শুক্রবার ২৯শে জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ১২ই জুন ২০২০
কবিতা
অনন্যা গোস্বামীএকদিন ঠিক...
আর আমিও একদিন সবুজ রঙে গুলে
সৃষ্টি করবো শহরের ভ্রূণ।
নবজাতক আকাশের পাতলা ঠোঁটে নূপুর পরে নাচবে হলুদ জবার পাতা।
শিমুলতুলোর নৌকা ভাসবে
পিচঢালা মরুতটে।
সেদিন দেখো...
হ্যামিলনে ছুটে বেড়াবে
অর্ফিউসের করতালধ্বনি।
গোলাপি মেঘের দল দরজা খুলে দেবে মিনা বাজারের প্রকোষ্ঠে।
সেদিন তোমরা মিটিও দাম
হাসির মুদ্রায়।
একদিন ঠিক...
আমিও উড়ে যাবো
একারুসের ডানায় চড়ে।
হ্যালোউইনের রাতে ছড়িয়ে দেব রক্তগাঁদার রেণু...
দুর্বায় জমা বৃষ্টিজলে কানামাছি খেলবে রিক্সার টুঙটাঙ।
আড়মোড়া ভাঙা নাগরিক সন্ধ্যায়
সূর্য উঠবে হাই তুলে।
ঝলমলে রৌদ্রে কেঁপে কেঁপে
জলসা মাতাবে রাতের জোনাকি।
আর একদিন...
আমি বনবাসে যাব লোকালয় সাথে নিয়ে।
সে পর্যন্ত ছুটি দিলাম তোমাদের।
যত ইচ্ছা জোলাপাতি খেলো।
জীবনের জঙ্গলে!
সাব্বির হোসেন
আলিঙ্গন
সীমানা পেরিয়ে যখন তোমার কোমলতা স্পর্শ করেছিল আমার ঘন চুলে,
তখন দুটো রাষ্ট্র এক হয়ে জন্ম দিয়েছিল আরেকটি নতুন রাষ্ট্র।
সেদিন মরা নদীতে নতুন জীবন পেয়েছিল ব্রহ্মপুত্রের ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ,
বসন্তের মাতাল বাতাস আর জোনাকিদের নিদ্রালস যাওয়াআসা মনে করে দিয়ে ছিল ছোটবেলার পবিত্র পুতুল খেলা।
তেমনি ভাবে আজও স্পর্শ পেতে চাই প্রতি পূর্ণিমাতে,
নখের আঁচড়ে এঁকে দিও মহাত্মা সুখ।
আশরাফ মাহতাব
দুই দুয়ারী
কর্ণকুহরে ফিসফিস মন্ত্রের স্খলন-
“দুয়ারী, ভুলেও দরজা খোলোনা,
ভ্রষ্টলগ্ন চলছে, রাহু গিলে নিয়েছে চাঁদকে,
কুহক কাপালিক মৃত শবের আসনে বসে
করছে প্রেতের আরাধনা।
দুয়ারী দরজা খোলোনা।
তোমার দুই দুয়ারের চৌকপাট হা হলেই
সহস্র প্রেত এসে তোমার টুটি চেপে ধরবে,
হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাবে বলির নৈবেদ্যে!
দুয়ারী, ভুলেও দরজা খোলোনা।”
যুগের পর যুগ চলে যায়।
জুজুবুড়ির ফিসফিস ভয়-মন্ত্রে কান পেতে
দুয়ারীরা আর দরজা খোলেনা।
অন্ধকার প্রকোষ্ঠে শীতার্ত কুকুরের মত
ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে।
একদিন...
দুয়ারীর দুই দুয়ার চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়।
শুধু রুদ্ধ হয়না জুজুবুড়ির অট্টহাসির সেই মুখ-দুয়ার।
প্রসেনজিৎ বসাক (চৈত)
দু’চাকার স্রোত
গিটারের তারে জামা সহ হেঙ্গার। ভুলে ভরা বাক্স।
সুমন...
একহাতে বিড়ির মোথা আর অন্য হাতে সীলমোহর।
হৃদয়ের উঠোন চিরে মহানন্দার গতিপথ
ছিপে আজকাল পাখি ওঠে। হ্যাঁ পা..খি
কিন্তু ...
মাছ নয়।
এ কে এম আবদুল্লাহ
নি:সঙ্গ ছায়া
মাসান্তে প্যাঁচার ডানায় চিঠি আসে।
আর রাত গভীর হলে- আমাদের সাহারা চিঠি পুড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের আগুনে। সাহারার সাথে রোজ কথা হয় তারাফুলের। সেখানে প্রজাপতি, কোকিলের মতো গান করে। সাহারার চোখ পড়ে থাকে তারাফুলের বাগানে।
মাঝেমধ্যে সাহারা কবুতর হয়ে যায়। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে উড়ে যায় আকাশে। আর আমরা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখি- সাহারার ডানাঝাপটানো দৃশ্য।
শান্তম এর কবিতাগুচ্ছ
নিরপেক্ষ
আসছি । আসছি। একথা বলেই
রোজ ফিরে আসতে হয়
না এলেও। এই ঘর এই দোর
থেমে যাওয়া অপেক্ষায়
আলো, তুই বল তাও কি আমার!
অন্তরবাস
এখন সে কথায় রাগ নয়। দুঃখ নয়
আনন্দ হয়। আনন্দেও ভেতরে এক শিশু
পাগল না হতে পারার সহজ যন্ত্রণায়
একমুখ হেসে একা একা বড় হয়ে যায়
সুখ
আকাশ গভীর হলে ক্ষতে ক্ষতে
শোকের শিশুটি ঘোরে। ডানা মেলে
ওড়ে ওড়ে । ছায়া পড়ে
বড় হয় ছায়া । শিশুটিও
অসুখ সারে না। শুধু বড় হয় মানুষের মন
সজল কুমার টিকাদার
লিখতে লিখতে
এবড়ো খেবড়ো পাহাড় ছিল;
খোঁচা খোঁচা গাছ, জঙ্গল ঘেরা চারপাশ।
একটু জায়গা পরিষ্কার করে তার গায়
চক দিয়ে লিখতে থাকি
গদ্য-পদ্য কিছু কথা।
লিখতে লিখতে লিখতে লিখতে...
ক্রমে মসৃণ হতে থাকে সে।
তারপর ভোর রাতে
ফসলফলা সমতল মাঠ
এক সবুজ খাতা!
অণুগল্প
এক টুকরো হিটলারঅনিন্দ্যকেতন গোস্বামী
দয়া করে আপনারা গুঞ্জন বন্ধ করুন। ন্যুরেমবার্গের এই বিচার ঘরে সূচপতনের শব্দ এনে দেবো। আমি স্মিরনভ, অকাট্য প্রমাণের পাহাড় ছুঁড়ে দেবো ন্যাৎসী আসামীদের মুখে। আহ্বান করি সেই সব মানুষের আত্মাদের, যারা মাজডানেক, অসওয়েইসিম, বুখেনভাল্ড বা ডাউচে মানুষ পোড়ানোর ফার্নেসে কুঁকড়ে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছেন... আর তারাও আসুক যাদের দেহকে পঁচিয়ে ফেলা হয়েছিলো বাবিয়ার আর খারকভের ভয়ঙ্কর গর্তে। এই আদালত তবেই ঝলসে উঠতো যদি আসামীর পাটাতনে এই শয়তানগুলো পাগল হয়ে যেত। হুজুর, আমি এখানে এ্যালেক্স তলস্তয়ের কথা বলবো ‘লোভ, হীনতা, নীচতা, আর কাপুরুষতার কেন্দ্রিভ‚ত বিশুদ্ধ সারাংশই হলো ফ্যাসিবাদ।’
মহামান্য বিচারক এই ফ্যাসিবাদী কাপুরুষতার তথ্যচিত্র আলোকরশ্মিতে আদালত কক্ষেই দেখাবো- ১৯৪১ । ২৯শে নভেম্বর। রোস্তভ শহরের সম্পূর্ণ রাস্তা জুঁড়ে অসামরিক নাগরিকদের মৃতদেহের ডাঁই। ঐ দেখুন একটি মৃত বালকের উঁচু হাতে একটি পোষা বুলবুলি ছটফট করছে...পাখিটিতে হঠাৎ গুলি এসে লাগলো...গুলি এবং পাখির আত্মা দুজনেই মুক্ত... কি আশ্চর্য তাই না ?
আর ঐ যে স্টেশন চত্বরে দেখেছেন কাঠের গুড়ির মত পাটপাট সাজানো। আসলে ওগুলি কাঠেরগুড়ি নয় মৃতদেহ ডাঁই করে রাখা। যদিও প্রথমে মনে হবে ওগুলি সোভিয়েতের লালবাহিনী কিন্তু ভালো করে কছে গেলে দেখা যাবে সাদা ব্যান্ডেজ দিয়ে হাত পা মাথা মুড়ে এ গুলি একেকটা ন্যাৎসী সৈনিকেরই দেহ। যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিককে বোঝার মত বয়ে বেড়ানোর চেয়ে মৃত্যুও থেকে সহজতম পন্থা আর নেই...
আরেকটি কক্ষের তথ্যচিত্র দেখুন- ড্যানজিং প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কক্ষ। ভ‚গর্ভস্থ মৃতদেহের কবরখানার গুদামে মুন্ডুহীন লাশ বোঝাই হয়েছে। যদিও ন্যাৎসীদের ভাষায় তা কাঁচামাল। মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করে এ্যালকালিনে ডুবিয়ে টগবগ করে ফোটানো হচ্ছে। মানুষের চর্বি দিয়ে সুগন্ধি সাবান তৈরি হবে। পিশাচেরা সাবান মেখে স্নান করে পবিত্র হবে...
কাঠগড়ায় দাড়ানো এনারা আবার গোসা করে থাকেন, মাননীয় মন্ত্রী বা মাননীয় রাইখমার্শাল বা এ্যাডমিরাল না বললে। আমি স্মিরনভ এনাদের কাছে প্রতিবাদী। আমি অবশ্যই এদের বলতে পরি ঠগ, গলাকাটা, খুনী অপরাধী।
গোয়েরিং একটা শিকারী কুকুরের মত। আর বারবারোসা পরিকল্পনায় মেতে উঠেছিলো হিটলারের সাথে। কেইটেল, জডল, জেনারেল ওয়ারলিমোন্ট, সেই লাল দাড়ি শয়তান যার পিপাসাই ছিলো রক্তের...
মহামান্য, বিচারক আমার প্রতিপক্ষের উকিল বন্ধু রুদেনকো সুপরিপাট্য করে আপনাদেরকে জানিয়েছেন...
যদিও ভাবি হিটলারের মতন লোকেরাও উকিল পায়। হাজার হাজার মানুষকে যারা মেরে ফেলে অথবা মারার জন্যে সুপরিকল্পনা করেন, তারাও উকিল পায়...হাঁ হাঁ হাঁ... আমার হাসি পায়... এইসব নাটুকে ভাঁড় রাষ্ট্রনায়কদের দেখলে আমার হাসি পায়... যাইহোক রুদেনকো আপনাদেরকে যা জানিয়েছেন ভালোই জানিয়েছেন...
ঐ পরিকল্পনায় জনসংখ্যা হ্রাস করতে অজস্র গ্যাস চেম্বার, প্রচুর গ্যাসভ্যান, মৃতদেহ ফেলার প্রচুর মৃত্যুফাঁদ, বিষপূর্ণ পানীয় জলক‚প, দুর্ভিক্ষ আর মহামারী....
হুজুর একটু চেয়ে দেখুন মিঃ হেস কি রকম নির্বিকার। কাঠগড়ায় দাড়িয়ে জীবন্ত মানুষ মারার যন্ত্র এখন নির্বিকার। অথচ অদ্ভুত স্বাভাবিক।
একটু পরেই ফন পলাসকে এনে দেবো সাক্ষীর কাঠগড়ায়, যাকে গুম করে রাখা হয়েছিলো আর মিথ্যে মিথ্যে ফন পলাসের শবাধারে জার্মানীর রাষ্ট্রীয় সম্মান দিয়েছিলেন এডলফ হিটলার। ফন একের পর এক সত্যতা দিয়ে ভরে দেবে আপনার কক্ষ
এরপর সত্যতা নামে... একের পর এক সত্যতা নামে সভ্যতার বুক জুড়ে... এবং দীর্ঘ শতাব্দী ব্যাপি নামতেই থাকে... আর একেক টুকরো হিটলারের মুখোশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রনায়ক নায়িকাদের মুখ ঠেসে....
No comments:
Post a Comment