মঙ্গলবার ২৬শে
জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৯ই জুন ২০২০
কবিতা
সজল রানভী
“এস্কান্দারের খালাকে আমার প্রেম”
এস্কান্দারের খালা আমাকে ফুল বিষয়ক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ব্লাউজ খুলে বের করলেন জোড়া কদম।
শেখালেন ফুল গাছের যত্ন আত্তি
নিংড়ানো, সেচ পদ্ধতি, পরিপক্কতা, ঘরে তোলার আদিম শ্লোক।
যদিও প্রেমিকা আছে আমার।
ঘরে কিংবা ঘাড়ে তোলার তাবিজ কবজ যদিও মুখস্থ করেছি বহুকাল আগেই।
যোনিফুলে মুখ ডুবিয়ে মধু সংগ্রহ
ছয় নয় চোষাচোষি
সাপের মতো জড়িয়ে পেঁচিয়ে শুয়ে থাকা।
যদিও থেকেছি। যদিও এঁকেছি সাড়ে তিন হাতের দুটো কবর। তবুও প্রেমে পড়লাম।
আবারো, আবারো প্রেমিকা যোগে নিয়ে আসলাম এস্কান্দারের খালা।
খেলবো খাবো খাবো খেলবো
চাষবো চুষবো বাহুমূলে ঝুলে থাকা নেশার বোতল । মাতাল হবো, যেমনটা মাতাল হয়েছিলেন এস্কান্দারের অন্যসব পাঠক।
এক নলা বন্দুক, দুটি গুলি দিয়ে খুলি উড়িয়ে দেবো-
যারা এইসব চাষাবাদের ঘোর বিরোধী।।
নৌশিয়া নাজনীন
শরীরে আমার ছোবল
বিষধর সাপে-কাটা মানুষ আমি,
দেহের জোড়ায়-জোড়ায়, রন্দ্রে-রন্দ্রে ঢুকে গেছে নীল বিষ।
অহর্ণিশ আমি ছটফট করছি-
লতা পাতার কোনো ঔষধেও কাজ হয়নি,
আমার রক্তনালী ছিঁড়ে যাচ্ছে- আমি আর পারছি না-
বয়ে যেতে রক্তনদীর বিষজল।
সমস্ত মাংসের কোষে-কোষে অসহ্য যন্ত্রণা,
আমার দেহের মাংসগুলো কেটে নাও-
ছড়িয়ে দাও বীজ বপনের মতো টুকরো-টুকরো করে,
মাংসের ঘ্রাণে প্রিয় মাংসলোভী ওই সব-
জন্তু- জানোয়ার প্রেমিক ঘাতকেরা খেয়ে-খেয়ে-
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হোক নীল পীরামিড।
আর সমস্ত মাংস ক্ষয়ে যখন আমি হবো কংকাল প্রেমিকা-
রাতের নিশাচর দিনের উন্মাতাল কে আছো যে স্বেচ্ছায়-
চুম্বনে-চুম্বনে চুষে নিতে বেদনায়-
আধা ডুবন্ত জীবন-গ্লাসের উপচানো নীল সর্পবিষ।
সিদ্ধার্থ সিংহ
প্লিজ
আমাকে একটু পরামর্শ দিন
সবাই যেমন একদম নিচুতলা থেকে ওপরতলা অবধি
সেভেন্টি-সেভেন্টি টু পার্সেন্ট নজরানা দেন
আমি তার থেকে কিঞ্চিৎ বেশিই দেব।
বললে, ছেলেদের দিয়ে এলাকা দখল করিয়ে দেব
যাদের মুখ আর দেখতে চান না
তালিকা দিলেই, হাসতে হাসতে নামিয়ে দেব তাদের মাথা,
যে সব মিডিয়া আপনার ভজনা করবে না
চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বন্ধ করে দেব তাদের মুখ।
যা বলবেন এবং যা বলবেন না
আমি সেটাও করে দেব,
আপনি শুধু আমাকে একটু পরামর্শ দিন-
কী করলে এই শাসক দলের বড় মন্ত্রী বা নেতা না হই
অন্তত একজন কাউন্সিলর যাতে হতে পারি।
আর, একজন কাউন্সিলার হলে?
সব দিয়ে-থুয়ে, ফেলিয়ে ছড়িয়ে
চার-ছ’টা মেয়েছেলে পুষেও
বছর শেষে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা তো ঘরে তুলতে পারব।
আপনি শুধু আমাকে একটু পরামর্শ দিন
একটু পরামর্শ, প্লিজ।
বঙ্কিম কুমার বর্মন
কুরুক্ষেত্রের মাটি
প্রাপ্তি দাও খানিকটা ডুব সাঁতারে। যেন পেয়ে যাই সোনাযুগের প্রশ্নময় হরিণ। দলা পাকানো রুপালি সন্ধ্যার ঘ্রাণ ঢুকে পড়ে। বহুদিন পর বৃষ্টি হচ্ছে একটা নেবু রঙা বেদনায়। অজান্তেই ঘুঘুর ডাক উল্লাসের সুতোয় টাঙিয়ে রাখে ঘুমন্ত মেয়েবেলা। বাতাসের ক্ষতবিক্ষত হাসি সশব্দে ময়ূর হয়ে যায়, তাঁর নিয়মিত পিঠে ঝুঁকে আছে বাহুল্য জিজ্ঞাসা। কেমন সুদূর একটা শীতল বিশ্বাস আমাকে উঁকি দেয়। আমি তাঁর রুক্ষ চুলের খোঁপায় লাল গেন্দা ফুল গেঁথে দিই। দীর্ঘ চুম্বন রেখার ঘনত্ব কমবেশি বাজিয়ে নেয় মুক্ত নিবাস। ঝকঝকে যন্ত্রণার তরল অনুবাদ দৃশ্যে প্রসারিত হতে থাকে একাকীত্বের মরসুমে, বরং নয়নের সংলাপ কাঁচা ঢেউ সাজায় ওষ্ঠের মেহগনি প্রপাতে। অঢেল ডানা ঝাপটানো প্রচ্ছদচিত্রে দাঁড়িয়ে একেকটা প্রতিবেশী গাছ, ভরসা বুনে যাচ্ছে মনখারাপে। এলোমেলো দৃষ্টিরেখা আঁকছে শালপ্রজন্মের অঙ্গে যবানবন্দী চিত্রনাট্য। প্রস্তাবিত কুসুম দুপুরের অনন্ত মগ্নতা নিয়ে হাঁটে গ্রামদেশ। শহরের কপালে জলবায়ু নক্সায় কুরুক্ষেত্রের মাটি।
আশিক আকবর
লেনিন, বিদায়
শুধু পানিতে রুটি ভিজিয়ে লেনিন যখন খাচ্ছেন
তখন রাশিয়ার মুক্ত কৃষকরা লেনিন কে ঘেরাও করতে যাচ্ছেন
সকালের নাস্তার রুটির সাথে ভাজি কেন কম জানতে
যখন অসুস্থ খুব ভ্লাদিমির ভ্লাদিমির
তখন সোভিয়েত এর সমস্ত ক্ষমতা ছেড়ে গ্রামের বোনের কাছেই,
রাজধানীতে আসতে পারেন না আর
এক দেড় বৎসর
তার কোটের হারিয়ে যাওয়া বোতামের স্থলে
শ্রমিকা কমরেড এর লাগানো বেমানান বোতামটি আর নই
ক্রেন দিআ নামানো হচ্ছে লেনিন এর মূর্তি
অপূর্ব ভাস্কর্য
বনে পুঁতে দেআ হচ্ছে তার জোড়া মাথা
উফ!
ঐ লেনিন কে আবার উদ্ধার করছেন খণ্ডিত রাশিয়ার শ্রমিক
ভাই আমার
দেশে দেশে লেনিনেরা মৃত, ভণ্ড, লেবাস সর্বস্ব...
লেনিনের পক্ষ থেকে লেনিনের জন্মদিনে লাল থুতু নিক্ষেপ করছি
ওদের সাধের সমাজতন্ত্র লাগবে না আমার
কমিউনিজমের দূর স্বপ্নের পৃথিবী আমি চাই না
আমার পুঁজিই ভালো
পুঁজিবাদই ভালো
জুয়ার টেবিলে বসতে কেউ করবে না মানা
বেশ্যালয়ের হাজার হাজার যোনিস্তনছলাকলাবেচা রমণীদের সামান্য অর্থেই পাবো কৃত্রিম আদর
চাই কি লটকে যেতে পারি নীল দড়ির ফাঁসিতেও
বিদায় লেনিন
বিদায়
সাশা ছোট্ট ভাইটি আমার
জন্মদিনেই তোমাকে বিদায়
কার্ল মার্কসের বাড়ির দিকে যাবো না আর
এঙ্গেলস কে পেলে অধিক আড্ডা পিটাবো
চা পান করবো
খুব বেশী খারাপ লাগলে
মুচি বাড়িতে যেয়ে মদ খাবো
কচ্ছপ রান্না দেখবো
শুয়োরের ঘোৎ ঘোৎ শুনবো
কোনো কমিউনিসট খোঁজ নিতে এলে বলবো
আসো মদ খাই
মাগী লাগাই
তারপর তোমার মুখস্ত করা রণনীতি রণকৌশল শুনবো নে
লেনিন
শতাধিক তম জন্মদিনে
ঘুমাও, ঘুমাও, ঘুমাও, ঘুমাও, ঘুমাও
এ জীবনে জাগবার ডাক পেলে
জাগাবো নে
অণুগল্প
সুখ
নুসরাত রীপা
বস্তির একটা ঝুপড়ির সামনে রিকশাটা দাঁড়ালো। এক পঙ্গু মধ্যবয়সী লোক জহিরকে দেখে বেরিয়ে এলো। তার মুখে আকণ্ঠ বিস্তৃত হাসি। তার পেছনে পেছনে বেরিয়ে এলো নারী কিশোর বৃদ্ধ নানা বয়সী আরো পাঁচ-ছয়জন।
বস্তির এই ঝুপড়ি ঘরের বাসিন্দাদের কাছে জহির মানুষ নয়, ফেরেশতা!
এই দরিদ্র পরিবার টির উপার্জনক্ষম মধ্যবয়সী লোকটি এক্সিডেন্ট করে পা ভেঙে গেলে পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। লকডাউনের এ সময় তার স্ত্রী যে সব বাসা বাড়িতে কাজ করতো তারাও ছাড়িয়ে দেয়। আট সদস্যের সংসারটা মুমূর্ষু যখন তখন জহির এদের দেখা পায়। বাচ্চা গুলো ডাস্টবিনে খাবার খুঁজছিল- দৃশ্যটা দেখে চোখে জল আটকাতে পারেনি সে।
জহির লোকটির চিকিৎসা করাতে এবং যতদিন সুস্থ্য বা হয় ততদিল চলার জন্য অফিস থেকে পাওয়া অগ্রিম টাকাটা খরচ করে ফেলেছে। কথাটা হিনুকে অনায়াসেই বলতে পারতো। হিনুর মন অনেক কোমল। কিন্তু জহিরের এখন চাকরি নেই। টাকাটা অফিসের দেওয়া দু’মাসের বেতন ছিল। সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে সেটা অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় হিনু টাকাটা দান করতে দিতো কী না এটা ভেবেই কথাটা আর বলা হয়নি।
একদিন অবশ্য হিনুকে সব বলবে জহির। তবে এখন না। নিজেদের একটু কষ্টের বদলে একটা পুরো পরিবার বেঁচে গেছে শুনলে হিনু রাগ করবে না নিশ্চয়ই!
জহির লোকটার কুশলাদি জেনে ফিরে আসছিল, তখন একটা দুই আড়াই বছরের শিশু ভীরু ভীরু পায়ে জহিরের কাছে এগিয়ে এলো। শিশুটির হাতে একটা আধা খাওয়া রুটি, জহিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, নেন নেন নে নে-
বাচ্চাটার চোখে মুখে ভরা পেটের তৃপ্তি, জাহিরের মুখে নিজের অজান্তেই সুখের হাসি ফুটে ওঠে।
No comments:
Post a Comment