বৃহস্পতিবার ২৯শে শ্রাবণ ১৪২৭, ১৩ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
সিদ্ধার্থ সিংহ
গঙ্গার ঘাটটা যেন কোন দিকে!
যাকে পেতে হত্যে দিয়েছিলাম মা পরমেশ্বরীর দোরে
আসতে দেরি করলে মনসা গাছের গায়ে গায়ে
খেঁজুর কাঁটায় লিখতাম যার নাম
যার গালের ছিট-ছিট দাগ একেবারে মিলিয়ে দিতে
ট্রামে বাসেও পড়তাম একের পর এক কবিরাজি বই
এখন দেখি তার চলন বদলাচ্ছে
চাহনি সরে যাচ্ছে এদিক ওদিক
কথায় কথায় উলটাচ্ছে ঠোট
টোপরের মোড়কে ধুলো জমবে এই-ই বুঝি হয়!
গঙ্গার ঘাটটা যেন কোন দিকে!
অরুণ কুমার সরকার
অসহায় সময়
তুমি কেমন আছো জানতে চাইবার আজ মানুষ
কই;
অথচ, চারিদিকে হাজারো মানুষ
জনবিস্ফোরণ...
যেন রক্ত মাংসের যন্ত্র সব
আত্মচিন্তায় কুশল বিনিময় কথাটাই যেন আজ
অবলুপ্তির পথে;
অভিধানের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে আমরা
হয়তো নিরাস হবো
একদিন;
হয়তো গবেষণা হবে...
অসহিষ্ণু সমাজের বুকে কেবল
ঘোড়দৌড়;
ফুরসৎহীন যাপনের পলে পলে অবিরাম প্রতিযোগিতা
কাঁচের গ্লাসের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো একান্নবর্তী
উঠোন
অসহায় সময়
একাকীত্ব কুঁড়ে খায় শৈশব
আর বুঝি নিরাপদ নয় মায়ের আঁচল
ছায়া;
সেখানেও দাঁত বের করে আছে
নিষ্ঠুর সুচ...
শুভঙ্কর রায়
ফয়সালা
যুগান্তর ধরে
নিয়তির মতো ...
মৃত্যুর মতো ...
আত্মপরিচয়হীন প্রতিবন্ধী
ভাঙা পাতকুয়োয় পড়ে থাকে,
ভবিষ্যতেও থাকবে হয়তো।
তথাকথিত নিচুতলার জীবন...
অনাবশ্যক ক্ষত।
একটি বিষয় লক্ষণীয় ...
জ্যান্ত ভদ্রলোক ভাবার প্রয়োাজন নেই।
দৈনন্দিন জীবন চললেই হল।
আশ্চর্য জ্ঞান।
প্রসঙ্গত সকলেই জানেন...
সমস্তটাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত
শেষমেষ নির্বোধ চিৎকার,
ফয়সালা হয়ে গেল প্রথম দফায়।
ফল দাঁড়ালো ...
কান চোখ মুখ বন্ধ রাখা প্রয়োজন।
শুভায়ু দে
সব বোঝানো যায় না
এ ভাবে বর্ণনা করা যায়না হাসিমুখ।
হতেই পারে ঘুমের মধ্যে ঈশ্বরকে জন্ম দিতে গিয়ে
প্রাণ ভরে হেসে গেছি কোটি কোটি বছর।
জেগে থাকা মানুষেরা ভাবতে পারে আমায় পাগল।
পরমুহুর্তেই নিজের প্রিয় বন্ধুর সর্বনাশ করে
হাহাহাহা করে হেসে গেছি রাতভোর।
হতেই পারে।
একটা সত্ত্বা নাকি!
বন্ধুত্ব শুধু সত্ত্বার হয়, মুহুর্তের হয়।
দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে,যদি মুহুর্ত গুলোকে ফ্রেমলক করে দাও।
রিপিটেশনের পর রিপিটেশন।
কালো থাকা অপরাধ নয়।
প্রজাপতি কেই দেখো।
সাদা-কালো মিক্সচার।
তুমি তো তাকে দেখেই সুন্দর বলে ক্যামেরাবন্দী করো।
মস্তিষ্ক জঘন্য না হলে সুন্দরের বিচার করা যায়না।
আমি নিজেই সুন্দর হলে, বিচার করবো কি করে।
ধারাবাহিক গল্প
সোনার বালা গায়েব রহস্য
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
ছয়
- যাক বাবা! আপনি আমাদের একটা বিরাট ঝামেলার হাত থেকে বাঁচা যায়।
সুদাম সেনকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে সাহেবরাও দিবাকর বাবু কে ধন্যবাদ জানিয়ে থানা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু, দাঁড়িয়ে বড়বাবুর উদ্দেশ্যে বললেন- লেট, সেনবাবু ইজ রিটার্ন ফ্রম হসপিটাল, তারপর ওর বিরুদ্ধে কেস-টেস যা করার করা যাবে।
- সে কি! এটা কি করে সম্ভব! বড়বাবু রীতিমত বিস্মিত হয়ে বললেন - খেঁপেছেন স্যার!
এখন যদি কোন কেস না করেন, সেনবাবু যদি হাসপাতালে মারা যান, কি হবে ভেবে দেখেছেন?
আমাদের কি হালটা হবে? প্রেস মিডিয়া তো ছিড়ে খাবেই, ওর বাড়ির লোকেরাও ছেড়ে কথা বলবে না। বাংলাদের বিরুদ্ধে কোর্টে গিয়ে মামলা ঠুকে দেবে। কোন কেফিয়াত বা উত্তর দেওয়ার মতো কিছুই কিন্তু আমাদের কিছু থাকবে না।
- অত টিমিড হলে মশাই থানা-ফাঁড়িতে চাকরি করা যায় না। গাড়িতে উঠে বললেন- আপনি আপনি যা ভাল বোঝেন, সেটাই করুন ।
সাহেবরা চলে যাওয়ার পরে বড়বাবু দিবাকর বাবু এবং তার বন্ধুর উদ্দেশ্যে বলেন- আপনাদের আর ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না। কিন্তু, আমি খুব দুঃখিত যে, আপনাদের কাজটা করে দিতে পারলাম না। আপনাদের হাতে মাল গুলো সব বুঝিয়ে দিতে পারলে আমার যেমন ভালো লাগতো, তেমনি আপনাদেরও আর ঝামেলা থাকতো না।
- আবার কিসের ঝামেলা?
দিবাকর বাবু একে শকে জর্জরিত, তার উপরে ব্যবসায়ী মানুষ, ঝামেলার কথা শুন, হাতজোড় করে বলে উঠলেন- প্লিজ বড়বাবু, আমাকে আর কোন ঝামেলায় ফেলবেন না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে, এখানে মানে কলকাতায় আর আমার থাকার একমহূর্তও ইচ্ছে নেই। সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে কাশি কিংবা হরিদ্বারে চলে যাব। যা করতে হয় আজি আমাকে দিয়ে করিয়ে নিন।
- তাই হয় নাকি? বন্ধুর অঞ্জন দত্ত দিবাকর বাবু কে থামিয়ে বলে ওঠেন- থাম তো তুই। সবকিছুর একটা আইন হোম সিস্টেম তো আছে। এনারা তো আর সেসব আয়নার সিস্টেমের বাইরে যেতে পারবেন না।
বড় জগদানন্দ মুখার্জি এই সুযোগে দিবাকর বাবুকে সোনার বালা হাপিসের ব্যাপারে একটা অভিযোগ লিখে দেওয়ার কথা বলে কাগজ এবং কোন ওনার দিকে এগিয়ে ধরলেন।
- অভিযোগ! কেন?
ওর বন্ধু রঞ্জন দত্ত ব্যাপারটাকে সমর্থন করে বলেন- ইয়েস। একটা অভিযোগ তো তোকে দিতেই হবে। না হলে, এনারা ওই মালবাবু সুদাম সেনের বিরুদ্ধে আইনত একশন নেবেন কিভাবে?
ব্যাপারটা তো তোকে বুঝতে হবে। এটা একটা ক্রিমিনাল ব্রিচ অফ ট্রাস্ট রেড উইথ ক্রিমিনাল মিস-অ্যাপ্রপ্রিয়েশন কেস। সাজা অবধারিত।
দিবাকর বাবু হা করে বন্ধুর বক্তব্য শুনছিলেন।
- ঠিক বলছেন উনি। বড়বাবু বলেন- মাল বাবু অসুস্থ হয়ে না পড়লে তো সব ঝামেলা আজই মিটে যেত। সেটা যখন হলোনা, তখন সাহেবদের কথামত অন্তত আপনার অভিযোগটা নিয়ে কেসটা আজ রুজু করে রাখি। পরে ও ফিরে আসলে, আপনাদের দিকে মালগুলো ফেরাবার ব্যবস্থা করে দেব।
- ওসব অভিযোগ আমি করতে পারবোনা। দিবাকর বাবু গম্ভীর স্বরে বলেন - একচুয়ালি, আমি এসব করার জন্য আসিনি। এসেছিলাম, শুধুমাত্র মা, বউ এবং শলিকার স্মৃতি হিসাবে মাল গুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সত্যি কথা বলতে কি, এই মুহূর্তে ওইসব সোনার বালা চুরি গলার নেকলেস আমার কাছে মূল্যহীন। এখন কেন যেন মনে হচ্ছে আমি নিজেই এই ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী। ব্যবসার কাজে ব্যস্ত না হয়ে সেদিন যদি আমি ওদের সাথে এই সফরে বেরিয়ে পড়তাম, তাহলে আমারও তো আজ ওদের মতই হতো। তখন খেয়ে নিতে আসছে এই সব? সব অভিযোগ তভিযোগ আমার দ্বারা হবে না।
- কিন্তু...
বড়বাবু এবং ওর বন্ধু রঞ্জন দত্ত কিছু বলতে চাইছিলেন, কিন্তু দিবাকর বাবু নিজের মত বলে চলেন - লোকটা বাঁচবে কি মরবে, কে জানে! বাঁচলেও, সে স্বাভাবিক জীবনে আর ফিরতে পারবে কিনা, কে জানে? না, এটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। ফালতু! দিবাকর রায়চৌধুরী বন্ধু রঞ্জন দত্তের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললেন - এসব যত গন্ডগোল এর মূলে হোলি তুই। তুই না নিয়ে এলে, আমি তো আর এখানে আসতাম না।
আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এখানে আসতে বাধ্য করলি। যাকগে, আমি ওসব কোন অভিযোগ দিতে পারব না। উল্টো, আমি লিখে দিয়ে যাচ্ছি - সব মাল বুঝে পেয়েছি। আমার কোন অভিযোগ নেই। প্লিজ, আমাকে রেহাই দিন। (চলবে...)
No comments:
Post a Comment