বুধবার ৪ঠা ভাদ্র ১৪২৭, ১৯ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
কাজী শোয়েব শাবাব
ঘুড়ি সিরিজ ২
সুতো ছিঁড়ে গেছে।
গোত্তা খেয়ে নামছে নীল ঘুড়িটা।
খসে পড়া টুকরো আকাশ ধরতে
মাঠ ভেঙে দৌড়ে চলেছে ছেলেটা।
সজল রানভী
সমসাময়িক প্রেম
গোলাপ গোলাপ প্রেমটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। তুমি বরং একটা সিগ্রেট, একটা দেশলাই দিতে পারো। রুমালে সেলাই করা ডাকনাম কিংবা চিঠির ভাঁজে লিখে দেয়া একবিঘা চুমু ফ্রিজে তুলে রেখে তুমি বরং জ্যোৎস্না বিলাতে পারো হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে।
তুমি বরং আফিম নাভিতে প্রার্থনা করতে পারো গন্দমের লোভ লালসা।
ঐসব বাড়ির সামনে দিয়ে বেলা অবেলা হেঁটে যাওয়া, টিফিন পিরিয়ডে চোখাচোখি, অংকের খাতায় বাপ দাদার পৈতৃক ছন্দ বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। তুমি বরং মদের দোকানে একটা বিকেল গিলতে পারো গোগ্রাসে। একটা সন্ধ্যা গিলতে পারো কফি কাপে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বান্ধবীর বাসায় দেখা করা ব্যাকডেটেড। তুমি বরং আবাসিক হোটেলে লুফে নিতে পারো দেড়শ মিনিটের মেগাপিক্সেল প্রেম।।
অনার্য নাঈম
কমা
একটি ‘কমা’, তোমার প্রস্থানের জন্য যথেষ্ট নয়;
প্রস্থানের জন্য চাই দুঃখভারাক্রান্ত দাড়ি।
একটি ‘সেমিকোলন’ আমাকে আরোকিছু
বলার জন্য যথেষ্ট নয়; দিতে পারো
লাজুক অভিব্যক্তির আড়ালে লুকিয়ে রাখা
বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক।
আমি হ্যাঁ বললে, তুমি
সরল বাক্যের মতো নিঃশব্দে
প্রচলিত ভাবের দরজা দিয়ে
ঢুকে পড়বে তোমার নিজস্ব ঘরে।
দুটি বন্ধনীর মধ্যে ‘বাকিটা জীবন’।
অপার অরণ্য
শাড়ি সম্ভাব্য সৌজন্যতা এবং খুন
হঠাৎ হাওয়ায় দীর্ঘতম রোদ নামলে মার শাড়ির সাথে
বনশ্রী মিলিয়ে দেখা যায়
কোনটার রঙ থকথকে সুরমাÑ তো কোনটার নাম
কামরাঙা শোক। কোনটা যেন অশ্রæহীন দুর্ভিক্ষপীড়িত
গোলাপÑ কোনটা আবার বিদগ্ধ সুখ।
স্নানের পর যে শাড়িটা দিয়ে মা স্তন প্যাঁচায়
মাঝেমাঝে লক্ষ্য করি সিঁদুরমেঘে দুর্বোধ্য আঁকা
সপুষ্পক রেণু দিয়ে ঢেকে আছে পাতার কোলাজ
সবকটা ঋতুর যৌবন মার শাড়ির আঁচলে সুনিপুণ
নকশায় ঢেউ তুলে আনে
সেখানে চাষ হয় কোলাব্যাং আর মৌরিফুলের ঘ্রাণ
বিশ্রæত চাঁদ নামলে আয়নায় মা দাঁড়ায় নি কোনদিনÑ
কখনো কোন ভ্রমরজাত গান গাঁথা হয়নি চিকন চুলের
বেণীতে সে-কথাও জানি
তবু সযতেœ যে শাড়িটা আজও শরীর সাজায় তার নাম অলকানন্দা সংসার।
গায়ে জড়ালেই ঘরময় মুহুর্মুহু ধ্বনি বিষাদের নিসর্গ
শ্লোক হয়ে বাজে। যেন তৃণবৎ ঝর্ণাধারা পাহাড়তলি
নেমে যায় ক্ষতবিক্ষত সুরঙ্গের কোল।
চিত্রাহরিণ শাড়িটা আজ অব্দি মা বুকের সিন্ধুকে
তালাবন্ধ রেখেছেনÑ খোলা যায়নি তার রহস্যপাখি
ফুঁপিয়ে বলেনÑ দেখিস, আমি স্ট্রোক করে মরব।
মার পোষা শাড়িটার নাম দুঃখ। আহত জ্যোৎস্না ও
অমাবস্যার মাঝামাঝি রং। মার মনখারাপ হলে
আলনা ছেড়ে কোমরের কুঁচিতে ঝুলে ধূলোধূলো
একটা শাড়ি। পৃথিবীতে অমনি উড়ালপঙ্খি ডানায়
কোন পাখি আর উড়ে না
বনস্পতি অন্ধকার চিকচিক করে জ্বলে। পৃথিবীর
আযান ও শঙ্খের নৈবেদ্য মার পায় লুটোপুটি খায়
তখন প্রলয় এসে ফিরে যায় পানশালার চৌকাঠ।
আর আমি; জানালায় দেখি দাউদাউ নিস্তব্ধ রাত
আঁচলের কারুকর্মখচিত দিগন্তের গহŸর চোখ থেকে
মুছে গেছেÑ চামড়া থেকে চিৎকার এবং ঋতু
শাড়িজমিন আকাশে ছিট ছিট নীলোৎপল তারা
হৃৎপিÐের মৃত্যু দেখেছি বহুকোটি বছর
এবার পূণ্য লেখা হোক,
যমদূতকে স্বর্গে পাঠালাম
সোয়েব মাহমুদ
তবুও ওরা এরোপ্লেন দ্যাখতে আসে!
#ইস্তাম্বুল
২০০৯.
নিদারুণ মধ্যবিত্ততায় জিতে যায় পতাকা, হেরে যায় মুদ্রাস্ফীতি!
#ওয়েষ্টব্যাংক, বেথেলহাম
২০১১
এই বাংলাদেশ পূনর্বাসিত পতিতার ভাগাড়, অথচ বেশ্যালয় ঈশ্বরের খুব অ- প্রিয়!
#ঢাকা
২০০২
বেশ্যা আর পতিতার মাঝে, জরায়ু আর যোণীর মধ্যকার সুক্ষতম ফারাক বিদ্যমান। বিদ্যমান এখানে সব পতিতা, বেশ্যালয় মনে করে ভুলে যেখানে চলে এসেছি আমি।
#জাতিসংঘ আঞ্চলিক সমন্বয় অফিস
বার্লিন।
২০০৮
রবীন্দ্র - তলস্তয়- সেক্সপিয়ার সব শালাক ভন্ড সাহিত্য ব্যবসায়ী আমরা তার বোকা ক্রেতা। সব শালাই বগলে বাইবেল নিয়ে উস্কে দিয়ে ধর্মান্ধতা সাজে অবতার সাম্যবাদের - অসাম্প্রদায়িকতার।
#কলকাতা
২০০৫
যে শহর ঘুমাতে দেয় না আমায়, জাগিয়ে রাখে কোমল বৃন্তে হাটিয়ে নিয়ে যায় উদ্দাম ক্রেমলিন সুবহে সাদিকের শরীরে। যেখানে একটা ফুল একটা নাভী ফুল ফোটে ক্যাসিনোর ফোর অফ আ কাইন্ড উচ্ছাসে।
#আইয়ানাপা
২০০৯.
ধর্মের ভেতর ঈশ্বর নয় শিশ্ন জেগে থাকে।
#তিবলিশ
২০১২
কবিতাঃ বিশ্বভ্রমণকালীন সময়ের হাতঘড়িটা
ধারাবাহিক গল্প
সাবিত্রী শিল্ড ফুটবল ফাইনাল
বিপুল রায়
দুই
বিকাল চারটের সময় মাঠে গিয়ে পোঁছলাম। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে। টিকিটের মূল্য বারো বছর পর্যন্ত এক সিকি আর তার উপর হলে আধুলি। আমার পকেটে দুটো সিকি পয়সা। বয়স আমার পনের। সুতরাং আধুলি দিয়েই টিকিট কাটতে হবে। আমি চালাকি করলাম। সিকি গলিয়ে দিয়ে টিকিট নিলাম। অন্য সিকিটা ঘুগনি খাওয়ার জন্য বাঁচালাম।
ব্যস, যা হবার তাই। মেন গেটে আটকে গেলাম। আমার জানা অন্য ছোট গেট ছিল। সেই ছোট গেটে গেলাম। গম্ভীর মুখে টিকিট ধরালাম। টিকিট চেকার আমাকে দেখে মৃদু হেসে বলল, মেন গেট ছেড়ে এদিকে এলি কেন? আটকে দিয়েছে তাই না?
আমি কাতর স্বরে বললাম, কাকু আর যে পয়সা নেই। তাহলে পাঁচিল ডিঙিয়ে ঢুকব কি?
কি ভেবে লোকটা আমাকে মাঠে ঢুকতে দিল। খেলা শুরু হব হব। দৌড়ে গিয়ে দর্শকদের ঠেলে চুনের ধারে দাঁড়ালাম। জুলাই মাস। আকাশে এই মুহুর্তে তেমন মেঘ নেই। ঘন্টা দুয়েক আগে এক পশলা ভারী বৃষ্টি হয়ে গেছে। ফুরফুরে হাওয়া। তবে বয়স্কদের সবার হাতে ছাতা। মাঠ থেকে মেঠো গন্ধ ভেসে আসছে। আমার উল্টোদিকে ছাউনি টাঙানো হয়েছে। শোভা পাচ্ছে বিশাল মাপের সাবিত্রী শিল্ড। শহরের গণ্যমান্যরা চেয়ারে বসে আছে।
হাততালি, সিটি, ছাতা নাচানো, উৎসাহিত করার মতন কিছু চোখা শব্দ।
বাজুরডোবা মাঠে নামল। নিমাইভুটি, বিপিনখুড়ো, দেবুষাঁড়, ইমরানবেঁটে- এমন কত কি নামে তাদের ডাকছে দর্শকরা।
আবার হাততালি, সিটি, চোখা শব্দ বাণ। জামদা নামছে। কানাইছুট, নির্মলবুড়ো, সুধীরচোর, জব্বরধারী, বালাজী।
আমি টানা হাততালি দিলাম। আজ জামদার দিন, আজ কানাই-এর দৌড়, বালাজীর ভেলকি। আজ মৃগাঙ্ক স্যারকে যোগ্য জবাব। রেফারি হুইসেল ফুঁকলেন খেলা শুরুর। চিৎকার, হুল্লোড়, মানুষের কুটিল চিন্তা, বিদ্বেষ, হিংসা, লালসা, প্রেম, ভালবাসা, সহমর্মিতা এক সাথে আছড়ে পড়ল ফুটবলারদের পায়ে, হাতে, মাথায়। খুব তাড়াতাড়ি বাজুরডোবা জামদার গোলে বল ঢুকিয়ে দিল। গোলটা দিল সমর। ছেলেটা যে জামদার গোলে হেড দিয়ে বল ঢুকিয়ে দেবে আচমকা তা কেউ ভাবতে পারেনি। বাজুরডোবার সমর্থকদের সেকি উল্লাস। গগনভেদী চিৎকার। এতক্ষণ চোখে পড়েনি এবার দেখলাম মৃগাঙ্ক স্যারকে। দৌড়ে তিনি মাঠের ভিতর ঢুকে পড়লেন। তারপর ছাতা ফুটিয়ে আর বন্ধ করে কি কদাকার ভঙ্গিতে কোমর দুলিয়ে নাচলেন! পরিস্কার শুনলাম মৃগাঙ্ক স্যার বললেন, শালা কেমন ঢুকিয়ে দিলাম? বাজুরডোবার তোরা... পারবি না।
একি বলছেন স্যার? স্যারের মুখে এমন ভাষা!
অনেকেই উদ্বেলিত, পুলকিত... কিন্তু আমার লক্ষ্য স্যারের দিকে। স্যার কি আমাকে দেখিয়ে ছাতা ফোটাচ্ছেন ?
খেলা জমে গেল। বাজুরডোবা যেন অপ্রতিরোধ্য। বালাজী তেমন সুবিধা করতে পারছে না। কখনো নিচে নেমে যাচ্ছে আবার কখনো উপরে উঠছে। পায়ে বল পেলেই কেউ না কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে। জামদার সমর্থকরা বলাবলি করছে, এ কাকে নিয়ে এল বে?... মারাতে আর খেলোয়াড় পেলো না?... খেলোয়াড়।
হঠাৎ বালাজী বল পায়ে নিয়েই বিদ্যুৎ গতিতে বাজুরডোবার গোলের দিকে ছুটতে শুরু করল। চিৎকারে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু একি! নিমাইভুঁটি বিশ্রী ফাউল করল। মুখ থুবড়ে পড়ল বালাজি। (চলবে...)
No comments:
Post a Comment