সোমবার
৮ই আষাঢ় ১৪২৭, ২২ই জুন ২০২০
কবিতা
সুবীর দাসভাত হত্যা হলে
একহাত ধরে দারু টানে, আরেক হাত ধরে গরু ।
ভাত হত্যা হয় বলে, ধর্মাবতার, শেষ দূরে থাক বিচার কি হতে পারে শুরু ?
কে সে আসামী ?
ধরো অন্ধ ও বধির রাষ্ট্রের মতো আমি।।
যে আমার চোখে পৃথিবীর সেরা কবিতা ---
বিজ্ঞান নয়, ধর্মের বটিকা চিবুতে চিবুতে উপভোগ করি বিজ্ঞাপন বা বিনোদন বিচিত্রা !
বিধিনিষেধ ? মায়ের ভোগে
অভিকর্ষ টানে বিবর্তন যোগে !
যখন কথা বলে উলঙ্গ বাজার ঈশ্বরের চেয়ে বড় সত্য!
কাজী আতীক
বদলে যাচ্ছে সামাজিক সংস্কৃতির ধরন
এই কিছুদিন আগেও পশুর শিং আর মানুষের কনুই
একই কাজে ব্যবহৃত হতো, অর্থাৎ বলা যায় সমার্থক ছিলো
অথচ এই সংক্রমণ সময়ে বদলে গেছে কনুইয়ের ব্যবহার
এখন কনুইয়ে কনুই ঠেকিয়ে হয় উষ্ণ সম্ভাষণ
হাত মেলানো ইদানিং তলপিতলপা সহ সমাজচ্যুত প্রায়।
আগে ঘরে না এসে সামনে থেকে আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব
এমনকি পরিচিত কেউ চলে গেলে মন খারাপের বিষয় হতো
আর এখন ঘরের বাইরে দাঁড়িয়েই কুশল বিনিময়টা দস্তুর।
মাজহার জীবন
সন্ধ্যাবাতি
তুমি যেন সন্ধ্যাবাতির শিখা
কোনো এক গাঁয়ের কুড়েঘরে
মৃদু হাওয়ায় হাওয়ায় দোল খাও
একটা জলন্ত জিহ্বা যেন
গুনগুনাও প্রেমের কাসিদা
আমি সেই আশিক
তোমার ইশকের ডাকে
পতঙ্গের মত ঢলে পড়ি তোমার কোলে
এক অনিবার্য ধ্বংসের আয়োজনে
সন্ধ্যাবাতি সবার আলো
প্রিয় মরণ আমার,
প্রিয় মাসুক আমার
রুদ্র সাহাদাৎ
আবার আমাদের দেখা হবে
দেহপাঠের রচনা পড়তে গেলেই রিরংসা জাগে
উদবাস্তু মন পালাতে চায়,
জীবনের সীমানা পেরিয়ে আরো দূর বহুদূর,
কোনো অজানায়, আমাদের দেহপাঠ হয়নি
আজও
এই বসন্তেও।
কখন কী বলছি, কখন কী করছি, ঈশ্বর জানে।
প্রতিক্ষায় থেকো, এই করোনাকাল গেলে
আবার আমাদের দেখা হবে।
তন্ময় পালধী
অনুভূতি
নক্ষত্রের বিছানায় শুয়ে
একটা একটা তারার অবয়বে,
তোমার লাবণ্যদ্যুতি ঝলমলিয়ে উঠছিল যখন,
আমি ধ্রুবতারা হয়ে থাকতে চেয়েছি।
চেয়েছি চাঁদের মতো স্নিগ্ধ হব
আঙিনা জুড়ে খেলা করব সারাক্ষণ
তুমি সেই স্নিগ্ধ জোছনায় স্নান করতে করতে,
আমার গভীরে ডুবে যাবে।
ভেবেছি গভীর হব পাতালের মতো,
যেখানেই দাঁড়াও আমারই ধারক পাবে,
আমি সেই ভার বহন করতে করতে,
তোমাতে আমাতে লীন হব।
লীন হয়ে যাবে সময়ের স্রোত-
সম্পর্কের পাড় ছুঁয়ে,
সামনের দিকে তোমার পরিণতি বোধে-
আমি সমুদ্র হয়ে সব মান অভিমান শুসে নেব।
----------------------------------------- কথা
বসন্ত বাতাস যখন মন ছুঁয়ে খেলা করতে চায়,
গহীন হৃদয়ে, তখন কথাগুলোর মিষ্টতায়,
তীব্র আসক্তি ঝরে পড়ে চোখ মুখ দেহ বেয়ে। স্পর্শের ও গন্ধ আছে
আছে শব্দহীন অনাবিল প্রশান্তির অনুভব,
সে কথা বুঝতে বুঝতে কথাতেই ঘোর ভাঙে।
এসবই অলীক কল্পনা নিছকই স্বপ্নের মায়াজাল,
হিসেবী সম্পর্কের রসায়নে,
ভাষার রাজমহল যেভাবে রচেছিলে তুমি,
সে মগ্নতায় ডুবে ছিল আমার আমিত্ব,
টুপটাপ ঝরে পড়া বৃষ্টির মতো রাঙানো কথায়,
ঘুণধরা! তবু প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চায়।
মুতাকাব্বির মাসুদ
চোখের লাশ
এখানে এই চোখের বেলকনিতে
এক চিমটি আলো ছিলো
এক ঝাঁক আলোমতি জোনাক ছিলো
ভালো ছিলাম ভালোই আছি!
তোমায় নিয়ে ভালো থাকবো বলে এখন আমি
একেবারে গ্রহণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি!
চোখের জলে তোমার চোখের আলোয়
আমার এ পথচলা!
অন্তর বাহিরে কেবল
কখনো আলো কখনো আঁধারের খেলা!
তোমার আমার অতি নিকটবর্তী সম্পর্কের
দূরবর্তী মধ্যগগনে, আজ এই মধ্যবয়সে
বয়সী চশমার অনুদ্বেগ শরীর বেয়ে,
কেবলই নামে সমুদ্রের হিমশীতল দুর্বোধ্য
বরফ পেঁজার বিন্দু
তোমারই অনুদানে পাওয়া
অনধিগম্য আলোর শরীরে খেলে
আজ মৃত আলোর কণা
আলোর ঘরে আলোর দ্যোতিত আঁধার
তাহলে আমি কি দেখেছি চোখের আলোয়
তোমারই চোখের লাশ?
মিলন ইমদাদুল
প্রিপারেশন অব সুইসাইড
আত্মহনন বিষয়টা মোটেও এতোটা সহজ নয়-
যতোটা না মুখে বলা যায় !
আত্মহত্যায় অবশ্যই পূর্ব প্রস্তুতি থাকা একান্ত প্রয়োজন।
কোন একদিন বুকভরা ব্যথা নিয়ে ভাবলেন-
নিষ্ঠুর এ পৃথিবীতে বাঁচবার ইচ্ছে নেই আপনার!
ভেবেচিন্তে সত্যিই ঠিক করলেন নিজেকে হত্যা করবেন কোন ঔষধে!
কিংবা জনমানবহীন একটি দোচালা ঘরে ফ্যানে
চুপচাপ ঝুলিয়ে পরবেন!
পরেরদিন কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে
নির্জনে চললেন শক্ত মজবুত রশি হাতে!
এবং কাঁপা কাঁপা হস্তে টুলে দাঁড়ালেন,
ফাঁসিটা গলায় ঝুলানোর প্রায় ত্রিশ সেকেন্ডে পূর্বে-
সহসা মনে পরলো...
গত মেলায় কেনা প্রিয় বইটি এখনো পড়া হয়নি-
অতঃপর নেমে পরলেন মেঝেতে
ফ্রেশ হয়ে নিলেন এবং বইটি পড়লেন আপনমনে,
তৃতীয় দিন আপনার সত্যিই মনে হলো-
“আত্মহত্যার চেয়ে বেঁচে থাকাই বরং শ্রেয়”!
ছোটগল্প
সংক্ষিপ্ত জীবনমাহমুদুল হক আরিফ
খুব কম দিন নীলু খালা আমার খালুকে কাছে পেয়েছে। আমি বড় হওয়ার পর বুঝতে পারি এটা একরকম সেক্রিফাইজ। কাজের সূত্রে খালুজান মধ্যপ্রাচ্যের মরুভ‚মি অঞ্চলে থাকতেন, তিন বছর বাদে বাদে আসতেন। প্রায় আঠের বছর তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। নীলু খালার ছয় ছেলেমেয়ে। তাদের বয়সের পার্থক্য তিন বছর করে। খালু কর্ম জীবনে দেশে এসেছেন ছয়বার। বছরে একুশ দিন ছুটি পেতেন কিন্তু প্লেন ফেয়ারের কথা বিবেচনা করে এক সাথে তিন বছরের জমানো ছুটি- নয় সপ্তা হাতে নিয়ে তিনি দেশে ফিরতেন। খালু ছুটি কাটিয়ে চলে যাওয়ার পর খালার শরীরে একটা পরিবর্তন আসতো। তিনি প্রতিবার খালার জঠোরে একটি বীজ বপন করে যেতেন, তার রেখে যাওয়া চিহ্ন বেড়ে উঠতো খালার শরীর বেয়ে। খালু প্রতিবার ফিরে এসে দেখতেন তার নতুন সন্তানটি উঠোনে আলতো পায়ে হাঁটছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন। একটা খেলনা হাতে তুলে দিয়ে বলতেন মাশাল্লা আল্লার নেয়ামত। অগন্তুককে দেখে বাচ্চাটি গুটিগুটি পায়ে দৌঁড়ে পালাতো। খালু শাসকের মতো দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে গর্বিত চোখে তার বংশের বিস্তার দেখতেন। ছেলে-মেয়েদের ডেকে, জরিয়ে ধরে উষ্ণ হতেন, ওম নিতেন। কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাপ দিতেন। তারপর একটা আর্ম চেয়ারে বসে আমীরের ঢংয়ে পর্শীদের খেজুর খুরমা, বড়দের জন্য জায়নামাজ, ছোটদের জন্য চকলেট চুইংগাম বিলি বণ্টন করে একটা সময় উঠে দাঁড়াতেন। এক জীবনের সঞ্চয়- তাঁর কষ্টসাধ্য শ্রমের টাকায় একচালা ইটের বাড়িটা কতটা পোক্ত হয়েছে ঘুরেঘুরে দেখতেন! বাড়ির চতুরদিকে আর্মি জেনারেলের মতো পা ফেলতেন এমন এক ভঙ্গি করতেন এ সাম্রাজ্য তার।
খুব অনভিপ্রেত কথাগুলো বিবৃতির মতো বলতে থাকে সাদেক। ও জীবনের মানে খুঁজছে। এক জীবনে মানুষের কাজ কী? মিনিংফুল লাইফের মানে কী? ইদানীং ভাবছে আর মানুষের জীবনকে সারসংক্ষেপ করে বলছে। এমন লোককে কে মনে রাখবে? কেন মনে রাখবে? মরে গেলে আমরা আর মনে রাখি না কেন? উত্তর খুঁজছে! পরিবারের একমাত্র কাজ কী বংশ বিস্তার! রুস্তমকে জোরকণ্ঠে স্বর বাড়িয়ে আরেক কাপ করে চা দাবি করে- সাদেক।
বসে থেকে শুনছিল মতি। সে বলল তোমার স্টেটমেন্টে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার।
কী?
খালুর প্রতি তোমার কোন ক্ষোভ আছে। বিবৃতিটা বিচার করলে দেখবে বিদ্বেষে ঠাসা। তুমি সংক্ষেপে তাঁর বিরুদ্ধে উত্তেজনা তৈরি করছো।
সাদেক কিছুতেই মানতে নারাজ। বললো নীলু খালার জীবনটা তো আরো সংক্ষেপ!
কী রকম!
খালার জীবনে সে ছয়বার আতুরঘর দেখেছে পারস্যদেশ দেশ থেকে এসে বিশ বছরে খালু তাকে আর কোন ঘর দেখাতে পারেনি। কোথাও বেড়াতে নিয়ে যায়নি। খালা বাপের বাড়ি আর নিজের বাড়িতেই পুরো একটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। যদি জিজ্ঞেস করতাম খালা তোমার বাইরের দুনিয়া দেখতে ইচ্ছে করে না?
উত্তরে খালা বলেছিল একবার তোর খালুকে বলেছিলাম সমুদ্র কেমন একবার দেখাবা? তোর খালু ঐ বার বাড়ির পাচিলটা আরো দুই ফিট উঁচু করে দিয়ে যায়। বললাম কেন? বলেছিল তাঁর আমীরের ঘরে মেয়ে সন্তান হওয়ার পর পাচিল আরো উঁচু করে দিয়েছিল। সে বার লিলি জন্ম গ্রহণ করেছিল।
আমার নীলু খালা জীবন ভর আমীরদের সংস্কৃতি টেনে নিয়ে গেছে। তাঁর দীর্ঘ বেঁচে থাকা জীবনের আলোচনা, এক কাপ চায়ের গল্পের চেয়েও সংক্ষিপ্ত!
No comments:
Post a Comment