বৃহস্পতিবার
১১ই আষাঢ় ১৪২৭, ২৫ই জুন ২০২০
কবিতা
এম. এম. বাহাউদ্দীনবিচার চাই
আমিও একদিন জয়নাল হাজারীর মতো তোমার বিচারের দাবীতে রাজ পথে দাঁড়াবো অনামিকা।
হৃদয়ের চুক্তি ভঙ্গের দায়ে টানাবো ব্যানার।
জড়ো করে ফেলবো সমস্ত ভগ্ন হৃদয়ের মানুষ।
রাজ পথের গাড়ি আটকে করে দেবো হরতাল।
যে সমস্ত কবিদের ঠকিয়ে ধরেছো রাজ হাত,
তারাও দাঁড়িয়ে যাবে রাস্তায় হাতে হাত রেখে।
কোর্টের বারান্দা, কলেজের মাঠ, আর্ট গ্যালারী,
একুশের বই মেলা, বিজয় উৎসব, বা শোক সভা,
কিছুই করতে দেবো না আমি, না মানলে দাবী।
শিশুর ভুমিষ্ট হওয়া বা রোগগ্রস্থের চির প্রস্থান,
সব কিছু থমকে দাঁড়াবে করোনার লক ডাউনের মত।
অনশন করবো আন্না হাজারীর মত আমৃত্যু।
না। দাবী না মানা পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির হাতেও স্পর্শ করবোনা পানি বা ফলের জুস।
তুমি বা তোমরা স্বামীর বুকে শুয়ে শুয়ে
টেলিফোনের ওপাশ থেকে দেবে শান্তনা।
আমরা কিছুতেই তা মানবোনা।
পৃথিবীর ইতিহাসে, দেয়াল লিখনীতে,
তোমাদের নাম উঠে যাবে গভীর ঘৃণায়।
তবুও রাজ পথ অবরোধ করবো তোমার বিচারের দাবীতে।
জয়নাল হাজারী, হেলাল হাফিজ, হেফজুর রহমান,
বা হালের চির কুমারেরা থাকবে সে মিছিলের অগ্রভাগে।
মোশরাফি মুকুল
শারীরিক দূরত্ব
তোমাকে গোলাপি মাস্ক ভেবে সেঁটে নিচ্ছে যারা উর্বর ঠোঁটের চতুর্দিকে
এবার তাদের তীব্র রসায়ন এবং শারীরবৃত্তের বিজ্ঞাপন থামাতে বলো।
আমরা সামাজিক দূরত্বের পরিধি বাড়ানোর কথা বলছি,
খুলে ফেলছি শারীরিক দূরত্বের জিপার।
নষ্ট আঙুল দিয়ে ভ্রষ্ট নগর মেপে দেখি-
এখানে মূলত পাথরকুচির মতো কাণ্ড ও পাতা ছাড়া ফুল-ফল, শরীর বলে কিছু নেই।
সুজাউদ্দৌলা
বৈকালিক
উড়োজাহাজের মতো ফড়িংগুলি ইতস্তত
উড়ছে বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাসে
কালো যুদ্ধবিমানের মতো একটি ফিঙে
ঠোঁটে গেঁথে নিয়ে বসছে মেহগনি গাছে
ফটোসাংবাদিকের মতো আমি দেখছি
ক্যামেরাবিহীন; ছবি তোলার দায় ছাড়া-
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
অজস্র কথামালা
তার শরীরের পরতে পরতে ধরা
অজস্র কথামালা...
মনের অন্দরে ধরা আছে
কিছু বিমূর্ত ঘটনার
ছায়াময় স্মৃতি...
কঙ্কালসার এই উলঙ্গ সময়ের
চোখের তারায়
থমকে দাঁড়িয়ে আছে
পূর্ণিমার চাঁদ...
বিধ্বস্ত
বিপর্যস্ত
সংক্ষিপ্ত অবসরের ফাঁকেই
ভালোবাসার বাসন্তিকা ট্রেন
ডাক পেয়ে
চলে যায় দূরের গন্তব্যে
রেখে যায়
পথের দু’ধারে
পোড়ামাটির সব ঘর-বাড়ি, গেরস্থালি আর
নিদ্রাহীন দিবারাত্রির কাব্য
কেঁপে ওঠে অন্ধকারের রোদ
অজস্র কথামালার ঘাড়ে চেপে
ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে দিনের নিস্তব্ধতা...
মীর সাহাবুদ্দীন
সাড়ে তিন হাত নিচ
পৃথিবীর জনসংখ্যা যত দ্রুতো বেড়েছে
তার অর্ধেক সময়ে মিলিয়ে যাচ্ছে মানুষ
বিশুদ্ধ অক্সিজেনের টানাপড়া
মস্তিষ্ক ছিদ্র করলে মিলে নেটওয়ার্ক
মানুষ থেকে এলিয়েন
বৃক্ষ থেকে পশু
ক্রমাগত সবাই মিশে যাচ্ছে
রেখে যাচ্ছে কংক্রিট ভবন ও দলিল
অথচ কেউ খবর নিতে পারছেনা
সাড়ে তিন হাত নিচের
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৫
ডন জেইম সাবার্তেস এর জন্য তাঁর সাধু দিবসে
মূল: পাবলো পিকাসো
১.
আমার দাদির বড় বলগুলো
জ্বলজ্বল করে কাঁটাঝোপের মাঝে
এবং যেখানে যুবতী মেয়েরা ঘুরে বেড়ায়
ঘুরন্ত শানপাথর তাদের শিষ-ধ্বনি শান দেয়
২.
সসিজ যা তুই ঠেলে দিস
তোর সেনোরার পোঁদের উপর
অনুভূত কামফলের মতো
এক্সত্রেমাদুরা’র মতো রুদ্ধশ্বাস
৩.
মোরগের টকটকে লাল
আর গভীর ক্ষতের যাজক
রসুন ও অর্থের জন্য এক চোখসহ
ভালোভাবে ঝুলন্ত ছেলেদের যুগল
৪.
সেই চেয়ারগুলোতে যেখানে গীর্জার সন্ন্যাসীনি ও ঘণ্টাবাদক
ফেলেছিলো তাদের প্যান্ট
হিসহিস করে গরম মধু তাদের পোঁদে
যতক্ষণ না তারা তাদের ক্রুশ টানে ও নাচে
অণুগল্প
আকাঙ্ক্ষালোকমান হোসেন
ইন্সপেক্টর রশিদ বারান্দা দিয়ে পায়চারী করছেন। কিন্তু পায়চারী ফোরাচ্ছে না। অথচ খুনী তখনও ঘরের মধ্যে। বুকশেলফের পেছনে হামাগুড়ি দিয়ে বসে আছে। লাশটা মর্গে এখনো। ডোম প্রস্তুতি নিচ্ছে কাটাকুটির। ডাক্তার সাহেব এখনো আসেননি।
ইন্সপেক্টর রশিদ তদন্ত কাজে খুবই দক্ষ। দেশের বেশ চাঞ্চল্যকর কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সুরাহা করেছেন তিনি। মার্ডার মিস্ট্রি গুলে খাওয়া মানুষ। তবুও এ কেসটা আগাচ্ছে না।
নিপাট ভদ্রলোক সাইমন সাকিব। একটা বহুল প্রচলিত দৈনিকের সম্পাদক। মাঝে মাঝে টিভি চ্যানেলে টকশোতে অংশ নিতেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে খ্যাতি ছিল। হয়তো সেখান থেকেই শত্রুতার সূত্রপাত। ভিন্নমতের উপর শ্রদ্ধা, সহনশীলতা এদেশে নেই বললেই চলে।
দরিদ্র ছমিরন সারাদিন ভিক্ষা করে যা যোগাড় করে তাই দিয়ে দিনাতিপাত করে। একদিন রেলস্টেশন এ ভিক্ষা করার সময় স্টশনের পুরনো ওয়েটিং রুমের বাথরুমে একটা লোককে খুন হতে দেখে ফেলে সে। তারপর থেকে তাড়া খেয়ে নিরুদ্দেশ হয় ছমিরন।
কোন একটা বিশেষ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রের আঘাতে মারা যায় ওই এলাকার প্রবীণ একজন মানুষ। খুনীরা ক্ষমতাসীন দলের শ্লোগান দিতে দিতে চলে যায়। অতঃপর সেখানে সৃষ্টি হয় একের পর এক হত্যাযজ্ঞ।
অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে তারা সবাই এক জায়গায় বন্দী।
নানা ধরণের বিচিত্র সব চরিত্র নিয়ে সবসময় ভাবনায় থাকেন নাফিস আহমেদ। স্ট্রোক জনিত কারণে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মনে হতে থাকে, আহা চরিত্রগুলোকে যদি কোনো ভাবে মুক্তি দেয়া যেত!
অন্তিম মুহূর্তে একজন থ্রিলার লেখকের আর কি চাওয়ার থাকতে পারে!
No comments:
Post a Comment