Saturday, May 23, 2020

শিল্প সাহিত্য ১৪

সোমবার ১৪ই বৈশাখ ১৪২৭, ২৭ই এপ্রিল ২০২০



কবিতা
অনার্য নাঈম
আমার কেটে যাওয়া দিন

আমার কেটে যাওয়া দিন ছিলো বিষণ্ন
বহুকাল আগে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কেটে যেতো দিন
তখন আমি ছিলাম সূর্যমুখী।

আমার কেটে যাওয়া দিন ছলো হতাশার-
কয়েক আলোকবর্ষ আগে
একজন দেখিয়েছিলো নয়টি গ্রহ
পৃথিবীর মতো আর কোনটি নয়;
তারপর এই গ্রহের মহাদেশ ভেদে
আমার হতাশা ছিলো সমকালীন।

আমার কেটে যাওয়া দিন ছিলো না বোঝার
পরীক্ষা ঘনিয়ে এলে আমার হাইস্কুল বয়সের অংকগুলো-
রং চটা জিন্সের রূপাঞ্জলী;
পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি
এই না বোঝার ত্রিভূজ
আর জানালায় উঁকি দেয়া রক্ত করবী।

শান্তম 
ঘর 

আমরা এই চারজন । পাহারা দিই চারজন'কেই

যখন কেউ ধাক্কা দেয় দরজা কেঁপে ওঠে 
ঘর ছেড়ে চলে যায় ঘর হাঁ-মুখ নরকে 

বৃষ্টি, ঝড়, ভয় ও অন্ধকারের বাইরে
আগে একটি ঘর ছিল ।আমাদের ঘর 
তার সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয় । কথা হয় কম

যদিও রোজ সকাল হলে দেখতে পেয়েছি 

দুটি ঘরের মাঝখানে এঁকে বেঁকে যে পথ চলেছে 
সেও যেন ঘর হয়ে গেছে 

মারুফ আহমেদ নয়ন
পিপাসার জলসত্র

পাথরের মরুভ‚মি জুড়ে আমি খুঁজে ফিরছি পিপাসার জলসত্র। তুমি খাঁ খাঁ বিরান প্রান্তর জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছো মরীচিকা, রমণীর ব্যাক্তিগত হাসি। আমার ভ্রম হচ্ছে, নিজের ছাঁয়ার সাথে কুস্তি করে হেরে যাচ্ছি। তারপর ক্লান্ত হাওয়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছি, শুনতে পাচ্ছি মমি উপত্যাকার গান। জীবিতরা একদিন মরে যায়। আলৌকিক জ্যোৎস্নায় জেগে থাকে স্মৃতির ভোর। মৃত্যু কি তবে তোমার খোঁপায় ফোঁটা জবাফুল। এইসব প্রশ্নে করো না আঘাত। অন্ধ এক পিয়ানো বাদকের আঙ্গুলে কাঁপতে থাকে কামনায় সাতটি গোলাপ।

রুকাইয়া পাখি
দাম কতো?

দু'শো বছর!
চিন্তা করেছ?
পুরো ষোল যুগ ধরে
চুষে খেয়েছে ধবল বাদুড়
ষোড়শীর দেহ খুঁড়ে। 
মাথা খেয়েছে, কান নিয়েছে,
হাতে দিয়েছে দড়ি
চোখদু'টো নিয়ে ভেগেছে আমার
মায়েরে অন্ধ করি।
সহজ-সরল চিত্ত গিলেছে
জ্ঞানীর মগজ ঘিয়ে ভেজেছে
আপনারে স্বীয় দাস!
লোভে মোহে যত রং আছে ভবে
ওপিঠ নিয়ে ভেবেছে কে কবে?
একে একে করি আত্মহনন, মনন করেছে নাশ!

যেই এলো কুঠি, ফসকালো মুঠি, দল ভেঙে হলো জন
প্রসূতি মাতার আচঁল টেনে হেঁটে গেলো হনহন।
শূণ্যবক্ষা অসহায় মায়ে নাই দিলো চিৎকার
কি লাভ তাতে? খরা মৌসুমে কে বা শোনে কথা কার?
এ পাড়ার ইটে ও পাড়ায় ভিটে গড়েছে অবিরাম
মাছের তেলে মাংস ভেজে দেয়নি কিছুর দাম
মুচি মননের শিল্প কেড়ে পাদুকা করেছে দান
বাপের কালিতে দোয়াত ভরেও লিখেনি বাংলা গান।
আশ কেড়েছে, শাঁস কেড়েছে, কেড়েছে ঘুমের পাটি
শষ্যের টুপি মাথায় ওদের, আমার কপালে মাটি।

এইতো এমনই হাল
আর কত তরী দুলবে বন্ধু?
এবার লাগাও পাল।
কেড়েছে, খেয়েছে যত
আঙ্গুলের ভাঁজে গুণে নাও সব,
লাঘব করো সে ক্ষত।
হাতে রেখে হাত
না করে আঘাত
হাসিমুখে করো খুন
ছেড়োনা ও টুটি
পাল্টাও খুঁটি
ধরে যদি তাতে ঘুণ। 
চালাও যন্ত্র, গোপন মন্ত্র 
সিন্দুক ঘেটে জ্ঞান
গঙ্গা-মক্কা-প্যাগোডা-গীর্জা
যার যে পাটিতে ধ্যান!
হাতে রেখে হাত, ধরে মোনাজাত
এসো একসুরে গাইবো;
যত আছে ঘাম, দিয়ে চড়া দাম
ইউরোপ, তোকে কিনবো।।

ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: হোর্হে লুইস বোর্হেস
ট্যাংক
১.
শিখরের শীর্ষে
চাঁদনী উদ্যান
সোনালী চাঁদ
আরও বেশী চমৎকার
ছায়ার মধ্যে ঠোঁটের চুক্তি তোমার
২.
পাখির ডাক
যে গোধূলি লুকিয়ে আছে
তা হয়ে গেছে নিস্তব্ধ
বাগানে তোমার পদক্ষেপ
জানি তুমি অনুভব করছো কিছু
৩.
কৌতুহলী পানপাত্র
তরবারি, এক সময় যা ছিরো তরবারি 
অন্য উপলব্ধিতে
পথের উপর চাঁদের আলো-
বলো, এই কি যথেষ্ট নয়?
৪.
চাঁদের নিচে
সোনার বাঘ ও ছায়া
থাবার নিচে তাকাও
অজ্ঞাত এক লোককে তারা
করেছে ক্ষত-বিক্ষত
৫.
অবিশ্বাস্য বৃষ্টি
ঝরছে মার্বেলের উপর
ঈৃথিবীর দুঃখের অংশ
মানুষের, স্বপ্নের, সকালের
দুঃখের অংশ হতে হবে না আর
৬.
বিধ্বস্ত হতে না
বংশের অন্যদের মতো
সংগ্রামে কেটে ফেলা
নিরর্থক রাত হতে
যে গণনা করে অক্ষর

গল্প
জোনাক জ্বলা রাত্রি
কোয়েল তালুকদার

যমুনার তীরবর্তী একটি গ্রাম। তখন বৈশাখের সন্ধ্যা রাত্রি। বাড়ির বারান্দার কোণে দাঁড়িয়ে তিনজন লোক ফিসফিস করে কী যেন শলাপরামর্শ করছে।
১ম জন- যেভাবে বুড়া কাইশতাচে, মনে অয় করোনা অইচে। দেহস না, বাইন্দাত হুইয়া হুইয়া কেমন হাপাইতেছে।
২য় জন- কী করা যায় রে সোহরাব, ক চিন দেহি। ও তো মইরবো মরবো, ও আমাগো হবাইকে নিয়া মইরবো।
৩য় জন-- বাপ অইচে তা কী অইচে, হালার পুতরে চরের মইদ্যে ফেইলা দিয়া আসি। ওহানে বাইচলে বাঁচব, মইলে মইরব।
১ম জন-- ঠিকই কইচোস। তাই করি। হালার পুতরে ফাইলা দিয়া আসি।
২য় জন-- নাউ ঘাটেই আছে। চল, হ্যারে নিয়া নাইয়ে তুলি।
৩য় জন-- নু যাই, তাই করি।

সেই সন্ধ্যা রাত্রিতেই বুড়োর তিন পুত্র বৃদ্ধকে বোগলদাবা করে ঘাটে বাঁধা ছোট ডিঙি নৌকায় নিয়ে উঠায়। তারপর নৌকা ছেড়ে দেয়। একপুত্র লগি চালায়, আর দুই পুত্র জোরে জোরে বেঠা চালাতে থাকে। নৌকা চলতে থাকে স্রোতের অনুক‚লে।

একসময় নৌকাটি যমুনার দূর্গম চর চরসাকুল্যায় যেয়ে ভিড়ায়। তিন পুত্র ধরাধরি করে চরের মধ্যে বৃদ্ধকেনামায়। শুকিয়ে যাওয়া ছোন ঝাড়ের খরের উপর বৃদ্ধকে শোয়ায়ে দেয়। বৃদ্ধের পাশে একটি মুড়ির টিন, কাগজে মোড়ান কিছু গুর, মাটির কলসিতে এক কলসি পানি, একটি এ্যালুমিনিয়ামের গ্লাস, এক প্যাকেট বিঁড়ি ও একটি দিয়াশলাই রেখে দেয়।

বাপকে রেখে পুত্রত্রয় এসে নৌকায় ওঠে। নৌকা থেকে অন্ধকারে ওরা চরের ছোনের ঝাড়ের দিকে একবার তাকায়। সেখানে দেখতে পায় জোনাকিরা ঝিকিমিকি করে আলো জ্বালাছে। আর দেখতে পায় বিড়ির নীল ধোঁয়া। ধোঁয়াগুলো উপরে দিকে বিষণ্ন ভাবে উড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে।

যমুনার আকাশে তখন অজস্র তারা জ্বলছে। নদীর জল রাত্রির নিঃশব্দে ছলাৎছল করে করুণ শব্দ করছিল। খরস্রোতে নৌকাটি উজানে বেয়ে নিয়ে আসতে ওদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক