মঙ্গলবার
১৬ই আষাঢ় ১৪২৭, ৩০ই জুন ২০২০
কবিতা
নাদিম সিদ্দিকীরুদ্ধশ্বাস
এই মৃত্যু-মিছিলের দেশে এই কালো মেঘের শহরে
হয়তো একদিন বেলা আড়াইটা বাজবে
একদিন মিডিয়ার হাজারো কর্মী মাইক্রোফোন হাতে
অধির আগ্রহে ভিড় করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে
টিভির সামনে চেয়ে থাকবে পুরো দেশ
কী হতে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পর!
ভাবতে গিয়ে যেন নিশ্বাস আঁটকে যাচ্ছে সবার
কী হতে যাচ্ছে
কী হতে যাচ্ছে এই মৃত্যু-মিছিলের দেশে!
নিশ্চুপ রাতের শেষে যেমন আসে সোনালী প্রভাত
তেমনি একদিন উল্লাসের বার্তা হাতে
আসবেন ডা. মীরজাদী সেব্রিনা।
এ কোনো গণ-অভ্যুত্থানের ব্রিফিং নয়
নয় কোনো টেরোরিস্ট গোষ্ঠীর আত্মসমর্পণের
এ ব্রিফিং জীবনের সাথে মৃত্যুর অনিবার্য যুদ্ধের
তার দিকে চেয়ে থাকবে পুরো দেশ।
সমবেত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলবেন-
“বিগত চৌদ্দ দিনে দেশে কোনো
কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় নি।”
বলামাত্রই যেন অশ্রুপাতে সিক্ত হবে তার চোখ
অজান্তেই ঝাপসা হয়ে আসবে বৃদ্ধ বাবার চশমার কাঁচ
মাস্ক খুলে সন্তানের কপালে মা খাবে স্নেহের চুমু
শহর জুড়ে ছুঁটবে বিজয় মিছিল
সম্মুখ যোদ্ধাদের সম্মানে উড়ে যাবে যুদ্ধ বিমান।
এই মৃত্যুমিছিলের দেশে এই কালো মেঘের শহরে
হয়তো একদিন বেলা আড়াইটা বাজবে
শাহবাগ পরিবাগ চষে বেড়াবে পাগল প্রেমিক
টিএসসি’র মোরে চায়ের কাপে উঠবে ঝর
কিন্তু, সেদিন আমি বেঁচে থাকবো তো!
বেঁচে থাকবে তো স্বপ্নের বাংলাদেশ!
একদিন যেথায় মেলেছে ডানা ভয়হীন শৈশব।
মো. আরিফুল হাসান
নীল নক্ষত্র থেকে
নীল নক্ষত্র থেকে আমাদের মুখোমুখী
জলজজীবন, না তৃষ্ণা না ছায়াপথ
তুমি পান্ডুলিপি ভুল কর জানলে আগামী
সারল্যে আমরাও সবুজ আর অপেক্ষার
বিস্ফোরণ ভাবতে ভাবতে তুমি পাখি।
না আগামীর লাবণ্য নয়, তুমি বিস্ময়
বিভাতুর। যেনো তুমি জানতেও পারোনি
তন্ময় বিশ্বাস
অলেখা-অদৃষ্ট
স্রোত উঠেছে -
অভিজ্ঞানহীন!
হিমচাঁপা ফুল ঝরে গেছে বসন্তের আগে!
অভিমানী স্রোতে!
বেদনার মানচিত্রে এখন আকাশ পরিষ্কার।
করোনার নিশানায় শুধু চিৎকার-হাহাকার!
ঈৃথিবী থেকে ক্রমে ঝরে যায়- ওম, লতানো বাতাস
সিন্দুক থেকে চুরি যায় নকশিকাঁথা, যাবতীয় উচ্ছ্বাস!
কোথায় ঠিকানা লুকিয়ে রেখেছ অভীষ্টের?
যেখান দৃশ্যমান বলিরেখাগুলি জড়ো হয়-
লেখা হয়
রক্তাক্ত-অদৃষ্টের!
আহাদ উল্যাহ
হিম হাত
দুটো হিম হাত ঘাড় জড়িয়ে।
ভোর রাতে যখন বৃষ্টির জল
অবিরাম ঝরে পড়ে পাতা বাহারের
পাতায়। ঘুমের ভিতর জেগে উঠে চেতনা। কাল ঘুমের
মায়াবী কুয়াশা থেকে থেকে
জমে আছে ঘোলা জলের
মত। ধূসর পাথর, সাদা হাড়।
শীতল সাপের মত আমার
ঘাড় জড়িয়ে দুটি হিম হাত।
সাব্বির হোসেন
দাবি
কিছুক্ষণের জন্য আমায় তোমরা নিষিদ্ধ কর
আমি মুখ খুলে চিৎকার করে বলতে চাই
আর কালো চশমা পরে নয়
মানবতার চোখ দিয়ে পড়তে চাই জীবন সমীকরণ।
জং ধরা কলমের খোঁচায় লিখতে চাই
স্বাধীন বর্ণমালা
লিখতে চাই - আমিও বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচতে দাও
আমি বিশ্বাস করি এ ধরণী আমার পাঠশালা।
ভাষান্তর: কায়েস সৈয়দ
মূল: পাবলো পিকাসো
৮-৯ নভেম্বর ৩৫
বুলফাইটারের
বিদ্যুতালোর
বাল্বজ্যাকেট
অনুস্যূত হয়
সূক্ষ্ম সুইয়ের দ্বারা
কুহেলিকা
উদ্ভাবিত
ষাঁড়ের দ্বারা
১৪ নভেম্বর ৩৫
ইউজেনিয়ার সুগন্ধ
গিটারের তারের
ছোট্ট নিজস্ব প্রার্থনালয়
আচ্ছাদিত
পোস্তদানা
কালো
পান্নায়
২৪ মার্চ ৩৫
পানপাত্র
করপত্র
আমার স্ত্রী
উৎফুল্ল
সশব্দে হাসা সিকতা
২ জুলাই ৩৮
বিন্দু
বিন্দু করে
ফ্যাকাশে নীল
খসে পড়ে
গোলাপের জালিগুলোতে
সবুজ কাজুবাদামের নখাঘাতে
৬ অক্টোবর ৩৬
৩০ এপ্রিল ক্যানভাস # ১৫ ফুট চিত্রশিল্পে মেয়েটি আয়নায় দেখছে নিজেকে
নিচে রাখে একটি চিরুনি কিছু চুল এর দাঁতে এবং তার চুলের মধ্যে কিছু উকুন
পাশাপাশি কিছু উকুন এবং যদি সম্ভব হয় তার প্রকাশ্য চুলে কয়েকটা চুলের কাঁকড়া
(পরিকল্পনায় যুক্ত করতে মনোমুগ্ধকর চিন্তা)
ধারাবাহিক গল্প: দ্বিতীয় অংশ
সে রাতে কেউ ছিলনাআপন রহমান
সব ভুলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছো। তুমি একবার ভেবেও দেখলে না। খাবারটা ভালো নাকি, মন্দ, তবে আমি জানি তোমার খাবারের ক্ষুধাটা মিটে গেলেই তোমার আর একটা ক্ষুধা পাবে। সেটা হলো ইরার ক্ষুধা। তোমার সঙ্গীর ক্ষুধা’। আমি চারিদিকে তাকাতে লাগলাম কিন্তু কোথাও কাউকে দেখতে পেলাম না। আমি প্রশ্ন করলাম আপনি কে? আপনাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না কেন? তিনি সেই অদ্ভুত লোকটার মত খিক্ খিক্ করে হাসতে হাসতে বলল আমাকে তো তুমি দিনে দেখতে পাবে না বৎস। রাতে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে। তখন তুমি সব কিছু জানতে পারবে। নানা ধরনের চিন্তা ভয় আর মুক্তির পথ খুঁজতে-খুঁজতে দিন ফুরিয়ে গেল। অনেক চেষ্টা করলাম রুম থেকে বের হওয়ার কোন ফল হলো না। দরজা জানালা গুলো যেন লোহাও নয় তার থেকে কঠিন কোন পদার্থ দিয়ে তৈরি, ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলো। আমি যেন হারিয়ে যেতে থাকলাম। গভীর অন্ধকার আচ্ছন্ন কোন ভিন্ন জগতে। সে অন্ধকার এতই গভীর ছিল যে জাগতিক সকল অন্ধকার তার কাছে তুচ্ছ। আমি বসে আছি। চুপ চাপ বসে আছি। হঠাৎ প্রচন্ড একটা শব্দে দরজাটা খুলে গেল। দরজার দিকে আমার চোখ যেতেই প্রচন্ড এক আনন্দের ঢেউ খেলে উঠলো আমার হৃদয়ে। আরে এ দেখি ইরা! নীল শাড়ী, নীল চুড়ি, নীল টিপে অপরূপ সুন্দর লাগছে তাকে। তার সমস্ত শরীর দিয়ে বের হচ্ছে এক অদ্ভুত আলোক রশ্মি। সে রশ্মিতে মুহুর্তে আলোকিত হয়ে গেল সমস্ত অন্ধকার। ইরা হাসছে। চমৎকার ভঙ্গিতে আমার দিকে চেয়ে হাসছে সে। ওকে দেখে মুহুর্তের মধ্যে আমি ভুলে গেলাম এ কয়টাদিন আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাগুলোর কথা। আমি দৌড়ে গোলাম দরজার কাছে, কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার, আমি ইরাকে দেখতে পাচ্ছি কিন্তু স্পর্শ করতে পারছিনা। আমি ইরার সমস্ত শরীরের উপর হাত বুলাচ্ছি, কিন্তু তার কোন স্পর্শ অনুভব করছি না। ছায়ার উপর হাত বুলালে যেমনটা ঘটে ঠিক তেমনই। স্পষ্ট একটা মানুষকে আমি দেখছি। তাকে ছোঁয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছি। কিন্তু ছুঁতে পারছি না। কী এক অস্বস্তিকর অবস্থা। হঠাৎ আবার সেই অদ্ভুত হাসির শব্দ খিক্ খিক্ খিক্ তুই ভুল করছিস বালক। ও তোর ইরা নয়। ওটা ছায়ামূর্তি। খিক্ খিক্ খিক্ । ছায়ামূর্তি ? তাহলে ইরা, ইরা কোথায় ? ইরা’কে চাস বালক? আমি জানি তুই ইরাকে খুব ভালোবাসিস। তাহলে যা বিরামপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোপীনাথ বাবুর কাছে যা। উনিই তোকে ইরার সন্ধান দিতে পারবে। তুই আজ এ ভ‚ত চক্র থেকে মুক্ত। ভ‚তচক্র! সেটা আবার কী ? অত কিছু জানতে চাস না, বালক বিপদ হবে। যা তুই চলে যা, খিক্ খিক্ খিক্। তারপর বিরামপুর আর আপনাকে খুঁজতে খুঁজতে কেটে গেল অনেক দিন। অদ্ভুত লোকটা আমাকে শুধু বিরামপুর আর আপনার নাম বলেছেন। আর কোন কিছু বলেননি। এদেশে বেশ কয়টি বিরামপুর আছে। খেয়ে না খেয়ে পাগলের মত ঘুরেছি এসব বিরামপুরে খুঁজতে-খুঁজতে আজ সৌভাগ্য ক্রমে পেয়ে গেছি আপনার দেখা। শুরুতে আপনার সঙ্গে একটু বেয়াদবি করছি, এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী! আসলে ছেলেবেলা থেকেই চরম বিপদ কিংবা দুঃখের মধ্যে আমার মধ্যে কি যেন একটা ঢুকে যায় আর তখনই আমি সকলের সাথে মজা করতে থাকি। তখন দুঃখ কিংবা বিপদ বেমালুম ভুলে যাই। আমার নানী বলতেন আমার উপর নাকি দুষ্টু জিনের আছর আছে। আমি অবশ্য ওসব মানিটানি না। দয়া করে আমার বেয়াদবি ক্ষমা করে আমাকে ইরার সন্ধানটা বলুন জনাব। নীলয়ের কথা শুনতে শুনতে মাষ্টার মশাই অনেকবার গোপনে চোখ মুচেছেন। এটা সে খেয়াল করেছে খুব ভালো ভাবেই। কিন্তু সে বুঝতে পারেনি মাষ্টার মশাই কেন এমন করছে ? আবার প্রশ্ন করে তাকে বিব্রত করতেও চাইনি। -এতক্ষণ নীলয়ের কথা গুলো তিনি মনোযোগ সহকারে শুনলেন। তারপর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলেন। হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে তিনি বলা শুরু করলেন আর এক লোমহর্ষক কাহিনী। ইরা চক্রবর্তী; আমার একমাত্র মেয়ে। একমাত্র সন্তানও, ওর জন্মের সময় ওর মা মারা যায়। তখন আমার বয়স ত্রিশ ছুঁই-ছুঁই। পরিবারের অনেকের পীড়া-পীড়ি সত্ত্বেও ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আর দ্বিতীয় বিয়ের কথা চিন্তা করিনি। তখন সবে নতুন চাকরিতে যোগদান করেছি। (চলবে...)