শনিবার ৩১শে শ্রাবণ ১৪২৭, ১৫ই আগষ্ট ২০২০
কবিতা
জিতেন্দ্র দাস জিতু
এসো গল্প শুনি
তুমি বলেছিলে একটি কবিতা শুনাতে
শুনে তো আমি অবাক
আমি কোথা পাবো কবিতা
কবিতা তো বড় বড় শব্দের আলিঙ্গনে
অনেক পড়–য়া কারো ড্রয়িংরুমের শেলফে
নয়তো শিয়রের আগে সুন্দর প্রচ্ছদে
দামী বাইন্ডিংয়ে বাঁধাই করা
সুন্দর বইয়ের অলঙ্কারে
আমি মুখ্য সুখ্য মানুষ
আবেগ বা অনুরাগ কিছুই নেই
রাক্ষসী অভাবের তাড়নায়
সব কিছু লন্ড ভন্ড স্মৃতি ভষ্মে
যেখানে প্রেম সেখানে কবিতা
ভালোবাসা আর প্রেমের মহুয়া রসে
কবিতার জন্ম হয় কবি-র মননে
এতো রসদ আমার নেই
কবিতায় গোলাপ ফুটাবো গালে
অথবা ঠোঁটে এঁকে দেবো ভরা চন্দ্রিমা
মেঘ কালো কেশে মেঘের রঙ দিতে দিতে
সবুজ তরুবীথি এখন ঝরা পাতার দলে
তার চেয়ে এসো, ভোরের স্নিগ্ধতায়
মেঘের গল্পে বৃষ্টির কান্না শুনাই
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
জীবন = দাবা
দাবার চাল চালতে চালতে মানুষ ভুলে যাচ্ছে,
জীবনটা ৬৪ খোপের বোর্ড নয়।
সাদাকে যদিও বা সাদা বলা যায়,
কালোকে কালো বলা অতটাও সহজ নয়।
হাতি, ঘোড়া, নৌকা, কোনটাই আমরা নই,
আর রাজা বা মন্ত্রী হওয়া আমাদের কম্ম নয়।
রয়ে যাই জীবনভর বোঁড়ে;
উড়ে যাই কখনো ঝড়ের তোড়ে,
কখনো বা আগুনে শরীর পুড়ে!
তাও রয়ে যাই সেই অভাগা বোঁড়ে।
জীবন পাত করে রাজা ও রাজ্যকে রক্ষা করি,
কি বা আসে যায়, যদি বেঘোরেই মরি!
বিপুল রায়
ঘুমঘোর
কাকে কবে কথা দিয়ে বসে আছি। যাকে দিয়েছিলাম সে মনে ধরে রেখেছে আমি কবে ভুলে গেছি। আজকাল অল্পতেই খুব ব্যস্তবাগীশ হয়ে পড়ি। খুব ভুল হয়ে যায়।
Ñ দেখো তুমি যা বলছ তা ঠিক নয়। আমি কোনোকালেই লাইব্রেরী থেকে ‘ ঘুমঘোর’ নামে কোনো কবিতার বই তুলিনি। তুমি বলছ বই - এর পাতায় তোমার নাম আমি লিখে রেখেছিলাম?
মিথ্যা। আমি কবিতা নয় টারজানের বই পড়তাম কিংবা স্বপনকুমারের ... কি যেন দীপক না কে যেন ডিটেকটিভ ছিল ...সহকারী রতনলাল...।
কি বললে, ‘ঘুমঘোর’ বইটা আজো তুমি সযত্নে রেখে দিয়েছ?
বড় বড় অক্ষরে আমার হাতের লেখায় - তোমার নাম?
বইটা এনে দেখিও একবার। নিজের হাতের লেখা চিনতে পারব হয়ত।
‘ঘুমঘোর’ কবিতার বইটা নিয়ে এসে সত্যি সত্যি একদিন সে আমার সামনে মেলে ধরল। সত্যি সত্যি একটা নাম লেখা। সত্যি সত্যি সেই নামটা তার, তার, তার।
সেই কবে তাকে কথা দিয়েছিলাম - আমি সব ভুলে বসে আছি।
পারমিতা চ্যাটার্জি
শ্রাবণ যাবে চলে
শ্রাবণ এবার যাবে চলে
আসবে ভাদর রিমিকিঝিমিকি ধারায়।
এবারও শ্রাবণ যাচ্ছে চলে
আমার তরী আটকে ছিলো
নীল যমুনার মোহনায়,
তোমার কাছে আমার তাই হলো না যাওয়া,
এই শ্রাবণও কাটিয়ে দিলাম শুধু অপেক্ষায়,
হলো না যাওয়া।
বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিলো,
মনের দুক‚ল ছাপিয়ে গেলো
দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই তিমিরেই
বলা হলো না,
তোমার কাছে এই শ্রাবণেও যাওয়া হলো না।
কখন যেনো ধূসর আকাশ মনকে ফেলে ছেয়ে,
জীবন নদীর দুপার যেনো আপনি গেছে ক্ষয়ে,
তাইতো ঘাটে আটকে গেলো, তরীখানি আর বাওয়া হলো না,
এই শ্রাবণও কাটলো একা তোমার সাথে মনকে আমার ভেজানো গেলোনা,
তোমার কাছে কেনো যে আর যাওয়া হলো না!
পথ যে আমার আটকে দিলো শূন্য পথের ধূলি,
ভৈরবীর সুরটাও তাই কখন গেলাম ভুলি,
সন্ধ্যা রাগে ইমন বাজে, নদীর জলে চাঁদের ঝিলিমিলি,
পথাটা কখন গেলাম ভুলে
নতুন পথের দেখা পেলামনা,
তোমার সাথে এই শ্রাবণেও দেখা হলো না।।
ধারাবাহিক গল্প
সোনার বালা গায়েব রহস্য
প্রণব কুমার চক্রবর্তী
আট
- স্যার? একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
শেখর বড় বাবুর চেম্বারে ঢুকে জিজ্ঞাসা করতেই, জগদানন্দ মুখার্জি বললেন ইয়েস। সুদাম সেনের কেসের তদন্তের ব্যাপারে একটা কেন, আপনি আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করতে পারেন।
এন্ড আই এম বাউন্ড টু গিভ ইউ দা অ্যান্সার।
- স্যার? ডায়মন্ড হারবারের মর্গে সেদিন, আপনি কি কাউকে কোন চিরকুট লিখে পাঠিয়েছিলেন মাল বাবুর কাছে - কিছু দিয়ে দেওয়ার জন্য?
বড় বাবুর এন্ডোর্সমেন্ট মত মালখানার দায়িত্ব নিয়ে শেখর মিত্র মালখানার রেজিস্টার এবং কাগজপত্র গুলো খুঁজতে খুঁজতে ওর ভিতরে রেখে দেওয়া বড়বাবুর নিজের হাতের লেখা একটা ছোট্ট চিরকুট খুঁজে পায়। সেটা বের করে ভালো করে পড়ে দেখে, ওটাতে লেখা আছে - সেনবাবু? পত্রবাহকের হাতে বাড়ির চাবি গোছা গুলো দিয়ে দেবেন। জে, মুখার্জি, বড়বাবু।
ইয়েস! মনে হচ্ছে - এই চিঠিটাই এই রহস্যের মূল চাবিকাঠি!
- হ্যাঁ। শেখর এর হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে দেখে, বড়বাবু বলেন - ঐদিন নিরঞ্জন বাবু এসে আমাকে সিআইএ এবং এসডিপিও সাহেবের সামনে ডায়মন্ড হারবার মর্গে বলেছিলেন ওর বন্ধু রায় চৌধুরীদের বাড়ির চাবির গোছাটা ফেরত দেওয়ার জন্য। ওটা না হলে উনারা কেউ সিংহী পার্কের ওই বাড়িতে ঢুকতে পারবে না। আমি উনার হাতেই এই চিরকুট লিখে বলেছিলাম বাঁকির মোড় গিয়ে মালবাবুর সাথে দেখা করে চাবি গুলো নিয়ে নিতে। উনি নিশ্চয়ই গিয়ে নিয়েছিলেন। না হলে তো ওদের কথা মতোই বাড়িতে ঢুকতে পারত না।
- রাইট স্যার। শেখর বারকয়েক টেবিলের উপর টুকা মেরে নিজের মনেই বলে ওঠে - মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটার মধ্যেই আসল রহস্য লুকিয়ে আছে! আচ্ছা স্যার, প্রত্যেকটা বালাতে কত ভরি করে সোনা ছিল? পাঁচ ভরি করে? তার মানে, পাঁচ ইন্টু তিন ইকুয়াল টু পনেরো ভরি! অনেকটাই সোনা। ফট করে গোবর্ধন স্বর্ণকারকে ফোন করে
জিজ্ঞাসা করে - সোনার ভরির তোর এখন কি চলছে? উপর থেকে উত্তর শুনেই শেখর মিত্র আঁতকে উঠে বলে - মাই গড! এ তো বিরাট অ্যামাউন্ট! প্রায় তিন লাখ টাকা!
বড়বাবুর মৌখিক আশ্বাস পেয়ে শেখর ব্যাপারটার রহস্য ভেদে তৎপর হয়ে উঠল নতুন করে সবাইকে জিজ্ঞাসা করে, তাদের সাক্ষ্য- বয়ান নথিভ‚ক্ত করে এগুলো শুরু করলো। ঘটনাস্থলের আশেপাশের দোকানদার এবং লোকজনের সাক্ষ্য থেকে একটা জিনিস ক্রমশ পরিষ্কার হয়েছিল যে, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে তিনটে চারটে নাগাদ ডায়মন্ড হারবার এর দিক থেকে একটা কালো রঙের প্রাইভেট কার এসে
ঘটনাস্থলেই মাল বাবুর সাথে দেখা করেছিল। কেন দেখা করেছিল সে ব্যাপারে ওরা কেউ কিছু বিশদ ভাবে বলতে পারেনি। তবে ওই গাড়িটা যে কিছুক্ষণ বাদেই আবার ফিরে গিয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের দিকেই সেটা অবশ্য ওদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়েছিল। সেদিন বিকেলে ওই প্রাইভেটে ড্রাইভার ছাড়াও আরো একজন লোক বসেছিল। তবে, তারা কেমন দেখতে, কী ধরনের পোশাক পড়েছিল, কিংবা মাল বাবুর সাথে ওদের কি কথাবার্তা হয়েছিল, সেসব বলতে পারেনি।
তবে কি যেটা দিবাকর রায় চৌধুরীর ওই বন্ধু রঞ্জন দত্তের কাজ!
সুমন নিজেই নিজের প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু, সেটা বললে তো হবেনা। এর ভিতরেই তো যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর আছে। এটাই রহস্য। এই রহস্যটাই তো উদঘটন করতে হবে। রঞ্জন দত্ত তো একজন পুলিশ অফিসার! ও যদি এই কাজে জড়িত থেকে থাকেন, তাহলে সেদিন ডায়মন্ড হরবার মর্গেকি ছুতেই নিজেকে অমন ভাবে ওপেন করতেন না, বা পরে দিবাকর বাবুর সাথে থানায় এসে মালবাবুর মুখোমুখি দাঁড়াতেন না। এমন স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারতেন না। তাছাড়া রঞ্জনবাবু দিবাকর বাবুর বাড়ির একজন ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। ওর দ্বারাই কাজ, শেখর কেন যেন ব্যাপারটা মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। নির্ঘাত, রঞ্জনবাবু সেদিন বড়বাবুর চিঠিটা নিয়ে চাবির গোছা গুলো আনতে নিজে না গিয়ে অন্য কাউকে পাঠিয়ে ছিলেন! কে সেই লোক!
সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে ! (চলবে...)
ভাল লেখা। পত্রিকাটি বেশ ভাল লাগল। এই পত্রিকাতে লেখা পাঠাতে হবে কিভাবে?
ReplyDeleteকোন সংখ্যায় কি ধরনের লেখা পাঠাতে হবে, সেটা কেমন করে জানতে পারবো ?