রবিবার ১লা ভাদ্র ১৪২৭, ১৬ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
আইরিন সুলতানা লিমা
প্রমত্ত
ধর, তুমি কবি
আমি কবিতার চারণভ‚মি
কিছুকাল চষে বেড়ালাম
কবিতা হয়ে ঘুরে ফিরলাম।
তুমি বললে, এবার তোমার পরীক্ষা
কিসের? আমার প্রশ্ন ছিল
উত্তরে তুমি বললে, আনুগত্যের;
আগামীকাল কুরবানি কর তোমার জান
আমি বললাম, জান নিতে চাইলে দেব
তোমার সন্তুষ্টির জন্য সব করব
তবে, আমি যে মানুষ
বোধহয় ভুলে গেছ, কবি
তবে কী আমি জানব-
কবি মানেইপ্রমত্তচিত্ত; হাওয়ার বিশ্বাসভ‚মি!
সাব্বির হোসেন
জীবন আর থলের প্রেম
থলে থেকে বেড়িয়ে আসে জীবন,
রং দেখিয়ে আবার ঢুকে পড়ে নতুবা অন্যত্র চলে যায়।
মানবের অবয়বের সাথে মিশে থাকে থলের কাগজ,
আর সেই থলেতেই জীবনের লজ্জাহীন সংসার।
এত লালন এত পালন এত সোহাগ
এসবের কোন মূল্যবোধ এই পাষাণ জীবনের কাছে নেই।
কারও কারও থলেতে জমা পড়ে শুধুই সাদা কাগজ
আর আছে শুধু প্রাণবধ টুকরো অপূর্ণ স্বপ্ন।
চামড়ার থলের ভাব আছে, অহংকার আছে
কিন্তু গরীবের থলের আছে শুধু ক্ষুধা আর কান্না।
জোড়াতালি দিতে দিতে ঝাঁজরা যোদ্ধার থলে
ভেতরে জমা পড়েছে সহস্র বারুদের ছাই।
কী আমির আর কী গরিব, সব জীবনের পাছে
কাঙ্গাল হয়ে ছুটছে আর ছুটছে অন্ধের মত।
অবাক করা বিষয় হল, এই জীবনের কোন হাত পা নেই। এটি তরল আর চারটে কোন আছে।
অংকে লেখা আছে এর মানদণ্ড।
জীবন চলে যায় কবিতার মত বাড়ি বাড়ি কৌশলে,
থলে পড়ে থাকে কবির মত অযত্নে ঐ এক টেবিলে।
বঙ্কিম কুমার বর্মন
নাছোড় লেখা
ঘুরেফিরে এই কথা বলো সখী মন লাগেনা কাজে। যার কোনো বন্দর নেই, ঘাট নেই, তার কোনো পূর্বাভাস নেই মেঘে। কিভাবে চলে রামধনুর প্রেমে। ও পাড়ার প্রস্তুত পায়রাগুলি কুয়াাশার বচন খুঁটে খায়। সেই অর্থে সহজ বর্ণময় নদীকেও লিখেছি নারীকেন্দ্রিক চিঠি। তুমি অভিমান তুলে নাও এই ভর দুপুরে। সেভাবে তো আমিও ফিরেছি কোনো মনভাঙা ভোরের দিকে। সেই যে ছুটে চলা পথের ফাগুন বলিষ্ঠ আয়ুরেখা। কাব্যময় স্থির চাঁদ বাড়ি বাড়ি ফিরে, এই বেলা আমিও সমানুপাতে কাহিনীর দ্রুত উপমা সঞ্চয়ে। বোকা মেয়েটি তুমি তখনও ভীষণ চটে মৃদু বাতাসের সাম্রাজ্যে। বাধ্য রাত্রির জাগরণের সব উৎসে পুষ্পবৃষ্টি দিয়েছি কারণ তাঁরাও তো কোনো নির্জন নীহারিকার রাজটীকা। প্রাচীন বিস্তারে চুল উড়ছে উদ্দাম নৃত্যের দেহব্যাকুল। তুমি নিদ্রাহীন শহর গোছাও দু’হাতে, একটি আম গাছ লাগাও। ভীষণ প্রয়োজন বর্ষার মাতাল সবুজ কৌতুহলে।
মিলন ইমদাদুল
গর্ভহত্যা
নারী, গর্ভের সন্তান যদি কোনদিন চিনতে পেরে
আর্তনাদ করে ডেকে উঠে মা মা বলে, মহামিলনে
আপনি কি তাকে চিনতে পারবেন?
চিনতে পারবেন কি সেই নবজাত শিশুটিকে?
যাকে কোটি বছর পূর্বে খুন করেছিলেন আপন গর্ভে
যাকে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখতে দেননি একটিবার!
মনে পড়ে-
এক বিষণ্ন সন্ধ্যায় সূর্য্য যখন দিনের ক্লান্তি শেষে
ফিরে যাচ্ছিলো নিজ গন্তব্যে...
রাখালেরা যখন ঘরে ফিরছিলো আপন মহিমায়
ঠিক সেই সময়ে হত্যা করেছিলেন আপনি তাকে
একটুও শিহরিত হয়নি আপনার হাত!
কি পাপ করেছিলো নিষ্পাপ শিশুটি?
কি করে এতোটা নিষ্করণ হতে পারলেন আপনি?
কিছুই তো চায়নি সে আপনার কাছে-
শুধু একটিবার দেখতে চেয়েছিলো আপনাকে
বাঁচতে চেয়েছিলো কিছুটা সময় পৃথিবীর বুকে
এটাই কি তার অপরাধ!
তবে কেনো! কেনো পাষন্ডের মতো হত্যা করলেন আপন গর্ভকে
জবাব দেন! জবাব তোমায় দিতেই হবে মা!
সরকার অরুন কুমার
নিষ্কর্মার ঢেঁকি
সাপের নির্মোক ছিঁড়ে
পালে ঝড় ভরে দাও
জ্বলে ওঠো নির্বিকার
নক্ষত্র আকাশে।
খুঁজে নাও নির্বিকল্প সত্য
মনটাকে করো নির্বিষ
তোমরা নির্ভেজাল সত্য সন্ধানী
সাজেনা নির্লিপ্ততা।
নীল আকাশের আবছায়ায়
ঢাকা পড়ে সুখের নিলয়
উপবিষ্ট কদাচারী কুবেব আসনে
নীলাভ আঁখি হয়েছে ম্লান অকারণে।
জেনে রেখো...
আমি নিষ্কর্মার ঢেঁকি।
সুরঞ্জন অধিকারী
মন নদী
বহমান চপল চঞ্চল নদীটা,
জন্ম থেকেই বিশেষ অবরুদ্ধ,
ক‚ল ভরা জল, আর বুক ভরা ঢেউ,
সেতো জন্মান্তরের সাধনা তার!
পাহাড় প্রমাণ প্রতিবন্ধকতায়
জীবন তার থেমে থাকেনি এক মুহুর্ত!
নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় অকৃত্রিম
হৃদয়ের উৎসারে, সে ছিল অনন্য, আহ্বাণ।
তারপর হঠাৎ একদিন, হৃদয়ের বিকলতায়,
হিমশীতল মৃত্যুর আলিঙ্গনে পরপারে পাড়ি দেয়,
না ফেরার দলে, নক্ষত্রের দেশে পরবেশে!
বড়ো ভিড়ে ঠাসা, ‘বনগাঁ লোকালে’,
আর বলবো না, “সুপ্রাদি কেমন আছো তুমি?”
ক্রান্তিকাল, আজ কালের কপোলে,
এক অনতিক্রম্য নিদারুণ দুঃসময়!
বিনম্র শ্রদ্ধায়, তোমাকে জানাই, শেষ বিদায়!
সুপ্রাদি, তুমি আজ অলৌকিক গাছ!
ভোরের বিশুদ্ধ বাতাস, নিঃশ্বাস প্রশ্বাস!
আকাশের পরে, আরো এক অনন্ত আকাশ!
ধারাবাহিক গল্প
সোনার বালা গায়েব রহস্য
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
নয়
রহস্যের সূত্র কিছুটা উদঘাটিত হয়েছে।
শেখর মিত্র খানিকটা পুলকিত হয়েই থানার বড়বাবুর সাথে আলোচনা করেই ছুটেছিল সিংহী পার্কে দিবাকর রায়চৌধুরীর বাড়িতে। ভদ্রলোক ওকে দেখেই মাল বাবুর কথা জানতে চেয়েছিলেন । ভালো আছেন, তবে শরীরের একটা দিক প্যারালাইসিস হয়ে গেছে শুনে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন - কী করণে সে এখানে এসেছে ? বালা গুলোর কোনো হদিস পেয়েছে কিনা? শেখর মিত্র প্রত্যুত্তরে বলেছিল - এখনো পাওয়া যায়নি । তবে, সেই ব্যাপারেই ওনাকে একটু ডিস্টার্ব করতে এসেছে। এই মুহূর্তে ওর বিশেষভাবে জানা দরকার যে, সেদিন ডায়মন্ডহারবার মর্গ থেকে কে বড়বাবুর লেখা চিরকুটটা নিয়ে বাঁকির মোড়ে মাল বাবুর কাছে গিয়েছিলেন বাড়ির চাবির গোছাটা নিয়ে আসতে?
দিবাকর বাবু সব শুনে বলেছিলেন - ওটা ওর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। সেদিন কেন, এখনো এই বাড়ির ব্যাপারে যা কিছু করার - সবটাই করছে ওর বন্ধু রঞ্জন দত্ত। ওকেই বরং ডেকে দিচ্ছেন। ওর সাথে কথা বলে নেয়াটাই আপনার ঠিক হবে, বলেই ফোন করে বন্ধুকে বললেন এক্ষুণি ওর বাড়িতে চলে আসতে। সেই বালা চুরির ব্যাপারে থানা থেকে একজন দারোগাবাবু এসেছেন। কি সব জানতে চাইছেন?
রঞ্জন দত্ত প্রথমে অন্য কাজের দোহাই দিয়ে আসতেই চাইছিলেন না। ফোনেই বলে দিলেন - ওই ব্যাপারে ওর আর কি বলার আছে? যা করার সব তো সেইদিনই মিটিয়ে দিয়ে আসা হয়েছে। তার পরেও আবার কিসের তদন্ত? কাজ তো নেই একটা ডেড কেস কে নিয়ে অযথা ঘাটা-ঘাটি শুরু করেছে! ওর অত সময় নেই যে এই ধরনের ফালতু ব্যাপারে এসে অযথা পেলা দেওয়ার।
দিবাকর বাবু বুঝিয়ে বলাতে রঞ্জন দত্তের মেজাজটা খানিকটা শান্ত হয়। শেষ পর্যন্ত এসে শেখর মিত্র কে সর্বতোভাবে সাহায্য করা শুরু করেন।
আলোচনা থেকে যে গল্পটা উঠে এলো, সেটা হল - ঐদিন রঞ্জনবাবু চাবির গোছা নিয়ে আসার জন্য দিবাকর বাবুর অফিসের কর্মচারী রতিকান্ত সেনকেই কালো রংয়ের প্রাইভেট কার ২৬৭৩এ করে ঘটনাস্থলে মাল বাবুর কাছে পাঠিয়েছিলেন। খুব সম্ভবত শ্যামা ড্রাইভার ঐদিন ওই গাড়িটা চালাচ্ছিল।
রহস্যের জট সম্পূর্ণ না হলেও কিছুটা খুলেছে।
শেখর কিছু বলার আগেই রঞ্জন বাবু দিবাকর বাবুকে বললেন - দিবাকর? তুই এক কাজ কর? ফোন করে তোর অফিস থেকে রতিকান্তকে ডাকিয়ে নে। রঞ্জন দত্তের কথাটা শুনে দিবাকর রায় চৌধুরী জানালেন, রতিকান্ত ওই এক্সিডেন্ট এর পর থেকেই অফিসে আসছে না। আসলে ঐদিন সকলের ডেড বডি দেখার পরে ও এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে, অফিসেই আর আসতে পারছে না। তবু, তুই যখন বলছিস, ওকে এখানে ডাকিয়ে নিচ্ছি। আমার মনে হয় না এতে কোন লাভ হবে।
দিবাকর বাবু ফোনে কথা বলে জানলেন যে, রতিকান্ত সেন আজ অফিসে এসেছে। বললেন, ও যেন অফিসেই থাকে। গাড়িটা পাঠিয়ে দিচ্ছি, ও যেন অত করে আমার বাড়িতে চলে আসে। খুব জরুরী দরকার, বলেই শ্যামা ড্রাইভার এর খোঁজ করলেন। কিন্তু, ওকে পাওয়া গেল না । কিছুক্ষণ পরে একজন এসে জানালো যে সে প্রায় মিনিট চল্লিশেক আগে বাড়ি চলে গেছে। মরে গেছে বাড়ি থেকে হঠাৎ ওর মায়ের খারাপ সংবাদ এসেছে। তাই লগন সিংকে গাড়িটা চালানোর কথা বলে, চলে গেছে।
- হ্যাঁ। বুঝেছি। রঞ্জন দত্তের লাভ দিয়ে সোফা থেকে উঠে বললেন - মিস্টার মিত্র? গেট আপ। আমাদের এক্ষুণি শ্যামা ড্রাইভার এর বাড়িতে যেতে হবে। দেরি করা যাবে না। দেরি করা মানেই, মালগুলো সব হাপিস হয়ে যাবে।
- তাহলে, রতিকান্তের কি হবে? দিবাকর বাবু জানতে চাইলেন।
দত্তবাবুর প্রথমে ওক শ্যামা ড্রাইভার এর বাড়িতে চলে যেতে বলে, খস করে একটা সিগারেট ধরিয়ে একটু ভেবে বললেন - না ও বরং তোর এখানে আসুক। আমরা আগেই বেরিয়ে যাচ্ছি। মানিকতলা থানা হয়ে আমাদের যেতে হবে। তুই বরং ওকে নিয়ে পরে ওখানে আয়। ফোন করে বলে দে যে, শ্যামা ড্রাইভার এর মায়ের খারাপ সংবাদ এসেছে। তুই ওখানে যাবি। ও তোকে অ্যাকম্পানি করবে। (চলবে...)
No comments:
Post a Comment