সোমবার ২৬শে শ্রাবণ ১৪২৭, ১০ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
সজল রানভী
“আমি নয়”
আমি নয়, আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটা কুৎসিতকুকুর। ঘেউ ঘেউ করে। কামড়িয়ে দেয়। কি জানি, সুন্দরের অবহেলা পেতে পেতে ভেতরে একটা কুকুর জন্মালো কিনা! ভেতরে একটা হিংস্র মাংসাশী জানোয়ার জন্মালো কিনা! আমি এখনো চাঁদ ভালোবাসি। ফুলের সাথে এখনো কথা হয়। পাখির সাথে আমার নিদারুণ সখ্যতা। যত অনিষ্ট, যত অসুন্দরের পূজা অর্চনা, যত রক্ত রক্ত মাতম, যত অশ্রুর শোক সংগীত- আমি নয়, আমার ভেতরে বেড়ে উঠা কুকুরটাই কেরোসিনে জাগিয়ে তোলে ধ্বংসের দাবানল।।
কমল কুজুর
সাধের খেলনা
কে তোমায় এখনো দেয় ডাক?
মাঝে মাঝে তারাজ্বলা রাতে
দূরে বহুদূরে
হৃদয়ের গহীন সমুদ্রে স্রোতের সাথে
মিশে থাকা মৃদঙ্গের আওয়াজ,
তোমার ঘুম নেয় কেড়ে;
এখনো।
রোদ্দুর ভরা দুপুরে ঘুম পেয়ে গেলে
আচমকা ওঠো জেগে
সেই চেনা স্বরে,
যেন স্বপ্নের ওপার থেকে
কেউ দেয় ডাক
সেই মিষ্টি সুরে তুমিও
স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে ফের দুঃখ আবার।
এই বরষায় বৃষ্টির ফোটার সাথে
নেমে আসা নোনাজল
হয়তো হঠাৎ করেই তোমাকেও সিক্ত করে দেয়
রিক্ত করে দেয়,
মৃদু মৃদু জ্বলতে থাকা প্রদীপের মতোই
তোমাকে যেন আবিষ্ট করে রাখে
নক্ষত্রের মায়াবী আলোয়।
মনে রাখা অথবা ভুলে যাওয়া
সত্যিই একটা খেলা মাত্র
প্রকৃতির খেলা, আর
আমরা পুতুল সবাই।
রাজ পুরকায়স্থ
ব্যর্থ শিয়াল
বিস্ময়াভিভ‚ত পথের অনিয়ম অস্থিরে
একদিন ...
হয়তো চতুর্দশীর প্রকাশ তলায় দাড়িয়েই
চাঁদের কলঙ্ক আবিষ্কার করেছিল মানুষ
বুকের উৎস মুখে , তোমার-
কণ্ঠ অবরোধের বেসুমার বালুচরে
এক বর্ষণ সিক্ত রাতের মেঘাচ্ছন্ন ভালোবাসায়
আঁচলটা কে আলতো সরিয়ে
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখিয়ে ছিলে তোমার হিমায়িত মনখারাপগুলো ।
তোমাদের জন্মভিটেয় সেদিন মাতৃহারা সূর্যগ্রহণ
তৃতীয়ার একচিলতে রশ্মিতে
তবু ছড়িয়েই চলেছো তুমি নিরলস প্রকাশ প্লাবন
আপ্লুত- এপিঠ ওপিঠ সম্পর্কের যত স্বজন ।
সমাগত সন্ধ্যায় সরগরম বুকে তুমি, আজ-
আমার জ্যোৎস্না অফুরান !!
অনাবশ্যক ঈর্ষায় স্বজন সেদিনের
“জোচ্চোর” অপবাদের কলঙ্ক ছিটিয়ে
আখের যে চাঁদ মর্যাদাই দেয় তোমায় !!
ব্যর্থ শিয়ালের- “আঙুর ফল টক”
প্রবাদবাক্যটা আজো কতোটা প্রাসঙ্গিক, না...
অর্ঘ্য চ্যাটার্জী
বন্ধু তুমি কেমন আছো?
বন্ধু তুমি কেমন আছো?
শান্ত দুপুরে মুখোমুখি বসে একটু বৃষ্টিকে গায়ে মেখে নিতাম।
আজ শ্রাবণ এসেছে বৃষ্টি সঙ্গে নিয়েÑ
তুমি নেই, বলো ভিজবো কার সাথে?
কালো মেঘ জমেছে চোখের কোণে, বৃষ্টি হয়েছে আজ ভীষণ ক্লান্ত।
এতটুকু ঝরে না, মন শান্তÑ
বন্ধু তুমি কেমন আছো? শান্ত ঢেউ আজ মাতাল হয়েছে,
দূর হতে ছুটে আসে পাগল হাওয়া।
তবু নেই তোমার কেন দেখা?
কোনো ফুল ফোটে না আমার কাননে,
ঝরা পাঁপড়ির গায়ে তোমার নামটি লেখা।
আজও ভোর হয়নি পাখির নীড়ে, বলো কি করে খুঁজবো আমি তোমারে?
বন্ধু তুমি কেমন আছো?
শেষ খামটি দেবো পাঠিয়ে দূর গগনে,
চেনা কালি তুমি ঠিক নেবে চিনে।
বন্ধু তুমি ফিরে এসো আজ রাতে,
খোলা আকাশের নীচে কথা হবে একসাথে।
কত শ্রাবণ লুকিয়ে আছে তোমার হাসিতে, ঝরবে বৃষ্টি হয়ে মনের আঙিনাতে।
বন্ধু তুমি কেমন আছো?
বিনয় কর্মকার
ছেঁড়াকাব্য- ৯
[ উনপঞ্চাশ ]
বোধ!!
জ্বলন্ত চুলায় পপকনের দাপাদাপি,
অন্তজ্বালা না-বুঝলে এ-ও এক উল্লাস!
[ পঞ্চাশ ]
নাম-বস্তু;
সাদৃশ্যই সবকিছু না,
বিশ্বকাপে চা ঢেলে পান করা যায় না!
[একান্ন ]
চাঁদমুখ!!
চাঁদের কোনো ত্বক নেই...
তুমি বিশ্বাসের প্রাচীরে বন্দিমাত্র।
[ বায়ান্ন ]
আগুন!!
চিরকাল দাহ্যের লেলিহান!
রান্নায় এক কৌশলী প্রয়োগ।
[ তেপ্পান্ন ]
বানান!!
গুরুকে ভুল করে গরু লেখো, আর গরুকে গুরু!
সম্পাদ্যের মাঠে দেখো,
একটু এদিক-সেদিকে সমস্যাটা কী!
[ চুয়ান্ন ]
দূরত্ব!!
ডিমের কুসুম হতে পৃথিবীর দূরত্ব খুব বেশি নয়,
নকশার আড়ালে তবু কঠিন সূত্র।।
মো. আরিফুল হাসান
মাঝখানে চার বাদ পড়ে গেলে
আমি আমার কৌত‚হলোদ্দীপক হৃদয়ে
কুয়াশা দেখি। দেখি ফাগুনের ঝরামুখ।
আর লাবন্য দাশের টোলপড়া মেয়েটির
দিকে দেখলে, আমি দেখি আমার আজন্ম
লালিত খিদা।
লাবন্য দাশের বাড়ি আমাদের থেকে
চারহাত দূরে। রোজ তারা প্রতিবেশি, স্কুলে
যায়, লাবন্য দাশের মেয়েটি কোলে বই
রেখে পড়তে পড়তে আমার কথাই কল্পনা
করে।
লাবন্য দাশের মেয়েটিকে আমরা ভুলে
যেতে পারি, ভুলে যেতে পারি মধ্যবর্তী চার
হাত রাস্তার দূরত্ব অতীত। তখন আমাদের
সামনে সেই চারহাতই হয়ে উঠে যোজন
যোজন দূরবর্তী
ধারাবাহিক গল্প
সোনার বালা গায়েব রহস্য
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
চার
- কি হয়েছে স্যার ?
শেখর মিত্র পাশের ঘর থেকে তাডাহুড়ো করে বড়বাবুর চেম্বারে ঢুকেই দেখে , বুনি জখম হওয়া বাঘের মত ফুঁসছেন । ওকে দেখা মত্রই বলে উঠলেন - শুনেছেন ? আপনাদের পেয়ারের ধর্মভীরু মাল বাবু শ্রীমান সুদাম সেন কি বলেছেন?
শেখর মিত্র খুব ভালোই জানে যে, থানার বডবাবু জগদানন্দ মুখার্জি রেগে গেলে সবাইকে আপনি বলে সম্মোধন করে কথা বলেন। আবার রাগ পড়ে গেলে, পুরাতন সম্বোধনে ফিরে যান। তাই আর কথায় কোন রকম উত্তর না দিয়ে, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
বড়বাবু সমানে বলে চলেন- ওই মহামান্য মালখানা বাবু , আমাকে আর আপনাকে এনাদের সামনে চোর বানিয়েছেন। বলতে চাইছেন আমরা নাকি ওকে তিনট সোনার বালাই জমা রাখতে দিয়েছিলাম! কি লজ্জাস্কর ব্যাপার, বলুন তো ?
এনারা এসব শুনলে, আমাদের সম্পর্কে কী ধারণা করবেন, কি ভাববেন বলুন তো ?
- সে কি মালবাবু! শেখর মিত্র অবাক। ওর দিকে তাকিয়ে বলে- আপনি এই কথা বলতে পারলেন? আপনার কথা মতই তো আমি ওই কালো লেডিস লেজার ব্যাগটা মধ্যে সবকিছু করে আপনাকে দিয়েছিলাম। একটু মনে করে দেখুন?
- আমি তো সে কথা বলিনি।
- বলিনি মানে? বড়বাবু আবার হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেনÑ বলতে কি বাকি রেখেছেন মশাই ?
ইনাদের সামনেই তো বললেন ব্যাগটা আপনাকে আমরা যেভাবে দিয়েছিলাম , মালখানার ভিতর সেভাবেই রাখা ছিল! এই কথাগুলোর মানে কি?
এই কথাগুলোর মানে বুঝবার মত ক্ষমতা, আমার আছে মশাই। আর সেই জন্যই সাহেবরা আমাকে এই সম্রাট চার্জে বসিয়েছেন, বুঝেছেন?
মালবাবুর কোন কথা নেই। একেবারে স্পিকটি নট! মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।
লাগে আর অপমানে বড়বাবুর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে। একে বয়স্ক মানুষ , তার উপরে চেহারাটা বেশ মোটা সোটা। উত্তেজনায সারাটা শরীর কাঁপতে শুরু করেছে। ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছেন আর বলে চলেছেন - মশাই বালাগুলোর তো পাখা গজায়নি যে, উড়ে চলে গেছে! হয় আপনি না হয় আমি কিংবা শেখর মিত্র ওগুলো হপিস করেছি!
যেকোনো সময় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে দেখে, দিবাকর রায় চৌধুরীর বন্ধু রঞ্জন দত্ত বাধ্য হয়ে আরো একবার বড়বাবুকে ও ভাবে উত্তেজিত হতে বারণ করে বললেনÑ মুখার্জীবাবু? আপনার বয়স হয়ে গেছে। ওভাবে এক্সাইটেড হয়ে চেঁচামেচি করলে, যেকোনো সময় হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে! প্লিজ, শান্ত হোন ।
-সেটা হলে তো বাঁচি। গলার আওয়াজটা কিছুটা খাদে নামিয়ে বড়বাবু জগদানন্দ মুখার্জি বলেন- এভাবে অপমান আর কলঙ্কের বোঝা মাথায নিয়ে বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওয়া, অনেক ভালো। সারাজীবন চোর অপবাদ নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে না। জানেন মশাই? বড় বাবুর দু’চোখের কোল বেয়ে জলের ধারা বইতে শুরু করেছে। ভারাক্রান্ত স্বরে বলে চলেন - আমি চাকরি জীবনের এতগুলো বছর পার করে এসেছি। যেখানে চাকরি করেছি মাথাটা উঁচু করে সুনামের সাথে করেছি। কিন্তু আজ এই শেষ বেলায় এই কুলাঙ্গারের জন্য - আমাকে চোর অপবাদ নিয়ে যেতে হবে ! ব্যাপারটা কি বেদনাদায়ক , বলুন?
মাল বাবু কিছু বলতে চাইছিলেন, শেখর মিত্র ওকে থামিয়ে বলে- চলন্ত মালখানাটা আর একবার ভালো করে খুঁজে দেখি? আমার যতোদূর মনে পডছে ব্যাক তার মুখ খোলা ছিল। হয়তো বালাঘাটা ভেতরে কোথাও পড়ে থাকলেও, থাকতে পারে! যাবে কোথায় নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। চলুন, একবার দুজনে মিলে ভালো করে খুঁজে দেখি। (চলবে...)
No comments:
Post a Comment