Sunday, June 28, 2020

শিল্প সাহিত্য ৭৬


রবিবার ১৪ই আষাঢ় ১৪২৭, ২৮ই জুন ২০২০




কবিতা
পলিয়ার ওয়াহিদ
মাছের পোশাক

মাছের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায় মানুষের মন
পাখিরা কি পর হয় সখা পুড়ে গেলে বন?

Fish costume

To wear the dress of fish men's mind travels

Would Birds be outsider, Friends, when forest has burned?

মৌসুমী মিত্র
অন্তরাত্মা

তোমায় খুঁজতে যাইনা আর বাইরে
নিত্যদিনের কাজের মাঝে আছো হৃদয় জুড়ে
তোমাকে খুঁজতে হয় না কোনো ছবিতে
জড়িয়ে আছো আমার হৃদয়খানিতে
ঘরসংসার টুকিটাকি কাজের মাঝে
মনে পড়ে তোমার খুনসুটি
আর জানো তো একলাই হেসে উঠি,
সবাই বলে পাগল নাকি!!
১০ টা বাজলেই মনে হয়, ওষুধটা খেয়েছো তো!
বেরোবার সময় রুমাল, চশমা আর মোবাইল টা নিতে ভুলে যাও নি তো!
তোমার যা ভুলো মন! চলতে গিয়ে আনমনে কখন খাও হোঁচট
আরো কত কি! সব কি যায় বোঝানো...

বুক চাঁপা কষ্টটা ভাতের হাড়ির ঢাকনা খোলা বাষ্পের সাথে দিই মিশিয়ে।
চোখের জলটা ছল করে লুকাই পেঁয়াজের ঝাঁঝে।
আনমনে সব্জি কাটতে বসে আঙ্গুলটা কেটে গিয়ে রক্ত ঝরে।
সেটা কি বুকের রক্তক্ষরণের থেকে বেশী-
সীমন্তিনীর আচড় কাঁটা সেকি ঐ চোখের জলের গোপন দাগের চেয়েও গভীর?
রাত্রি দিনের জপের মালা যে ‘তুমি’
কোনো নাম নয়, শুধু একটা শব্দতে আছো মিশে তুমি
শুধুই ‘তুমি’।

সোমনাথ বেনিয়া
ঊনত্রিশ পয়েন্ট ফাইভ- ১১

সমবেত শক্তিতে মৃত্যুর উলটো পিঠের সমুদ্রে ঢেউ
অবসাদকে লিখতে, হতাশা বুঝতে, প্রেমকাহিনি চুপ
অপরাজিতা ফুটে আছে, গরলের বিস্ময় চিহ্ন ধরি
অতিকষ্টে সকালকে গামছা স্বরূপ কাঁধে ফেলে দাঁড়াই
মেঘলা প্লাবন জানালার গরাদে রাখে মিষ্টি প্রায়
দূরবর্তী মাটির টবে আগাছার দঙ্গল বাঁচার আশা
কে জানে মধ্যরাতে মরু বুকে তুষার যুগের কথা
ছোটো ডোবার ভিতর মারিয়ানা খাতের স্বপ্ন দেখা
কিংবা পায়ের গোড়ালিতে মিছিলের লবণাক্ত স্লোগান
যাওয়াই যায় ভিন্ন পন্থার থেকে রকমফের ঋণ নিয়ে
কার অস্থির ভুলে অফুরান ভাঙি বিন্দুর ছায়াতলে...

নিধি ইসলাম
নির্জনতায়

চারিদিকে কষ্টের আঁধার
স্মৃতিরা খেলা করে মনের গহীনে,
ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছি নির্জনতার আঁধারে
জীবনের সব সুখ দুঃখ হাসি কান্না হারিয়ে।

কত আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেম মনের ঘরে
হঠাৎ দমকা বাতাসে সবকিছু হয়ে যায় এলোমেলো
পড়ন্ত বিকেলের রোদ্দূরে হারিয়ে গেল জীবনের মানে!

নির্জনতার অন্ধকারে জীবনের লেনদেনে
থেমে গেছে জীবনের গল্প স্মৃতিরা মিশেছে ধূলিকণায়
বিষাদগ্রস্ত জীবনে ছুঁয়েছে শূন্যতা!
শুনশান জীবনের বারান্দায়
চুপসে যাওয়া কল্পনার অকাল মৃত্যু ঘটে গেলো
আমার অজান্তেই জীবনেরে ফাঁকা রাস্তায়।

এখন কোথাও কোনো আলো নেই
চারিদিক শুধু অন্ধকারে ঢেকে গেছে চরাচর
কল্পনার পাখনায় অসংখ্য জরাজীর্ণ ভার।

ওাস্তায় রাস্তায় মানুষের অবিরাম কোলাহল মুখরিত
তবুও ভালো থাকার অভ্যাসটাই
হারিয়ে গেছে জীবনের খাতা থেকে
এখন শুধু ক্লান্ত পথিকের মত দীর্ঘশ্বাস
ঝরে পড়ে বারংবার অশান্ত হৃদয় মাঝে।

অনিক সাহা
বুভুক্ষ

ব্যস্ত রাজপথ হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ
চেনা শহরের অচেনা আঁধারে
আবছায়ায় দাঁড়িয়ে দুজন
ইতস্ততঃ সন্দিহান!
আমি

‘তুমি... পজিটিভ নও তো?’

‘মানে... অই আর কি,
 ভয়! ’

মৃত্যুময় চারপাশ,
মায়াময় হাতছানি
‘এসো আলিঙ্গন করি বুকে!’

চুপসে যাওয়া মনোমালিন্য এখন হয় খুবই কম!

হাঁটতে হাঁটতে দেখা গেল লকডাউন ভেঙ্গে রাস্তায় মানুষ 
পেটের ক্ষুধা বোঝে না ভাইরাসের,

সামাজিক দূরত্ব ভুলে
তুমি আমি,
তাই ওদের কাতারে দাঁড়াই!

জাহাঙ্গীর আজাদ
গায়ত্রী সন্ধ্যায়

মান ভাঙাতেই মন্ত্র শেখে কি কেউ ?
রাগে অনুরাগে ক্ষোভে অভিমানে তুমি।
তোমার নামটি সাবিত্রী ছিলো তাই
প্রিয় নামে কভু ডাকি নি রজতরেখা,
মান ভাঙাতেই মন্ত্রের চারুপাঠ,
গায়ত্রী শ্লোক তোমার জন্যে শেখা।

অথচ তোমাকে পেয়েছি তিনটি রূপে
চেতন অর্ধচেতন আর অচেতনে,
প্রত্যুষে তুমি ধারণ করো যে রূপ
মধ্যাহ্নেই সে তুমি ভিন্নতরো,
ভর সন্ধ্যায় গলিত স্বর্ণে দেখা
তোমার জন্যে গায়ত্রী শ্লোক শেখা।

মুক্তভাবনা
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়
শুভা গাঙ্গুলি

-আস্সালমআলায়কুম। ঈদ মুবারক আম্মি।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম। ঈদ মুবারক তুমি কি আজই চলে যাচ্ছো আলি?
-ণবং সড়স, আজই যেতে হবে আমায়।
-তুমি আজ যেও না, যাওয়াটা পধহপবষ করো।
আলি জানে এটা আম্মার আদেশ, তাই কোনো কথা না বলে টিকিট রিফান্ড করতে চললো।
আম্মার এই ব্যাপারটা পরিবারের সবাই জানে, মাঝে মাঝে আম্মি এইরকম করেন, কোথাও কিছু নেই, হঠাৎ করে জামা কাপড় পরে বের হয়ে যান, কোন আত্মীয়ের বাড়ী গিয়ে বলেন আজ খুব দরকার পড়লেও তোমরা বাড়ীর বাইরে যেও না।
প্রথমে লোকে গ্রাহ্য করেনি, পরে দেখেছে শুনলেই ভালো হোতো।

মায়েদের এই  ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অন্যান্যদের অপেক্ষা অনেক শক্তিশালী, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বারংবার প্রমাণিত। তাই আমরা সিনেমায় যেমন দেখি, অনেক  অনেক দূরে সন্তানের বিপদের পূর্বভাসে মা বিচলিত। এই যে বিপদের পূর্বাভাসের  ইঙ্গিত পেয়ে সতর্ক হবার ইতিহাস এটা আমরা অনেক অনেক ইতর প্রাণীর মধ্যেও দেখে থাকি।

২০০৪ সালের সুনামীর মহাপ্রলয় আমরা দেখেছি, আন্দামান দীপপুঞ্জে এর প্রভাব ভয়ানক হয়েছিলো, প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো এই প্রদূষণ বিহীন ছোটখাট দ্বীপপুঞ্জ, কিন্তু অবিশ্বাস্য ভাবে বেঁচে যায় সমস্ত বন্যপ্রাণী আর আদিবাসী জরোয়ারা, কারণ তাদের  বহুযুগ লব্ধ অভিজ্ঞতা  থেকে পাওয়া কিছু বিচিত্র অনুভ‚তি সাবধান করে দিয়েছিলো এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগমনের খবর, আর শ্রীলঙ্কার পাতান্গালা বীচ এর ইয়ালা ন্যাশনাল পার্কেও কোন প্রাণীই হতাহত হয়নি মাত্র দুটো মহিষ ছাড়া তবে ষাট জন ট্যুরিস্ট মারা যায়, সময়মতো সরে যেতে পারেনি। ঠিক সেই সময়ই থাইল্যান্ড এর সমুদ্র উপকুলের এক হোটেলে এক ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী তার মাকে খুব উত্তেজিত ভাবে বলে সে নাকি স্কুলে শিখেছে যে সমুদ্রের জল যদি অস্বাভাবিক রকম পিছনে সরে, তাহলে নাকি ভীষণরকম বিপজ্জনক জলোচ্ছ¡াস হতে পারে। তখনি সেই মা তাঁর ছোট্ট মেয়ের কথা অবহেলা না করে, হোটেল ম্যানেজারকে সতর্ক করেন, ফলে হোটেল খালি করে সকলে অপেক্ষাকৃত  নিরাপদ জায়গায় চলে যান, একটু পরেই সুনামী সব লণ্ডভণ্ড করে দেয়। আমরা দেখেছি যে কালবৈশাখী আসার পূর্বমুহুর্তে সমস্ত প্রকৃতি স্তব্ধ হয়ে যায়, গাঁয়ে গঞ্জে মানুষ বুঝতে পারে প্রকৃতির এই থমথমে ভাব, আসলে প্রবল কালৈশাখীর পূর্বাভাস, গল্পে সাহিত্যে এই কালবৈশাখীর পূর্বাভাস বিশেষ নৈপুন্য সহকারে নিবেদিত হয়ে থাকে।

উদাহরণ স্বরূপ, গল্পে সাহিত্যে এই অবস্থার ব্যবহার আমরা দেখে থাকি,
 “রমলার থমথমে মুখ দেখিয়া বিলাস বাবু চিন্তিত হইলেন, আসন্ন বিপদের পূর্বাভাস, দরজা ঠেলিয়া ঘরে পদার্পণ করিবার উপক্রম করিতেই, বজ্রপাত হইলো, যেখান হইতে আসিয়াছো, সেইখানে ফিরিয়া যাও। আওয়াজ বহুদূর বিস্তৃত হইলো, পিছনের ঘর হইতে বিনয় ছুটিয়া আসিলো, বৌঠান দাদা খুঁড়িমার  বদ্যির সাথে চন্দ্রপুরে রাত্রিযাপন করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, অত:পর আজ প্রভাতে গোযানে ফিরিয়াছেন, ঘোমটা টানিয়া রমলা কহিলেন, তুমি যাও ঠাকুরপো।
ঘরে প্রবেশ করিবামাত্র প্রবল বর্ষণ শুরু হইলো, রমলা স্বামীর বক্ষে আছড়াইয়া পড়িয়া তারস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন,”

অতি পরিচিত বারংবার ব্যবহৃত গল্পের প্লট মাত্র। এই পর্যন্ত পড়িয়া আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারি যে সাংসারিক জীবনে, প্রকৃতির নিয়মে পূর্বাভাস আমাদের সতর্ক করিয়া দেয়, সামনে বিপদ, সুধী সাবধান। তাই ভাষাহীন প্রাণীদের আচম্বিতে চালচলনের পরিবর্তন কে অবহেলা করিবেন না। কুকুর, বিড়াল, বিশাল তিমিমাছ, সামান্য গোল্ডফিস, সামুদ্রিক কচ্ছপ ইহারা মনুষ্য জাতি অপেক্ষা অনেক বেশী শুনিতে, দেখতে ও বুঝিতে সক্ষম। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলিতে পারি অপার্থিব জগতের কার্যকলাপ কুকুর বেড়াল, ঘোড়া ইত্যাদি প্রাণী আগে হইতে টের পাইয়া মনিবকে সচেতন করিয়া দিয়েছে এবং কোথাও কোথাও মনিবের প্রাণ পর্যন্ত বাঁচাইয়াছে,

তাহলে একখানি সত্য কাহিনী শুনাইয়া আমার লেখা সমাপ্ত করিতেছি,
একদা এক গৃহ খরিদী করিয়া মালিক কথায় রাত্রি বাস করিতে গেলেন, রাত দুইটায় তাঁহার পোষ্য সারমেয় দরজার দিকে দেখিয়া তারস্বরে চিৎকার জুড়িলো, তিনি উঠিয়া কাহাকেও না দেখিয়া পুনরায় নিদ্রা যাইলেন।
দ্বিতীয় দিন দরজা দমাস করিয়া খুলিয়া গেলো। ধড় মড় করিয়া উঠিয়া বসিলেন, সারমেয় তারস্বরে চিৎকার করিয়া তাঁহাকে ঘর হইতে কাপড় কামড়াইড়া বাহির করিয়া আনিলো। মুহুর্ত পরে ছাদ হইতে বৃহৎ চাঙড়  ভাঙ্গিয়া পড়িলো। কুকুর টি কাহাকেও তাড়া করিয়া ঘর হইতে বাহির করিলো, পূর্বভাস সত্য প্রমাণিত হইলো!

রাসবিহারী দাস এত বলিয়া পুস্তক বন্ধ করিলেন,”

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক