শনিবার ৩০শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ১৩ই জুন ২০২০
কবিতা
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়সমান্তর
তত্ত¡গুলো আত্মস্থ করে পথটিকে বন্ধু ভাবা যায়
নদীর মতো নামিয়ে দেওয়া মাটিতে ডানা ঝাপটাই
আসলে তা ডানা নয় ফ্লিপার মাত্র
কাঁটাপালকের সময় ছেড়ে যাই পিছনে ছোটা পতঙ্গ
ময়নামাসি বহুদিন আগেই বলেছিলো বেশিক্ষণ বসতে
দিস না বাপু শিকড় গজাবে। কুটুম জাঁকিয়ে বসার আগেই
শান্তিপুরি খাতিরে বিদায় দিবি।
তবুও কিছু বোকা লোক গাছে ঝুড়ি পেতে পাখি ডাকে
অথচ পাখি নয় কিছু জোঁক ডানা ঝাপটায় ধুলো ওড়ে
জীবনের সংজ্ঞা ভুল ছিন্ন সম্পর্কের স্নায়ুবিষ অদম্য
অন্তরের হিসাব গুলিয়ে পাহাড়ি পথে ছুঁড়ে দেয় ...
ভ্রমণানন্দ নয় পাথুরে জীবনের দৈনন্দিন রক্তক্ষরণ।
সুমন মণ্ডল
ছি!
ছি অমানবিক মানুষ
ঘৃণ্য তোমার এই আচরণ
পশুর ওপর আজ তুমি যা করলে,
আর যাই হোক
তোমায় মানুষ বলা সাজে না
পশু তো না’ই
আর কবে হবে তোমার শুভবুদ্ধির উদয়
আজ পশুর সাথে করেছ
কাল নিজের পরিবারের সাথে করতেও পিছপা হবেনা
ঠিক এরকম করেই বিনষ্ট করছ তোমার অস্তিত্ব
অবশ্য কার কিবা এসে যায়
পৃথিবীতে এসেছি, থাকব, খাব, ধ্বংস করব
এইতো শিখছ আর শেখাচ্ছ প্রজন্মকে
দেখো কতদিন তোমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারো
কেননা পশু ক্ষমা করলেও
বসুমাতা তোমায় কখনোই ক্ষমা করবেন না!
রুদ্র সাহাদাৎ
যদি
ঘুমহীন রাত্রিসমুহ দীর্ঘ লাগে অন্যদিনের তুলনায়
একটা নির্ঘুম রাত্রি কেউ যদি কিনে নিতো
বেঁচে দিতাম বিনাপয়সায়।
শর্তহীন যদি কথা হতো, দেখা হতো ভালোবাসায়
একসমুদ্র পাড়ি দিতাম এক নিমিষেই।
স্বার্থহীন যদি হতো মানুষ
চোখ বন্ধ করেই বেঁচে দিতাম স্থাবর অস্থাবর সব
বেঁচে দিতাম বিনাপয়সায়।
মাঝেমাঝে রিরংসা জাগে কেনো বুঝে উঠতে পারি না
আমার নভোমণ্ডল জুড়ে রঙিন ফানুসগুলি
জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে পুড়ে রঙহীন অদৃশ্য হয়।
সাজ্জাদ সাঈফ
তমা সিরিজ: লিলিপুট
এখানে আমিও লিলিপুট দেখো
উদাত্ত গ্রীষ্মের দেশে, দেখা ও ছোঁয়া নেই
আজকাল আমাদের!
কফিনে শোয়ালে তুমি
দেখে যাবে তারে একবার?
হয়তো বৃষ্টিতে কাদাপথ চারধারে, হয়তো-বা
বাজ পড়ে সর্ষে দেখবে, বিষণ্ন যুবক চোখে;
কেউ কেউ ড্রপ দেয়া ঢেউ-
কারো থাকে মিথ্যা মায়া
হাত ছুঁয়ে মনে মনে কেউ
পাল্টাবে নিজের ছায়া!
সেইদিন, ফণিমনসার ধারে
ভূগোল বাজাবে নাকি, ক্ষুধাতুর মানুষের গান?
হয়তো-বা রোদে বসা কাক, শক খেয়ে
ঝুলবে তারে, আর, ভিড় ঠেলে হাঁটে যানজট-ধুলা;
এতোসব সিন আর দেখাও হবে না কখনো?
কার কি-যে চিঠি এসে তাপিয়ে গিয়েছে রোদ
হুডখোলা স্মৃতির টেবিলে, অতোখানি প্রেম তুমি
দু’হাতে ছিঁড়েছো তমা, মনেও পড়ে না?
আপন রহমান
নিশিতা তোমাকেই বলছি
স্লীপিং ট্যাবলেট আর ব্ল্যাক কপি ; এখন আমার নিত্য দিনের সঙ্গী। সুখের সাথে দেখা হয়না বহুকাল!
শুকপাখির সুদৃশ্য পালক পেয়েও
হারালো যে হেলায় তার আবার সুখ!
অবস্য হারিয়ে ছিলাম তোমার সুখের জন্যই। ভেবে দেখো...
নিশতা;
আমি দু:খের সাথে বেঁধেছি জনম, আজনম বন্ধনে। আমার চারিদিকে আজ আচ্ছাদিত গভীর অমানিশার গাঢ় অন্ধকারে!
জানিনা ;
“আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দু:খের কাল? ”
অথবা আদৌ কাটবে কিনা।
নিশিতা;
তোমার কি আর সময় আছে এই ব্যর্থ পিছিয়ে পড়া মানুষটির আরক্ত জীবন কথা শোনার। তুমি তো এখন ভাসছো
স্বপ্নের সমুদ্রে-
সুখের ময়ূরপঙ্খী নায়ে-
সুনীল সাগরের নীলাভ্র জল,
এখন আছড়ে পড়ছে তোমার চন্দন রাঙা শরীরে। তুমি তো খুঁজে পেয়েছো শুক পাখির সুদৃশ্য পালক । স্বগীর্য় সুখের পরশে আজ ধন্য তুমি; ধন্য তোমার জীবন।
আর আমি?
মিথ্যা প্রেমের দহনে পুঁড়ে-পুঁড়ে আজ পরিণত অঙ্গার!
বুকের পাঁজরে জমা ভষ্ম!
জেনেও বোকার মত তুমি বার বার জানতে চাও আমি কেমন আছি?
নিশিতা- প্রিয়তমা আমার ;
তুমি তো জানো তোমাকে ছাড়া আমি কেমন থাকতে পারি?
এ প্রশ্নের উত্তরটা ; কেউ না জানুক - একাদশী’র মুমূর্ষু ঐ চাঁদটা বেশ ভালোই জানে আর জানো তুমি। কারণ; প্রায় রাতেই তো ওর সঙ্গে তোমাকে নিয়ে আমার অনেক কথা হয়। ও ছাড়া আমার আর কে আছে বলো ? কে আর শুনবে আমার এ ব্যর্থ প্রলাপ।
নিশিতা;
তোমাকে হারানোর পর বেঁচে থাকার তাগিদে অথবা জীবনের প্রয়োজনে বহু ঘাটের জলে তৃষ্ণা নিবারণের ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছি বটে । কিন্তু তোমার সরোবরের সে অমৃত সম জলের তৃষ্ণার সাধ আর কোথাও মেলাতে পারিনি!
আচ্ছা নিশিতা;
তুমি কি পেরেছো? জলের তৃষ্ণা দুধে মেটাতে? নিশিতা, আমারে কান্দাইয়া তুমি যদি সুখ পাও। তাহলে আমি কেঁদেও সুখী। অনেক সুখী। সেই কান্নায় এই আমি হবো, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সুখী মনুষ।
নিশিতা ;
প্রিয়তমা আমার।
-আমি তোমার সুখে কাঁদতে পারি, হাসতে পারি ঢের
কত ভালবাসি তোমায় পাওনা বুঝি টের?
যদি ভালোবাসা না দাও ক্ষতি নেই। এভাবে মুঠো ভর্তি ঘৃণাই ছুঁড়ে মেরো... আমি তোমার ঘৃণাকেই, ভালোবাসার প্রাপ্তধন ভেবে নিয়ে, ভরে রাখবো হৃদয়ের গোলা ।
নিশিতা ;
জানিনা প্রিয়- তোমাতে এতো বেশী মুগ্ধতা কেন আমার!!!
একটা নিমেষের জন্য তোমাকে ভুলে থাকতে পারিনা আমি । আমার চোখের সম্মুখে সর্বক্ষণ ভেসে থাকে তোমার চাঁদমুখ । প্রতি নি:শ্বাসে
নি:স্বাসে আমার ভেতরকার থেকে কে যেন বলে ওঠে তোমার নাম!
