Wednesday, May 20, 2020

শিল্প সাহিত্য ১০

বৃহস্পতিবার ১০ই বৈশাখ ১৪২৭, ২৩ই এপ্রিল ২০২০


কবিতা
অনিন্দ্য দ্বীপ
ঋণগ্রস্ত পংক্তিমালা

তুমি নামক শব্দঋণ গচ্ছিত রেখে এখনো 
তোমার নামে গোপন জপমালা! তুমি 
কি গচ্ছিত রেখেছো! অবহেলা? 
নামাবলীর নামতা গুনে কবেই 
পেরিয়েছি বর্ণশেখার কাল! 
এখনতো গাইছি অস্তিত্বের গান। 
যদি অনুভবে এ ভাষা শিখে নিতে পারো 
চোখ বুঝে তাকাও হৃদয়-- 
হৃদয় কি বিজ্ঞাপন, বিলি হওয়া লিফলেট! 
কেন্দ্রভুত হাওয়ায় উড়ছে প্রতিশ্রুতি- 
আমার অস্তিত্বের কসম, কসম প্রিয় গোলাপের
যে গাঢ় লাল হয়ে আছে ।
প্রবাহিত রক্তে প্রতিটি পাপড়ি খুলে দেখো 
ভালোবাসার নাম 
অস্তিত্বের প্রতিটি পাতা পড়ে নাও 
যুগল শ্লোকে উচ্চারিত তুমি-আমি, আমি-তুমি! 
আমাকে ধ্যানে পাবে একান্ত তোমার।

মীর সাহাবুদ্দীন
সতর্কতা ও শৃঙ্খলা

বিপদে পড়লে মানুষ কবিতা পড়েনা
কয়েকটি জীবন কবিতার মত হয় মাত্র
কখনো সংকেত ছাড়াই
মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে
কেউ সংকেত পেয়েও প্রাণ হারায় 

একদল ছত্রাক সবার আদওে বেড়ে উঠে
ভালো মন্দ বোঝার আগে
ট্রল করে ভিডিও বানায়
বিপদে পড়লে মানুষের মনে পড়ে
একজন ঈশ্বর আছেন

মহামারী যখন ধেয়ে আসে
কে ঈশ্বরহীন কে ঈশ্বরের উপাসক
ধর্ম বর্ন কেউ বিভেদে ঠেকাতে পারেনা
সর্তকতা ও শৃঙ্খলা একটি পরীক্ষা মূলক জীবনও বটে।

রোদ্দুর রিফাত
অনাহার

দীনহীনরা মৃত্যুর কাছাকাছি বসে আছে
অথচ করোনা ভাইরাস ছোঁয়নি তাদের
ছুঁয়ে গেছে উপবাসের দীর্ঘ দিবস ও রজনী
পেটের ভিতরে চলছে তুমুল তোলপাড়,
বুকে হাকাকারের পাল তোলা নৌকা 
পালটাও ছিড়ে আছে এদিক-ওদিক
কখন জানি ঝড়ো বাতাসে উড়ে যায়।

সজল রানভী
বিসর্জন অথবা বিষ অর্জন

তুমুল কবি হতে গিয়ে গলা টিপে হত্যা করেছি তুমুল ভালোবাসা । ছিঁড়ে ফেলেছি সংসারী স্বপ্নের খতিয়ান।

মুক্ত । অথচ পেট'নীতির নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পাখির ডানা মেলতে পারিনা যখন তখন।
ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যঞ্জনা মুছে ফেলে লিখতে পারিনা কাক্সিক্ষত কবিতা।
আঁকতে পারিনা মায়ের মতো নারী।

পাহাড়ের জরায়ু ভেদ কওে যে নদী বয়ে গেছে আমার পৈতৃক ভিটেমাটি গিলে ফেলে,
সে নদীতে নোঙর ফেলবো ফেলবো করে ছাব্বিশ ক্যালেন্ডার।

প্রজাপতির নাভিতে একটাও চুমু নেই।
ফুলকে ভুল দিয়ে অংক কষতে কষতে ফলাফলে নামিয়ে ফেলি ভীষণ শূন্যতা। ভীষণ একাকীত্ব।
সঙ্গমরত টিকটিকির যাপিত সুখে অসুখ জমে যায় সমস্ত বুকে। চোখে নরকের অন্ধকার। অভুক্ত কুকুরের হা হুতাশ।

তুমুল কবি হতে গিয়ে গলা টিপে হত্যা করেছি তুমুল সংসার। ছিঁড়ে ফেলেছি, পাশাপাশি শুয়ে থাকা সাড়ে তিন দুগুণে সাত হাত জীবনের চিত্রপট।।

বঙ্কিম কুমার বর্মন
চোখ

অলীক কান্না ঢেলে দেয় প্রতিটি সন্দেহ চোখ
আমার নরম শিখা ছুঁয়ে থাকুক শান্তির সমীকরণে
কেমন অবাধ্য হয়ে উঠছে চুঁইয়ে পড়া নির্জনতার সঞ্চয়

উড়ে যাও উঁচুনিচু স্বাদ ভুলে পিপাসার বুনুনে
দ্যাখো সোহাগে ডেকে নেবে কাছে ঘামফুল
উঁকি দেয় রাস্তার তৃষ্ণা এদিক ওদিক বৃষ্টিপথ ঘুরে ঘুরে

অলস্যতা ঘেঁটে ঘেঁটে এখন ক্লান্ত হয়ে উঠি
কেমন জড়িয়ে উঠছে পা বেয়ে সূর্যের ফাগুন
আস্ত শামুকের গতিপথ বদলে নিচ্ছে দূরবীনের গালিচায়

চেয়েছি ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের জ্যামিতিক চকচকে রূপকথা।

বিনয় কর্মকার
সূর্য বনাম ঈশ্বর 

আহা অসময়;
ময়ূরপেখম কাশফুল--- 
বৃষ্টিতে নেতিয়ে যায় বয়োবৃদ্ধার স্তনের মতো!

দুধেরবাটিতে কারা মেশালো এমন সৎমায়ের ষড়যন্ত্র?
শ্বেত-পায়রার পালকে কাক-কোকিলের সন্দেহ!! 

কাঁঠালের ত্বকঘেঁষে শিউলি বিরহ নিয়ে- আমরা কেবলই অন্ধকারে মিলিয়ে যাই...

ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: পাবলো পিকাসো
যখন সে বন্ধ করে দিলো তাকে লেখা

চিঠিটা সব সময় রক্ত ঝরায় তার জন্য তার চোখের জন্য (ওষুধের দোকানের পুরনো বোতলের মতো বাদামী) সবুজ খোলা মেঝেতে ঝরে পড়া ছাড়াই রক্তঝরা শব্দগুলো অশ্রুর মতো এ শব্দগুলো সব সময় পরিশুদ্ধ চকচকে কালো কালি দিয়ে কেবল কাগজে দাগ টানা মসলিনের মতো আটকে আছে রক্ত পুরনো ক্ষতে যদিও শব্দগুলো অস্পষ্ট-গুপ্ত তবুও সব সময় সুদৃঢ় একজন পণ্ডিতই কেবল খুঁজে পেতে পাওে এর ভেতরের অশ্লীলতা
তারাই তৃপ্ত যারা মরে যায় কারণ তারা ফিরে গেছে সেই প্রথম আলগা মাটির টুকরোয় যা আমাদের প্রতিপালিত করেছে সেই প্রথম গর্তে সেই নরম কালো ও কয়লার গন্ধ

গল্প
বাবার স্মৃতি
আহমেদ রুমন

সেদিন সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো, টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ যেনো টিনের চালে খেলা করছে। আমি আমার পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই খোলে কবিতার প্রচ্ছদ দেখছিলাম আর ভাবছিলাম আমার তো আর এদেশে থাকা হবে না,প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে ভারত যেতে হবে,আমি বাবা মা'র একমাত্র সন্তান আর কোনো প্রকারেই মা এই দেশে থাকতে চান না, ভারতে মায়ের এক মামা থাকেন মা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেখানেই চলে যাবেন, দেশে যুদ্ধ লেগেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের দেশে আক্রমণ করেছে।ভিতুর মতো নিজের ভিটা বাড়ি ছেড়ে দিয়ে নিজের মাতৃভ‚মি ত্যাগ করা লাগবে? ভাবতেই খুব খারাপ লাগে কিন্তু কি করার আমার মা বাবা যে আমাকে খুব ভালোবাসেন। উনারা বলেন, যুদ্ধ শেষ হলেই দেশে ফিরে আসবো। হঠাৎ করেই পাশের বাড়ির কাকু ভেজা শরীরে আমাদের বাড়িতে এসে প্রবেশ করলেন,আমি তখন ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম, কাকু আমাকে বললেন তোমার বাবা ঘরে আছেন? আমি বাবাকে ডেকে দিলাম, কাকু আর বাবা ঘরের ভিতর কি যেনো আলাপ করছিলেন। জানার কৌতুহলে আমি একটু এগিয়ে গেলাম। বাবা আমাকে দেখে বললেন,তুমি বাহিরে গিয়ে খেলা করো। মা পুকুর পাড়ে থালাবাসন মাজছিলেন আর বলছিলেন কালই ভারত রওয়ানা দিবো। থালাবাসন নিয়ে ঘরে ঢুকার আগেই কাকু ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। দিন গড়িয়ে রাত চলে এলো তখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো। মা রাতেই কাপড়চোপড় গয়ানা ঘাটি গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। ভোরেই আমরা রওয়ানা দেবো। বাবা চুপ করে বসে কি যেন ভাবছিলেন।গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে রাত চলে গেলো। ভোরে মা আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, তাড়াতাড়ি উঠে পর। আমিও তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম। বিছানার উপর বাবা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন আর চোখগুলো লাল হয়ে আছে। আমি উপলব্ধি করলাম গতকাল রাত বাবা ঘুমান নি। বাবাকে ডেকে বললেন, কই তৈরী হয়ে নাও। বাবা চুপ করে রইলেন। কিছুক্ষণ পর বাবা বললেন, হ্যাঁ যাবো তবে দেশ ছেড়ে নয়; দেশের মানুষকে বাঁচাতে যুদ্ধে যাবো। মা বিস্ময়ে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকলেন আর আমি বাবার চোখে ক্রুদ্ধ আভাস দেখতে পেলাম। বাবা বললেন, ডাক এসেছে শেখ মুজিবুর রহমানের- যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে, শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। আমাকে যেতে দাও, দেশের লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত মানুষের জন্য যেতে দাও, হাজার মায়ের সন্তানের জন্য যেতে দাও, মা ও মাটির জন্য যেতে দাও। এরমধ্যেই কাকা উনার কয়েকজন বন্ধু নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসলেন। বাবাকে বললেন, কি তৈরী হয়েছো?বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আর বললেন, হয়তো ফিরে না-ও আসতে পারি, তোর মায়ের দিকে খেয়াল রাখিস। মা'য়ের অশ্রুসিক্ত চোখ দেখে আমিও অশ্রুসিক্ত হয়ে গেলাম আর বাবার বিদায়বেলায় পিছন থেকে তাকিয়ে রইলাম। বাবার সাথে সেটাই ছিলো আমার শেষ দেখা।

পুনর্পাঠ
আবুল হাসান
জন্ম মৃত্যু জীবনযাপন

মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবেনা,

আমি তাই নিরপেক্ষ মানুষের কাছে, কবিদের সুধী সমাবেশে
আমার মৃত্যুর আগে বোলে যেতে চাই,
সুধীবৃন্দ ক্ষান্ত হোন, গোলাপ ফুলের মতো শান্ত হোন
কী লাভ যুদ্ধ কোরে? শত্রুতায় কী লাভ বলুন?
আধিপত্যে এত লোভ? পত্রিকা তো কেবলি আপনাদের
ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংস আর বিনাশের সংবাদে ভরপুর...

মানুষ চাঁদে গেল, আমি ভালোবাসা পেলুম
পৃথিবীতে তবু হানাহানি থামলোনা!

পৃথিবীতে তবু আমার মতোন কেউ রাত জেগে
নুলো ভিখিরীর গান, দারিদ্রের এত অভিমান দেখলোনা!

আমাদের জীবনের অর্ধেক সময় তো আমরা
সঙ্গমে আর সন্তান উৎপাদনে শেষ কোরে দিলাম,
সুধীবৃন্দ, তবু জীবনে কয়বার বলুন তো
আমরা আমাদের কাছে বোলতে পেরেছি,

ভালো আছি, খুব ভালো আছি?

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক