মঙ্গলবার
৯ই আষাঢ় ১৪২৭, ২৩ই জুন ২০২০
কবিতা
অভ্র আরিফভুল
ইন্টারভ্যু বোর্ডে আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো,
“পৃথিবীর রাজধানীর নাম কী?”
আমি মনে করতে পারলাম না।
তারপর জিজ্ঞেস করলো, “ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান কোথায় জানেন?”
আমি এটাও ভুলে গেলাম। অথচ আমার ভুলে যাওয়ার কথা না
অথচ আমরা রাত জেগে এসব মুখস্ত করি।
ফিরতিপথে ট্রেনের সিটে মাথা হেলিয়ে মনে হলো,
পৃথিবীর রাজধানীতো আমার হৃদয়
ব্যবিলনের শূন্য উদ্যান আমার মস্তিষ্ক
নিজেকে ধিক্কার দিলাম। কী আশ্চর্য!
জীবনের দেনা শোধে মানুষ অনায়াসেই হৃদয় আর মস্তিষ্কের কথা ভুলে যায়!
সারাটা যাত্রাপথে আসন্ন ভুলের মাশুল ভাবতে ভাবতে
ত্রিশটা স্টেশন পার হয়ে আমি গন্তব্যে নেমে যাই।
কিন্তু একী! এ রুক্ষ, ধূসর, ঊষর গন্তব্যস্থল কখনো আমার নয়
আমার দেশ- পাহাড়, সমুদ্র ও সবুজের দেশ।
বুঝলাম, ভুল টিকেটের যাত্রী হয়ে ভুল গন্তব্যে পৌঁছে গেছি
ততক্ষণে আঁধার ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামে প্রায়।
ভুল স্টেশনের যাত্রীদের কেউ আর কোনোদিন ফেরত নেয়না।
আমার সমুদ্র আর সবুজ পাহাড়ের জন্য আমি নিঃশব্দে কাঁদলাম।
অতঃপর, নিয়তিকে মেনে নিয়ে এবং কিছু করার না পেয়ে
রুক্ষ-ধূসর ঊষর জমিতে হৃদয় ও মস্তিষ্কের ব্যবহার করে
আমি পাহাড়, সবুজ ও সমুদ্রের আবাদ শুরু করলাম।
সুমন মন্ডল
প্রতিবন্ধক জীবন
নিজেই নিজেকে খুঁজে চলেছি সারাক্ষণ
কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে খামোখা নাটক করছি
আমি এক অন্য আমি হওয়ার চেষ্টা করছি
নিজেকে ধীরে ধীরে ভুলতে শুরু করেছি
সত্যিই কী পৃথিবী আরেকটু সহজ হতে পারতো না?
জানি বাস্তবটা কঠিন
তবে কিছু মানুষ সেটিকে আরও দুর্ভেদ্য করে তুলেছে
কেন এই লোক দেখানো কার্যকলাপ?
যে যা তাকে সেরকমভাবে বাঁচতে দেওয়া কী খুব অন্যায়ের?
শুভ্র সরখেল
নিশ্চুপ গল্পের নায়িকা
আমার সামনে এরকম করো না
প্রেমের স্বাদ মনে পরে
তোমাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি
ভালো লাগে না - এই ভেবে--- যে তুমি আছো ঠিকই---
কিন্তু অনেক দূরে--- পাবো না কখনো ।
এরকম আর করো না
মনে পরে সব কিছু
যা হয়েছিলো
কিংবা
যা যা আর হতে পারতো।
নীহার জয়ধর
কাপুড়ে কথা
তোমার কাপুড়ে কথা কেটে নিয়ে পীরানে পাতলুনে
আমি অপেক্ষা করি,
শাড়ির উপত্যকা বা ঘনিষ্ট অন্তর্বাসে
একই বাতাস খেলবে,
আমারই মনোমত ।
আঁশের নিবিড়ে যাইনি কখনো
দেখিনি পর্দার পেছনের গল্প
পাট-মেস্তার ক্ষেত, কাপাস বাগান
অথবা গুটিপোকার ঘর ভেঙে কীভাবে লাস্য পায় সূতা ...
এখন সাইকেলে ওড়না,
বাইকে স্পর্শকাতর স্কার্ফ,
সাহসী অভিমানে বক্ষবন্ধনী,
অথবা চুল না বাঁধার সেই প্রতিজ্ঞায় সেদিন
ঋতুমতীকে আড়াল করছিল যে একাকী বস্ত্র
তারপর নেমে আসা ছায়াপথ ব্যাপী কৃষ্ণকরুণা
সেদিন আমি শুধুই অনুজ দুঃশাসন।
এমন মিথ, মহাকাব্য, ইতিহাস শেষ হয়ে গেলে
সমর্পিত চোখ ক্ষেতের পাশে বাকল বা আঁশে
তোমার সূতার খবর চাই
ভাত কাপড়ের থালায় প্রায়শ্চিত্ত সাজাব
একটা সেতুর জন্য,
তোমার কাপড় তোমার মাপেই নতজানু হবে
আগামী শীতে শরীর- হৃদয়ে সে উষ্ণতা মুখোমুখি পেতে।
২৪-২৮ নভেম্বর ৩৫
মূল: পাবলো পিকাসো
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
আগুনের জিহ্বা বাতাস দেয় মুখে
বাঁশির ভিতর
পেয়ালা যা গান গায় এক খোঁট
নীল ছুরির ক্ষত
আলতোভাবে আলতোভাবে
বসানো বিছানার চোখে
অন্তর্লিখিত এর মাথার ভেতর জেসমিন সুশোভিত
ফোলার অপেক্ষায় ওড়না
স্ফটিক টুকরা
আলখাল্লার ভাঁজে বাতাসে মোড়ানো দুই হাতলের তরোয়াল
ঘামছে মাথা
অন্ধ ব্যক্তির মাঝে রুটি তুলে দেওয়া এবং বেগুনি রঙের ঘুঘু
এর অসদাচারণ জ্বলন্ত ঠোঁটের বিরুদ্ধে শক্তভাবে ঠাসা
শিঙের সাথে দুমড়ানো
বিদায়ী অঙ্গভঙ্গি দিয়ে স্পোকিং করা ক্যাথিড্রল
থাকা ছাড়াই মূর্ছা যাওয়া তার হাতে
একটি পলক যা ফোটে একান্তে
প্রভাত রেডিও যা তার চুম্বনে
ছবি তোলে শয্যাশায়ী রোদের
মৃত্যুর সময় থেকে বের করে সুগন্ধ
এবং চলে যায় কোনো পৃষ্ঠা জুড়ে উড্ডয়নে
ফুলকে করে তোলে অশ্রুসিক্ত
এবং টেনে এনে দেয় দীর্ঘশ্বাসের ডানার মাঝে
এবং ভয় পায় যা এখনো হাসতে পারে
ছুরি যা লাফ দেয় আনন্দের জন্য
ঠিক এখন এই দিন পরিত্যক্ত ভাসমান
যেকোনো উপায়েই এটা হতে চায় যথার্থ
এবং কূপের শীর্ষে প্রয়োজনীয় মুহুর্ত
একটি কান্না গোলাপ
সেই হাতের জন্য রঙিন যা তাকে ছুড়ে ফেলে নিচে
একটি ছোট্ট অভিনয় খ্রিস্টীয় প্রেমের
অণুগল্প
শহরের ভেতরের শহরকৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর
মেয়ের খালি একটাই প্রশ্ন- “বাবা, এককথায় তুমার কোলকেতাকে কেমন লাইগে?” “আরে আমি কি তুর মতো লিখাপড়া জানা ম্যাইয়া মানুষ যি তুর মতো ওমনধারা কথা বলতে পারব। এই যি ‘পশ্নো’ তারপর হলো গিয়ে ‘এককুথায়’ ইসব কথায় তো আমার মুখ থেকা ভালো করে বের হয়লাকো।”
সি শুনে মেয়ের পরথম পরথম ইমুন ধারা হাসতো... তা বইললে হবে না হাসলে যেন মুখ থেইক্কা মুক্ত ঝরে পড়ে। মেয়েটা হওয়ার পর চম্পা বইললে- “শোনো, আর ছেলেপুলে লোবো না... ইকেই মাইনুষের মতো মাইনুষ কইরবো।” আমি বইললাম- “বেশ তাইই হবেক।”
বিড়িটা ধরিয়ে আপনমনে কথা বলতে বলতে প্রভু খেয়াল করেনি কখন পৌরসভার আর্বজনার গাড়িটা এসে গেছে। গাড়িটা ফাঁকা করে চলে গেলে, ও সেখান থেকে প্লাস্টিকের প্যাকেট, জলের বোতল, মদের বোতল তাছাড়াও টুকটাক নানান জিনিস আলাদা করে বস্তায় ভরবে। গাড়িটা আস্তে আস্তে ডালার পেছন দিকটা উঁচু করছে, আগে বেলচায় করে লোকেই ফেলতে, এখন আপনা-আপনি পড়ে; আগে অবাক হয়ে ওদিকে তাকিয়ে থাকত, এখন অভ্যেস হয়ে গেছে। ও এখন হাঁ করে তাকিয়ে আছে ওর সারাদিনের রোজগারের রসদ ঠিকঠাক পড়ছে কিনা।
গাড়ির ডালাটা নামতে নামতে যেন রাস্তার উপর উঠছে, ও একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো। অন্যদিন ওর আসতে দেরি হয়ে যায়, আজ সক্কাল সক্কাল চলে এসেছে; অন্যেরা আসার আগেই ও কাজ হাসিল করে চলে যাবে।
প্রথমে গিয়েই একটা বড়ো ক্যারিপ্যাকেটে হাত দিল। এরকম প্যাকেট থাকলে ওর বেশ আনন্দ হয়। কারণ ওতে অনেক জলের বোতল একসাথে থাকে। আবার কোন মদের আসরের হলে, বড়ো অঙ্কের টাকাও পাওয়া যায়, “একি প্যাকেটটা হাত দিতেই এরকম নড়ে উঠল কেন?”
অতিসন্তর্পণে প্যাকেটের বাঁধা মুখটা খুলে ফেলল, “একটা আস্ত বাচ্ছা মেয়ে, মইনে হচ্ছে অখনই হইছে। কি গায়ের অং। একুনো বড়ো ঘইরের মেয়ে না হয়ে যাই না।” প্রভুর হাত পা কিরকম হিম হয়ে আসতে লাগলো। “এটা কি কারও পাপের ফইসল, নাকি মেয়ে হইছে বুলেই-” ও খুব ভয় পেয়ে মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে গুমরে উঠল। নিজের মেয়ের উদ্দেশ্যে বলতে থাকলো-“ওরে তুর প্রশ্নের এককথায় উত্তর আজ আমি দিতি পারব। সি তুই যতই লিখা পড়া করিস। আজ মুখ্য প্রভুর কথাকে কাটতে তুই তো ছাড় গোটা কোইলকেত্তা পারবেক লাই।”
No comments:
Post a Comment