার বাংলার কবিতার ভাষার মধ্যে পার্থক্য কতটুকু এবং কেন?
এখন তো কোনো পার্থক্য নজরে আসছে না। উভয়ই কলকাতার মান ভাষায় লিখছে। তবে পার্থক্য নজরে আসতো, যদি বাঙলাদেশের জেলায় জেলায় যে ভাষা বৈচিত্র্য, তা এদেশের কবিতায়- সাহিত্যে দৃশ্যমান হতো।
সাহিত্যের বিশ্বাস আর ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য বা দ্বন্দ্ব কোথায়?
ধর্ম নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
কবিতায় ছন্দের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন।
ছন্দ ছাড়া গাছে ফুল ফোটে না, বৃষ্টি ঝরে না। এমনকি শিশুর প্রথম কান্নাও ছন্দ ছাড়া নয়। জীবন ও জীবনহীনতার প্রতিটি সত্যবিন্দুতে রয়েছে ছন্দ। আর এই সব কিছু নিয়েই তো কবিতা
পুরস্কার একজন লেখকের জন্য প্রয়োজনীয়?
পুরস্কারের ক্রেস্ট, মেডেল লেখকের কোনও প্রয়োজনই নেই। কিন্তু টাকাটা খুবই প্রয়োজন।
‘চোখের ভেতরে হামিংবার্ড’ আপনার এ বছর প্রকাশিত কবিতার বই। এটিকে আপনি প্রথম বই বলছেন, তাহলে ‘বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা’ বা ‘মার্কস যদি জানতেন’ এগুলোকে কি আপনি অস্বীকার করছেন?
নাহ্, অস্বীকার করবো কেন? হামিংবার্ডের ফ্ল্যাপে সবগুলোর নাম উল্লেখ করেছি তো। ফেব্রæয়ারি মাসে কিছু সংবাদপত্র যখন বইটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিলো তখন আমি এ বিষয়ে বলেছিলাম। আবারও বলছি, বাকিগুলো ছিলো পুস্তিকা, এক থেকে দুই ফর্মার চটি। যেমন আমার প্রথম প্রকাশিত পুস্তিকা ‘সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট’ এক ফর্মার গদ্য সুবিমল মিশ্রকে নিয়ে, তারপর তিনটি কবিতার পুস্তিকা যথাক্রমে ‘বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা’, ‘মার্কস যদি জানতেন’, ‘হলুদ পাহাড়’। এরপর চার ফর্মার বোর্ড বাঁধাই করে একদম বইয়ের রূপ দিয়ে প্রকাশিত হলো ‘চোখের ভেতরে হামিংবার্ড’।
বইটি প্রকাশের পর পাঠকদের সাড়া কেমন পেলেন? প্রকাশক নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়েছিলো কি?
আমি লিটলম্যাগের বাইরে আজ পর্যন্ত কোথাও লিখিনি। ফলে জনপ্রিয় হবার তরিকার বাইরে আমার অবস্থান। আর আমি বেসিক্যালি মূর্খ লোক। আমার মতো একজন লেখকের যে সামান্য কিছু কবিতা, গদ্য যে লোকে পয়সা খরচ করে কিনে পড়ে এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া। আমি জানি, এঁরা সব সচেতন পাঠক। কেননা, সচেতন পাঠক ব্যতিত কেউ লিটলম্যাগ পড়ে না।
হামিংবার্ড ব্যতীত সবগুলো পুস্তিকাই আমি নিজে ছেপেছি এবং নিজেই বিক্রি করেছি, ফলে পাঠকের সাথে সরাসরি আমার যোগাযোগ হয়েছে, পরিস্থিতিটা নিজে দেখেছি। ‘মার্কস যদি জানতেন’ পুস্তিকাটি তো আমি সম্পূর্ণ পাঠকের পয়সায় ছেপেছিলাম, পাঠক অগ্রিম টাকা দিয়েছিলো প্রকাশের জন্য। আসলে এর মধ্য দিয়ে নিজেকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এবার ঘাসফুল প্রকাশনীর মাহাদী আনাম নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়ে সবকিছু করেছেন। বিক্রিতেও আমার তেমন হাত ছিলো না। ফলে সরাসরি ব্যাপারটা দেখার সুযোগ এবার হয়নি আমার। কিন্তু অনেকে ফেসবুকে, ওয়েবসাইটে বইটি নিয়ে কথা বলেছেন, আলোচনা লিখেছেন, সেগুলো পড়েছি। আমি এ ভেবেই পুলকিত যে লোকে পয়সা খরচ করে এ বই কিনেছেন, পড়েছেন এবং এ নিয়ে কথাও বলছেন।
কোন কোন লিটলম্যাগে আপনি লেখা প্রকাশ করেন?
