শুক্রবার
২রা শ্রাবণ ১৪২৭, ১৭ই জুলাই ২০২০
কবিতা
আশিক আকবরসংবাদ
ওরা বাহাত্তর জন
সনও উনিশ শ’ বাহাত্তর
ওরা দখল করলো খাদ্যগুদাম
স্থান, পূর্ববাংলার রাজশাহীর তানোর
খুনী রক্ষী বাহিনী টানলো রাইফেলের ট্রিগার
কমরেড এরাদ আলী নিহত
নিহত বাহাত্তর জন
শহীদদের গণ কবরে এখনো জ্বলছে লাল নক্ষত্রপুঞ্জ
এখন দখল নেই
দিবস পালন আছে খুব
নক্ষত্রপুঞ্জে যেতে দিবস বানানোর দিন আসবেই
হাজার হাজার বৎসরের হাঁটা বিশ্রাম পাবেই।
হরেকৃষ্ণ দে
খিল
নিত্য সকাল ডাকছে গতর নিত্য বাঁচার ছন্দে
স্বপ্নগুলো ভাতের জলে ফুটছে
দিনকে দিন স্বপ্নগুলো কুটছে
ঘামের জলে খাইখরচে কাটছে ভালো মন্দে।
গল্প হয়ে লাখ টাকায় স্বপ্ন পায়ে ছিঁড়ছে কাঁথা
লালস্বর্ণের মোটা ভাতে ঘুরছে
ভাদর দুপুর ঝিমধরা মন ধুঁকছে
বুকের ঠ্যালাই পাঁজরগুলো কাটছে মাথা।
জীবন খাতার মলাট ছেঁড়া গামছা ঘেরা কোমর
কব্জিগুলো টাল খেয়ে যায় মাটিতে
গাইতি শাবল যত্নে থাকে জামবাটিতে
দরজা ভাঙে পেটের বানে খিল আঁটে ভদ্র শহর।
মৃন্ময় মাজী
যোগ চিহ্ন
তাদের মাঝে যোগ চিহ্ন
এঁকে দিয়েছিল একটা পার্ক।
সাক্ষী ছিল ঠোঙা আর ঝালমুড়ির
শেষ ঝালের চিঠি সকল...
টিয়া পাখির ঠোঁট রাঙিয়ে ছিল যোগ,
যত্ন রেখেছিল অর্জুন গাছের কোটরে।
তারপর...
কাঠুরে গাছ কেটে কাঠ নিয়ে গেছে
টিয়া পাখি উড়ে গেছে...
অসময়ে ঝরে গেছে
দুটি গোলাপের ফুল...
শামিমা সুমি
প্রত্যাশার কবর
অভিমানের তীর আর তোমার দিকে হানবো না
অধিকার যেখানে ক্ষীণ প্রত্যাশার কবর সেখানেই,
দুরালাপনীতে তোমার কণ্ঠ ভাসলে ভাবি এবার মুখ হাসবে
কিন্তু আমার মন খারাপে তোমার মন কাঁদে না কখনোই।
তুমি কারণ জানতে চাওনা কখনো ব্যয় করতে চাও না বাক্যাংশ
আমার চোখে ব্যথার নদী হলে তুমি ভাসাবে তাতে
তোমার আহ্লাদে আমার স্বপ্নভাঙা কাগজের নৌকো
হাঁটুজলে ডুবে গেছে আমার এতদিনের স্ত‚পাকৃত সাধ।
বড্ড অবেলায় বড় অসময়ে মন নিয়ে খেলেছো আমার
পাঁজর ভাঙা বেদনায় কতোটা তা শুধু জানে দূরের পাহাড়,
রাতের আঁধার বলেছে আমায় চুপিচুপি কাছে ডেকে
শোন মেয়ে জগত ভালোবাসে না কেউ কেউ খেলে যায়।
ঈশ্বরকে বলেছি জমা রাখো অশ্রæসকল তোমার অঞ্জলিতে
প্রকৃতিকে বলেছি তুলে রাখো বুকে আমার সকল দহন,
ভালোবেসে যারা নিঃস্ব হয় তাদের হারাবার ভয় থাকেনা
মৃত্যুর পর এপিটাফে লিখে রেখে যায় হন্তারকের নাম।
সজল রানভী
“শোক সংগীত”
চোদাবোকা রাষ্ট্র নিজের পোঁদে বাঁড়া ঢুকিয়ে উন্নয়নের গল্প শোনায়।
আমরা শুনি মৃত্যুর আহাজারি। আমরা শুনি কাফন ছাড়া দাফন। আমরা শুনি ডাল ভাতের নিম্নবিত্ত জীবন। আমরা শুনি পুঁজিপতিদের মেদওয়ালা স্ত্রী’র হোগায় তেলের খনি। আমরা শুনি ভাঁড় মন্ত্রীদের আয়ুতে হেব্বি কারেন্ট। আমরা শুনি দ্যাশে মাল নেই। আমরা শুনি সিগারেটের আকাশচুম্বী দাম। আমরা শুনি করোনায় তিনের নামতা।
নিজের পোঁদে বাঁড়া ঢুকিয়ে বোকাচোদা রাষ্ট্র চোদাবোকা রাষ্ট্র আমাদেরকে উন্নয়নের গল্প শোনায়। আমরা শুনি আমাদের নিজ নিজ অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার শোক সংগীত।।
রুমকি আনোয়ার
সময়
প্রথম সিকোয়েন্স- ক্ষুধার্তের কবিতা লিখে একটি রক্তাক্ত হাত
যে হাত একদিন কামড়ে ধরেছিল নিজের হাত।
দ্বিতীয় সিকোয়েন্স- হাতল দেয়া চেয়ারে চিন্তাক্লিষ্ট নেতা
ধ্যানী শালিকের মত।
তৃতীয় সিকোয়েন্স- নো রিলিফ ফর বাংলাদেশ
দে ডু বিজনেস উইথ কিউবা
চতুর্থ সিকোয়েন্স- বাসন্তীর পড়নে মাছ ধরার জাল
সাংবাদিকের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠে
পঞ্চম সিকোয়েন্স- রফিক আজাদ ‘ভাত দে হারামজাদা
নয়ত মানচিত্র খাবো।’
ষষ্ঠ সিকোয়েন্স- খুসখুসে কাশি নিয়ে কয়লা দিয়ে
মন্বন্তরের চিত্র এঁকে যাচ্ছেন জয়নুল আবেদিন।
সপ্তম সিকোয়েন্স- চাল, কেরোসিন, লবনের পারমিট
তাহের উদ্দিন ঠাকুর, খন্দকার মুশতাক।
অষ্টম সিকোয়েন্স- গনেশ উল্টে হরি লুটে
সব চামচার দল।
নবম সিকোয়েন্স- পড়ে থাকে নেতার লাশ
দ্যা প্যাট্রিয়ট লেখেনি কেউ তখন।
দশম সিকোয়েন্স- আজও কবিতা আঁকে একটি রক্তাক্ত হাত
মৃত্যু আসে কি বিষণ্ন সুন্দরে।
তন্ময় বিশ্বাস
আলোর খোঁজে
মহামারী, অন্ধকার, হতাশার মাটি খোঁড়ার পর -
এক অমোঘ আলো বিড়ালের মত পাশে এসে বসে-
চাটতে থাকে পচন ধরা হাত-পা, ক্ষয়ে যাওয়া ঘিলু!
ভয়ে কুঁচকে যাওয়া চামড়ায়,বাড়ি মেরে মেরে দেখে-
অস্তিত্ব!
অমাবস্যার বিমর্ষ চাঁদের মত মনে হয় তখন!
তবু আলোর এক অদ্ভুত শক্তি আছে, অন্ধকার ছেঁকে ছেঁকে-
আমাদের মনের মধ্যে পুঁতে দেয় জীবনের-শুক্রাণু!
চলমান বৃক্ষের উপর লেখে অস্তিত্বের গান!
আলোর উপর বড্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে এখন-
বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে সূর্যকে-
যে আলো একদিন লাটাগুড়ি থেকে মূর্তি পর্যন্ত হেঁটেছিল ।
ধারাবাহিক গল্প
অন্ধকারাচ্ছন্নপ্রণব কুমার চক্রবর্তী
তিন
আগ্রার এই কেল্লাটা মুঘল ইতিহাসের একটা খন্ড চিত্র মাত্র। এটা একটা নাম। একটা ইতিহাস।
এই কেল্লাটার নাম শুনলেই, চোখের সামনে ভেসে ওঠে অসংখ্য প্রেমের উপাখ্যান। সেই সব উপাখ্যানের কোনটা প্রেমের কাহিনীতে ভরপুর, আবার কোনটা প্রেমের দ্ব›দ্ব এবং সংঘাতের ঘটনায় সম্পৃক্ত। পাশ দিয়ে বয়ে চলা অবিরত স্রোতধারার নদী যমুনা আজও রয়েছে। সিন্ধু নদীর তীর ঘেঁষে ভারতের মাটিতে যে নতুন ইন্দো- পারসিক ইসলামিক শিল্প, সংস্কৃতি এবং সভ্যতার সূচনা ঘটেছিল, যমুনাতে তার মিলন, ব্যাক্তি এবং সমাপ্তি ঘটেছে।
ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে পানিপথের প্রথম যুদ্ধের পর হিন্দুস্থানের বুকে যে মুঘল রাজবংশের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার একটা দীর্ঘ লম্বা ইতিহাস আছে। সেই দীর্ঘ ইতিহাসের কালক্রমে মুঘল সম্রাট এবং বাদশারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যতসব গড়, কেল্লা, রাজপ্রাসাদ, হাভেলি এবং মঞ্জিল আর মহল নির্মাণ করে গেছেন, ইন্দো-পারসিক শিল্প এবং কারুকার্যের নিদর্শন রেখে গেছেন, এটা কেল্লাটা নিঃসন্দেহে তারই একটা অন্যতম সংস্করণ মাত্র। বাবর এর আমল থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের সময় পর্যন্ত, প্রায় তিন শ’ বছরের প্রাচীন সেই ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই কেল্লার নাম- আগ্রা ফোর্ট। এই কেল্লার দেয়ালে, প্রাসাদে এবং মহলের গায় কান পাতলে এখনো নাকি শোনা যায়- সেই অতীতের সব ইতিহাস।
বিশাল ফটকটা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। ভেতরে ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে রাজপ্রাসাদ, হারেমের বেগম থেকে শুরু করে রক্ষিতা, বাদী, সেবাদাসী, নর্তকী, গাইয়ে, ইত্যাদি এর থাকার বিভিন্ন মহল। এছাড়াও রয়েছে রংমহল, নাচঘর, জলসাঘর, বাদশাহী মজলিস কক্ষ- দেওয়ান-ই-আম এবং দেওয়ান-ই-খাস।
ফটকের দুপাশে প্রাচীরের গা ঘেঁষে কেল্লার রক্ষী আর প্রহরীদের বাসস্থান এবং অন্দরমহল এর মত- বাদশাহী বাহির মহল। এই বাহির মহলে বসেই বাদশাহী প্রশাসনের মাথারা- শাহজাদারা এবং আমির-ওমরাহ, মন্ত্রিপরিষদ, সবাই তাদের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতেন। দেশ-বিদেশের রাজা মহারাজা, সুলতান এবং নবাবরা সম্রাটের জন্য নানা ধরনের নাজরানা এবং ভেট পাঠাতেন। ওইসব নজরানা এবং উপহারের ভিতরে থাকতো দামি দামি মণি-মাণিক্য, হীরা-জহরত, স্বর্ণমুদ্রা এছাড়াও সম্রাটের হারেমের জন্য সুন্দরী সব সঙ্গীত এবং নৃত্য পারদর্শী যুবতী মহিলা। কখনো কখনো সম্রাটের শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার জন্য অল্প বয়সী সুন্দরী রমনীকে সেবাদাসী হিসেবে পাঠানো হতো। (চলবে...)
No comments:
Post a Comment