Monday, June 8, 2020

শিল্প সাহিত্য ৫৬


সোমবার ২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৮ই জুন ২০২০




কবিতা
বঙ্গ রাখাল
সুখে থাক মানুষ

কোমল সেক্সে মাতে ফুলের সৌরভ নিংড়ীয়ে মাতালপুরুষ।
অস্তিত্বহীন ভাসমান- এক পদ্ম
আমাদের সূকপাখি
বনবিড়ালের ভয়ে অতিষ্ট মালিকসহ পাখিমন
আইনী উদগ্রীবতায়- মানুষের বিশ্বাস নেই।

প্রয়োজন হলে সংবিধান পাল্টে যাবে-
তবুও সুখে থাক মানুষ।

জাবেদ ভূঁইয়া
পৃথিবীর একটি গ্রাম থেকে

সেতুটি দৃশ্যমান! তারপরে-- বাড়িটি এখনও আড়ালে!

পৃথিবীর একটি গ্রাম থেকে আরেটি গ্রামের  সম্পর্ক
কোলাহলে আড়াল হয়ে যাওয়া নৃত্যের মতন!

যে সুর দিয়ে প্রেমিকার বাড়ি দেখা যায় না!
সাগরের ঢেউ  মতন শুধু একটার পরে
আরেকটা আসে
শাড়ি বদল হয়ে গেলে প্রেমিকের বাড়ি বদল হয় না!
দুরন্ত সাহসে হাঁটছে-- শুধু
কেউ শহরে, কেউ গ্রামে!
হয়তো তুমিও হাঁটছো!
দৃশ্যমান সেতুর আড়ালে যে বাড়িটি
এরচেয়েও বেশী আড়ালে যে সম্পর্ক ---
তাকে নিয়ে হাঁটতে দ্বিধা -- সেই বাড়ির দিকে!

সৈয়দ আসাদুজজামান সুহান
অনুভবে তুমি

হৃদয় জুড়ে সে হেঁটে বেড়ায়, মুক্ত অবাধ বিচরণ
তার অপলক দৃষ্টিতে যেন এক মায়াবী সম্মোহন
খোঁপায় ফুলের মালা, গন্ধে মাতোয়ারা চঞ্চলা মন
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে অনুভবে জাগে আলতো শিহরণ।

সে আসে রোজ স্বপ্নের দেশে, মায়াবী আবেশে
কোমল স্পর্শ অনুভব করি, বুকের ঠিক বাম পাশে
লোবানের সুগন্ধি মাখা অঙ্গে আমাতে যায় সে মিশে
হঠাৎ চুপিসারে করে প্রস্থান, সারা রাতের গল্প শেষে।

সে যে নয়তো কোন কল্পনা, নয়তো কোন বাসনা
কিংবা জৈবিক শিহরণে জেগে উঠা কোন কামনা
সে যে আমার হাজারো রজনীর একাগ্র আরাধনা
মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই তার পবিত্র প্রেমের কাব্য বন্দনা।

মাহফুজুর রহমান লিংকন
কোন এক ভরা দুপুরে...

কী রূপে বিমূর্ত সময়,
বাক্সের গহীন থেকে তুলে আনে
আপোষহীন দুঃখ!
যদি দুধের ভিতরেও
দুঃখই ঢেলে দেয়া হয়,
তবু ঝর্ণা
পাহাড়গুলোতে প্রবাহের তৃপ্তিতে
আমি থেকে আমিতেই
ভালোবেসে বয়ে যাবে।
আমাকে হারিয়ে দেবার প্রত্যাশা
কীভাবে প্রবাহিত!
ভুলিয়ে রাখার এই যে আয়োজন...
তবু বাদামের খোসায়
ভালোবাসা তৈরি করা
গল্পবন্ধ দুপুর,
রেলগতি
ছুটে চলা শৈশব
টকিজের দরজায় এসে,
পিঁপড়ের মতো দুধসাঁতার কাটে
শাদা পর্দার রঙিন ছবির মাঝে!

জাহাঙ্গীর জয়েস 
ন্যায় বিচার

আসুন মহামান্য সেবকগণ-
সিংহের মতো কেশর ফুলানো মহান প্রভুদের হুকুম তামিল করার জন্যে নির্বিচারে লুণ্ঠন করতে গিয়ে যারা অনেক কষ্ট করেছে- তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করি!
যারা পতঙ্গের মতো ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো, গ্রাম-গঞ্জ- তাদের অনেক পরিশ্রম গিয়েছে- তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করি!

আসুন মহামান্য সেবকগণ-
দেশের জন্যে ধর্মের জন্যে জীবনের পরোয়া না করে যারা খুনকে নিজেদের আত্মার আগুনে পরিশুদ্ধ করে তুলেছিলো, যারা ধর্ষণকে করে তুলেছিলো মহিমান্বিত আর গণহত্যাকে দিয়েছিলো শিল্পের মর্যাদা- তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করি!

আসুন মহামান্য সেবকগণ-
যারা আর বেঁচে নেই তাদের মনে রাখার কোনো মানে হয়! যারা বেঁচে নেই- তারা ত্রিশলক্ষ হোক আর ত্রিশ কোটিই! তারচেয়ে যারা বেঁচে আছে আসুন সেই সব মহান পুরুষদের যথার্থ খেদমত করি- তাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করি!

আসুন লুণ্ঠন করি, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেই, তাজা তাজা সবজির হাটের মতো খুনের হাট বসাই, কুকুরের মতো গণহত্যায় মেতে উঠি...

মহামান্য সেবকগণ নিশ্চয়ই আমাদের পক্ষে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।

সাজ্জাদ সাঈফ এর সাক্ষাৎকার

জন্ম- ১৯৮৪, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ:
কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা, মায়ার মলাট, ভাষার সি-বিচে, বহুদিন ব্যাকফুটে এসে
সম্পাদনা
নিহারীকা, ঈক্ষণ, ক্ষেপচুরিয়াস ওয়েবজিন(২০১১), পাঠচক্র ‘লাইফ আড্ডা’(বগুড়া, ২০১৪-২০১৫)।
সন্মাননা- ১ম কাব্যগ্রন্থ ‘কবি নেবে যীশুর যন্ত্রণা’র জন্য বঙ্গভ‚মি বর্ষসেরা কবি: ২০১৯

লেখার শুরুটা কিভাবে ? 
লেখার শুরুটা আউটবুক পড়ে এবং শৈশবে মঞ্চ নাটক চর্চা করার ঝোঁকে নাটক লিখতে গিয়েই।

আপনার মতে শিল্প সাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা কি ?
-শিল্প-সাহিত্য জীবন হতে বিচ্ছিন্ন যেমন নয় তেমনি জীবনও শিল্প সাহিত্যের ভিতর দিয়েই প্রাণবন্ত, প্রয়োজনীয় রকমের প্রকাশ্য। একে অন্যের সামনে আয়না স্বরূপ।

কবিতার এলেমেলো বিন্যাস। বাঁধনহারা প্রাণ আপনার লেখাকে দিয়েছে নিজস্ব স্বর । কবিতার ধ্রুপদী প্রকরণ তোমায় কতটা টানে বা টানেনা ?
-কবিতার ধ্রুপদী প্রকরণের হাত ধরেই কবিতায় প্রয়াসী হওয়া এবং এখন অব্দি ধ্রুপদীর টান আমি অস্বীকার করি না, আর বিবর্তন প্রাণ মাত্রেরই আছে আর যেহেতু প্রাণ ও প্রকৃতির আদিতম শিল্প কাব্য/কবিতা সেই সূত্রে কবিতাও সময়ে ভাষার ভ‚গোলে বিবর্তন নিয়ে এগোয় তবে ধ্রুপদকে ব্যাকগ্রাউন্ডে সাথে নিয়েই।

শূন্য ও প্রথম দশকের কবিতার কোন মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করো। যা দিয়ে দুটো দশককে আলাদা ভাবা যায় ? 
-দুটা পিঠাপিঠি দশক হয়েও নন্দনের সংহতিকে স্থির করে নিতে নব্বই যে তাগিদ নিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশের কবিতায় সেই তাগিদকেই স্পষ্ট করেছে শূন্য দশক। এছাড়া যুদ্ধময় বৈশ্বিক আবহাওয়ায় সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের জায়গাগুলি শূন্য দশকে যে হারে প্রশ্ন আকারে দেখা দিয়েছিলো এর অনেকাংশ উত্তরের কাজটা এগিয়েছে প্রথম দশক। এই পার্থক্যটা এতই সূ² যে এ’কে ভিতরে পরিস্কার ক’রে নিতে চাইলে চর্চাগুলিকে আরেকটু সময় দিতে হবে।

হাংরি, শ্রুতি, নীম, কৌরব, রৌরব , নতুন কবিতা এইসব আন্দোলন কবিতাকে কতটা বদলেছে ?
উল্লেখ্য আন্দোলনগুলি কবিতাকে ঠিক যতোটা বদলায়নি ততোটা বদলেছে কবিতা চর্চার এদেশীয় পরিবেশেকে।

কবিতায় কি গল্প বলা যায় ? 
-উনিশ শতকে রোমান্টিক ধারার ওপর দিয়ে হেঁটে এসে সতীর্থদের সমস্বরে মালার্মে প্রতীকীবাদের হয়ে বলেছিলেন, ‘মানুষের ভাষাকে তার মৌল ছন্দোস্পন্দনে নিয়ে এসে তার মাধ্যমে অস্তিত্বের বিভিন্নদিকের রহস্যের প্রকাশ হল কবিতা’। এই হাইপোথেসিস ছাড়াও আধুনিক বাংলা কবিতার আচরণ বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন কবিতায় গল্প বলা যায়।

সত্তর বা নব্বই- এর কোন কোন কবির কবিতা তোমায় ভাবায়, থমকে দেয় ? 
-বাংলা কবিতার জন্য সত্তর দশক এক উত্তাল জাতীয়তাবাদবেষ্টিত দশক হয়েও মিছিল-বিপ্লবের দাঙ্গা-হাঙ্গামা-স্বর উৎরে বা সাথে নিয়েও শিল্প আপন মনে খেলতে পেরেছে যাদেও লেখায় সে’ই জয় গোস্বামী, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সুবোধ সরকার, পার্থপ্রতীম কাঞ্জিলাল, গৌতম চৌধুরী, আবিদ আজাদ, আসাদ মান্নান, কামাল চৌধুরী, দাউদ হায়দার, ময়ূখ চৌধুরী, নাসিমা সুলতানা। নব্বই দশকে বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাস রায়চৌধুরী, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, যশোধরা রায়চৌধুরী, মিতুল দত্ত, শামীম কবির, শামীম রেজা, মোস্তাক আহমাদ দীন, মুজিব মেহদী, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, সুমন রহমান, মজনু শাহ, ওবায়েদ আকাশ এবং আরো কয়েকজন কবির আবির্ভাব বিশ্বসাহিত্যে বাংলা কবিতার অভিনিবেশ ধরে রাখতে সচেষ্ট ছিল এবং আছে।

এই সময়ের তরুণ-তরুণী কবিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে আড়ালে 'বোকাচোদা' সম্বোধন করে। কবিদের মেরুদন্ড, স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ কি হারিয়ে যাচ্ছে? 
-তরুণ কবিরা নিজ নিজ সময়কালকে পরিবেশন করেন একদম ‘র’ আকারে। আদতে হাতে গোণা প্রকৃতই যারা কবি তাদের বাহিরে চটকদারিতা-গিমিকসর্বস্ব তরুণদের খুব সহজেই কুরুচিকর সংস্কৃতি দিয়ে বুঁদ করে থাকে তদীয় সময়কাল। এবং এরাই মেরুদন্ডে ভর করাতে চান সময়কালের অপ্রয়োজনীয় বোধগুলিকে, এতে করে তাদের দিকে চেয়ে মেরুদন্ডহীন দেখায় সকলকে। প্রকৃতই যারা কবি তাদের মেরুদন্ডের প্রমাণ তাদের লেখাপত্রেই বিদ্যমান, সব কালেই ইহা সত্য।

এই সময়ের কবিদের লেখা পড়েন ? কার কার লেখা ভাবায়-মুগ্ধ করে ? 
-পড়ি, সময় দিয়েই পড়ি। এই সময়ে ভাবায় জুয়েল মোস্তাফিজ, তারিক টুকু, মাজুল হাসান, আরণ্যক টিটো, অনুপম মুখোপাধ্যায়, ইমতিয়াজ মাহমুদ, সামতান রহমান, শুভ্র সরকার, হাসান রোবায়েত, হাসনাত শোয়েব, রিগ্যান এসকান্দার, সালেহীন শিপ্রা, মোস্তফা হামেদী, নির্ঝর নেঃশব্দ্য, অনির্বাণ সূর্যকান্ত,আল ইমরান সিদ্দিকী, অনুপম মন্ডল, আসমা অধরা, সাম্য রাইয়ান, কবীর হোসেন, নীহার লিখন, হোসাইন মাইকেল, নাজমুল হোসাইন, জুবিন ঘোষ, তানজিন তামান্না, ঋপন আর্য, অরবিন্দ চক্রবর্তী, রিক সৌরক, সরোজ মোস্তফা, হাসান মসফিক, আনিফ রুবেদ, সৌনক দত্ত, ইয়ার ইগনিয়াস, তানহীম আহমেদ, বেবী সাউ, সাদিক সত্যাপনসহ আরো কিছু কবির লেখাপত্র।

আপনার প্রিয় কবি, প্রিয় ঔপন্যাসিক ও প্রিয় গল্পকার কে এবং কেন? 
-প্রিয় কবি আবুল হাসান, ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, গল্পকার সাদাত হোসেন মান্টো। এঁরা সকলেই আধুনিকতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি হতে মুক্ত মানস ও সত্যের অনুগামী ছিলেন এবং কাকতালীয়ভাবে ইতিহাসে গর্জে ওঠা জাতীয়তাবাদের খাঁটি প্রেমিক ছিলেন। 

কিভাবে একজন তরুণ লেখক তার জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেন?
-একজন তরুণ লেখক তাঁর জীবন-দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে পারেন সত্ত্বা/মানুষ হিসেবে নিজ আচরণকে জ্ঞান ও দায়িত্ববোধের বলয়ে পরিচর্যা করে।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক