শনিবার
৩রা শ্রাবণ ১৪২৭, ১৮ই জুলাই ২০২০
কবিতা
ছেঁড়াকাব্য-৮ বিনয় কর্মকার
[তেতাল্লিশ]
গোলপোস্ট!!
বিরহের একজীবন চেয়ে থাকা---
মানুষ ভাবে প্রতিপক্ষ!!
[চুয়াল্লিশ]
সময়!!
হাতঘড়িটা বন্ধ করে ঘুমাই;
তবুও সকাল হয়!
[পয়তাল্লিশ]
ভয়!!
বেনিয়া থাবা---
রাষ্ট্রীয় গোয়ালে বাড়ন্ত ধর্মষাঁড়...
[ছেচল্লিশ]
বায়স্কোপ!!
মেঘের দামামা বাজে,
মন নাচে--- ভেতরে-ভেতরে বিক্রি হয়ে যাই।
বায়স্কোপে দৃশ্যান্তরের নাটক!
[সাতচল্লিশ]
ঘুমভাঙে!!
কাচের জানালা। বাইরে দৃশ্যপট।
ক্রমাগত স্থির অথবা সচল পর্দার আড়ালে,
কার ছবি আঁকে?
কে করে চোখের ফেরি, অবাক শূন্যতায়...
[ আটচল্লিশ ]
ফতোয়া!!
কলমের নিব থেকে ঝরছে ঋতুস্রাব।
নিষিদ্ধ হোক অপয়া কলম!
আমি কিন্তু শুনি ভ্রুণর গান...
চন্দন মিত্র
ঘর
ফেরার জন্যে ঘর থাকা চাই ঘরে
যেন পায়ের শব্দ শুনেই চিনতে পারে
নচেৎ বৃথাই বৃত্তে ঘোরা
ঘরের মধ্যে ঘর আছে যার
তার ফেরাটাই ফেরা
তখন মেট্রো স্টেশন ঝিলের ধার বা পার্কে
একলা মানুষ থাকতে চাইবে আর কে
ঘরের ছায়ায় সবাই যদি ঘর পায়
পথের পাগল দেখবে সেও ঘরে যায়
মীর সাহাবুদ্দীন
আগাম
বৃষ্টির দিনে রহিমের মনডা উতালমারে
অসময় বান আইলে রহিমের খুশি লাগে
রহিম বোতল চিনে বেলি ডান্স নিয়া থাকে
ঘরে রঙিন বাতি জ্বালিয়া সাউন্ড বক্সে গান ছাড়ে
বৃষ্টির দিনে আমিও ভাবি জরিনা আমার হইলে
সংসার কি হইতো? না ছাড়াছাড়ি হইতো।
বৃষ্টিরা ঝড়লেই বর্ষা আসে, ধানের জমি ডুবে যায়
বেরি বাঁধ ভাঙ্গে, মানুষের মন ভাঙ্গে।
রহিম জানেনা মন ভাঙ্গতে প্রেমিকা লাগেনা
শ্রমিকের ঘামে থাকে অসংখ্য প্রেমিকা
ফসলের জমি ঈশ্বরের দান, বৈশাখে
ঝড় আইলে জমির ধান মাটিতে লুটায়।
গাছের আম কাঁঠাল লিচু পরিপক্ক হবার আগে ঝড়ে যায়
পাখিরা বাসা হারায়। বর্ষা আমারো ভালো লাগে
কৃষকের লাগে, রহিম বেটার লাগে
এত বৃষ্টি লাগে আমাদের নাইলে চাষ ভালো হয়না
ফসল পাইনা, আনন্দ পাইনা
আগাম বৃষ্টি ঝড় আমরা কেউ সুখ পাইনা।
কিরণ আহমেদ
সমান্তরাল
কথার ভেতর স্মৃতিনদীর সুরাসব
চোখের ভাষায় মিষ্টি প্রেমের অনুভব
নাকটাও বেশ নিখুঁত-বুনন সব মিলে
ঠোঁটেচুমোর উষ্ণ আভাস ফুটছে যে...
তোমার কথাই ভাবছি আমি౼ খুব অধীর
দিন ফুরালো ভাটির টানে গোমতীর
আজও জ্বলে বুকের ভেতর౼ এই দিলে
সূর্যও তাই পোড়া মনটা খুঁটছে যে...
তুমি আজো আগের মতো প্রেমময়ী
আগের মতোই দীপ্তি ছড়াও౼ অন্বয়ী
তুমি এসে মিশে যাও আ-কাশ নীলে
দিগন্তের ওই হাসি আমায় লুটছে যে...
তোমার জলে সাঁতরে বাঁচে স্বপ্নরা
প্রেমের বুকে দিব্যি আছি, নেই জরা
মাঝে মাঝে ক্লান্তি আসে মন-ঝিলে
দেখি আজও সমান্তরাল ছুটছো যে...
দুটি অ-কবিতা
অপার অরণ্য
১.
মৌসুমি রোদের নির্জনতা খুন করে হুহু বুকের মধ্যে
বিষাদ বাজায় ঘুঘুপইখ,
ওসব নাকি দলীয়করণ।
কয়েকপ্রস্থ কর্পোরেট দেয়ালিকা ছিঁড়ে
কার সাথে বসবো একটি বিকেল
কার শুদ্ধ ডাকনাম হৃদয়ের রাষ্ট্র নায়ক?
পার্লামেন্টের বাজেট শেষে যেকোন রাতে কুরিয়ে
নেয়া যায় শরীরী প্রেসনোট- নোনাস্বাদ!
২.
প্রতিশ্রুতিপত্র জমা হয়
অনাবাদী জমির শরীরে ফাঁপে অনাবৃষ্টি
ধারালো পৃথিবী কেটে কেটে আমাদের আঘাত করলে
কেউ কেউ খুব সহজাতভাবে
নিজেকে নিঃশেষ করে অবিকল কর্পুরের মতো
একটি ঘুণপোকা চুপচাপ স্তব্ধ জলচোখে ঘুমায়।
বেঁচে থাকা আর ভালো থাকার ফারাক খুঁজতে
খুঁজতে পূর্ণিমা লেগে আসে
দ্বিতীয় চোখ ভাবে ‘ব্যক্তিগত’ কিছু নেই
গাছ হবার স্বপ্ন, ঘুমের ক্যাসেট, নষ্টস্মৃতি...
পেটেভাতে সহজ বলে ওরা ভালো থাকে
ওদের ভালো থাকা দেখে-
স্টেশনকে ‘কেমন আছো’ জিজ্ঞেস করা হয়নি আর।
আপন রহমান
আমি প্রস্তুত
একদিন কবিতা লেখার অপরাধে আমাকেও দাঁড়াতে হবে কাঠগড়ায়।
কারণ ;
বিষবৃক্ষ উৎপাটন করা হলেও বীজ রয়ে গেছে...
চারাও জন্মেছে ঢের
পরিচর্যায় আছে কিছু হিংস্র দানব!
আমি সেই চারা ধ্বংসের কথা বলি
আমি সেই দানব নির্মূলের কথা বলি...
সেদিন বিবাদী হবে;
চিল-শকুন-বাঁজ-হিংস্র হায়েনা আর ওদের প্রভুরা।
আমি প্রস্তুত...
ধারাবাহিক গল্প
অন্ধকারাচ্ছন্নপ্রণব কুমার চক্রবর্তী
চার
আজ শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী রাত্রি। জ্যোৎস্নার আলোতে চারপাশটা ঝলমল করছে।
এইরকম জ্যোৎস্নাস্নাত রাত্রে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার কারণে তাজমহলটা ঘুরে দেখতে না পারার ব্যথা এবং যন্ত্রণাটা মনের ভিতর যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে, সেটা হয়তো আজ একটু চেষ্টা করলে- সফল হতে পারে। যে আকাক্সক্ষাটা তাজমহলের ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল, এই কেল্লার বাগানের মাঠের আনন্দ মজলিসে বসে সেটা হয়তো সুন্দরলাল আর রাজনিশ দিকে বলে ম্যানেজ করা সম্ভব হবে! আকাক্সক্ষাটা আমাকে এতটাই খোঁচানো শুরু করেছিল যে আমি আর অপেক্ষা না করে, বলেই ফেললাম।
সুন্দরলাল আমার কথা শোনা মাত্রই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন। চোখ দুটো কপালে তুলে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন - গভীর রাত্রে জান্নাত মহল ঘুরে দেখা, সে কি করে সম্ভব!
ইয়ার ? ও নেহি হোগা। সরকারি কানুন মে নিষেধ আছে। তাছাড়া, গভীর রাত্রে মহালমে ঘুমনা ঠিক নেহি হোগা। বহুৎ খাতরা!
- কেন? কিসের খাতরা? আমি জানতে চেয়েছিলাম।
- রাত মে এইপে সব হুরি উরি, ভুত উত এসে ঘুরে বেড়ায়। ওরা জান্নাত মহলে কোন পুরুষ মানুষ দেখলে, রেগে যায়। ক্ষতি করে বসে!
- কেন ? রাগবে কেন?
- জান্নাত মহলে সম্রাট ছাড়া অন্য কোনো মরদ আদমির যাওয়া নিষেধ। ওরা এখনো সম্রাটের সেই নির্দেশ পালন করে। দু’সাল পহেলে আপনার মতই কলকাতার এক বাঙালি দাদা, এই রকমই এক রাত্তিরে মহলটা ঘুরে দেখবার চেষ্টা করেছিল। ওরা ওই দাদাকে এমন পিটাই করেছিল যে, হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করতে হয়েছিল। ইস লিয়ে...
সুন্দরলালের কথার মাঝখানে সাহেব হাতের ইশারায় আমাকে বলে- আমরা তো এখানে বসে আছি। আপকো মন চাহে তো, যাকে ঘুম সকতে। ইফ রিকোয়ার্ড, উইল অ্যাকম্পানি ইউ। যাইয়ে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে, চুপ করে গিয়েছিলাম।
(চলবে...)
মীর সাহাবুদ্দিন পথটা নতুন মনে হল, আমার কাছে।
ReplyDeleteঅপার অরণ্য ভালো।
"ছেঁড়া কাব্য" শেষটুকু টুকু টানল।
মীর সাহাবুদ্দিন পথটা নতুন মনে হল, আমার কাছে।
ReplyDeleteঅপার অরণ্য ভালো।
"ছেঁড়া কাব্য" শেষটুকু টুকু টানল।