সোমবার ২রা ভাদ্র ১৪২৭, ১৭ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত
মেঘলা মন
স্থির জলে দাঁড়িয়ে আছে
মেঘলা মন
জলের গায়ে গভীর কালো ছায়া তার
অ্যাতো দামী গলায় ঝোলে চন্দ্রহার
বৃক্ষ কাঁপায় মৃদু মৃদু জলের গা
সান বাঁধানো পুকুর ঘাট
ফুঁপিয়ে উঠছে
বাতাস বইছে
ঢেউ তুলছে ...
নিঃশব্দ ...
ও মেয়ে বৃক্ষ পাতায়Ñ
কিসের গল্প
ডুবসাঁতারু মাছরাঙা
কি জানে তার
কিসের হুতাশ কিসের অ্যাতো
শুন্যতা
চন্দ্রহার ডুবসাঁতার
সান বাঁধানো পুকুর ঘাট
বড্ড একা...
জাহাঙ্গীর জয়েস
কাটা মাথা
মাথা কাটা গেলে এখন আর সমস্যা না
কাটা মাথা নিয়ে আমরা দিব্যি থাকি
গল্প করি
কবিতা লেখি
গান গাই
কাটা মাথা নিয়ে উপদেশ দিই
সচিব হই
এমপি
মন্ত্রী
মাথা কাটা গেলে এখন আর সমস্যা না
বরং মাথা কাটতে পারলেই আরো উন্নতি
কাটা মাথা এখন খুবই মূল্যবান!
সৌম্যজিৎ আচার্য
কবিকে ভালবাসার পর
গোটা এলাকা চিৎকার করে উঠছে...
যে মার খায় সে জানে না
আবার উঠে দাঁড়ায় যে, সেই তো কবি
প্রতিটা রক্ত মুছে ফেলাই যে কবিতা...
একজন কবিকে ভালবাসার পর তুমি দেখবে
গাছে গাছে ফুটে আছে বিউগল
অনাথ আশ্রমে পালিত হচ্ছে ক্রিসমাস
নিউজ চ্যানেলে হঠাৎ আসছে বর্ষা-
অবরোধে যারা ছিল খুব উৎসুক,
তাদেরও কেউ পাখির বাসায় ডাকছে...
সত্যি বলছি, তুমি আর ভালবাসতে পারবে না।
অন্য কাউকে ভালবাসার ইচ্ছেটা মরে যাবে...
তোমার খোলা চুল কবি জোৎস্না দিয়ে বেঁধে দেবে
তোমার ঠোঁটে বুলিয়ে দেবে রাত
যেসব দুঃখ তোমার আঁচিল হয়ে আছে
তাদের খুলে ফেলে দেবে দূর দিঘির জলে...
এর আগে একুশজন প্রেমিক ছিল তোমার
হয়তো কবি বাইশতম প্রেম কিন্তু
তেইশের প্রেমটা তোমার আর কোনোদিন হবে না
একজন কবিকে ভালবাসার পর
আর কাউকে ভালবাসার ইচ্ছেটা যাবে চলে...
একজন কবি, বন্যার স্রোতে যার কবিতা ভেসে যাচ্ছে
একজন কবি, জ্বলন্ত বাসে পুড়ে যাচ্ছে যার কবিতা
তাড়া খেয়ে, লাথি খেয়ে প্রাণপণে ছুটছে, ছুটছে যার কবিতা...
তেমন কবিকে যদি ভালবাসতে পারো তবে
অন্য কাউকে আর ভালবাসতে পারবে না কখনো...
একজন কবিকে ভালবাসার পর
তুমি আর ভালবাসতে পারবে না।
অন্য কাউকে ভালবাসার ইচ্ছেই হবে না
হয়তো কবি’র বারো নম্বর প্রেম
এর আগে এগারো জন প্রেমিক ছিল তোমার
কিন্তু তেরো-তম প্রেমটা তোমার কোনোদিন হবে না আর
আর কাউকে ভালবাসার ইচ্ছেটা যাবে চলে
বৃষ্টির দিনে শহরের আনাচে কানাচে যত ভিজে যাওয়া লোক,
তার মধ্যে তুমি খুঁজবে কবিকেই
গোটা গ্রীষ্মে লেবেল ক্রশিংয়ের ওপারে
কবি দাঁড়িয়ে থাকবে তোমারই জন্য
শীতে যে নরম রোদ নামে মাটিতে
একদিন আবিষ্কার করবে, তা আসলে কবিরই সোনালি উসখুস...
একজন কবিকে ভালবাসার পর
তুমি দেখবে রাস্তার পাশে শব্দ পড়ে আছে
শব্দের পাশে বুদবুদ, বুদবুদে শুয়ে আছে এক শিশু
যার আকাশ জোড়া ঘর...
তোমার দ্বিতীয় প্রেমিক হয়তো তোমাকে গয়না দিয়েছিল
চতুর্থ প্রেমিক হয়তো বা সাগর পাড়ের ঢেউ
কিন্তু কবি! সেতো তোমার জন্য একটা রোগা বই নিয়ে যাবে
বইয়ের ভেতর একটা আধখাওয়া জীবন
যে জীবনের পাতায় পাতায় সন্ধে লেগে আছে
তুমি সন্ধের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে দেখবে
সব আলো ভরা ল্যাম্পপোস্ট অনন্তে চলে যাচ্ছে
একজন কবিকে ভালবাসার পর...
যেখানে দাঙ্গা চলছে,
গলি থেকে যেখানে ছুটে আসছে লোক-
একজন কবিকে ভালবাসার পর তুমি দেখবে,
সেখানেও দাঁড়িয়ে আছে কবি
মার খাবে, পড়ে যাবে, রক্ত লেগে যাচ্ছে সারা জামায়
ফারিহা ইয়াসমিন
আমি সেই নারী
খোলা জানালায় শিশির স্নাত সবুজ প্রান্তরের দৃশ্যপটে
হঠাৎ এক আবিভর্‚ত পুরুষের হৃদয়
সুবাসিত ঠোঁট, মায়া ভরা আঁখি, শার্টের বোতাম খোলা বুক
সানগ্লাসের ফ্রেমের নীলে আবছা হাসিমুখ।
হৃদয়ের দ্বার ঠেলে সমগ্র অস্তিত্বে নির্মাণ করে একটি বসত,
যার সজীবতায় সবুজ বীথিকা ফিরে পায় প্রাণ।
অবারিত প্রেমের রক্তিম আভা স্বপ্নছোঁয়া উষ্ণ ঠোঁটে;
অনাবিল শুভ্রতায় বৃক্ষরাজিÑ মল্লিকা, মালতী, শিউলি ফোটে।
নীল পরাগ রিক্ত বুকে দিপ্ত প্রেমের অঙ্গিকারে
যে ফুটিয়ে তোলে স্বপ্নীল আলপনা
যার সান্নিধ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা
সেই তো তুমি, যাকে আপন করেছি নিগূঢ় কারুকাজে
শত সহস্র শিখল ছিড়ে অনাবৃত শাড়ির ভাঁজে।
অবশ্য, ভালোবাসার স্বীকৃতি দিয়ে
দুটি মেরুর সমস্ত দূরত্ব তুমিই করেছিলে দূর
জাগিয়ে প্রাণে প্রীতির ডোরে মহামিলনের সুর
সেই থেকে অর্ধাঙ্গী, তোমার প্রিয়তমা; তুমি- পথ চলার সাথী।
তোমার জন্য দু’পা মাড়িয়ে এসেছি যেন নাড়ি ছেঁড়া সেতু বন্ধন।
একটা মাত্র কথায় ছেড়ে দিয়েছি স্নেহে ভরা চির চেনা ভরসার হাত।
তুমি তো বলতে, আমি নাকি স্বর্গ হতে নেমে আসা কোন পরী।
স্বপ্নাবিষ্ট মেঘ বালিকা, তোমার কল্পিত অপ্সরী।
বসন্ত সমীরণে যখন আমার শাড়ির আঁচল উড়তো
বলতে আকাশে রং বেরঙের মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে,
অনুভব করতে ভালোবাসার সুমিষ্ট ঘ্রাণ আমার দীঘল চুলে
খুঁজে পেতে সুখের সন্ধান পেলব হাতের স্পর্শে
আমার আলিঙ্গন তোমার কাছে মনে হতো স্বর্গমাখা সুখ।
তবে কি সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছে তোমার পছন্দ-অপছন্দ।
আজকাল জিন্স টপ, মর্ডান ড্রেস, চোখ ধাধানো জমকালো পার্টি,
আর বব কাটা চুলে; আটকে গেছে তোমার তৃষ্ণিার্ত আবেগ।
স্বপ্নের ক্যানভাসে জমেছে তাই ধূসর কালো মেঘ।
রাত দুপুরে মুঠো ফোনে অভিসারে শুনতে পাই তোমার প্রেমালাপ।
উষ্ণ নোনাজলে বক্ষ ভিজে পরিত্যক্ত আজ সদ্য ফোঁটা ফুলের পরাগ
অথচ জানো, তোমার ছাঁচেই নিজেকে গড়াবো বলে
খুঁজে নিয়েছি জীবনের সরল সমীকরণ
তোমার সব ভালো লাগা, খারাপ লাগা, প্রিয়-পরিজনকে সঙ্গী করে
প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছি একটি সুখের নীড়
স্বপ্নের রং তুলিতে ঢেকে রেখেছি বিষাদময় কটাক্ষের তীর।
শুধু তোমার জন্যই, নিজেকে করতে চেয়েছি অনন্যা
নির্দ্বিধায় হতে চেয়েছি অশ্রু বিগলিত ঝর্ণা।
প্রতিদানে পেয়েছি- অপমান-অবহেলা, লাঞ্ছনা আর বঞ্চনা।
তবে হ্যাঁ, শুধু এতটুকুই মনে রেখো
শত যন্ত্রণার আঘাত সয়েও নিজেকে পোড়াতে পারি।
হয়তো কিছুই পারিনা, তবে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারি।।
ধারাবাহিক গল্প
সোনার বালা গায়েব রহস্য
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
দশ
মানিকতলা খালপাড়ে পৌঁছাতেই দেখে সে আমার বাড়ির সামনে বিরাট জটলা।
- কি ব্যাপার! রঞ্জন দত্ত গাড়ি থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করলেন - কি হয়েছে? এত ভিড় কেন?
পেছনে পোশাক পরা পুলিশের গাড়ি দেখে কেউ কোন উত্তরটা দিয়ে একটু একটু করে সবাই কিছুটা তফাত চলে গেল। দু’চার পায়ে গতি ওদের নজরে পড়লো রতিকান্ত আমার বাড়ির সদরে দাঁড়িয়েছে রযেছে। কেমন যেন উদভ্রান্ত দেখাচ্ছে। চোখ দুটো ছল ছল করছে।
রতিকান্ত এখানে! কেন এখানে এসেছে? তবে কি শ্যামা রতিকান্ত দু’জনে মিলে ...
- স্যার? শ্যামাকে বাঁচানো গেল না। পাড়ার লোকজন এসে দড়ি কেটে বডিটা নামিয়েছল বটে, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে। রতিকান্ত হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
- কেন? কি হয়েছিল শ্যামার?
তিনজনেই হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে দেখে ঘরের ছাদের হুক থেকে দড়িটা ঝুলছে। নিচে একটু তফাতে একটা ভাঙ্গা কাঠের চেয়ার উল্টে পড়ে আছে। টেবিলের উপরে সেই সোনার বালা তিনটে দিয়ে চেপে রাখা একটা সাদা কাগজ। মেঝেতে শোয়ানো শ্যামা ড্রাইভারের নিথর দেহ।
শালার বউ আর বাচ্চারা সব কান্নায় আছাড় পাছার খাচ্ছে ।
রঞ্জনবাবু এগিয়ে গিয়ে বালা তিনটের তলা থেকে সাদা কাগজটার টেনে নিয়ে পড়ে দেখলেন, ওতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে - দারুন অর্থাভাবে মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। চাবির গোছাটা ব্যাগ থেকে বের করতে গিয়ে সোনার বালাগুলো দেখে, আমি লোভ সামলাতে পারেনি। লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। পড়ে সারাক্ষণ একটা অনুশোচনায় জ্বলেছি। আমার এই কলঙ্কের বোঝা অন্য একটা ভদ্রলোককে চিরকাল বয়ে বেড়াতে হবে। রতিকান্তদাকে বলেছিলাম আপনাদের বলে - ব্যাপারটা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। ও রাজি হয়নি।
আমিও আর সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার এই কলঙ্কিত চোরাই বালার অর্থ দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাতে পারবো না বলেই বালাঘটা ফেরত দিয়ে গেলাম। পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন। ইতি - হতভাগ্য শ্যামা।
রঞ্জন বাবু যখন ওই চিঠি আর বালা তিনটে শেখর মিত্রের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন, সেই সময় এই হঠাৎ ওর মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখল বড় বাবু থানা থেকে ফোন করেছেন ।
- স্যার? মালা গুলো পাওয়া গেছে। কিন্তু, ...
উৎসাহিত হয়ে ব্যাপারটা জানাতে উদ্যত হতেই হঠাতই কেমন যেন ডি- মরোজ হয়ে পড়ল। অপরপ্রান্ত থেকে বড়বাবু জানাচ্ছেন যে কিছুক্ষণ আগেই খবর এসেছে - হাসপাতালে মাল বাবু মারা গিয়েছেন। স্ট্রোক হয়েছিল। সেরিব্রাল স্ট্রোক! (সমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment