Sunday, May 17, 2020

শিল্প সাহিত্য ০৬

রবিবার ৬ই বৈশাখ ১৪২৭, ১৯ই এপ্রিল ২০২০



সৌরভ বর্ধন
সমুদ্র বদল

দুদিকে সমুদ্র নিয়ে হাঁটছি, যখনতখন দখল হতে পারি।
পালানোর পথ বহু নীল দূরে---- গ্যাসীয় নাভিকুণ্ডে!

একটি শিশির বিন্দু বরাবর হাঁটতে যাদের ভালো লাগে
তাদের সন্মানে আমি জুতোর ফিতে খোলাই রাখি,
নুড়িটা কুড়িয়ে নেবার ঠিক পরমুহূর্তে যে ঢেউ আসে
তাকে অবেলা বলা যায়---- ধীরেসুস্থে এভাবে সময়ও

ধরাবাঁধা ছক ক্লকওয়াইস ঘুরিয়ে নেওয়া যায় সেভাবেই
প্রতিদিন একেকটা গাছের বৃক্ষচ্ছেদন ছোটবেলাদের
চোখের খোঁপায় গুঁজে নেয় উত্তমাশা অন্তরীপের ভোর

আবদার কীভাবে মাথায় রাখা যায় জানি না, তবুও
রাখতে বলি------- ছেঁড়া সাইটোপ্লাজম ছিঁড়তে বলি
------- কঙ্কালগ্রন্থি ফেরত উড়ন্ত কার্বন!

সুষুন্মাকান্ড বরাবর উঠে আসা অ্যান্টাসিড
লঘু মস্তিষ্কে ভর করে, ভারসাম্য বদলে যায় সারাদেহে।

মীর সাহাবুদ্দীন
নিরাপদে থাকুন

কাউকে বলিনি ভালো থাকেন। কেননা আমি জানিনা তার ভীতরে ক্ষুদারা পিড়ায় কিনা। তার পরিবার না খেয়ে আছে কিনা। অনেককেই চিনি দিন আনা দিন খাওয়ার মানুষ। তারা হাত পাততেও জানেনা। আমিও স্বল্প আয়ের একজন। কিছু জমানো টাকা ছিল আগামি দিন ভালো আসবে ভেবে পাশের পরিবারকে দান করেছি। মানুষের তাতে কি হয়েছে এক দিন দুইদিন চলবে তারপর....
তবুও সবাইকে বলি নিরাপদে থাকুন, নিরাপদে থাকুন দূরত্ব বজায় রাখুন।

বাঁধন অধিকারী
বামী গামী

কিছু কিছু বাল ছিঁড়া মাতুব্বর... ধরেছে সমাজের বৈঠা। তাদের কাছেই যাবে গুদমারানীরা... গুদটা তাদের সামনেই দেয়... যারা গুদের  লোমও ছাড়ে না। হাল ধরবে ধরবে... সম্মেলনে মিথ্যে আকুতি:- কিছু মনে করবেন না? প্রয়োজনীয় কাগজগুলো ফাইলে রেখেই চলে এসেছি। ফাইল আদৌ কি দেখেছেন আপনারা? ফাইল সারাজীবনই পড়ে থাকবে কোন এক পরিত্যক্ত স্থানে... যেখানে বসবাস করে হাজারো কীটেরা। প্রতিশ্রæতি না সবই বাহানা! আপনারা বুঝেন কিংবা বুঝেও বুঝেন না! রহস্য রহস্য খেলা যেখানে হামাগুড়ি দেয়, আপনারাই সেখানে লাগান শিকলসহ তালা। সামজের নষ্টামীগুলো মাঝে মাঝে কাঁদায়, আবার মাঝে মাঝে হাসায়ও খুব... প্রাণ ভরে হাসলেও শেষ হয় না হাসি... অধৈর্য্য হয়ে বন্ধ করি বিদঘুটে হাসি। ফিরে চলি দুঃখ প্রবাহ স্রোতে। যে স্রোত মিশে গেছে বামীদের সাথে।

অনন্যা গোস্বামী
তোমার-আমার চেনা পৃথিবী

এইসব দিনরাত্রি একদিন শেষ হবে।
এইসব স্মৃতিকথা, সুখকাতুরে, নিদ্রামগ্ন দিনযাপনের ইতিবৃত্ত একদিন অতীত হবে।
এইসব জমাটবাঁধা ব্যথাতুর, আড়মোরা ভাঙা সকাল দুপুর গড়িয়ে গড়িয়ে প্রবাহিত হবে আমাদের ইতিহাসের নদীতে।
আর এই যে যারা এই সময়ের ভাঁজে ভাঁজে লিখে রাখছে আমাদের কল্পিত সুখের মোহগাথা,
একদিন তারাই নতজানু হয়ে প্রার্থনা করবে নিজেদের স্বপ্নময় কাঙ্খিত দিনযাপনের স্বর্গ।
একদিন এই ঘর ঘর আবেশের অবকাশ ছিন্ন হবে।
পড়ে রইবে পেছনের দিনপঞ্জির পাতা।
একদিন এই কল্পলোকের বসবাসপরিক্রমা শেষ হবে।
ফুরিয়ে যাবে সব হতাশ্বাসের হুতাস।
আর সেদিন তোমার-আমার কল্পিত সংসারের লাল-নীল দেয়ালগুলো গড়বে আড়াল।
দুর্গ তুলে দেবে মাঝখানে জীবননদের সুদীর্ঘ সব স্রোতের।
একদিন, যেদিন এইসব দিনযাপনের ইতিবৃত্ত হবে রচিত,
সেদিন আমরা কেবল পেছনে ফিরে চাইব।
মিষ্টি অতীতের দীর্ঘশ্বাসে ভিজবে আমাদের গাল, ঠোঁট, কণ্ঠ।
একদিন এইসব রাত্রিদিন শেষ হয়ে যাবে।
আমরা ছুটব আবার,
ফুটব ক্যাকটাসের ফুলের মতো।
আমাদের হাতের-হাতের, দৃষ্টির, পরশের বাঁধন যাবে ছুটে।
আমরা পরিশ্রম করব, ক্লান্ত হব, দ্রæ হবে নিঃশ্বাসের গতি আমাদের।
বুকের খাঁচার ভেতর ডানা ঝাপটাবে আত্মমগ্নতার পাখি।
একদিন এই ঘরকুনো ঘরকন্যার গান থেমে যাবে, স্তব্ধ হবে ঘুম ভেঙে তোমার মুখ দেখা সময়ের গুনগুন সুর।
পাখিরাও ডাকবে এমনি করেই, সূর্যও উঠবে এমনি ঝলমল করে, দিনগুলি হবে রঙিন আবার হাজারো আঙুলের স্পর্শে।
সেদিন হয়তো পৃথিবী বদলে যাবে,
কিংবা হয়তো বদলাবে না।
কিংবা হয়তো পৃথিবী এমন, এখন যেমন, গুমড়ে কাঁদবে বোবা, বধির, অবোধ শাবকের মতো।
হয়তো কাঁদবে তেমনই করে যেমন করে তুমি-আমি উপুড় হয়ে কান্না লুকাই বাহুর পর্দা টেনে।
একদিন এসব রোজকার ছল ফুরিয়ে যাবে।
পৃথিবী আর আগের মতো থাকবে, হয়তো থাকবে না।
আমরা কেবল বেঁচে থাকব।
বেঁচে থাকার চেষ্টা করব।
কোনোমতে টিকে থাকব, লড়াই চলবে আগেরই মতো।
একদিন আমরা শুঁয়োপোকার গুঁটি ভেঙে মেলব ডানা।
প্রজাপতির জীবন পাব দুটি দিনের, মুহূর্তে তা ফুরিয়ে যাবে দৃষ্টিভ্রমে।
একদিন সব তেমনই হবে যেমন ছিল বহু আগে।
তুমি-আমি চিনব না আর কাউকে বোধ হয়,
পথ কাটিয়ে চলে যাব, কাকতালভুলে দেখব নাহয়।
একদিন এসব গল্প হবে, স্বল্প রবে বলবে কথা,
বাজবে তারে সুরের মতো।
একদিন সুর হারিয়ে যাবে, বদলে যাবে সময়মুখের বলিরেখা
সবকিছু ঠিক বদলে যাবে, নয়তো হয়তো এমনই রবে।
তোমার-আমার চেনা পৃথিবী ভেঙে পড়বে,
তোমার-আমার চেনা পৃথিবী মনে পড়বে।

গল্প
প্রেমিক
রিয়ানো

লোকটাকে দেখা যেত রোজ একই জায়গায় একই ভঙ্গিতে বসে থাকতে।

কহর থেকে একটু দূরে লেক সমেত যেই ছোট্ট পার্কটা আছে, সেখানে। পার্কে রোজ বিকেলবেলা বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসতো হাঁটার ছুতায়। তারা লেকের পাশে লোকটাকে আবিষ্কার করতো নিশ্চল, স্থির অবস্থায়। যেন বা সে গভীরভাবে ধ্যানমগ্ন।

কেউ কেউ তাকে পাগল বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও সফল হতো না। কারণ, তার মধ্যে এমন কিছুই ছিল না,যার মাধ্যমে তাকে পাগল বলে চালিয়ে দেয়া যায়! তখন অতি কৌতুহলীরা তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ আখ্যায়িত করতো এবং তাকে এড়িয়ে যেত। এভাবেই পার্কে আগত লোকেরা তার প্রতি অভ্যস্ত হয়ে যায়।

লোকটা জলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। জলের স্থিরতা যেমন তার সমস্ত গতিময়তা স্থির করে রাখতো, তেমনি ঢেউ তার ভেতরে তুলতো কম্পন।

আর কেউ তাকে পাত্তা না দিলেও পার্কের নিরাপত্তাকর্মীর কাছে সে একটা কৌতুহলের খোরাক হয়ে ওঠে। সে রোজই ভাবতো, লোকটার সাথে কথা বলবে। তার কোন সমস্যা আছে কিনা, তা জানার চেষ্টা করবে। কিন্তু লোকটা যেমন নিরাসক্ত মন নিয়ে পার্কে ঢুকতো, তেমনি নিরাসক্ত মন নিয়েই পার্ক থেকে বেরিয়ে যেত। ভাবখানা এমন, যেন দুনিয়ার কোন কিছুতেই তার কোন আগ্রহ নেই, একমাত্র লেকের জল ছাড়া। তাই নিরাপত্তাকর্মীর কৌতুহল ভেতরেই চাপা পড়তে থাকে।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই  পার্কে নিয়মিত যারা হাঁটতে আসতো,তাদের মধ্যে এক মধ্যবয়স্ক সুন্দরী ভদ্রমহিলা লোকটাকে নিয়ে মেতে ওঠে। তিনি এবং তার সঙ্গীরা হাঁটতে হাঁটতে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়তেন, তখন লেকের অপর পাশটায় বিশ্রামের ছুতায় বসে লেকের জলে পা ডুবিয়ে ঢেউয়ের সৃষ্টি করতেন। যেন লোকটারধ্যানে ব্যাঘাত ঘটে। যদিও এতে কাজ হতো না।কিন্তু ভদ্রমহিলা রোজই এমনটা করতে লাগলেন।

শেষে একদিন বিরক্ত হয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে লোকটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। নিরাপত্তাকর্মী কোন সদুত্তর দিতে পারলো না। তাই ভদ্রমহিলা হুংকার দিয়ে গেলেন, আগামীকালের মধ্যে লোকটার ব্যাপারেবিশ্বাসযোগ্য তথ্য না দিতে পারলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি যাবে। নিরাপত্তাকর্মী তখন ভয় পেয়ে  গেল, কারণ সে ভদ্রমহিলাকে চিনতো।

পরদিন রহস্যময় লোকটা পার্কে প্রবেশ করার সময় নিরাপত্তাকর্মী তাকে ডেকে নিলো এবং জিজ্ঞেস করলো রোজ পার্কে এসে সে লেকের ধারে ওভাবে বসে থাকে কেন?

তখন রহস্যময় লোকটা মৃদু হেসে উত্তর দিলো, পার্কে যে মহিলাটি রোজ সঙ্গীসাথী নিয়ে হাঁটতে আসে, তিনি তাকে দেখার জন্যই আসেন। কিন্তু মহিলা স্থানীয় এক নেতার সহধর্মিণী কিনা, তাই সরাসরি তার দিকে তাকাতে সাহস হয় না তার। তাই তিনি লেকের পাশে বসে থাকেন যেন লেকের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় বা লেকের অপর পাশে বসে থাকার সময় তার প্রতিবিম্ব দেখতে পারেন!

মূল: মাও সে তুঙ 
ভাষান্তরকায়েস সৈয়দ
           
নববর্ষের দিন
(জু মেঙ লিঙ এর সুরের প্রতি)

নিঙ্গুয়া, চিংলিউ, কুয়েহুয়া
কি সরু পথ, গভীর অরণ্য পিচ্ছিল শ্যাওলা
আজ আমরা কোথায় আবদ্ধ?
সোজা উয়ুই পর্বতের পাদদেশে
লাল পতাকা দোল খায় সমুজ্জ্বল গৌরবে


পুনর্পাঠ
রফিক আজাদ
ভাত দে হারামজাদা

ভীষণ ক্ষুধার্ত আছি : উদরে, শরীর বৃত্ত ব্যেপে
অনুভ হতে থাকে-প্রতিপলে- সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
অনাবৃষ্টি- যেমন চৈত্রের শষ্যক্ষেত্রে- জ্বেলে দ্যায়
প্রভুত দাহন- তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ
দুবেলা দুমুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোন দাবী
অনেকে অনেক কিছু চেয়ে নিচ্ছে, সকলেই চায়ঃ
বাাড়, গাড়ি, টাকা কড়ি- কারো বা খ্যাতির লোভ আছে
আমার সামান্য দাবী পুড়ে যাচ্ছে পেটের প্রান্তর-
ভাত চাই- এই চাওয়া সরাসরি- ঠান্ডা বা গরম
সরু বা দারুণ মোটা রেশনের লাল চাল লে
কোনো ক্ষতি নেই- মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাইঃ
দুবেলা দুমুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য-সব দাবী;
অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা
চাইনিতোঃ নাভি নিম্নে পরা শাড়ি, শাড়ির মালিক;
যে চায় সে নিয়ে যাক- যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও
জেনে রাখো : আমার ওসবের কোনো প্রয়োজন নেই।

যদি না মেটাতে পারো আমার সামান্য এই দাবী
তোমার সমস্ত রাজ্যে দক্ষযজ্ঞ কাÐ টে যাবে
ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, আইন কানুন-
সম্মুখে যা কিছু পাবো খেয়ে যাবো অবলীলাক্রমেঃ
থাকবে না কিছু বাকি- চলে যাবে হা ভাতের গ্রাসে।
যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে তোমাকে ধরো পেয়ে যাই-
রাক্ষুসে ক্ষুধার কাছে উপাদেয় উপাচার হবে।
সর্বপরিবেশগ্রাসী লে সামান্য ভাতের ক্ষুধা
ভয়াাবহ পরিণতি নিয়ে আসে নিমন্ত্রণ করে।
দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে
অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদী-নালা
গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী মন্ত্রীর গাড়ী
আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা,
তা না হলে মানচিত্র খাবোঃ

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক