Friday, June 5, 2020

শিল্প সাহিত্য ৫৩


শুক্রবার ২২শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ৫ই জুন ২০২০




কবিতা
হাসান ওয়াহিদ
উদ্বাস্তু

ক্লান্তির দীর্ঘশ্বাস মেখে সেই কবে
ভিটেমাটি ছেড়েছিলাম
মাঝখানে দলা পাকানো পাঁচ-পাঁচটি দশক।
এখন আমরা খেতে কাজ করতে যেতে পারি না
দুপুরের রোদে পিঠ রেখে গাছের তলায়
বসতে পারে না আমাদের ছায়া
এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপ কোথায় নেই আমরা?
আমরা এখন একাকী খড়কুটো
বাতাসে ছড়িয়ে যায় অভিমান
আমাদের জীবনের বিনিময়ে প্রতিদিন
জেগে ওঠে ঈশ্বর---
আমাদের হাতের দশটা আঙুল এখন
ভয়ানক বিপজ্জনক অস্ত্র
ঝলসানো সূর্যের দিকে আমাদের ইচ্ছেরা শিস দেয়।

এখন আমরা প্রচণ্ড অভিমানী
শীতকাল তোরঙ্গে রেখে সারাদেহে
মেখে নিয়েছি গ্রীষ্মকাল
অফুরান শোকের কবিতা বুকে নিয়ে জীবন ফুরিয়ে এলে
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ধুলিকণায় আমরা মিশে যাই।
আমরা নতুন জিনিস, আমাদের নতুন নাম উদ্বাস্তু।

রহিম উদ্দিন
ফন্দি-ফিকির

আজব এদেশ আজব নিয়ম আজব যে তার সবকিছু
লোক দেখানো সহায়তায় করছে নিজের জাত নীচু
চাউল দিচ্ছে ডাউল দিচ্ছে দিচ্ছে পিয়াঁজ টমেটো
সঙ্গে আরো আলু দিচ্ছে তুলছে সবাই ফটো
মানছে না কেউ সোশ্যাল ডিস্টেন্স ঘুরছে দ্বারেদ্বারে
এমন দানে যদি খানিক নিজের সম্মান বাড়ে
এই দলে আজ যদু-মদু কর্তাবাবু ও চেয়ারম্যান
তাকেই যেন নির্বাচনে দলের একখান টিকিট দেন
সবই তাদের ফন্দি-ফিকির বুঝতে নেই আর বাকী
হিসাব করে দেখি সবি অন্ধজনে ফাঁকি
তবুও ভাই তারাই হাতেম তারাই আলোর দিশারি
হুকুম নয় এই রাজ-রাজাদের বলছি মিনতি করি
করবে যদি সাহায্য ভাই কর না রাতের আঁধারে
বস্তাগুলো রেখে আয় না দুঃখির ঘরের দুয়ারে।

তপন রায় 
অমাবস্যার অন্ধকারে

অমাবস্যায় কোন প্রকারেই পাইনি, পেলাম পূর্ণিমায় তোমাকে, জ্যোৎস্না
অনেকদিন সামলে অন্ধকার রেখেছিলাম দূরে
তখন ভোর থেকে বিকেল অবধি কর্মক্লান্তি
পারিয়ে দিত ঘুম সন্ধ্যের আগেই।
তখন তুমি দেখোনি আমাকে, রাখোনি
আমার চোখে চোখ।
কোন এক কুক্ষণ শুরু করিয়ে মাতিয়ে রেখেছে
আমাকে অমাবস্যার অন্ধকারে
এ সময়ে এসে ভাল করলে তুমি, জ্যোৎস্না
অন্ধকার আমার ভালো লাগে না।
আমার ছেড়ে রাখা পোষাকে, জড়িয়ে ধরার
সময় আমার শরীরে যদি লেগে থাকে একফোঁটাও
অন্ধকার, মুছে ফেলো তোমার আলোয়।

হীরক বন্দোপাধ্যায়
বৃষ্টিদিন

মাঝে মাঝে পা পিছলে যায় জলের ফোঁটায়
তখনই তাকায়, কেউ দেখছে না কেউ শুনছে না
তবু আকাশে লাফ দেয় পুঞ্জমেঘ
কবেই ভেঙেছে লকগেট
বোয়াল সরপুটি হলুদ বেলেমাছ
জাল নিয়ে নেমে পড়ে যেখানে ব্রিজ
দুদিকে গাড়ি ঘোড়া সামলে নিন
যেখানে শীত করে দিকবদল
হালকা চাপা স্বর আবহমান
ঝাঁপিয়ে ছুটে আসে অন্ধকার, শব্দে ভেঙে যায় হ্যালো চেক মাইক টেস্টিংওয়ান টু থ্রি
যাত্রা গান নাকি ঝুমুর নাচ
হায় মরি মরি এতো রক্তদান
পাউরুটি কলা আর হাসের ডিম, আসর জমে গেছে হালকা জ্যাম, ছেলেরা রক্ত দেয় মেয়েরা
দেখছে, ঐ যে বাপ্তুর মা, গাজন-ই হবে বুঝি
ভেবেছে কেউ, বিনীত অনুরোধ আপনাদের
জীবন দান মানে কী উচ্ছ¡াস
স্বপ্নে হানা দেয় হেলেন হান্ট
ছোট্ট নীচু  বক্স সবুজ তার... আহা
বর্ষা নেই তবু বৃষ্টিদিন...

পলিয়ার ওয়াহিদ
সঙ্গনিরোধ শুক্কুরবার

মহাব্বতের মহামারিতে ঘরবন্দী
চন্দ্রিমা উদ্যানে মন তবু হাঁটে
পাতাভর্তি গাছের নাদুস-নুদুস ভঙ্গি
মেয়েটি রপ্তানি করে আমার ভেতর!

সে আমাকে উপহার দেয়
করুণার সাদা ফুল
যেন ভালোবাসার ময়লা!
করোনায় মানুষের আরাম-আয়েশ
সবই তো শরীরের ময়লা এখন!

বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে আছে দুঃখ
চুলার ওপর ফুঁপাচ্ছে অভাব
বিচ্ছেদের পাণ্ডুলিপিতে জমিয়ে
আড্ডা দিচ্ছে অভিযোগ!
সবাই আমার দিকে- আঙুল তুলেছে
তামাশার দৃষ্টি ভরে!

আজ মহান জুম্মাবার
পবিত্র মিলনের দিন!
কানে আতরের তুলো গুজে
ন্যাপথলিনে ভাঁজ করা পাঞ্জাবী গলিয়ে
কেন আমি প্রভুর সামনে দাঁড়াব না?

আমাকে জানতে হবে
এই মহামারীর কল্যাণ কিসে?
আমরা তো একত্রে ছিলাম!
কেন তিনি পৃথক হবার
বাসনায় মজলেন?

তাহলে কী?
আমাদের একত্রে থাকার মধ্যে
কোথাও মহাব্বতের অভাবছিল!
নাকি?
সুখ কুড়াতে কুড়াতে
গুছিয়ে ফেলেছি যেসব অসুখ
তারই ওষুধ এই
বৈশ্বিক অবসর

Quarantined Friday

Prisoned in house in the epidemic of love
Even then my mind in the moonlit garden are walking
Plump approaches of the leafy tree
the girl exports these inside me!

She gives me gifts
White flowers of compassion
That is like dirt of affection!
All comforts of the men in Corona—
These are also dirt now of the body!

Sadness is lying on the bed squatting
The starves sob on the boiler
In the manuscript of estrangement densely
Objection keeps company of idle talkers
Everyone is pointing fingers to me
with the jokes-full-eye

Today is a great Friday
Holy Reunion Day!
To put perfumed cotton in my ears,
naphthalene in Folded Panjabi that`s to melt
why should I not stand to my Allah?
I need to know
What's the welfare of this epidemic?
We were together!
Why He would be intoxicated into desire doing separate?

What than in our being together
was there a lack of love somewhere,
wasn't it?
To load greed continuously
We have fixed these diseases
That's medicine this—Global leisure

অণুগল্প
বাবার অঞ্জতা
প্রণবকুমার চক্রবর্তী 

শেখর মিত্র সেদিন সকালে থানার ক্যাশ-বুকটা আপ-টু-ডেট করে যোগ করতে ব্যস্ত, এমন সময় ওর ছেলে পপাই মাস্টার হন্তদন্ত হয়ে এসে হাজির হলো। বললো- বাবাই? তুমি বলছিলে অঙ্কগুলো সব করতে পারলে ক্যাডবেরি সেলিব্রেশন চকলেটটা কিনে দেবে।
আমার ওগুলো সব করা হয়ে গেছে। মা খাতাটা দেখেছে। বলেছে সবগুলো ঠিক হয়েছে বলে খাতাটা ওর সামনে এগিয়ে ধরে।

শেখর তখন ক্যাশবুকে যোগটা করতে এতটাই ব্যস্ত, চোখটা ক্যাশবুকের পাতাতেই রেখে গম্ভীর গলায় বললো- পপাই? ঠিক আছে পরে দেখবো। তুমি এখন বাড়িতে যাও। অযথা বিব্রত করোনা।
কথাগুলো শুনে বাচ্চাটা মুখ ভেটকে কান্না মাখানো সুরে বলে- এ মা! কী বাজে লোক। কথা দিয়ে, কথা রাখে না। ঠিক আছে, আর কোনদিন তোমার সাথে কথা বলবো না। নিজের ডান হাতের কেনো আঙুলটা বাবার দিকে দেখিয়ে বলে- তোমার সাথে আজ থেকে আমার আড়ি। 

পপাই রাগ করে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু , পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নন্দিবাবু গিয়ে ওকে ধরে থামিয়ে বলে- মেজদা? আপনার কিন্তু পপাই মাস্টারের সাথে এমন ব্যবহার করা মোটেই উচিত হয়নি। ওকে যখন কথা দিয়েছন, সেটা আপনার রাখা উচিত। যান না ওকে নিয়ে মধুর দোকানে। চকলেটটা কিনে দিন। কতক্ষণ আর লাগবে?
আমি তো আছি। কেউ এলে সামলে দেবো।

শেখর আর কথা না বাড়িয়ে ক্যাশবুকটা নন্দির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে- বেটার, এই যোগটা করে দে তো।

পপাইকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে দোকান থেকে চকলেটটা কিনে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিতেই  বাচ্চা পপাই মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ জানিয়ে বলে ওঠে- মা ? এটা তোমার মোটেই ভালো কাজ হয়নি।
     - কোনটা? মা জানতে চায় ।
     - এই যে তুমি বাবাকে একদম অঙ্কেও যোগ করা শেখাওনি। আজ নন্দিকাকুকে যোগটা করে দিতে বললো ! ছিঃ! ছিঃ! লজ্জ্বার ব্যাপার ।
শেখর কী বলবে ভেবে না পেয়ে ছেলে আর বৌয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে- ঠিকই তো। তুমি যদি আমাকে যোগ করাটা ঠিক মতো শেখাতে, তাহলে তো নন্দিকে যোগটা করবার কথা বলতে হতো না।

 পাঠ অনুভূতি
ফিহা সমীকরণ: হুমায়ুন আহমেদ
কামরান সরকার
   
উপন্যাসে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ঘটনা তুলে ধরেছেন লেখ। যেখানে মানুষ জাতি দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এক দল সাধারণ মানুষ আর এক দল মানুষের তৈরি মেন্টালিস্ট। যারা অধিক মানবিক গুণ সম্পন্ন। যাদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা রয়েছে। যারা মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উপন্যাসের নায়িকার নাম হুমায়ুন আহমেদ স্যার নিজের ব্যাক্তিগত নাম ব্যাবহার করেছেন। উপন্যাসের মূল চরিত্র মহামতি/মহামহি ফিহা। যিনি একজন পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি সময় সমীকরণ নিয়ে কাজ করছেন। সাধারণ মানুষদেও মেন্টালিস্ট নিয়ে কৌতুহল। সাধারণ মানুষরা মেন্টালিস্ট সম্পর্কে কিছু জানতে পারবে না কিন্তু মেন্টালিস্টরা সাধারণ মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করবে। তারা চাই পৃথিবীতে শুধু মেন্টালিস্টরা থাকবে। উপন্যাসের ঘটনা প্রবাহ খুব অল্পসময়ের, চরিত্র সংখ্যাও খুব অল্প। প্রত্যেকটা সাইন্স ফিকশন/ উপন্যাস/ গল্পের মত এই গল্পের সমাপ্তিও খুব সাধারণ সাইন্স ফিকশনের মত হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু এই অল্প কয়েক পৃষ্ঠার গল্পের মধ্যে লেখক স্পেশ টাইম এর এত সুন্দর একটি বিষয় তুলে ধরেছেন। বিশ্বব্রহ্মান্ড এর সময় যে চক্রাকারে ঘুরছে সেটাই প্রকাশ হয়েছে।
ভাল লাগা উক্তি:
মানুষ দেবতা বিশ্বাস করে না কিন্তু মানুষের ভিতর থেকে দেবতা খুঁজে বের করতে পছন্দ করে

প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ প্রকাশনী: আফসার ব্রাদার্স পৃষ্ঠা: ৭৮ মূল্য: ১২৫

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক