Tuesday, June 16, 2020

শিল্প সাহিত্য ৬৪


মঙ্গলবার ২রা আষাঢ় ১৪২৭, ১৬ই জুন ২০২০





কবিতা
কায়েস সৈয়দ
সুদ

কৃষক তুমি লাউগাছ, পৃথিবী একটা মাচা
বেঁচে থাকি আমরা
খেয়ে লাউডগা
---------------------------------
আচাষা-
শরিফার মতো
যাও তুমি পচে
আমরা তবু বেঁচে থাকি পাঁচ পার্সেন্ট সুদে!

অনিন্দ্যকেতন গোস্বামী
চোখ তুমি অন্ধ হয়ে যাও

এই যে এত কাচের উপরে আঙুল রেখে তোমাকে ছোঁয়ার বাসনা
সত্যি কি বন্ধুত্ব দিয়ে বোনা? 

এই যে এত পশু পাখি রাজপথে নেমে লুটে নিচ্ছে শহুরে আদর
সত্যি চাইনি এ ভোর।

চাইনি অনেক কিছুই দেখেছি যা রঙিন বিজ্ঞাপনে
তাই ক্লান্তি নামে মনে।

রাজনীতি বন্ধুত্ব আর ধর্মের বেসাতি বাড়ে সুদে 
চোখ ডোবে নোনা বুদবুদে...    

আপন রহমান
উত্তাপ

পাথরকে আঁকড়ে ধরে
জীবনের দু:খ ভুলতে চেয়েছিলাম
পাথরও মোমের মত গলতে শুরু করল।

অত:পর সূর্যের কাছে গেলাম
দু:খের উত্তাপগুলো রাখার জন্য,
সে জানাল নিজের উত্তাপে সে নিজেই জর্জরিত।

পরিশেষে কি আর করা
নিজের উত্তাপে-
নিজেই ভষ্ম হতে থাকলাম।

ক্রমশ; সে উত্তাপকে আরও বেশি
আলগা করে দিতে থাকল
বেদনার বিষণ্ন বাতাস।

মীর সাহাবুদ্দীন
নিরাপদে থাকুন

কাউকে বলিনি ভালো থাকেন।  কেননা আমি জানিনা তার ভীতরে ক্ষুদারা পিড়ায় কিনা। তার পরিবার না খেয়ে আছে কিনা। অনেককেই চিনি দিন আনা দিন খাওয়ার মানুষ। তারা হাত পাততে ও জানেনা। আমিও স্বল্প আয়ের একজন। কিছু জমানো টাকা ছিল  আগামি দিন ভালো আসবে এ ভেবে পাশের পরিবারকে দান করেছি। মানুষের তাতে কি হয়েছে এক দিন দুইদিন চলবে তারপর....
তবুও সবাইকে বলি নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে থাকুন দূরত্ব বজায় রাখুন।

তানহিম আহমেদ
নিদ্রিতাকে

ভাগ্যের তস্য গলিতে। লটকে থাকে... খণ্ডিত
ঈশ্বরের নাম। ঝুলে থাকে- বেদনার আপক্ব
ফল। ঈগলের ডানা থেকে। অক্ষম মানুষের
সমগ্র তল্লাট জুড়ে। ঘাসের মতোন। গজিয়ে
ওঠে কল্লোলমুখর চারা। চলিষ্ণু- বৃক্ষমুখ।

স্টোরি অব টেইলস- চুকে যায় সব, রাত্রির
পাঠশালা। থমকে যায়। ব্যগ্র কণ্ঠস্বর।

নিদ্রা এবং- প্রতীক্ষা। মানুষের শ্রেষ্ঠ সঞ্চয়;

হিসেবে তালা থাকে কাঞ্চন। অথচূ ঘোর
অসময়ে ঈশ্বরও ভুলে যান সুন্দরের সংজ্ঞা।

রফিকুল নাজিম  
মায়ায় বাঁচো
(জর্জ ফ্লয়েড এর স্মরণে)

সাদার বুটের নিচে কালো
কালোর বুটের নিচে সাদা,
সাদা কালোর ঘৃণার বোঝা
টেনেই যাচ্ছেন বর্ণগাধা!

জাতপাত আর বর্ণবিদ্বেষে
আগুন দিচ্ছে পৃথিবীর বুকে,
হিংসা ক্রোধের বিষের বানে
সাদা কালো মরছে ধুঁকে।

অধর্মের বর্শায় আহত ধর্ম
বেনিয়ারা লুটছে সব,
মানুষ মারে মানুষ মরে
রক্ত হোলির মহোৎসব।

মায়ার ধর্মে বাঁচো মানুষ
মনে প্রেমের রঙ মাখো,
সাদা কালোর ঘৃণা মুছে
মায়ার হাতে হাত রাখো।

সজিব তুষার
কৃষকের জন্য কবিতা

পাকা ধান গাছের মাথা যেভাবে নত হয় কৃষকের ভোঁতা লাঙলের কাছে,
যেভাবে পাকা ধানের শীষ নুয়ে যায়...
নত হও ওই কৃষকের শ্রমের কাছে,
ঋণী হও তার শিল্পে,
ঈমান আনো সংগ্রামী জীবনে;
তাঁর গুজে যাওয়া পেটের ভিতর লুকিয়ে থাকে পৃথিবীর আজন্ম ক্ষুধা।
বিশ্বাস রাখো তাঁর হাতের মুষ্টিতে,
তাকিয়ে দেখো...
ওই মুষ্টি কখনই তোমাকে অভুক্ত রাখেনি,
ওই মুষ্ঠীর শর্করায় তোমার পেটে মেদ জমে-
তুমি হাটতে পারো,
চলতে পারো,
কাজে যাও;
তুমি হয়ে ওঠো হৃষ্টপুষ্ট সু-পুরুষ
তুমি হয়ে ওঠো সু-কোমল নারী,
হয়ে ওঠো ফ্যাসীবাদী শাষক-
হয়ে ওঠো বিপ্লবী নেতা,
হয়ে ওঠো ধর্মগুরু! 
তবে প্রথমেই ঈমান আনো - ওইসব হাড় লিকলিকে কৃষকের উপর,
এই ফসলি জমিন তার জীবন
এখানেই তার সাধনা,
সে তোমার পঁচিশ তলা সেক্রেটারিয়েট বুড়ি আঙুল দেখায়,
সে জানিয়ে দেয় সংসদের সব হিসেব নিকেষ থেমে যাবে এই ক্ষুদ্র ধানে;
পঞ্চাশ ফ্লোরের কারখানা বন্ধ সে থামলেই,
তাই এখনও সময় আছে-
ঈমান আনো।
একজন খেটে খাওয়া কৃষকের মুষ্টি তোমার জন্য ভাবে,
তোমার ক্ষুধার্ত চেহারা
অপুষ্ট শরীর-
শিশুর ক্ষুধার্ত চিৎকার। 
আহঃ,
সে দিনভর খেটে মরে,
শাদামলা গুঁজে নেয়,
দুই টান বিড়ি ফুঁকে-
প্রস্তুতি নেয় যুদ্ধের
এক কলসী পানি, চটের বস্তা, এক বোল ভাত- শুটকি ভর্তা
লাঙল-জোয়াল কাধে নিয়েই নেমে যায় যুদ্ধে,
এই যুদ্ধ তোমার জন্য-
এই যুদ্ধ তোমার শিশুর জন্য
এই যুদ্ধ প্রতিটি মানুষের জন্য
এই যুদ্ধ ক্ষুধার বিরুদ্ধে কৃষকের,
এই যুদ্ধ অভুক্তদের জন্য;
ক্ষুধাই অদৃশ্য দোজখ
ক্ষুধাই অদৃশ্য আজাব,
সৃষ্টির যন্ত্রণা ঈশ্বর সহ্য করতে পারেনা,
তার প্রচন্ড কষ্ট হয়
খুরে চলে মাটি,
পানি দেয় মাঠে-
হাল বায়
সার দেয়
শুকায়,
আবার হালবায়
শুকায়
সার দেয়,
বীজ ঢালে চষা জমিনে;
একদিন হাসি ফুটে তোমার মুখে! 
চিকেন ফ্রাই, বিফ ভূনা, কালা ভূনা দিয়ে--
গিলে খাও তার টসটসে হাতের ফোসকা-
ধাড়ালো পাতায় ফালা ফালা হওয়া আঙুল,
ক্ষত হয়ে যাওয়া পা
কাচিঁর আঘাতে চিড়ে যাওয়া- রক্ত মিশ্রিত মাংসের দলা,
রোদে পুড়ে কালো হওয়া শরীর;
খাওয়া শেষ!
এখন অন্ততঃ ঈমান আনো তার শ্রমে,
তার শিক্ষা নিশ্চিত করো
তার চিকিৎসা নিশ্চিত করো;
তার ছেড়া লুঙ্গীটা বদলে দাও
তার বাড়ির ছাদের ফুটো বন্ধ করো;
তাকে কীটনাশক দাও-
উন্নত সার দাও;
উন্নত প্রযুক্তি দাও,
দেখবে পৃথিবীর সব শান্তি ফিরিয়ে আনবে;
যুদ্ধবাজ পৃথিবীকে আদর দিয়ে ভরিয়ে দিবে ফসলে,
ক্ষুধা নিয়ে খেলা বন্ধ করে দিবে
কর্পোরেট দালালদের, 
ট্যাকনোক্রেট ক্ষুধা-
একদম চুদে দিবে;
তারা ক্ষুধা নিয়ে কোন আর্ট চুদেনা,
তারা ক্ষুধা নিয়ে মুনাফার স্বপ্ন দেখেনা,
তারা ক্ষুধা নিয়ে খেলতে পারেনা! 
তারা স্বপ্ন দেখে এক ক্ষুধাহীন পৃথিবীর,
স্বপ্ন দেখে বাসযোগ্য পৃথিবীর
তাই এখনও সময় আছে,
ঈমান আনো-
ঈমান আনো খেটে খাওয়া কৃষকের মুষ্টিতে,
ওই মুষ্টি তোমাকে কখনও ক্ষুধার্ত রাখবেনা।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক