বৃহস্পতিবার ২১শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৪ঠা জুন ২০২০
ক বি তা
আরণ্যক টিটো
নতুন বোতল পুরোনো মদিরা
...
তাহার ভাষা বদলে দিয়ে
তাহার
গানটি তুমি
সাধো
মনের তানপুরায়
তোমার ভাষায় গানটি তাহার বাজে...
যেন
নতুন বোতলে পুরোনো মদিরা! ...
তাহার কথায়
রাঙাক তোমার ভাষা
ভাসুক খেয়া... তাতে আমার কী!
তারচে
খুঁজবো আমি
নতুন কথায় নতুন ভাষায়
কোথায়
বাঁকছে নদীরা...
সাকিল আহমেদ
সংসার
আহেরী ভৈরব রাগে রাধি সংসার অম্বল
এখানে চাঁদ শিল্পের বড়া খায়
জ্যোৎস্নার প্লাবনে ভাসে নক্ষত্র রাত
ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় কে কার কফিন !
আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে ধরা খায় রোগ
ভালবাসা, কামরাঙা টক, আসছে মাহেন্দ্র যোগ।
আমাদের টু হুইলার সংসার, শামুক জীবন
ছাাতিমের ডালে পাকে স্নেহহীনরোদ
এখানে চাঁদ শিল্পের বড়া খায়
শিল্পিত হাসি হাসে সুতরাং, অথকিম ডোম
আহেরী ভেরব রাগে রাঁধি ওঁম, সংসারঅম্বল।
জাহিদুল মাসুদ
বিছানা
একদিন তোশকটা উল্টিয়ে দেখি
অনেক ক্লান্তি জমে আছে
আমার শরীর নিংড়ে ক্লান্তিগুলো
তোশকের তলায় জড়ো হয়েছে।
তোশকের অন্য পাশটা উল্টিয়ে দেখি
অনেক ঘুম জমে আছে
আমার বহু রাতের ঘুমগুলো
জমে জমে অন্ধকার মৃত্যু হয়ে আছে।
সজিব তুষার
ডিয়ার কমরেড
ডিয়ার কমরেড
আমি জানি আকাশ একদিন নিকোশ অন্ধকারে ডুবে যাবে
ফিকে হয়ে যেতে পারে চাঁদের জোছনা
সূর্যের প্রখরতা কমে যাবে
বিবর্তন কিংবা ধ্বংস হয়ে যাবে ব্রহ্মান্ড
শ্বাস আটকে আসতে পারে মূহুর্তের ভিতর
তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আঙুলগুলো চেপে ধরে থেকো হাতের তালুতে
মুষ্টিতে যতখানি শক্তি আছে সে শক্তি নেই মৃত্যুতেও
মনে রেখো পৃথিবীর শেষ অসম দেওয়াল মাটিতে মিশাতেই আমাদের জন্ম
শেষ সূর্যোদয়ের জন্যই আমাদের আস্ফালন
ডিয়ার কমরেড
হয়তো গাছ একদিন ছায়া ফেলবেনা পিপাসিত পথিকের গায়
পাখিয়ারা গাছে ধরবেনা ফল
সোনালী শীষে জন্মাবেনা ফসল
শত ফুল ফোটার আগেই ঝরে যাবে কলি
তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আঙুলগুলো চেপে ধরে থেকো হাতের তালুতে
মুষ্টিতে যতখানি শক্তি আছে সে শক্তি নেই মৃত্যুতেও
মনেরেখো পৃথিবীর শেষ ফসলটি উৎপাদন করতেই আমাদের হাতে কাস্তে
শেষ ফুলটি ফোটতে দেওয়ার জন্যই আমাদের স্লোগান
ডিয়ার কমরেড
দেখবে একদিন সাইবেরিয়ান দ্বীপে খেলবেনা ঘন হাওয়া
আমাজানে থাকবেনা কোন প্রাণ
বরফ ঝরলেও কাঁপবেনা কোন বৃদ্ধ
ইয়েমেনের হাড়ওয়ালা কোন শিশু
তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আঙুলগুলো চেপে ধরে থেকো হাতের তালুতে
মুষ্টিতে যতখানি শক্তি আছে সে শক্তি নেই মৃত্যুতেও
মনেরেখো পৃথিবীর শেষ বৃদ্ধটির শীত নিবারনের জন্যই আমাদের জন্ম
শেষ শিশুটিকে সুস্থ রাখতেই বুকে লিখেছি বুলেটের নাম
ডিয়ার কমরেড
কান পাতো শোনো ফ্যাসিস্টদের জয়ধ্বনি
হায়নার মত ডিক্টেটরদের এই উল্লাস
কেমন শুনলে!
যন্ত্রনা হচ্ছে খুব!
তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আঙুলগুলো চেপে ধরে থেকো হাতের তালুতে
মুষ্টিতে যতখানি শক্তি আছে সে শক্তি নেই মৃত্যুতেও
আজ ভেবে নাও কী চাও তুমি!
রাস্তা দুটো মাত্র আমাদের কাছে
হয় বিপ্লব
নাহয় মৃত্যু
এই নাও বিষ
পান করো
বাঁচতে চাও!
তবে চিৎকার দিয়ে বলে দাও,
‘ইন্টারন্যাশনাল, মিলাও হে মানব জাত।’
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: জঁ ককতো
ষাঁড়-লড়াইকারী
ভেনিসের রাণী পেপিতা
যখন তুমি জানালার ঝাপের নিচে যাও
সব গন্ডোলার মাঝিরা ডেকে ওঠে:
সতর্ক থাকো
ষাঁড়-লড়াইকারী!
তোমার হৃদয় শাসন করে না কেউ
রাজপ্রাসাদে যেখানে তুমি ঘুমাও
এবং তোমার সাথে বৃদ্ধ দিদিমনি অপেক্ষারত
ষাঁড়-লড়াইকারীর জন্য
ষাঁড়-লড়াইকারী, সাহসীদের মধ্যে দুঃসাহসী
যখন ছিলেন পিয়াজা সান মার্কোতে
বন্য, টসটস করে লালা ফেলানো ষাঁড়
অপহত হয় তোমার ফলক দ্বারা
অহংকারের নয় সেই আদর
সোনালী স্কন্ধাবরণের নিচে তোমার হৃদয়
যা কিনা যুবতী দেবীর জন্য
যে পোড়ায় তোমার আবেগ, ষাঁড়-লড়াইকারী
মিষ্টি স্প্যানিশ মেয়ে
তোমার গন্ডোলায়
নৃত্যরত উল্লাসিত
জরির ওড়নার নিচে
জ্বলজ্বলে চোখ
চকচকে মুখ
এটাই পেপিতা
আগামীকাল সিগারেট দিবস
এটা দিযে যুদ্ধ মৃত্যুর সাথে
খালটি পাল দিয়ে পূর্ণ
ষাঁড়ের লড়াই উদযাপন
একাধিক ভেনিসিয়ান সৌন্দর্য
তোমার অদৃষ্টকে জানতে কাঁপে থরো থরো
কিন্তু তুমি অবজ্ঞা করো তাদের সমস্ত জরি-ফিতা
কষ্ট পাও তুমি, ষাঁড়-লড়াইকারী
যেহেতু দেখা যাচ্ছে না তার উপস্থিতি
একটি লুকানো কমলা গাছের পেছনে
পেপিতা তার জানালায় একা
তুমি ভাবো প্রতিশোধের কথা
তোমার পাজামার নিচে আন্ডারওয়্যারে
তোমার ছুরি
হৃদয়ে জ্বালাতন করে সন্দেহ
একাকী ঢেউয়ের শোরগোলে
কেঁদে যাও তুমি
অসংখ্য অশ্বারোহী
দুর্দান্ত সঙ্ঘবদ্ধ ভিড়
ধারণ ক্ষমতায় পরিপূর্ণ রণাঙ্গন
হাজার লোকেরা আসতে থাকে
তোমাকে উৎসাহ দিতে, ষাঁড়-লড়াইকারী
তাই রণাঙ্গনে সে প্রবেশ করে
শাসনকর্তার চেয়েও সুরক্ষিত হয়ে
কিন্তু সে হাঁটতে পারে কদাচিৎ
দরিদ্র ষাঁড়-লড়াইকারী
তার মনমড়া স্বপ্নে
সবার চোখের সামনে
মরে যাওয়ার চেয়ে আর বেশি কিছু নেই
যেহেতু সে তার শোকের মধ্যে
শিঙগুলির ঢুকে যাওয়া অনুভব করে
ক্লিষ্ট কপাল
পেপিতাকে দেখে সে
সেখানে বসে
তাকিয়ে থাকে স্থির
অর্পন করে দেহ
ভেনিসের প্রাচীনতম ডোজ এর নিকট
হাসাহাসি ষাঁড়-লড়াইকারীর প্রতি
অ ণু গ ল্প
চরিত্রহীন চরিত্র
লোকমান হোসেন
‘তীব্র রোদের মাঝেই বিশ্বরোডে ভাঙ্গাচোরা চা স্টলটির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাশেদ। তার পরনে নীল শার্ট আর কালো জিন্সের প্যান্ট।’ এটুকু লিখেই থেমে যায় তরুণ লেখক তামীম কামরুল। দুয়েক লাইন লিখে থেমে যাওয়ার মত লেখক নয় সে। নতুন লেখক হলেও কব্জির জোর তার ঈর্ষনীয়। কাহিনী বিন্যাস, চরিত্র চিত্রনে দারুণ মুন্সীয়ানার ছাপ রয়েছে তার বিগত রচনাগুলিতে। তাছাড়া সে লিখেও একনাগাড়ে। প্রথমে সে পুরো গল্পটা মাথায় সাজিয়ে নেয়। অতঃপর একসাথে লিখতে বসে। ফলে গল্প দানা বাঁধতেই যা দেরি হয়। নামাতে দেরি হয় না। কিন্তু হঠাৎ সেদিন এক লেখকের গল্পসমগ্র পড়তে গিয়ে সে দেখল ওই লেখক নাকি তার গল্পের চরিত্রটিকে মাঠে ছেড়ে দেন। এরপর চরিত্রই নাকি নিজে থেকেই নিজের পথ খুঁজে নেয়। এভাবেই গল্প এগিয়ে যায় তরতর করে। হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকারেও এরকমটা পড়েছে সে। ফলে সে সিদ্ধান্ত নেয় এমনি একটা চরিত্র তৈরি করে কোন রাস্তার মোড়ে ছেড়ে দেবে। চরিত্র যদি নিজে নিজেই গল্প দাঁড় করাতে পারে তাহলে তো প্লট নিয়ে এত চিন্তা-ভাবনা করা লাগে না। অতএব এক অলস দুপুরে সে গড়গড় করে লিখে, ‘তীব্র রোদের মাঝেই বিশ্বরোডে ভাঙ্গাচোরা চা স্টলটির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাশেদ। তার পরনে নীল শার্ট আর কালো জিন্সের প্যান্ট।’ এটুকু লিখে সে লক্ষ্য করে চরিত্রের হাত-পা গজায় কিনা কিংবা কাহিনী কোনোদিকে মোড় নেয় কিনা। চরিত্রটিকে সময় দিতে তামীম একটা সিগারেট ধরায়। ধরিয়ে চোখ বন্ধ করে দেখতে চায় রাশেদ এখন কি করছে। চোখ বন্ধ অবস্থায় ঘরে ঢুকে তার স্ত্রী। স্বামীর এ ধ্যান দেখে বিরক্ত হয় সে। লেখালেখি করলে ধ্যানমগ্ন হওয়া লাগে! আশ্চর্য! পাগলের কারবার। নাহ্। রাশেদ আগের মতই ঠায় দাঁড়িয়ে। তামীম আরো অপেক্ষা করে। ধুর! পাগল নাকি। লেখক না লিখলে চরিত্র আগাবে কোত্থেকে? মনে মনে বলে তামীম। এমন সময় তামীম অবাক হয়ে দেখে, রাশেদ যেন একটু নড়াচড়া করছে। বাহ, বেশ। পকেট থেকে কি যেন বেরও করল। ওমা, এ তো গাঁজা। দু'হাতে পিষে একটা সিগারেটে ভরে সে। হায় হায়। তারপর আস্তে ধীরে এগুতে থাকে। তামীম খেয়াল করে কোথায় যায় সে। চোখ বন্ধ কওে দেখতে থাকে। রাশেদ হাঁটছে ফুটপাত ধরে। সামনে আরেকটা লোক হাঁটছে। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় রাশেদের লক্ষ্য সামনের লোকটা। এমন সময় রাশেদ হুট করে লোকটার পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগটি সরিয়ে ফেলে। লোকটা কিছু বুঝতে পারেনা। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল স্কুল-ব্যাগ কাঁধে সুন্দর একটা মেয়ে আসছে রাস্তা ধরে। একা। তার পেছন পেছন রাশেদ.. ও মাই গড। আঁতকে উঠে তামীম কামরুল। চোখ মেলে ধাতস্থ হয় সে। নাহ্, এভাবে কোন চরিত্রকে অভিভাবকহীন একলা মাঠে ছেড়ে দেয়া যায়না। তবে তো চরিত্র চরিত্রহীন হবেই। একটানে গল্পের লাইনটা কেটে ফেলে সে।
No comments:
Post a Comment