শিরদাঁড়া, প্রতিশিল্প, চালচিত্র, দ্রষ্টব্য, বিরাঙ, বয়ান, তৃতীয় চোখ, শাঁখ, ফেস্টুন, দেশলাই, উত্তরা এক্সপ্রেস, খনন, হারপুন, যদিও উত্তরমেঘ, ন্যাপথলিন, অবগুণ্ঠন, বাঘের বাচ্চা, এরকম আরও অনেক লিটলম্যাগে বিভিন্ন সময়ে লিখেছি এবং এখনও এর কোনো কোনটিতে লিখি, তবে গত প্রায় সাত/আট বছর থেকে বিন্দু, জঙশন, ওয়াকিং ডিসট্যান্স আর চারবাকেই নিয়মিত লিখছি।
লিটলম্যাগ ব্যতীত কোথাও লেখা প্রকাশ না করবার কারণ কী?
লিটলম্যাগই সাহিত্য প্রকাশের ঠিক জায়গা বলে আমি মনে করি। অন্য জায়গার কথা বলতে গেলে প্রধানত সংবাদত্রের দিকে আঙুল ওঠে। আমি সাহিত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ঐসবকে অপাত্র মনে করি। অপাত্রে লেখা দান করতে চাই না। সংবাদপত্র সংবাদ প্রকাশ করবে ঠিকমতো, সেটাই তার কাজ। সাহিত্য প্রকাশ করা তার কাজ নয়।
আপনি ২০০৬ থেকে লিটলম্যাগ ‘বিন্দু’ সম্পাদনা করছেন। কিছুদিন আগে ওয়েবসাইটও হয়েছে বিন্দুর। এত বছর ধরে কেন প্রকাশ করছেন?
আমি বিন্দুর সম্পাদক হলেও বিন্দু আমার একার কাগজ নয়, আমাদের কাগজ, এর সাথে অনেকেই যুক্ত। সকলে মিলে আমরা এটি প্রকাশ করি। প্রথমে বিন্দু যে উদ্দেশ্যে প্রকাশ করেছিলাম তা হলো, আমাদের লিখবার কোনো জায়গা ছিলো না। তাই একটা জায়গা দরকার ছিলো। এত বছর পরে এসেও মনে হয়, আজও কি আছে তেমন জায়গা, যেখানে আমরা হাত খুলে লিখতে পারি? বিন্দুর প্রয়োজনীয়তা আজও রয়েছে এজন্যই যে, আমরা আমাদের লেখাগুলো কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য যে কোনো শক্তির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই এখানে প্রকাশ করতে পারি। এখানে বলে রাখি, দিন দিন লেখক ও পাঠক উভয় দিক থেকেই পরিসর বাড়ছে, যা প্রমাণ করে বিন্দু প্রকাশ জরুরী। আর ওয়েবসাইট (bindu.bangmoy.com) আরও আগেই দরকার ছিলো, নানা সীমাবদ্ধতায় তা করা হয়ে উঠেনি। ২০১৯ এর ২৬ মার্চ তা সম্ভব হলো। এতে আরও অধিক লেখা প্রকাশের এবং পাঠকের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ হলো।
সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ‘শিল্প-সাহিত্য’ পত্রিকাকে। শুভকামনা।
শুরু থেকে শেষ এক ধাক্কায় পড়লাম। ভালো লাগলো, বরাবরের মতোই...
ReplyDelete