মঙ্গলবার ১৯শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২রা জুন ২০২০
ক বি তা
কায়েস সৈয়দলকডাউন
নর্দমা করেছি নদী
উজার করেছি বন
উল্লাস করে পাখি খেয়ে
খাঁচায় ভরেছি আত্মহত্যার নিশ্চিন্ত দুপুর
----------------------------
থমকে থাকা সময়
----------------------
দেখো-
দ্বীপের নাভিমূলে
গোলাপ হয়ে ফোটে কাঁকড়ার দল
সমুদ্রের স্তনজুড়ে
পান করে ডলফিন হীমশীতল জল
কাছিমেরা ফিরে এসে ডানায়- ছড়িয়ে দিচ্ছে
শুভ্র থোকা থোকা ওম
দোল খায় কানে সাগরলতা
অপেক্ষা করো-----পৃথিবী সাজছে
--------------নতুন করে বাঁচার
রিয়ানো
নক্ষত্রের রোদন
রাসেল আমাকে ইদানীং বেশ এড়িয়ে চলছে.....
কেন, কে জানে!
এখন আর শীতকাল নয়। তাই হয়তো
ওর পক্ষ থেকে মেসেঞ্জারে আসে না কোন উষ্ণ বার্তা-‘এসো সন্ধ্যায় হাঁটি!’
গ্রীষ্মের রুক্ষ হাওয়া ওর আবেগের পাত্র জলশূন্য করেছে
হয়তো বা!
সবকিছুই এখন ধূসর এবং বিষণœ।
পৌষের সান্ধ্যকালীন কুয়াশার মতো
ড্রয়িংরুমের কোলাহলবিহীন আড্ডায় এখন আর
আবেগের চর্চা করা হয় না।
আমি জানি, তুমি বলবে-
'এটা একান্তই আমার নিজস্ব উপলব্ধি!'
কিন্তু আমি, এর সাথেই বসবাস করে আসছি যুগ থেকে যুগান্তরে,
কাল থেকে কালান্তরে!
হাসানুজ্জামিল মেহেদী
শৈশব ফিরে চাই
কমরেড,
চলো রাজনীতি করি শৈশবকে ফিরিয়ে আনার।
রাজপথ জুড়ে দীর্ঘ মানবন্ধন হোক,
শ্লোগানে মুখর মিছিল,
প্ল্যাকার্ডে লিখা থাক ‘শৈশব ফিরে চাই’,
শহরের দেয়ালেও লিখা থাক তাই।
জেগে ওঠো বন্ধু,
সময় কই শৈশব না পাওয়ার নিয়ম মানার।
অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী
মৃত দুঃখ
এই বিপুল জলরাশি কত মানুষের চোখে আশ্রয়
নিয়েছে বলতো!
কত মানুষ বন্যা মেখে বুকে উজ্জ্বল বাতাসে ভরিয়ে তুলছে ফুসফুস...
কত গাছ উপড়–লে বল ফসলের জমি বান্ধা হয়ে ওঠে
কত মানুষ রাস্তায় উঠে এলে তাকে প্রতিবাদ বলা যায় ?
কত নোনা জল খন্দ ভাসিয়ে দিলে
বাদাবন দুঃখের চোখ হয়ে যায়?
প্রশ্নের গতি ঝড় হয়ে এলেও
রাজধানী মুখো হয় না কোনদিন
দুঃখেরা শুধু নুইয়ে পড়ে মৃত ফসলের সাথে।
আপন রহমান
ভূমিহীন জমিদার
ছেঁড়া বুক পকেট জুড়ে আজ
রাজকীয় বসন্ত,
ভ‚মিহীন জমিদার আমি
ওষ্ঠের ভাঁজে- এক আকাশ অভিমান!
রোদ পালানো মেঘের নীচে দাঁড়িয়ে-
ধ্রæপদী বিষাদের রঙে খুঁজে ফিরি
হারানো সে স্মৃতি......
জীবন এখন শুকিয়ে যাওয়া নদী
হৃদয়ের ক্যানভাসে
জলরঙে আঁকা
হতাশার সুবিশাল মূর্তি।
বৃত্তবন্দী আজ -
আমার ঘুণে ধরা স্বপ্নগুলো
পাওয়া-না পাওয়ার খাতা জুড়ে
অনর্থক আঁকিবুকি;
তবুও বেঁচে থাকা......
অন্তহীন প্রতীক্ষার পাহাড় বুকে নিয়ে...
সা ক্ষা ৎ কা র
দেবাশীষ
ধর
সম্পাদক,
বাঙাল,ঘুনপোকা (ছোট কাগজ)
প্রকাশিত
কবিতার বইঃ
ফসিলের
কারুকাজ (২০১৬,অনুপ্রাণন প্রকাশন)
দ্বিতীয়
আয়না (২০১৮,খড়িমাটি প্রকাশন)
লেখার শুরুটা কিভাবে ?
স্কুলে
পড়াকালীন সময় থেকে আমার ডায়েরি লিখার একটা অভ্যাস ছিল।নিজের যত সব কথা ভাবনা বা নিজের
সাথে কোন ঘটনার কথা লিখে রাখতাম লুকিয়ে ডায়েরিতে।একটা অজানা আনন্দ কাজ করতো। নিজের
চিন্তা ভাবনা অনুভুতিগুলোর একটা উপলব্ধির বোধ সম্ভাবনা তৈরি করে হয়তো সিরিয়াসলি লিখার
প্রতি।অনেক কবির কবিতা পড়তে পড়তে কবিতার প্রতি একধরনের গভীর টানও হয়তো কবিতা লিখার
আনন্দটা আরো বাড়িয়ে দেয়।এরপর ছাত্রজীবনের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক অনুভূতি লিখার প্রতি
আরো জোরালো করে। আমি যখন লিটল ম্যাগে লিখা শুরু করি তখন সময়টা ২০০৮-০৯ সালের দিকে।
আপনার মতে শিল্প সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কি ?
মানব
সভ্যতার শুরু থেকেই আদিমানবরা গুহায় সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকত। তাঁদের সমস্ত ভাবনার উপস্থাপন
তারা হয়তো এভাবে প্রকাশ করতে চাইতো কিংবা সে তাঁর মনের আনন্দে তা করতো।অর্থাৎ তারা
কোন অজানা কারনে এটা করতো, এটাকে আপনি যেভাবে দেখেন না কেন বিশ্লেষণ করেন না কেন। সমগ্র
বিশ্বে এই আদিমানব থেকেই বহু ধারার নানান ভাষার ঢঙয়ের জীবনদর্শন শুরু হলো। এইখানে আমাদের
যাবতীয় ধারনা চিন্তা জীবন যাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট যেটাকে আপনারা সভ্য বলেন আমরাই আমাদের
প্রয়োজনে নন্দনতাত্ত্বিক দৃষ্টি মননে সামষ্টিক আনন্দকে শিল্প সাহিত্য বলি। আর এভাবেই
হয়তো এর প্রয়োজনীয়তা আসে। আমাদের পারস্পরিক প্রেমই দুঃখই আমাদেরকে শিল্পের কাছে নিয়ে
যায়।একটা মহানন্দযজ্ঞ বোধের জীবনকে আমরা খুঁজতে থাকি।আর তখনই আমরা শিল্প সাহিত্যের
স্বাদ পাই।এটাই আমাদেরকে আরো প্রেম বাড়িয়ে দেয় বাঁচার স্বাদ খুঁজে পাই জীবনকে উপলব্ধি
করতে পারি।মানুষের এই উপলব্ধি হয় বলেই এখনও সভ্যতা আছে।
কবিতার এলেমেলো বিন্যাস।তুমুল চিত্রকল্প।বাঁধনহারা প্রাণ তোমার লেখাকে তোমার লেখা করেছে।প্রথম দশকের নিজস্ব স্বর দিয়েছে । কবিতার ধ্রুপদী প্রকরণ তোমায় কতটা টানে বা টানেনা ?
আসলে
কবিতায় দশক বিচারে আমি কখনো বিশ্বাসী না। যে কোন সময় কবিতার বাঁক বদল হতে পারে নিজস্ব
প্যাটার্ন তৈরি হতে পারে।যখন পড়ি সব ধরনের কবিতায় আমাকে টানে, ধ্রুপদীও আমায় টানে সবসময়।
শূন্য ও প্রথম দশকের কবিতার কোন মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করো।যা দিয়ে দুটো দশককে আলাদা ভাবা যায় ?
আগেই
উপরে বলেছি কবিতায় দশক বিচারে আমার মতামত।কবিতার ক্ষেত্রে পার্থক্য হওয়ার জন্য দশকের
প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমার মনে হয় না।কবিতার স্বর আঙ্গিক বা বিন্যাস যে কোন দীর্ঘ সময়
পর্যন্ত একইভাবে হতে পারে কিংবা অল্প সময়ের জন্যও হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট করে দশক
করে দিলে কবিতার বিচারে সীমাবদ্ধতা থেকে যায়। মাইকেলের সময় যেভাবে কবিতা লিখা হতো তা
দীর্ঘ দশক ধরে বিচরণ করেছে রবীন্দ্রনাথ এসে এটাকে নতুন রূপে আনেন।মূল কথা হচ্ছে কবিতার
মৌলিক পার্থক্য বিচারে কোন নির্দিষ্ট সময়কে আপনি আবদ্ধ করতে পারবেন না।
লিটিল ম্যাগাজিন না ফেসবুক কোনটা শ্রেষ্ঠ মাধ্যম ,তোমার মতে ?
কেন ?
অবশ্যই
লিটল ম্যাগাজিন।সাহিত্যের সম্ভাবনার ক্ষেত্র এবং শিল্প সাহিত্যের অগ্রসরমান হওয়ার জন্য
লিটল ম্যাগাজিন ব্যতীত অন্য কোন মাধ্যম কখনো হতেই পারেনা। লিটল ম্যাগাজিনই হচ্ছে সাহিত্যের
সব রকম আন্দোলনের প্রণোদনা চিন্তার স্বাধীনতা এবং লেখক নিজেই একজন লিখতে লিখতে সাহিত্য
কর্মী হয়ে উঠেন।
কবিতায় কি গল্প বলা যায় ?
খুবি
জটিল প্রশ্ন।আমার কাছে মনে হয় কবিতায় ঠিক গল্প বলা হয়না গল্পের কোন চিত্র বা অবয়ব কবিতায়
আসতে পারে।কিন্তু কবিতার একটা নিজস্ব কাব্যভাষা থাকবে।
এই সময়ের তরুণ-তরুণী কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে 'বোকাচোদা' সম্বোধন করে। কবিদের মেরুদন্ড , স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ হারিয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে?
আপনার
প্রশ্নেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কে কাকে আড়ালে ‘বোকাচোদা’ বললো? আর এটার সাথে কবিতার
সম্পর্ক কি? আড়ালে কিছু বলা কবির স্বার্থকতা হতে পারেনা।
এই সময়ের কবিদের লেখা পড়ো ?
কার কার লেখা ভাবায়-মুগ্ধ করে ?
এই
সময়ে এখন অনেকেই ভাল লিখছেন।লিটল ম্যাগ, সাহিত্য ব্লগ, ওয়েবজিনে নিয়মিত অনেকেরই পড়া
হয়।সবার লিখার মধ্যেই কিছু না কিছু নতুন স্বাদ পাওয়া যায়, নাম বলতে গেলে অনেকে বাদ
পড়ে যাবে।
কবিতায় ছন্দ ও উপমার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলুন।
কবিতায়
ছন্দ ব্যাপারটা কবিতার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ছন্দ হচ্ছে এমন একটি অনুভূতিপ্রবণ ভাষাকাঠামো চিত্র যাতে কবিতা বুনন হয় কবির
মনের মতো করে ।কবির নিজস্ব উপলব্ধি অনুভূতিপ্রবণে
শব্দগুলোকে একটা ভাষাচিত্রের মাপকাঠিতে আনেন যাতে কবিতার প্রাণ হয়ে উঠে কবির
ভেতরে আনন্দে।যে কোন ছন্দে কবিতা হতে পারে।এখন অনেকেই লিখছেন বিভিন্ন প্যাটার্নে ভিন্ন
ধারার আঙ্গিকে।উপমা কবিতার নান্দনিকতাকে ঋদ্ধ করে এবং তাতে কবির অভিজ্ঞতালব্ধ চেতনার
বোধের উত্তরণ পায়।
একজন কবি ও দার্শনিকের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?
একজন
দার্শনিক তাঁর নিজস্ব চেতনায় যুক্তি বিজ্ঞান দিয়ে সমস্ত প্রকৃতি সমাজ জীবন জগৎকে বিচার
বিশ্লেষণ করেন, জ্ঞানের একটি মৌলিক বিধান বানান, ভবিষ্যতের এর কোন যৌক্তিক চেতনার নীতিবোধের
পরিবর্তনের মাপকাঠি তৈরি করেন ।
আর
কবি তাঁর যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ চেতনার উপলব্ধিকে প্রেম ভালবাসায় অনুভূতির চোখে
ভাষা শব্দ রুপকল্পের মাধ্যমে তাঁর কোন এক নিজস্ব কল্পনার জগৎকে বানান, সমস্ত প্রকৃতি
জীবন প্রেম অপ্রেম যন্ত্রণা হাহাকার আনন্দঘনকে নিয়ে নান্দনিকতার একটি বোধচিত্র তৈরি
করেন।
আপনি কি মনে করেন প্রত্যেক কবিই শুরুতে কোনো না কোনো কবির দ্বারা প্রভাবিত হন, যা তার কবিতায়ও প্রকাশ পায়। যদি একটু ব্যাখ্যা করেন।
হা
এটা হতে পারে।একজন কবি শুরুতে অনেক কবির কবিতা পড়তে পড়তে কোন না কোন কবির কাব্যভাবনার
দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন।এবং তা কিছুটা তাঁর কবিতায়ও প্রকাশ পেতে পারে। এরকম পূর্বেও
অনেক কবির ক্ষেত্রেও হয়েছে।কবি বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশসহ আরো অনেকেই শুরুতে তাঁদের
কিছু কিছু কবিতায় পাশ্চাত্যের বেশ কবির কাব্যভাবনার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। প্রভাবিত
হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু নিজ কবিতায় অবশ্যই কবির নিজস্ব মৌলিকতা থাকতে হবে যা উনারা
নিজ নিজ ক্ষেত্রে তা করেছেন। এরকমও আছে একজন কবির ব্যবহৃত কোন নতুন শব্দ আরেকজন কবি
তাঁর নিজের কবিতায় কোন লাইনে ব্যবহার করেছেন।আমার মনে হয় শুরুতে প্রত্যেক কবিই কোন
না কোন কবির দ্বারা প্রভাবিত।তবে সেই অর্থে প্রত্যেক কবির কবিতায় একে অপরের সাথে ভিন্ন
ভিন্ন স্বাদ থাকা চায়। এতেই কবির নিজস্বতা প্রকাশিত হয়।
No comments:
Post a Comment