জানো নিশিতা ;
তুমি হারিয়ে যাওয়ার পর। আমি উন্মাদের মত দেশ হতে দেশে কল্পনায় বাস্তবে কত-শত রমনীর মাঝে যে খুঁজেছি তোমাকে। পায়নি! যা পেয়েছি, সবই মরীচিকা সবই দূরাশা! দু:খের চোরাস্রোতে ঘুরপাক খেতে খেতে । অবশেষে যে বন্দরে এসে ভিড়িয়েছি আমার জীর্ন তরী। সেখান থেকে হয়তোবা আর ফেরা হবেনা আমার! হয়তোবা ভোরের আবছা আলোয় শরীর পেঁচিয়ে দেখা হবেনা তোমার চাঁদ মূখ আর এ জনমে!
জানো নিশি ?
কাল রাতে তোমাকে নিয়ে এক দারুণ স্বপ্ন দেখলাম;
দেখলাম-
তুমি নীল শাড়ী পরেছে। কপালে পরেছে নীল টিপ। হাতে নীল চুড়ি। শরতের পড়ন্ত বিকালে। নির্জন মাঠে। আমি বসে আছি। তুমি চন্দন রাঙা পা ফেলে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছো। আমি তন্ময় হয়ে তোমার দিকে চেয়ে আছি। বহুদিন পর আমার হৃদয় গঙ্গায় যেন শুরু হলো প্রলয়ের তাণ্ডব আমি তাকিয়ে আছি। নিথর চোখে তাকিয়ে আছি তোমার দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুমি আমার খুব কাছে চলে এলে। আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রশ্ন করলে।
তুমি;
তুমি কেমন আছো নীল? উত্তর দেওয়ার ভাষা যেন আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। কাঁপা-কাঁপা কণ্ঠে কাতর স্বরে তুমি আবার প্রশ্ন করল- কী হল তোমার?
আমার দু’চোখের পাতা ছাপিয়ে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোঁটা অশ্রু। ঐ দু’ফোঁটা অশ্রুই ছিলো আমার সকল প্রশ্নের উত্তর।
তখন তুমি তোমার নীল আঁচল দিয়ে অতি যত্নে আমার চোখ মুছে দিতে-দিতে বল্লে-জানি তুমি ভাল নেই। কিন্তু নীল, আমি কী ভাল আছি ? আমি কী সুখে আছি ? আমি বললাম কেন ? তুমি তো ভাল থাকার জন্যই আমাকে রিক্ত করে চলে গেছো দূরে- বহুদূরে। তুমি একটু হাসলে, তারপর, তারপর কোথায় যেন মিলিয়ে গেলে আবার!
আমি চিৎকার করে ডাকলাম নিশিতা, নিশিতা ফিরে এসো। প্রিয়তমা আমার ....
তুমি এলেনা ; আর আসবেই বা কেন ? তোমার কি আর সময় আছে?
এখন আমার কথা শোনার ? না স্বপ্নে না বাস্তবে- কোন ক্ষেত্রেই হয়তো তুমি আর আমার কাছে ফিরে আসতে চাওনা। তবুও এখন আমার বেশ ভালোই লাগে; তোমার উপেক্ষা, তোমার মৌনতা, তোমার কটাক্ষ, অবহেলা- উপহাস সবকিছুই আজ আমি; ভালবেসে মুঠোয় ভরে রাখি। পরম আদরে।
নিশিতা;
এখন বসন্ত-চারিদিকে শিমুল পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার ছড়াছড়ি। কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় চোখ রেখে দেখো, দেখতে পাবে আমারই বুকের রক্তক্ষরণ ।
নিশিতা; আর পারছিনা।
প্রচন্ড জ্বরে পুঁড়ে যাচ্ছে শরীরের জমিন। সেবা দূরে থাক একটু শান্তনা দেওয়ার মানুষও আজ আমার পাশে নেই। বেশ কিছু দিন যাবৎ বিছানা আমায় ছাড়তেই চাইছেনা। কি বোর্ডের উপরে নিজের আঙ্গুল গুলোও আর নড়াচড়া করতে চাইছেনা। তাই আজ এ পর্যন্তই। ভালো থেকো... নিশি... নিশিতা আমার...
No comments:
Post a Comment