Thursday, June 18, 2020

শিল্প সাহিত্য ৬৬


বৃহস্পতিবার ৪ঠা আষাঢ় ১৪২৭, ১৮ই জুন ২০২০




কবিতা
অভিজিৎ চক্রবর্তী 
মে আই কাম ইন
                     
তোমার ক্রমাগত প্রস্থানে জল শুধু মুছে গিয়েছে নদীর ভাঙন, ক্ষয়ে যাওয়া অংশের ভেতরে জীবাণুরা চালাচ্ছে চুনকাম। অসংখ্য অসুখের ভীড়ে নগ্নতা দেখে গেছে সুস্থ এক দোপেয়ো মাছি অথচ প্রতিদিন নরম পর্দার আড়ালে ক্রমশ নগ্ন হয়ে উঠছে চাহিদা!

সরকার মামুন
বিনোদন

তাসের একটা দুনিয়া আছে...
বায়ান্ন তাসের খেলায় রাজা, রানীর সাথে থাকে গোলাম, থাকে পাইক বরকন্দাজ।
আচ্ছা জোকার দুজন কেনো থাকে?
জোকার দুজন, সে দুনিয়ায় বিনোদন দেয় নাকি!

বাহ! কি ভীষণ রকম করে ওরা হাতে হাতে ছড়িয়ে যায়, আর জোকার দুজন তখনো হাসে।
মূলত সবাই সবার বিনোদনের জন্যই।
শুধু অবস্থানের জন্য, কিছুটা সময়ের এদিক ওদিক হয়,
হাত বদল হয় ক্ষমতার!!

মজনু মিয়া 
পিছুটান 

তোমার হৃদয় জোরে যার ছবি ছিলো
তার খবর তুমি নিচ্ছ বাতাসে কাছে
পিঁপিলিকার কাছে মৃত্তিকার কাছে,
আবার দেখি ঘাসফড়িং এর কাছে
কিংবা গাঙচিলের কাছে।
কেন? একবারও কি আমার কাছে জানতে
চেয়েছো?
যার দেহের গন্ধ মিশে আছে তোমার দেহে
যার চোখের মনিতে আজও ভাসে তোমার ছবি,
হাঁটতে বসতে উঠতে যে কোনো ভাবেই
তোমার কথা আমার যেমন মনে পড়ে তেমনি তো
তোমারও থাকার কথা।
সব ভুলে যাও তবু আমার কেনো থাকে
তোমার প্রতি পিছুটান?

আহমেদ সুমন 
পৃথিবীর কাছে প্রশ্ন

নিস্তব্ধ রাতে দূর আকাশে তাকিয়ে
কুয়াশায় আচ্ছন্ন এই পৃথিবীর কাছে
জানতে খুব ইচ্ছে হয়;
শত আঘাত, যন্ত্রণা সহ্য করে নেওয়া
মহীয়ান, ক্লান্ত মানুষগুলো
কেনো আজো নির্ঘুম রাত কাটায়?
শহরের অলিতে-গলিতে আজো কেনো?
ভবঘুরের মত চরিয়ে বেড়ায়
সুদর্শন, বুদ্ধিদীপ্ত, নক্ষত্রময় যুবক।

পঙ্গুপিতা, শয্যাশায়ী মায়ের আর্তনাদ
এই পৃথিবীর বুকে কী প্রতিধ্বনিত হয়না?
শীর্ণ জামা গায়ে জড়ানো
বোনের হৃদয়ের কোণে লালিত স্বপ্ন,
এই পৃথিবী কী উপলব্ধি করেনা?
পথ শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে
তার হৃদয়ের লুকানো ব্যাথা,
এই পৃথিবী কেনো বুঝতে পারেনা?

ক্ষুধায় কাতরানো শিশুর আর্তনাদ,
গৃহ হারা বৃদ্ধ পিতার হাহাকার,
গৃহিণীর শূন্য উনুনের ধোঁয়ার ক্রন্দন,
এই পৃথিবী কী শুনতে পায় না?

তবে কেনো এই সবুজ ঘাস, কোকিলের কুহুতান?
কেন এই দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ?
তবে চারদিকে কেনো এত সাম্যের জয়গান?

তবুও, স্বপ্ন দেখি, কান পেতে থাকি,
কোন এক নিস্তব্ধ রাতে তারকারাজি
আমায় বলবে;
মহীয়ান মানুষগুলো আজ ঘুমন্ত,
সুদর্শন, নক্ষত্রময় যুবক আজ ব্যস্ত,
বোনের গায়ে আজ ফুটফুটে লাল শাড়ী,
পথ শিশুর মুখে আজ দুরন্ত হাসি।

তৃষ্ণার্ত কাকের মতো, আজো ঘুরি আমি
সে সুদিনের আশায়।
জীবনের তরী বেয়ে যদি ওপারে চলে যাই
তবুও, রাতের তারা হয়ে দেখতে চাই;
আবারো এই ধূসর পৃথিবী মুখরিত হবে,
সবুজের সমারোহে!

বঙ্গ রাখাল
হে জন্মাত্রী, হে পিতৃভূমি

বাবুজী ঐ দেখো, ধান্যঢেউ
আজ আর নদীতে জলঢেউ নেই
মাঝি ভাসমান গাঙচিল- সঙ্গী সাম্পান
হাঁটুরে রৌদ্রখরতাপে ভাঙাফাটা সন্ধ্যা তারা
জোস্না রাতে নিঃসঙ্গ চুলের গিলে খাওয়া
বীজশামুকের ঠোঁটে বিস্মৃত নদী...

চাঁদ সভ্যতা কেড়ে নিয়েছে বুকের-রৌদ্রছায়া
যান্ত্রিকতা বেগ দিলেও নিয়েছে আবেগ
মানুষ পিতৃপরিচয়ে অন্তরবতী হয়-
জংধরা সভ্যরাতে।

আজ আমার যেতে ইচ্ছে করে
ফেলে আসা ঋণজোস্নার কাছে
যেখানে-ছোট্ট গ্রাম
পূর্ব দিগন্তে বিস্তৃত ধান্যঢেউ
নিমজ্জিত সকাল মাতৃকতায় পুতুল খেলে

চাষীর গায়ে লেগে থাকা মৃত্তিকা
স্মরণ করিয়ে দেয়-আদিম মুগ্ধতার ইতিহাস।

কাঠুরের নিষ্ঠুরতা পেষণে ক্ষরণে
মনের গহিনে ডুকরে ওঠে
জন্মভূমি - পালকগ্রাম
গোলকনগরের কথা।

একদিন শরণার্থীদের সাহায্যে
গভীর মমতায় এ গ্রাম-
হৃদয়ে ঠায় দিয়ে সহস্রাধিক
অন্ধকারে ডুবে যাওয়া
আশ্রয়হীন রাজহাঁস...

যে গ্রাম তার কণ্ঠে ধারণ করে
যাত্রাপালা, গাজিরগান, কবিগান আর মহিয়ান
কিছু গুণী দগ্ধতার হ্যাজাক
যার সুবাতাস আজও প্রবাহমান।

তোমাকে প্রণমী জননী
হে জন্মাত্রী, হে পিতৃভূমি...

অণুগল্প

পাখির জ্বর ও করোনার বিরূপতা
সাঈদুর রহমান লিটন

তিন দিন চলে গেলো। মেয়েটি জ্বরে কাতরাচ্ছে । স্থানীয় ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কোনো কিছুতেই জ্বর কমছে না। মেয়েটির নাম ময়না। অনেকে আদর করে পাখি বলে ডাকে । পাখির নামে নাম তাই। বয়স বারো-তেরো হবে। গ্রাম্য ডাক্তার বলেছে ভয়ের কিছু নাই। সিজোনাল জ্বর। দু’দিন গেলেই সেরে যাবে। ডাক্তারের কথা কে আর শুনে। এক কান দুই কান করে পুরো গ্রাম জেনে গেলো পাখির জ্বরের খবর।
প্রতিবেশি রহিম চাচা তাদের বাড়িতে বলে দিল, খবরদার ঐ বাড়িতে কেউ যাবে না। আর ও বাড়ি থেকে কেউ যেন এ বাড়িতে আসেনা। তার কথা অমান্য করে এমন সাধ্য কার। এ বাড়ি সে বাড়ি করে পাখিদের বাড়ি অলিখিত লক ডাউন হয়ে গেলো। গ্রাম শুদ্ধ সবাই এটাই বিশ্বাস করলো যে পাখির করোনা হয়েছে। চতুর্থ দিন গত হলো পাখির জ্বর গেলো না। পাখির মা বাবা বাড়ির বাইরে যাবার অনুমতি হারালো। গ্রামের মেম্বার শাসিয়ে গেলো, দেখ পাখির বাপ, তোমাকে ভাল জানি, ভালবাসি, তাই আস্তে একটা কথা বলি তুমি বাড়ির বাহির হইতে পারবা না। কি আর করা পাখির বাবা-মা বাড়ির বাইরে যায় না। পাখি, পাখির মা-বাবার একমাত্র সন্তান। পাখির মা-বাবার ঘুম নাই চোখে। ঘরে খাবার শেষ হয়ে গেলো। বাজার-সদাই নাই, কে করে দিবে। মহা ঝামেলা। একটা গতি হলো মেম্বার ফোনে জানিয়ে দিল, আমি কাউকে দিয়ে চাল, ডাল কিনে তোমার উঠানে রেখে আসবো তুমি নিয়ে নিও। টাকা তার হাতে দিয়ে দিও। খাবার চিন্তা গেলো। কিন্তু গ্রাম্য ডাক্তারকে গ্রাম্য মাতুব্বররা বৈঠক ডেকে বলে দিল, দেখ ডাক্তার তুমি আর ঐ বাড়ি যেতে পারবে না। তুমি ঐ বাড়ি যেয়ে পাখির চিকিৎসা করলে আমরা আর তোমার কাছে যাবো না। ডাক্তার সমস্যা বুঝানো চেষ্টা করলেও গ্রামবাসি তা শুনেনি। অগ্যতা ডাক্তার পাখিদের বাড়ি যায় না। পাখির ৫ম দিনেও জ্বর যায়নি। পাখির মা বাবা এবার ভেঙ্গে পড়ে।
মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করে। আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নাই। পাখিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো যান চালক যেতে রাজি হলো না। পাখিদের বাড়ি থেকে উপজেলা আট কিঃমিঃ। পাখির হেঁটে যাওয়ার সামর্থ নেই। ৬ষ্ঠ দিনে পাখির জ্বর কমতে শুরু করলো। পাখির মা বাবা একটু শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। ৭ম দিনে পাখি মাকে বলল মা ভাত খাবো। পাখি খাওয়া শুরু করলো। পাখির জ্বর নেই। পাখি পুরোদমে সুস্থ। মা -খুব খুশি হলো। ভাবলো তাহলে পাখির করোনা হয়নি। তারা আগেই জেনেছে করোনা হলে চৌদ্দ দিন জ্বর থাকে। তাদের মনে পাখি সুস্থ হবার আনন্দ। পাখির মা বাবা ভাবলো তবু ও পাখির একবার করোনা পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভাল। তাই তারা রাস্তায় বের হলো। হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। গেদু চাচা রাস্তায় ছিল ওদের দেখে তড়িঘড়ি বাড়িতে ঢুকলো, ছালেহার মা রাস্তার পাশে কাপড় শোকাচ্ছিল সে কাপড়ে মুখ লুকালো, রাস্তার পাশের দোকান খোলা ছিল দোকান বন্ধ হয়ে গেলো, পাখির বয়েসি কয়েক জন বাচ্চা খেলছিল পাখিদের দেখে পাখি, পাখি বলে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক