বুধবার ২৭শে
জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ১০ই জুন ২০২০
কবিতা
রহমান মুজিবআমি একটি পয়সা
আমি একটি পয়সা, আমি আমাকে হারিয়ে ফেলেছি সেই
হাঁটভাঙা সন্ধ্যার বাড়ি ফেরার পথে। কলম্বাসের কম্পাস
পারো তো খুঁজে দাও গ্যালাক্সি বনের ধ্রুবতারা
একটি বধির পথও কবি। অথচ কবি জানে না- কার
নির্মম পা পিষ্ট করে কার বুকের আধুলি। প্রিয় শহর-
আমায় খুঁজে পেলে সযত্নে রেখে দিও তোমার
বুক পকেটে, কখনো বাজতে দিও না অহমের অনর্থক
ঝনঝন, গড়িয়ে যেতে দিও না গন্তব্যহীন ডাস্টবিনে
আমি একটি পয়সা, হাত বদলের খেলায় নিপতিত
আমার যাপনের চারণভ‚মি, অথচ একটি পাখির
শীষেও আমার ঘুম ভাঙল না
অপার অরণ্য
সূত্রপাত
আমার কিশোরকালের মেয়েরা ঋতু দিয়ে বুক ঢাকত
আর খড়া দিয়ে চোখ
সূত্রমতে বর্ষায় তাদের জল থাকে না বুকে
নদীর যৌবনে বুকের ওড়নায় তুলে আনে মাছ
প্রথম চড়ুইভাতি এমন ওড়না পেতে বসা
আয়োজন থাকলেই এরপর থেকে
লালকিশোরির ওড়না খুঁজতে থাকি
কলেজি মেয়েরা মাদুর পেতে পিকনিক বানালে
ওড়না খুঁজতে গিয়ে তাদের বুকের দিকে তাকাই
একেকটি দুঃখী পর্বত যেন বুকের মধ্যেই ঘুমায়
মুঠো মুঠো আন্দোলনের ডাক
বুক থেকে বেরিয়ে আসে কণ্ঠসঙ্গীত
বাজে নিরাপদ সড়কের দাবি
বুকের মধ্যে কোটাবিরোধ দপদপিয়ে জ্বলে
আজ আগুনচাপ স্মৃতিশোক ঢেকে নিতে
মেয়েরা বুজি বুকের উপর ওড়না পেঁচিয়ে রাখে?
সেই থেকে আমিও নরম, লাজুক ঘাসফুল
কোথাও আর চড়–ইভাতি হলে ওড়না খুঁজি না
লেপ্টে গজা ঘাস-মাটিতে ফুটতে থাকি
শ্রী শতানীক ভট্টাচার্য্য
ঘুম নেই
ছুটে চলেছি জিওল প্রাণের সন্ধানে,
একটা শূন্য রাস্তা আরেকটা শূন্য রাস্তার দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে--
জমাট বাঁধা বিটুমিনের অন্ধকারে ঘনিয়ে আসে ঘন কালোমেঘ,
সমগ্র ছায়াপথ যেন নেমে আসে পৃথিবীর আলো মাখা গায়ে!
দানব ছায়া বুঝে নেয় ইহকালের হিসাব-নিকাশ,
রাত্রির স্বপ্নে পাহাড়ের ঘুম ভাঙ্গে পৃথিবীর
দমবন্ধ গর্ভে!
বাঁধন অধিকারী
শুকর কখনো শুদ্ধ হয় না
কাল বা কালের অপেক্ষায় যে রাত্রি
সে রাত্রি মিশে গেছে আঁধারে,
আমি নামক অধম নিষ্ক্রীয় হয়ে গেছি;
বাউটা বাতাসে।
রাজ্যের শাসনকর্তা,
১৫ মিনিটের ভাষণে যা বললেন,
লেলিয়া দেওয়া শুকররা ঠিক তার উল্টো টা করে দেখালো।
চলছে দিন-দুপুরে ছিনতাই।
গরীবের হক মেরে খাওয়া শিয়ালগুলো
পন্ডিতগিরি করে ঠিকই খেয়ে যাচ্ছে, যাবে আগামীতে
আবাল জনগণ দেখে আর ঘুমায়।
কাজী জুবেরী মোস্তাক
পরাধীনতার কবর
যখন অশালীন আগুন মানবতা, নীতি ও আদর্শকে
গ্রাস করে;
তখন জ্বলন্ত আগুনের মতো চিৎকার করে রাষ্ট্রের প্রান্তর।
আর একটা পাগল ক্রোধের আগুনে এই শহরটাকে
জ্বালিয়ে দেয়;
এবং ঘৃণার চোখে তাকিয়ে থাকে এ পোড়া শহরের
আঙিনায়।
যখন এই শহরের কোন ব্যালকোনীতে বসে ধর্ষনের
খবর পড়ি;
তখন মনে হয় যেন আত্মঘাতী হই আর যা ইচ্ছা হয়
তাই করি।
প্রতিনিয়ত যখন ভঙ্গুর শরীর থেকে জীবন ছিনতাই
হয়ে যায়;
অনাকাঙ্খিত মৃত্যু তখন এই শহরেই অনেক সস্তায় পাওয়া যায়।
পত্রিকার ব্যালকোনী জুড়ে যখনই স্থান পায় খুনির মুক্তির খবর;
রাষ্ট্র তখন মানচিত্রের মাঝে খুঁড়ে চলে পরাধীনতার একটা কবর।
ইলা লিপি
ক্রেজি
খুব ভাঙতে ইচ্ছে করছে
ঝড়ের গতিতে
তুমুল তান্ডবে
ফেরারি
পরিযায়ী
আলোতে
নিমগ্ন চারু........
ছিটানো খই
ফুটছে.. ফাটছে
উড়ছে রঙীন ঘুড়ি
ক্লেদ সরিয়ে হেঁটে যাচ্ছি...
নেশায় ঝরে জোসনার রসিকতা
বুকের ওমে শান্তির খনিজ
ভাঙতে ইচ্ছে করছে...
মোহাম্মদ আবদুর রহমান
ফুটুক প্রেমের ফুল
তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
নিজকে একবার কর প্রশ্ন
দেখ কি উত্তর পাও
জানি এই প্রশ্ন করার সৎ সাহস তোমার নেই ।
তুমি শুধু পারো আগুন জ্বালাতে
পুড়াতে চাও আমার ঘর
কিন্তু ভুলে যেয়ো না
তুমিও পুড়বে সেই আগুনে
কারণ তুমি আর আমি একই ঘরের অধিবাসী।
শুনো সোনা ভুলে যাও সকল ভেদাভেদ
নিভিয়ে দাও প্রতিহিংসার আগুন
বাড়িয়ে দাও ভালোবাসার হাত
গড়ে তুলি আলোকময় ভুবন
ফুটুক প্রেমের ফুল।
আবু জাফর সৈকত
জনপদ
ফকফকা নীল হইয়া ভাসছো
হাসছো
সাঁতারে মুগ্ধ হচ্ছো পাথারের পলেখেলছো
ছবি ছবি গ্রাম গুলি র্দৌড়াচ্ছে অবলিলায়
এই সত্য - সবই ফসিলকিচির মিচির শব্দও এখন অমেলা
হাইব্রিড শস্যের বিনির্মাণ
কখনো নয়বাতাসগুলোও কর্পোরেট মুক্তি নয়
মুক্তভাবনা
রেওয়াজ আছে প্রথার- সিংহভাগই কুপ্রথা, কুসংস্কার
এম. তামজীদ হোসাইন
অন্য কেউ যেন আমাদের আচরণে কষ্ট না পায় এমন আচরণ করা উচিৎ। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কুসংস্কার, কুপ্রথা, অনৈতিক ঐতিহ্য এখনো চলমান রয়েছে। দেদারসে চলছে দুর্বলের ওপর সবলের চাপিয়ে দেওয়া ইচ্ছে। আমি বলবো সমাজে এসব বিদ্যমান কুপ্রথাগুলো ইঙ্গিত দেয় এটা আমাদের নিচু মন মানসিকতা।
বিবাহ প্রথায় এমন কিছু কুসংস্কার, কুপ্রথা প্রচলিত আছে যেগুলো সত্যি কখনো আমাদের মনের উৎকৃষ্টতার পরিচয় বহন করে না। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এসব প্রথা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ধর্মের দোহাই দিয়েও এসব প্রথা বলবৎ রাখতে এই অঞ্চলের মানুষ দ্বিধাবোধ করেন না। তারা খুব ভালো করেই জানে যে এসব ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। তারপরও এসব কুসংস্কার, কুপ্রথার দৃষ্টান্ত তাদের কাছে অনেক মূল্যবান।
আগে শুনতাম মানুষ বউকে মারধর করে যৌতুকের জন্য। যৌতুক বিরোধী আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে দেখে সমাজের এসব কীটরা ভিন্ন উপায়ে যৌতুক প্রথা এখনো বলবৎ রেখেছে! মানুষের লোভের একটা সীমা থাকা উচিৎ। বিয়েকে আমরা যতই একটা শুভ কাজ বলি না কেন এর পেছনে কিছু মানুষের মাঝে লুকিয়ে থাকে কিছু অশুভ মতলব। এসব অশুভ মতলবের পেছনে দায়ী সমাজের এক শ্রেণির অসৎ কুশিক্ষিত মানুষরা। সংসার ভাঙ্গনের জন্য এসব অশুভ কাজগুলোই যথেষ্ট। যার সাধ্য আছে সে বিয়েতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করুক তাতে কোন আপসোস বা আপত্তি নেই। কিন্তু যখন মেয়ে পক্ষ ছেলে পক্ষকে এবং ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষকে চাপ সৃষ্টি করে কিছু আদায়ের চেষ্টা করেন তখন যতই সমঝোতায় এসে বিয়ে হউক না কেন দুই পক্ষের মধ্যে মনোমালিন্য কিন্তু সারাজীবন থেকেই যায়। সাধ্যের বাইরে গিয়ে অহেতুক খরচ করে বিয়ের পরও সমাজের কুসংস্কার, কুপ্রথার রেওয়াজের কথা বলে এটা সেটা চাওয়া এটা যে কতটা নিকৃষ্ট কাজ সত্যি উৎকৃষ্ট মনের না হলে কেউ বুঝবে না। এটা যে শুধু অযৌক্তিক চাওয়া তা না। এটা একটা জবাই করে ছিনতাই করারও নামান্তর নিকৃষ্ট কাজ।
উন্নত দেশের বিয়েতে সাধ্যমতো, মনের ইচ্ছে মতো যা করে তাতেই দু’পক্ষ খুশি থাকে। সেসব দেশে কুরবানির গরুর মতো বিয়েতে দর কশাকশি হয় না। আর আমরা আধুনিকতার কথা বলে বিয়েতে যতসব অপচয় করি। সারাজীবনের অর্জিত আয় পর্যন্ত বিয়েতে খরচ করতে হয় এমন অনেক সমাজ রয়েছে। শ্বশুর বাড়িতে মেয়ের সম্মানের কথা ভেবে চাপের মুখে পড়ে অনেক বাবাকে সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছে এমনও অনেক নজির রয়েছে। আমাদের সমাজের মধ্যে এমনও নিকৃষ্ট সমাজ রয়েছে। এসব কাজ কিন্তু আড়ালে কেউ করে না। এসব নির্লজ্জ, অনৈতিক কার্যকলাপ আমাদের চোখের সামনেই অহরহ ঘটছে। সবাই এসবকে মাথা নিচু করে মেনে নিচ্ছি। রেওয়াজ আছে বা প্রচলন আছে ডায়ালগে চলছে এসব কর্মকাণ্ড। ভুক্তভোগী হচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ। এই কুসংস্কার, কুপ্রথার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে সমাজে ডিভোর্সের সংখ্যা দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে।
প্রচলিত এসব কুপ্রথা না মানলে নাকি সমাজের কাছে সম্মান থাকে না! অথচ যাদের কাছে অন্যায়ভাবে এটা সেটা চাওয়া হয় তাতে নাকি তাদের সম্মান বিনষ্ট হয় না। বরং এতে নাকি সম্মান তাদের আকাশচুম্বী হতে থাকে। নুন্যতম বিবেকবোধ থাকলে মানুষ এসব কাজ করতে পারে। সত্যি হাস্যকর হলেও এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব যে ভণ্ডামি আমরা সবাই বুঝি। কিন্তু কেউ মানি না। এভাবে চলতে পারে না কোন সমাজ। সমাজ ব্যবস্থায় এমন কুপ্রথা ক্রমাগত চলছে বলেই দিনদিন মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। ছোটরা বড়দের সম্মান করে না কারণ বড়রা যে যার মতো যা খুশি তাই করছে। আদর্শিক মূল্যবোধ বলতে সমাজে কিছুই নেই। সবাই সবকিছু বুঝে। কিন্তু কেউ আদর্শিকভাবে পরিবর্তন হয়নি বলে সবাই বিপথগামী হচ্ছে। মহল্লায় বখাটে ছেলেকে শাসন করবে কে? এমন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ হাতেগোনা কয়েকজন। সবার প্রতি একটাই অনুরোধ এমন রেওয়াজ আছে প্রথা মানতে গিয়ে নিজের আত্মসম্মানবোধকে হত্যা করবেন না। সুন্দর পরিবার, সমাজকে এভাবে গলা টিপে হত্যা করবেন না। যতটুকু পারেন সবাইকে সহযোগিতা করুন। অন্যের প্রতি সহমর্মিতা দেখান। তবেই সেই পুরনো সুখ, শান্তি আবারও ফিরে আসবে।
No comments:
Post a Comment