শনিবার ১৭ই শ্রাবণ ১৪২৭, ১লা আগষ্ট ২০২০
কবিতা
বাঁধন অধিকারী
পাগল আমরা সবাই পাগল
আমি যে পথে হাঁটি- সে পথ রক্তের!
ক্ষমতার আড়ালে পড়ে রয়,
হাজার হাজার রক্তমাখা বিমূর্ষ দেহ,
করুণ আর্তনাদে সাড়া দেয় না কেউই...
সওজ বিভাগ বানায়- বায়োনাট এক গল্প!
হারায় প্রাণ গল্পের নায়ক, অপরাধী ত্রাণ পায়।
অপরাধী হয় নিরাপদ সড়কের দাবীদার,
গল্পের মারফতে বেঁচে যায় হারামীরা।
যে দেশে বিচার চাওয়ার যায়গা নেই,
সে দেশে বিচারের আশা করাটাও নিছক পাগলামী।
এসো দেখি... পাগলের হাটবাজার!
আবু জাফর সিকদার
নোঙর
রাতজাগাপাখি মনের পিঞ্জরে জেগে থাকিস কেন রে তুই?
দূর নীলিমায় আঁধার ঘনায় হাতছানি দেয় কুহকিনী মায়া;
ক্লান্তিময় অবসাদে পেছনে পা ফেলে হাঁটে এলোকেশী কায়া
যেন জীবাশ্ম কঙ্কাল মুণ্ডুহীন, রঙছটা টেরাকোটা অবয়বী ভুঁই ।
বেতফলচোখে সর্বনাশা ক্ষুধাতুর অনন্তের অপলক নেশা জাগে
বৃত্তের বলয়ে দূরে নিহারিকাপুঞ্জে অবিকল সূর্যের দীঘল ছায়া নামে;
প্রান্তিক ব্যাসার্ধ ঘুরে ফিরে বিষুবরেখা টানে নীল অপরাজিতা খামে
ঘুরপাক খেয়ে ঘূর্ণিপাকে ছিটকে যাবার কালে ক্ষমা-ভিক্ষা মাগে।
হাজার মঞ্জিল পেরিয়ে নোঙর ফেলো মহাকাল থেকে জেগে উঠা সমকাল
কালোরঙ পাথরের অলৌকিক ঝলকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠো অরুনাচল
মাতাল হাওয়া দিশাহীন, তবু হার মানে বেআব্রু সফেন দরিয়ার লোনাজল;
বাজে বাসন্তির আগমনী গান, শুক্লা দ্বাদশীর তিথি উঁকি দেয় নিরালায়
দিগন্তরে মিশে যায় জরা, সাঁঝে গোধূলি আবির নামে; আগামীর স্বপ্নিল বিভায়।
জেগে থাকো নৈঃশব্দের বিমূর্ত চেতনা, হরিয়াল ডানার পরিযায়ী উড়াল।
যুবক অনার্য
অবিনাশ ও নারীচিত্র
একটি দরোজা
একটি পুরুষ-
অবিনাশ
একটি নারী-
জরি
দরোজাটি বন্ধ
ভেতরে নারী
বাইরে পুরুষ
প্রতিদিন দরোজায় পুরুষটি কড়া নেড়ে যেতে চায়
নারীটি নিষেধ করে রেখেছে
নিষেধাজ্ঞার কোনো কারণও সে ব্যখ্যা করেনি
এভাবে অনন্তকাল কেটে যাবে
কড়া নাড়া হবে না তবু
নিষেধাজ্ঞার কারণও রয়ে যাবে অজানা
তাই এই গল্পটি পাঠককে নাড়া দিতে ব্যর্থ হবে
পাঠক প্রত্যাশা করে -পুরুষটি সাহসী হোক
১৪৪ ধারা ভেংগে কড়া নাড়–ক
অবিনাশ পাঠককে সন্তুষ্ট করতে পারছে না
কারণ অবিনাশের জানা নেই যে-
পাঠক যা চায় জরি নামের মেয়েটিও তাই চায়
অবিনাশ, তোমাকে বুঝতে হবে-
নিষেধাজ্ঞা মানেই হলো ১৪৪ ধারা ভেংগে
প্রচন্ড লাথি মেরে দরোজাটি ভেংগে ফেলা
তুমি না ভাংলেও কেউ না কেউ ভেঙে ফেলবেই কারণ ভেঙে ফেলাই প্রাকৃতিক নিয়ম
অবিনাশ, যে শুক্রাণুটি দৌড়ে প্রথম হয়ে
জাইগোট ফর্ম করে - এখনই সময় -
দুর্দান্ত লাথি মেরে দরোজাটি ভেংগে ফেলো
প্রথম হউয়া সেই শুক্রাণুটির মতো
দরোজা ভাংলেই দেখতে পাবে-
জরি মেয়েটি তোমার উদ্দেশেই
হাত বাড়িয়ে রেখেছিলো অনন্তকাল
কারণ নারী তাকেই চায় যে নিয়ম ভাংতে গিয়ে
হতে জানে দাগী আসামীর মত রক্তাক্ত
আর নিষিদ্ধ পাপীর মত শিল্পীত নিষ্ঠুর
মাহামুদাল হাসান
অতৃপ্তি
রসনা তৃপ্তির প্রহরে উনুন রজস্বলা হলে
রূপান্তরিত স্ফুটনে বেকায়দায় পড়ে যায়
বাষ্পায়নের আভিজাত্য; ধূলোয় মিশে যায়;
বসে থাকার পর আবার সঙ্গমে লিপ্ত হয়
রূপসী চালের যৌন উত্তেজনা জাগে
উল্টেপাল্টে রতিক্রিয়ায় ক্লান্ত ও ব্যথায়
নিজেকে পেশাদারিত্বের মগজ ভাবে
পুরো পর্দায় ছবিটির ভিডিও দেখে
জীবন কুণ্ডুলী লেখা আবর্তে
জ্বালানিকে দায়ী করতে মন চায়না
কাপড়ে আচ্ছাদিত দুর্লভ হাঁড়িও
বিশেষ মুহুর্তে গানবাজনা শুরু করে
সুখী অথচ পর্দায় টান দিতে দিতে
যে অনুমতি নিয়েছিল তা
খিচুড়ির উষ্ণ ঘরে আটকানো ছিল।
স্বাদুজলের ঘনত্ব; খোলা চ্যালেঞ্জ;
এবার শুরু হবে আদালত ও বিচার প্রক্রিয়া।
সাজু কবীর
একশিশি কড়কড়ে জল-ফাঁদ
জীবন ফেলেছে খুলে
কাছে আসবার আলোয়ান,
মরণ নৃত্যে মাতাল
বৃষ্টির বিলাপে বিরহের গান।
তেল চকচকে সবুজ সকাল,
যেন আজ ঘুঘুরঙমাখা
গোধুলি নাকাল।
এতো পাখিডাকা- ভোর
এতো ফুলফোটা-বাগিচার প্রীতি-ডোর
নির্ভার এক লুম্পেন নিয়েছে দখল
জীবনের গায়ে রক্তাক্ত পেরেক
এফোঁড়-ওফোঁড়।
হে রাক্ষসী! চলে যা! চলে যা!
এ পৃথিবী আমাদের সোনাগাঁ।
দয়াময় প্রভু! আমরা পাপী-তুমি রব তবু!
দাও, দোজখে ভাজা একশিশি কড়কড়ে জল-ফাঁদ,
মানুষখেকো’র ফাঁসি হোক সে-ই মানুষের হাতে
এ আমার ফরিয়াদ।
অণুগল্প
মহামারী
বিপুল রায়
আলুর বস্তা কাঁধ থেকে নামিয়ে রেখে খুব জোরে হাঁচে বিশু । শরীরটা বেশ কিছুদিন ভাল নেই। গায়ে জ্বর।
বাদলের পাশে বসে সে বিড়ি ধরায়। আজ শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। গত দু’মাস কামাই বন্ধ। তার বউ শিবানী চার বাড়িতে ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে। তারাও কাছে আসতে বারণ করেছে। প্রথম দু’মাস ঠিক মতন মাইনেপত্তর দিয়েছিল। গত মাস থেকে তাও বন্ধ।
বাদল সকাল সকাল আলু, পিঁয়াজ, আদা, রসুন নিয়ে বসে পড়েছে। খদ্দেরের অভাব নেই। কেউ তেমন দরদামও করছে না।
বিড়ির শেষ টানটা জোরে দিয়ে বিশু মিনমিনে স্বরে বলল, বাদল আমার পাওনাটা দিয়ে দে। বাড়ি ফিরে যাব। শরীরটা ভালো ঠেকছে না। সামনের বস্তা তুলে কুড়ি টাকা বের করে বাদল বিশুর দিকে বাড়িয়ে দিল।
এ কিরে? পঞ্চাশ ছাড়। সকাল থেকে দশ বস্তা আলু বয়ে আনলাম। তোর আক্কেল কি রকম?
ঝাঁঝিয়ে উঠে বাদল, যা পেলি তাই নিয়ে কেটে পড়। মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করিস না। লক ডাউন চলছে। দেখছিস তো খদ্দের নেই।
বাজার থেকে চলে আসে বিশু। গায়ে জ্বরটা আবার বেড়েছে। ধীর পায়ে বাড়ির সামনে এসে দেখে পুলিশের গাড়ি, পাশে অ্যাম্বুলেন্স । তাকে দেখেই পাড়ার ছেলেরা পুলিশ অফিসারকে বলে, স্যার, এসে গেছে। ধরুন স্যার। ওর বেশ কিছু দিন জ্বর। খুক খুক কাশি, সর্দি। নির্ঘাৎ করোনা স্যার। বিশু করোনা হাসপাতালে দু’দিন পর মারা যায়। তাকে শেষবারের জন্য দেখতেও পায় না শিবানী।
ধারাবাহিক গল্প
পচন
স্বপঞ্জয় চৌধুরী
সাত
সদরঘাটে শুয়ে আছে পচন। ভোর ছটা বাজে। হিম হিম বাতাস বইছে সমস্ত টার্মিনালে। পচন শুয়ে শুয়ে দেখছে মানুষের হেঁটে চলা অগণিত পা ও জুতোর বাহার। মাঝে মাঝে ওর বেছানো আঙ্গুলকে থেতলে যায় কোনো পা। আবার পুলিশের ডান্ডাবাড়িও পড়ে কোনো কোনো সময়। লঞ্চ থেকে নেমে এক মহিলা যাচ্ছে সাথে দশ বছরের একটি মেয়ে, কোট পরিহিত এক বুড়ো ভদ্রলোক এবং পঁয়ত্রিশোর্ধ বয়স্ক একজন লোক পচনের এদিকেই আসছে। পচন এমনভাবে ওদেরকে দেখছে যেন সবাইকে চেনে। নিশ্চয়ই অনেক বড়লোক হইবো কিছু চাইলে দশবিশ টাকাও দিতে পারে মনে মনে এসব ভেবে পচন বৃদ্ধ লোকটার পা জড়িয়ে ধরে স্যার আমি এক অসুস্থ রোগী কিছু দিয়া যান। পা ছাড়, হতচ্ছাড়া! এই বলে পা ঝাড়া দিয়ে লাথি মারে বৃদ্ধ লোকটি। পচন ও মাগো বলে চিৎকার করে ওঠে। পচনের চিৎকারে পাশের মহিলার বুকের ভেতর যেন কেউ ঘণ্টা বাজিয়ে দিলো। পচনের আর্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তার বড় মায়া হয়। সে ভ্যানিটি ব্যাগ হতে বিশ টাকার একটি নোট বের করে পচনকে দিতে চাইলো। কিন্তু পচনের কেন যেন তার কাছ থেকে ভিক্ষা নিতে ইচ্ছে হলো না। পচন চোখ মুছতে মুছতে বলেন ম্যাডাম আপনে খুব ভালো, টেকা লাগবো না। বৃদ্ধ লোকটি পিছন ফিরে মহিলাটিকে ডাকে এই লোপা পথেঘাটে কী নাটক শুরু করলি? তাড়াতাড়ি আয়।
লোপা ব্যাগের হুক বন্ধ করে বলে, আচ্ছা ঠিক আছে, আসি। যাওয়ার সময় লোপার শাড়ির আঁচল পচনকে ছুঁয়ে যায়। পচনের মনে হলো তার গায়ে কেউ যেন স্নেহের পরশ বুলিয়ে গেলো। পচন লোপার হেঁটে চলে যাওয়া দেখতে থাকে। একসময় ওরা সবাই লঞ্চ টার্মিনালের বাইরে চলে যায়। পচন নিজের নিয়তির কথা ভেবে চোখ মোছে আর বলতে থাকে স্যার কুষ্ঠ রোগীরে কিছু দিয়া যান। (সমাপ্ত)
বাহ্
ReplyDelete