Friday, September 11, 2020

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার  ৯ই ভাদ্র ১৪২৭, ২৪ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা

বিনয় কর্মকার

ছবির গল্প  


ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত!

লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাটে ইয়েমেনের শিশু।

থালাগুলো চাঁদ হয়;

আমরা বামন আর চাঁদের দূরত্ব জানি।

ক্যানভাসজুড়ে সেমিনার- ‘যুদ্ধ এবং শান্তি’

টুপি কিনে কেউ-কেউ হাজী হয়ে ওঠে; কেউ আবার- চে !

ক্যাপশনে লিখে দিই- ‘শান্তির শ্বেতপায়রা’

যদিও পৃথিবীতে ছবি আঁকা হারাম!!


এম, এম বাহাউদ্দীন

পাথর চাঁপা বুক


আমার পাথর চাঁপা বুকটা আলগা করে দেখি-

রং বদলে গেছে সাদা ঘাসের মত।

আরও কিছু কাল নিজেকে এভাবেই রাখবো এখানে,

তুমি ফিরে আসবে বলে কথা দিয়ে চলে গেলে-

আমাকে কাগজ ভেবে বুকে পাথর চাঁপা দিয়ে গেলে-

যাতে উড়ে না যাই আমি হাওয়ার হাত ধরে।

ফিরে না আসো ক্ষতি নেই,

দেখে তো যাও, আমি আজও আছি সেইখানে পড়ে।


কত ধুলো বালি, জল কাদা লেগে নিজের অবয়ব-

জীর্ণ করে পড়ে আছি এই ভেবে- তুমি সত্যিই আসবে।

অথচ হাওয়ারা কান কথা বলে যায়, হারিয়ে গেছো।

বৃষ্টিরা কাঁদে আমায় রৌদ্রে পুড়তে দেখে।

আমি হাসি, মলিন ভাবে হাসলেও হাসি।

তুমি তো আমার হাসি দেখেই বলেছিলে 'ভালোবাসি'।


তুমি এ পথে আর আজ কাল আসোনা।

আমার চোখে কতকাল পড়েনি তোমার চোখ,

তোমার ছায়ায় কতকাল বিশ্রাম পাইনি ক্লান্ত আমি!

তবু রাতের প্রতিক্ষা যেমন দিনের আসায়,

তেমনি আমিও প্রহর গুনি বুকে পাথর নিয়ে।

কবে আমার যন্ত্রণা কারত প্রতিক্ষার প্রহর শেষ হবে?

বজ্রপাতে পুড়ে গেলে? না কি বন্যার বানে ভেসে গেলে?


https://play.google.com/store/apps/details?id=com.spintocard.morescratches


কমল কুজুর

তুমি-আমি ও যাপিত জীবন


একে একে কেটে যায় ব্যস্ততম দিন

ধরণীর পরে পড়ে থাকে নিরর্থক রাত 

ডোবে সূর্য, ওঠে চাঁদ নিত্যদিন; আমার ঘরের আঁধার 

তবুও হয় না দূর! 


বিপন্ন আত্মার চাপা ক্রন্দনধ্বনি 

গুমরে গুমরে মরে গৃহের কোণে কোণে।


নিশিথের স্বপ্নবিলাসী মন দেখা পায় ক্ষণিকে

ভাঙে আকাশ, ফুঁসে ওঠে সমুদ্র, তানপুরার ঝংকারে

রংধনুর রং করে মূর্ত মুহূর্তে...


আর এই সংযুক্ত সংঘর্ষ

মায়াবী ধুম্রজাল সৃষ্টি করে ক্ষণিকে

হৃদয়ে আমার গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ শেষে

এক পশলা বৃষ্টির ছোঁয়া যেন;

হাড়কাঁপানো শৈতপ্রবাহ নিয়ে- শীতের অতিথি 

পাখির সমারোহে উত্তার ধরনী।

হৃদয় আজ সৃজনী স্বপ্নযাত্রার রঙে রাঙানো

রিমঝিম বৃষ্টির ছন্দে সাজানো,

উর্ধ্বে ওড়ে মুক্ত বিহঙ্গ যেন!


https://play.google.com/store/apps/details?id=com.dailycash.freecash.freemoney.earnmoney


আনিকা তামান্না

আমি কচুরিপানা আর আপনি জল


কচুরিপানার মত ভেসে কেবল,

যুগ যুগ ধরে একটা ঠিকানা নেই বলে,

আপনি তো গেলেন সেই কবে; ফেরার নাম নেই-

জানেন কিছু!

কখনো গ্রীষ্মের উত্তাপ সহ্য করেছি 

কখনো বা বর্ষার বৃষ্টিও গায়ে মেখেছি

কখনো কখনো ফাল্গুনের বাতাসের সাথে দোল খেলে খেলে

অন্য কোথাও পাড়ি জমিয়েছি ভাসতে ভাসতে

কাটছিলো বেশ; আচ্ছা এটাই কি নিয়ম?

আমি তো কচুরিপানা হয়ে ভেসেই রইলাম, ঠাঁই হলো না কোথাও; অথচÑ

এক সময় খুব চাইতাম আমি কচুরিপানা হয়ে ভেসে থাকব

আর আপনি জল হবেন!

আমাকে আশ্রয় দিবেন সারাজীবন আপনার স্রোতে।

তারপর একদিন আপনি ফিরে এলেন 

তখন ছিল প্রচন্ড খরার মৌসম


কেউ জল হয়ে আমাকে ভাসিয়ে রাখতে পারেনি


https://website.cc.lerjin.com/i/8368320814


অপার অরণ্য

নিঃসঙ্গ শোক আমার মা


রাত-দিন-দুপুর একা এবং অন্ধকার।

জঠরে লাথি মেরে জ্যোৎস্নার গল্প শুনতে চাইলে

মা আমাকে নদীগামী পুরুষের কথা বলেন-

মা’র স্বপ্নে এক যুবকের ঠোঁট বেয়ে নেমে আসত জুঁই

মা’র নিদ্রায় কে তুলে হুংকার, -আগুন -আগুন..

ভয় পাওয়ার ভয়ে মা আগুনই জাপটে ধরলেন তাই

সেই থেকে আর গল্প শুনতে চাইনি কোনদিন।

গহীনে গোপনে একমাত্র আমিই জেনেছি

গর্ভফুল থেকেই মা আমার তুমুল সঙ্গহীন।


হামাগুরি, হাঁটতে-চলতে কাক চিলের উড়ান

নুনের ভাত কি ঘাসের রোদে কখন চুমুক দিতে হয়

মা একদিন শিখিয়ে দিলেন।

বললেন- পেটের সঙ্গে পিঠের দূরসম্পর্ক নাই

শিখালেন চোখের মধ্যে পুকুর পুষে আগুন গেলার

সম্ভাব্য কৌশল।

আরও আরও কত কি শিখালেন ইয়ত্তা নাই

ক্রমাগত সাপ-নেউলে দেখেছি বাবার সঙ্গে মা’র

এখন বোধ পেরিয়ে লিখতে পারি কানামাছি দৌঁড়


মা’র বড় ছেলে শিস টেনে টেনে হঠাৎ একদিন

ভূত-দুপুরে জলের তলায় বাঁশি হয়ে যায়

মা'র থেঁতলানো বুক ছাপে হারানো অশ্রুলিপি

মা’র শূন্য উঠানে কেউ আর হাঁটে না

মা’র চিকন সিঁথি ধরে একটা বউ-কথা-কও ডেকে

যায়, একাএকা- নিশিভোর।

সংসারবাড়ী ধুয়েমুছে আকাশদেশে মূর্ছা যেতে চাইলে

মাকে জড়িয়ে ফুটফুটে জমজ গোলাপ দিলেন বাবা


অনেকবছর পর, গল্পানুসারে একটি মোরগ সহোদর

হয়ে উঠলে মা’র নিঃসঙ্গতা ঘোঁচে

বাসনকোসন মাজার ফাঁকে মা তাকে খেতে দেয়

কোলে নিয়ে পুত্রস্নেহে চুমো খায়

কেউ না জানে চুপেচাপে কতকথা হয়ে যেত গান

মা’র কলতলা ভরে যায় শৈথিল্যের সুরকাকলি

অথচ গলায় ক্যাকটাস নিয়ে মোরগটি গতকাল লাল

মরে যায় মা’র তৃষ্ণার্ত গান

মুখে মুখপোড়া বিষাদ, চোখে চুপকথার জাগ

পুত্রশোক পেঁচিয়ে রাখে মা'র দৈনন্দিন শীত


কি নিয়ে দাঁড়াই, কি দিয়ে বলি এনেছি মাদুলি

বুকের ভিতর বাইন্ধা রাখো তামাম মায়া-স্বপন

মা’র কথা উঠলেই আমি বাবাকে আড়াল করতে চাই

অথচ বাবা এসে জড়ালেই মা’র শোক ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়!

http://qten.testla.io/page/get        রেফার কোড 'EFI7CD0N'

ধারাবাহিক গল্প

ব্লকলিস্ট

রওশন রুবী


দুই

আমি বলি,

-লেখা নিয়ে যা বলেন, তা আমি মানবো না। সেখানে আমার যুক্তি আছে। ধরুন আপনি বা আমি একজন সাহিত্যকর্মী। আমরা জীবনজ্যামে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে সপ্তাহ বা পনেরো দিনে বা মাসে একটি সাহিত্য আসরে বসা মুশকিল হয়। কিন্তু এই ফেসবুকে দেখুন, আমরা প্রতিদিন সারাবিশ্বের বেশ কিছু মানুষের সাথে সাহিত্য আড্ডা সেরে ফেলতে পারছি। আমরা যেমন কিছু শিখছি, জানছি। তেমনি অনেক কবি, লেখক উৎসাহিত হচ্ছেন। দিনে, দিনে তাদের লেখা পাল্টে নেবার চেষ্টা করছেন। এই প্রাপ্তিটা আমার কাছে বিশাল লাগে। আর গ্রুপ এবং পুরষ্কার। এ দুটো নিয়ে আমারও আপত্তি আছে।


গ্রুপ করার থেকেও মারাত্মক কিছু মানুষ আছে। যারা কি পোস্ট করে, কেন করে তাই বুঝে না। যেমন- কখন খেল, কখন শুলো, কখন মুতলো আর কখন কাশি দিল, বাসর রাতে কী গল্প করবে সে বিষয়েও পরামর্শ চেয়ে পোস্ট। এমন কি ডায়রিয়া আক্রন্ত হলে সে খবরটিও পোস্ট করে দিতে দ্বিধা করছে না। ফাজিল একেকটা। ওদের আইডিতে রাখতেও রুচিতে বাঁধে। এদের মধ্যে আবার কিছু আবাল বিবেক শূন্য। অসহ্য লাগে তাদের। যেমন- বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভাই বোন বা কোন রিলেটিভ মারা গেলেই সেই মুহ‚র্তে তারা শোক না করে ফেসবুকে একটা পোষ্ট দিয়ে দেয় মৃত্যু জনিত। বিস্ময় লাগে এমন শোকের সময় পোস্টানোর মতো মানসিকতা আসে কি করে? তারা কি তবে স্বজন বা মা, বাবা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, ভাই বোনের চেয়ে ফেসবুক বন্ধুদের আপন ভাবে বা বড় ভাবে? যাদের সে প্রতিমুহূর্তের শোক দুঃখ আনন্দ দৈনন্দিনের খবরা খবর না দিয়ে থাকতে পারে না?


এই যেমন এখন একজনের পোস্ট দেখে বেদনার্ত হলাম। তার মা মারা গিয়েছেন। তিনি অকাতরে কাতর হয়ে ফেসবুক জুড়ে পড়ে রইলেন। লিখলেন-


আসসালামু আলাইকুম


ইন্না লিল্লাাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন। দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমার প্রিয় মা গতরাতে শান্তিতে আলহামদুলিল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন। তিনি একজন ধার্মিক, যত্নশীল এবং প্রেমময় মহিলা ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার আগে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ছিলেন। দোয়া করুন যেন আল্লাহ তায়াালা তার প্রতি করুণা করেন এবং তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতুল ফেরদৌসে তাকে সর্বোচ্চ পদ দান করেন। আমীন।


তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে: উত্তর পশ্চিম কোটপাড়া, মুসলিম সমিতি, ঢাকা। কোতোয়ালী মসজিদ মোহাম্মদপুর, ঢাকা। যোহর সালাতের পরে ২:০০, শনিবার ১১ জানুয়ারি ২০২০। জানাজার পরে দাফন করা হবে আজিমপুর গোরস্থানে। 


দাফন শেষে আমার পরিবারে সাথে মসজিদে ফিরে খাবার গ্রহণ করবেন। আমি আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।


জাজাক আল্লাহ ।


পরিশেষে 

সিলিতা হক।


কিযে অদ্ভুত এই মানুষটা। এমন মানসিকতার বহু মানুষই আছেন। আমি একটি উদহারণই দিলাম।


ভাবতে ভাবতে স্টপেজে গাড়ি এসে থামল। নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। মানুষ বিচিত্র রকম। কখনো কখনো হয়ত জ্ঞনশূন্য হয়ে পড়ে। (চলবে...)


https://l.facebook.com/l.php?u=https%3A%2F%2Fplay.google.com%2Fstore%2Fapps%2Fdetails%3Fid%3Dcom.spintocard.morescratches%26fbclid%3DIwAR2vET6Db0Mxl6y2K-y46ARlm0ayocrxdm50PWpaRih_E-aXOxqKmWxoRTg&h=AT1OpmoGlMHptY4KmisBfiZQs7r-70vZ6fs2YCeLNzdQ2axQaausZFkEeCigFnehxPutGKlLAoJvgyGBPdw-ebRcfEfUzIV1ypmet6idTPR_likPURRBUZIULyHv3SHl4Jg

Tuesday, September 8, 2020

শিল্প সাহিত্য ১৩২

রবিবার  ৮ই ভাদ্র ১৪২৭, ২৩ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা

আরিক্ত অর্ক 

পতিত বৃষ্টি


শতবর্ষ আমাকে পোড়ানোর জন্যই আমাকে ভালবেসেছিলে দেবী?


আমি ঋণী তোমার, পচাখের দৃষ্টির কাছে,

ঠোঁটের স্মিত হাসির শিরোনাম ছবিতে।


বেঁচে থাকার এক ইচ্ছে গুলোকে তুমি যতনে রেখো দিবে অতটুকুন নথের ডগায়,

টিপের পাতায়।


আঠা ফুড়িয়ে গেলে যেমন কালছে দাগে আয়নাটাতে অন্ধকার আসে তেমনি করে আমিও অন্ধকার হয়ে যাবো তোমার চোখের দৃষ্টিতে।


মলিন বিষয় হচ্ছে,

নিশ্চয়ই ঠিক করে আঁচল খোলা ছাদে তুমি আর দাঁড়িয়ে রবে না কোন উদভ্রান্ত যুবকের পথ পানে!!


দৃষ্টি তখন কর্পোরেট ভোগবাদী জীবনের কাটাতে।


সময় করে আয়োজনে দোল খাবে তোমার রাত্রি সুখের আদর।


কফির পেয়ালা আনমনে কবি গল্পের মতো হারিয়ে যাবে, 

তুমি আমার দেবী ছিলে!!


ভাবতে গেলেই ঘা গুলিয়ে বমি আসে,

অথচ তুমি রোজ নিয়ম করে সংসার বাঁধো।

বায়ন্ ধরো নতুন বুক পশমে।


- তুমি আমার পদবী ছিলে??


শেখ রিপন 

আমি আমাকে দেখেছি


আমি আমার স্বপ্নকে দেখেছি, লজ্জাবতী গাছের ন্যায়... কোমল ছোঁয়ায় নুয়ে পড়তে।


আমি আমার ভাবনাকে দেখেছি হালকা বাতাসের হাওয়ায়... কাগজের নৌকার মত জলে ভাসতে।


আমি আমার বাস্তবকে দেখেছি উৎসুক জনতার ঠাট্টাই কুলুর বলদ হতে...


আমি আমার সততাকে দেখেছি

আপন কিছু মানুষের হাতে

করুণ লাঞ্ছিত হতে...


অনার্য নাঈম

তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা


তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা

সংসারের দিকে মুখ করে;

আমি পৃথিবীর দিকে।

মাঝখানে ছিলোনা কোন দ্বিধা

যে ঘুরিয়ে দেবে তোমার মুখটা আমার দিকে

অথবা আমারটা তোমার দিকে।


তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা

সন্তানের দিকে মুখ করে;

আমি অর্থ ও রাজনীতির দিকে।

মাঝখানে নাই কোন সীমান্ত দেয়াল

অথবা রাষ্ট্রীয় বন্দুক আমাদের দিকে।


তুমি দাঁড়িয়েছিলে একা

মৃত্যুর দিকে মুখ করে;

আমি দয়ময় ঈশ্বরের দিকে।

মাঝখানে নেই কোন প্রার্থনা

অথবা প্রেরিত পুরুষের আবেদন।


শেষ পর্যন্ত মানুষ একা

জীবিত অথবা মৃত।


মো.আরিফুল হাসান

বিকেলটা ম্লান হয়ে আসছে


আমার চোখ থেকে খুলে পড়ছে পাতার সবুজ

দিকে দিকে ম্লান হচ্ছে আলো

তোমার মুখের উপর আর ঘুমটা টেনো না প্রিয়তমা।


সন্ধ্যার ক্ষাণিকটা আগে-

আমি আমার নিজস্ব অন্ধকার ঘরে বসে আছি

কেউ কি জানে, রাত নামার কতদূর বাকি?


ছায়া ছায়া হয়ে আসে পৃথিবী।

আমি ভাবছি-

আমার কল্পনালোকে কে থাকে ঘুমিয়ে এমন মৃতবৎ?


আশিক আকবর

নতুন ধারার কবিতা : চার


বূর্জোয়া প্রেম প্রার্থিনীর বাসায় আজকাল

ঢুকতেই পারি না

শেও হৈছে হাতির মতো মোটা

তার বাসার সামনের ফুটপাতে 

ইআ মোটা আবলুস এক চা অলা আছে

তার দোকানে প্রেম প্রার্থিনীর কথা মনে করে 

তারিয়ে তারিয়ে চা খাই

শেষ বার যখন হাতিনী রিকসা জুড়ে চলে গেছিলো

তখন এক বস্তির মহা মোটা আয়েশী কুত্তাকে

খুব করে আদর করে ছিলাম

ছবি তুলে ছিলাম

ঐ ছবি ফেইস বুকেও আপলোড করে ছিলাম


নতুন ধারার কবিতা : পাঁচ


ওরা আড্ডা মার ছিলো

সাথে আমিও

ব্যাগটা ওদের কাছে রেখে

মেয়েকে আগাইআ দিতে গেছি জয়নুল গেইটে

ফিরে এসে দেখি ওরা নেই

ব্যাগটাও কই?

রেস্তোরার আর্দালিরা যত্নে রেখেছে তুলে

ওরাই আপন হৈআ আশিক কে চিনেছে

কবিরা চিনেনি

যেহেতু ওরাও কবিতা লেখে 

আধা কবির কাছে কবির দাম কানা পয়সা


জয়ন্ত বসু 

মেঘের বাহুতে বেঁধেছি  রাখী-বন্ধন


মেঘের বাহুতে বেঁধেছি রাখী বন্ধন

আকাশের গায়ে এঁকেছি আমি রংধনু।

তুমি আসবে বলে রাতের আকাশ সাজিয়েছি

শিমুল, পলাশ, বকুলে।


কাল সারারাত ছিল অন্ধকারে ঘেরা

অবিরাম ঝরে ছিল শ্রাবনের ধারা।

তোমার নুপুরের শব্দ শুনেছি বাতাসের গ্রামাফোনে

ঈর্ষাকাতর পূর্ণিমার চাঁদ আসেনি আকাশে।

আমার অপেক্ষার প্রহর মিশে গেছে বাতাসে

ভালোবাসার বৈরী স্রোতে

ঘুরপাক খায় বেহুলার ভেলা।

নিষ্ঠুর নিয়তী নিজ হাতে

মেঘের দেয়ালে বাঁধে তানপুরা।।


ধারাবাহিক গল্প

ব্রকলিস্ট

রওশন রুবী


এক

তাড়াহুড়ো করে অফিস বেরুলেও প্রায় দশ মিনিট লেট হয়ে গেল। আটটা পঁচিশের গাড়িটা ধরতে পারিনি এক মিনিটের জন্য। গাড়িগুলো টাইম মেইনটেন করে চলে। একমিনিট বহু সময়। কয়েক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না। এদের লেটফাইন আছে বলেই এ অবস্থা। কতদিন এমন হয়েছে রাস্তার এপারে আমি, ওপার দিয়ে গাড়ি চলে গেছে। হাইওয়ে রাস্তা বললেই পার হওয়া যায় না। একটু অসতর্ক হলেই মাস্ট এক্সিডেন্ট। গাড়ি চলে গেলে দশমিনিট পর অন্য একটি আসে। তখন অপেক্ষা না করে সিএনজি দিয়ে স্টেশন গিয়ে গাড়িটা ধরতে হয়। দশ মিনিট পর পঁয়ত্রিশের গাড়িটা এলেই বাম হাত তুলে দাঁড়িয়ে রইলাম। ক্ষাণিকক্ষণ মনে হলো ড্রাইভার দ্বিধায় ভুগছিলেন, তুলবেন নাকি না তুলবেন? তবু গতি স্লো করায় আমি উঠে পড়লাম। এক রুটে দীর্ঘদিন চলার সুফল বলতে হয়। সব ড্রাইভারই প্রায় চেনে।


উঠেই বুঝলাম ড্রাইভারের দ্বিধার কারণ। মানুষ গিজগিজ করছে। পা রাখার জায়গা নেই। দরজা থেকে ভেতরে ঢুকার কথা কল্পনা করাও বৃথা। সিট দখল করা বীরপুরুষেরা এর মধ্যে পরামর্শের তীরে বিদ্ধ করছেন। কিন্তু কেউ তিন মিনিটের জন্য সিট ছেড়ে দিচ্ছেন না। দরজার মুখে ইঞ্জিনবনাট সিট জুড়ে বসে থাকা ছাত্রীদের ধরে কোনমতে একপায়ে দাঁড়ালাম। অন্য পায়ের আঙুলগুলো একটুকু ফাঁকা পেয়ে ঠেঁসে দিলাম। তিন মিনিট পর স্টেশন এসে গেল। বাস থামনো। বীরপুরুষেরা দাঁড়ানো মানুষটার উত্তাপের নেশায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে চাইলেন। ঝাঁঝের সাথে বললাম,

-আগে বসি, তারপর নামবেন। 


এতক্ষণে ইঞ্জিনবনাট সিটে বসে থাকা মেয়েগুলো নেমে যাচ্ছে। একটা সিটে বসে বীরদের বেরুতে দিলাম। ওদের মুখের দিকে না তাকিয়েও বুঝলাম, আমাকে গজব ঢালছেন। দু’একজন পাগড়ি, পাঞ্জাবি পরা লোক গজগজ করতে করতে বিরক্ত হওয়াদের সাথে নেমে গেলেন। থোড়াই কেয়ার আমার। রাস্তায় নেমেছি যখন নিজেকে রক্ষা করেই চলতে হবে। ওদের সংখ্যা বেশি হলেও এভাবে থামিয়ে দিতে হবে। 


লোকজন নেমে যেতেই সিটটা পাল্টে নিয়ে বসলাম। ফেসবুক অন করলাম। সেই ভোররাত থেকে উঠে প্রার্থনা, রান্না, ঘরের কাজ, গোসল করে বেরুতে বেরুতে আটটা পার হয়। কর্মস্থলে যেতে একঘন্টা সময় লাগে। সকালে গাড়িতে বসে ফেসবুকে চোখ রাখি। সাহিত্য নিয়ে যারা চর্চা শুরু করেছেন, আর যারা বড় সাহিত্যিক হয়ে ফেসবুকে একাউন্ট খুলেছেন দু’রকম মানুষকে আমার সমিহ করতে ইচ্ছে করে।


অনেকেই নাক সিটকে বলেন,

-কী সব লিখে আবোল তাবোল। পড়তে গেলেই বিরক্তি ভরে যায়। সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই হয় না।


আমি তাদের বলি,

-একটু কষ্ট করে পড়ে ওদের পাশে থাকুন। একদিন দেখবেন এদের থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামীর লেখক, কবি। 


তারা উত্তরে বলে,

-এদের পড়ে জ্ঞানের কিছুই পাই না। না শব্দ নিয়ে ভাবে এরা, না চিত্রকল্প বা কবিতার ভাব নিয়ে ভাবে। দ্রিম করে দেখবেন কিসের সাথে কি মিলিয়ে লিখে ফেলে। এরা আসলেই কিছু বুঝে না। শুধু বড় বড় বুলি ছাড়ে। এদের মধ্যে অনেকেই আছে ধান্ধাবাজ। গ্রুপ করবে আর দলবল নিয়ে প্রোগ্রাম করে পুরস্কার দিয়ে বেড়াবে। যে দু’কলম লিখতে জানে না, সে নাকি একজন কবি, লেখকের বিচারক। আসলে গ্রুপ করে গ্রুপের লোককে নানা ভাবে ভাঙিয়ে খায়। এক কথায় বলতে পারেন, “কৈ এর তেলে কৈ ভাজা।” যত্তসব বোকার হর্দরা দলে এসে ভিড়ে। বুঝেও বুঝে না। আবার বুঝে উঠলেই দেখবেন একটা গ্রুপ ভেঙে অসংখ্য হয়। (চলবে...)


Sunday, September 6, 2020

শিল্প সাহিত্য ১৩১

শনিবার  ৭ই ভাদ্র ১৪২৭, ২২ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
অনন্ত প্রবাহে

রোজই উঠতে উঠতে কত বেলা হয়ে যায়
যখন আমি রাস্তায় এসে দাঁড়াাই 
তখন চল্লিশ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে
বুঝতেই পারি না কোথা থেকে শুরু করব
বা আদৌ আমার এই সময় শুরু করা উচিত কিনা

এইসময় আমি পায়ে পায়ে জড়িয়ে যাই
মাথাটাও কাজ করে না ঠিক ঠিক
গত রাত থেকে জামাটাও হারিয়ে গেছে
বেশ কিছু অঙ্ক কষা ছিল জামায়
আমার উঠতে দেরি দেখে
কে একজন গলিয়ে নিয়ে পালিয়েছে

টলতে টলতে গাছের কাছে যাই
যেখানে শুরু নেই, শেষও নেই
একটা অনন্ত প্রবাহে
আমি পা রাখতেই কে যেন আমাকে তুলে নেয়
পরিমাণ নয়, পরিমাপ নয়
চলতে চলতে শুধুই বয়ে চলা।

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী 
লিখে যাবো সম্প্রীতির কবিতা

আমি গেয়ে যাব সাম্যের গান
যতদিন না মৃত্যু এসে আলিঙ্গন করে

অবিরাম লিখে যাব সৌহার্দ্য সম্প্রীতির কবিতা
যতদিন এই দেহে হৃদস্পন্দন থাকে।

জানি! তোমরা আমায় নিয়ে কী ভাবছো!
এও জানি! তোমরা আমায় কিছুতেই সহ্য করতে পারোনা।
তবুও আমি ভেঙে পড়িনা,
দূরন্তপনায় ডানা মেলে উড়তেই থাকি।

আমি তোমাদের মতোই রক্ত-মাংসের দেহ নিয়ে জন্মেছি,
জীবনের অফুরান স্বাদও গ্রহণ করেছি।

আঘাতে আঘাতে বেদনার স্পর্শে
কখনো ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে পড়ি
তবুও পিছুটান নেই, তোমাদের মাঝেই থাকি।
আমি তোমাদের সব ক্রোধ আর হিংসুটে মনোভাব
গানলামি আর কবিতার মুর্ছনায় ভাসিয়ে দেব।

ক্ষণে ক্ষণে সময়ের ব্যবধানে
আমি সে তোমাদেরই লোক হয়ে যাবো।

মোহাম্মদ আবদুর রহমান 
জীবনের অংক 

পাটিগণিতের  সহজ  প্রশ্নের উত্তর মিলাতে পারিনা 
মনের খাতায়  বার বার করেছি কাটাকাটি 
শুধু পাই একই উত্তর যা উত্তর মালায় নেই।
তবুও হাল ছাড়িনি 
খুঁজে চলেছে উত্তর সমাজের বুকে
কখনো কখনো নিজের উত্তরকেই  সঠিক বলে মনে করি 
তবে আবারও মনে হয় আমিতো আর বিশেজ্ঞ নই।
 
জীবনের সেই সুদের অংকটা 
জীবনের শেষের দিকে এসে দেখা যায় সুদের সাথে হারিয়ে যায় মূলধন
মূলধন পরিণত ঋণে 
তাহলে কি সুদের হার ঋণাত্মক ছিল?
যা বুঝতে ভুল করেছি 
তাহলে তো এবার  উত্তর মিলে যাবে 
মিলে গেল মা কেন বৃদ্ধাশ্রমে।


নাদিম সিদ্দিকী
অন্বেষণ 

আমি সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে আসিনি
সমাজতান্ত্রিক নেতার ব্যক্তি চরিত্র হরণ করতেও আসিনি আজ
আমি শুধু অপ্রকাশিত সত্যের কথা বলতে এসেছি।

রাজনীতির মেরুকরণে আজ কমিউনিজমের ভেতর
দুটি ধারা
একদিকে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার রাজনৈতিক চর্চা
অন্যদিকে তথাকথিত সুবিধাবাদী আন্দোলন।
অবশ্য বিলোপবাদীরা ছেড়ে গেছে অনেক আগেই
কিন্তু রয়ে গেছে তাদের প্রেতাত্মা চাটুকার।
তাইতো সোভিয়েতের পতনের পর যখন থুবড়ে পড়েছে দেশীয় বিপ্লব
ক্ষমতার কাছে বিক্রি হয়েছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ।

আজ কমিউনিস্টদের ভেতর জেঁকে বসেছে সুবিধাবাদের পাপ
অন্তঃকলহের ভীতে গড়ে ওঠা একচেটিয়া আধিপত্য
গ্রাস করেছে আপাদমস্তক।
গণতন্ত্রের টুপি পরা নব্য ফ্যাসিস্ট সরকার কিংবা তার
মন্ত্রীসভা সমর্থন দেওয়াই এখন আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য।

কমিউনিস্ট এখন আর সেই কমিউনিস্ট নেই
মহাকালের অতল গহ্বরে হারিয়েছে শ্রেণি চরিত্র।

হে কমিউনিস্ট, তুমি আগে কমিউনিস্ট হও
প্রশ্ন করতে শেখো তোমার তোমাকে
কি
কেন 
এবং
কিভাবে নির্ধারিত হবে বিপ্লবের রণনীতি রণকৌশল?
কোথায় মার্কসবাদ কোথায় লেনিনবাদ
কোথায় সর্বহারার সংগ্রাম শ্রেণিহীন সমাজ?

আজো পল্টনের ফাঁকা ময়দানে সরকার বিরোধী সমাবেশ হয়
প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কিংবা
বিক্ষোভ মিছিল থেকে তোতা পাখির মতো
বিপ্লবী আওয়াজ ওঠে
লাল পাতাকায় ছেয়ে যায় অন্তরীক্ষের বুক।
শত শত বিপ্লবী তরুণ স্লোগান দেয় রোদ্দুরে
“ভাত কাপড় জমি কাজ
লাল ঝাণ্ডার এক আওয়াজ।”
কিংবা
“ভাত দে কাজ দে
নইলে গদি ছাইড়া দে।
কেউ খাবে তো কেউ খাবে না
তা হবে না তা হবে না।”
শহরের বুকে ছিল নামানো হাজারো তরুণের মতো
আমিও কমিউনিজম ভালোবাসি
মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ আমাকেও
অনুপ্রাণিত করে আলোড়িত করে ভাবতে শেখায়
শ্রেণিহীন সমাজের স্বপ্ন আমিও দ্যাখি অহর্নিশি।

হে কমিউনিস্ট, তুমি স্লোগান দিচ্ছো, মিছিল করছো
কিন্তু সে স্লোগান আজ কোন পক্ষে যাচ্ছে
তুমি কোন পক্ষ সমর্থন করছো?

পৃথিবীর দেশে দেশে অণু থেকে পরমাণু কিংবা
পরমাণু থেকেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত হতে হতে
সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন আজ ভগ্নচূর্ণ  মরিচীকাময়।
এখানে রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে রাজনীতি
পার্টির বিরুদ্ধে পার্টি
কমিউনিস্টের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট
সেখানে তুমি কোন পক্ষ সমর্থন করছো?

হীন স্বার্থ চরিতার্থের কাছে নত হওয়া সুশীল
আজ তোমাকে কোন পক্ষে নিয়ে যাচ্ছে?
একদিকে বিলোপবাদী কমিউনিস্ট প্রেতাত্মা
অন্যদিকে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার শ্রেণিহীন সংগ্রাম
ঝাণ্ডার পদতলে তুমি কোন পক্ষ সমর্থন করবে?
কোন পক্ষে বিলীন হবে তোমার স্বপ্ন নতুন যৌবন?

আমি শ্রেণিসংগ্রামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতে আসিনি
বিপ্লবের নামে বিপ্লবী বুলি ছড়াতেও আসিনি আজ
আমি শুধু বিপ্লবের পথ খুঁজতে এসেছিলাম
মার্কসবাদ লেনিনবাদের দীক্ষা নিতে এসেছিলাম।

অণুগল্প
করোনা থেকে বাঁচা
তপনকুমার দত্ত

স্বপ্নদা আমি প্রত্যয় বলছি। পরিস্থিতি ক্রমশঃ জটিল। তবু আপনার ভাবনা বলুন কী করা উচিত।
- এ এক অদ্ভুত জীবন। না দেখা শত্রুর ভয়ে দিন গুজরান । কী হবে এখন, কী হবে পরে বোঝা মুশকিল। তবু খাচ্ছি দাচ্ছি। ঘুমাবার চেষ্টা করছি। ভয় ভেঙে বেরুতে চেষ্টা করছি অঙ্কুরোদগমের উঁকি মারা নবরূপে। এমন অদৃশ্য শত্রুর সাথে লড়াই এসময়ের মানুষ ভাবেনি কখনো। তবু বাঁচতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে শরীর ও মনে । অহেতুক ভয়ে ভয়ে মৃত্যুর থেকে রহস্য ভেদের লক্ষ্য নির্ণয় করতে হবে।
প্রত্যয় একটু ধরো।একটু জল খেয়ে নিই।
- ঠিক আছে স্বপ্নদা। আমি লাইনে আছি।
স্বপ্নময় জল খেয়ে আবার শুরু করলো। দিনযাপনের কথামালা।
- হ্যালো প্রত্যয় শুনতে পাচ্ছো ?
- হ্যাঁ পাচ্ছি। বলুন-
- এ এক অদ্ভুত খেলা। ধরো তুমি গোলকিপার। তোমাকেই গোল রক্ষা করতে হবে। পেনাল্টি-পেনাল্টি খেলা। শুধু বল আসছে আর আসছে। পরপর ক্যাচ ধরে। ঘুষি মেরে। ঝাপিয়ে পড়ে। শুধু ঠেকিয়ে যাওয়া আর ঠেকিয়ে যাওয়া। না পারলেই গোল। অর্থাৎ করোনা আক্রান্ত একজন। এরপর অন্যকথা। অন্য ব্যস্ততা। প্রত্যয় বিশ্বাস করো এসব না বলাই ভালো। শুধু নিজেকে দুর্বল করা।
- তবু অন্য কোনো উপায় ?
- এসব নেগেটিভ কথা বাদ দিয়ে শরীর ও মন সুস্থ সামর্থ রাখতে হবে। যখন যা তখন তা করতে হবে। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদিনী’ মনোভাবে প্রতিটি মুহূর্ত সচেতন থাকতে হবে। আপাততঃ করোনা মোকাবিলায়। তবেই বাঁচা। বাঁচার মতো বাঁচা।
- স্বপ্নদা, সাহস পেলাম। ভালো থাকুন।


Saturday, September 5, 2020

শিল্প সাহিত্য ১৩০

শুক্রবার  ৬ই ভাদ্র ১৪২৭, ২১ই আগষ্ট ২০২০


কবিতা
কমল কুজুর
অন্তহীন

পৃথিবী থেকে মানুষগুলো ক্রমশঃ বিদায় নিচ্ছে।
ঠিক সেই অতিকায় ডাইনোসরের মতো
হঠাৎ করেই যেন সাম্রাজ্যের পতন
- মনুষ্য সভ্যতা।

সরীসৃপগুলো মানুষের মতো নয়।

ওরা আলাদা রকমের
পা নয় ,
ওদের বুকে ভর করেই চলতে হয়।

মানুষের পা আছে
পায়ে পায়ে এগিয়ে চলাই মানুষের ধর্ম,
তারপরও কী আশ্চর্য -
মানুষগুলো ক্রমশঃ বুকে ভর দিয়ে
চলা শুরু করেছে।

আমার চারপাশে এখন আর মানুষ দেখি না
হরেক রকমের সরীসৃপ দেখি শুধু,
বিষধর, তীক্ষ্ণ ফলাধারী।
তাহলে কি মানুষগুলো সরীসৃপ হয়ে যাচ্ছে?

হয়তো বা
বিষের ভাঁড়ারে পূর্ণ হয়েছে ধরণী।

আজাদ হোসেন
মায়াবী ও চাঁদ

মায়াবী ও চাঁদ তোমার রূপের আগুনে আমায় পুড়াও,
আমার এ কাঁচা অঙ্গ পুড়িয়ে দাও করে সোনা।
আমি হাঁটতে চাই তোমার সাথে,
মায়াবী এই নিঝুম রাতে,
আমি গাইতে চাই তোমার সাথে,
আমায় তোমার সঙ্গী করে নাও।
আমি ভরা পূর্নিমায় তোমার সাথে জাগবো।
তোমায় নিয়ে আঁকবে,
তোমায় নিয়ে লিখবো
আর তোমায় নিয়ে গাইবো
তুমি মুগ্ধ করেছো আমায়।
আমি তোমার রূপে দিশেহারা।
প্রভাতের পাখি গায় ও চাঁদ যেওনা আর একটু সময় থেকে যাও।
এসময় আর ফিরে আসবে কি?
আশায় রইলাম তোমার আশে। 

অণুগল্প
বৃষ্টিপাত
নুসরাত রীপা

সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি।
বন্ধের দিন বিছানায় শুয়ে আলসেমি উপভোগ করা যায়। কিন্তু টগর তা করে না। ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা খেতে খেতে রান্না ঘরে ঢোকে।

সুমন খিচুড়ি খেতে ভালোবাসে সাথে কড়কড়ে আলু ভাজা আর গরুর গোশ।

বাসাটা ছোট। পেছনে ঝিল। বর্ষার জলে ঝিল টইটম্বুর। জলের রং সবুজ। পাড়ের গাছগুলোর ডালপালা বর্ষার জলে লকলকিয়ে বেড়ে উঠেছে।

কিছু কিছু ডাল ঝুঁকে পড়েছে জলের ওপর। মনে হচ্ছে নিজের গা থেকে সবুজ ঢেলে দিচ্ছে ঝিলে!

টগর খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে গোসল শেষ করে একটা আসমানী শাড়ি পরলো। কপালে লাল টিপ। টিপ সুমনের খুবই প্রিয়। আয়নায় নিজেকে দেখে টগর নিজেও মুগ্ধ!

একটা চেয়ার টেনে জানলার পাশে বসে তাকিয়ে রইল রাস্তার দিকে। সুমন বলে গিয়েছে টগর যেন আসমানী রঙ শাড়ি পরে। একটা জরুরী কাজ সেরেই ফিরে আসবে। প্রবল বৃষ্টিতে টগর বেরোতে মানা করেছিল। সুমন হেসে বলেছে, তুমি রান্না শেষ করতে করতে আমি ফিরে আসব। দুজনে এক সাথে খাব।

নির্জন রাস্তা। জলে ভিজে ক্লান্ত। টগরের চোখের মতন। টগরের বুকে বৃষ্টি পতনের শব্দ।

আজ এগারো বছর তেইশে আষাঢ় টগর সুমনের জন্য এভাবেই অপেক্ষা করে।

চারুলতা শশী
মধ্য রাতের খুনসুটি ( পর্ব এক )
     
-  এত রাতে ভালো ছেলেরা অনলাইনে থাকে না। 
-  ভালো মেয়েরা থাকে বুঝি?
-  মন  ভীষণ বিষণ্ন, তাই আছি। 
-  মন বিষণ্ন থাকলেই সুদর্শনদের খুঁজে খুঁজে নক দেন?
-  শেষ কবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন?   
-  আজ বিকেলেই, কেন?
-  গ্লাসটা পরিষ্কার করে নিয়েন। তাহলে আপনার ভুল ভেঙে যাবে।
-  কি ভুল?
-  ওই যে, আপনি সুদর্শন।   
-  গ্লাস  পরিষ্কারই আছে।
-  তাহলে চশমার পাওয়ার বাড়ান, 
-  চশমার পাওয়ার বাড়ালে সমস্যা  আছে।
-  কি সমস্যা ?  
-  সুন্দরীদের ছবি স্পষ্ট দেখলে হার্ট ঠিকমতো কাজ করে না। রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়।  
-  সারাদিন ফেইসবুকে সুন্দরীদের প্রোফাইল ঘাঁটলে তো এমনি হবে। 
-  সবার প্রোফাইল ঘাঁটি না। শুধু মাঝরাতে যাদের মন বিষন্ন থাকে তাদের টা।   
-  তা তো দেখতেই পাচ্ছি। বাচ্চাকালের ছবিতে গিয়ে লাইক দিচ্ছেন।   
-  আগে বেশ সুন্দরী ছিলেন। 
-  এখন নেই?
-  এখন তো বয়ফ্রেন্ড আছে। যাদের বয়ফ্রেন্ড আছে তাদের দেখতে কুৎসিত লাগে আমার। 
-  ধান্দা খারাপ।         
-  মন বিষণ্ন কেন? বয়ফ্রেন্ড পাত্তা দেয় না?    
-  বাহিরে বৃষ্টি, শব্দ শুনতে পাচ্ছেন? 
-  হুম। রোমান্টিক আবহাওয়া। এই আবহাওয়ায় বয়ফ্রেন্ড অন্য মেয়েদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই শুধু  মন খারাপ হয়।
-  এছাড়াও বিষণ্নতার  কতো কারণ থাকতে পারে। 
-  কি কারণ?       
-  বাহ রে, আকাশের কতো কষ্ট! নইলে এমন অজোরে কাঁদবে কেন? অন্যের কষ্টে আমার মন খারাপ হবে না???              
-  বাব্বাহ! মন খারাপের খুব ভালো যুক্তি দেখালেন। 
- যুক্তিতেই মুক্তি,
-  তো মন ভালো হয় কিসে? 
-  আপনি এখন নায়ক রুবেলের মত একটু নেচে অথবা বাপ্পারাজের  মতো একটু কেঁদে  ভিডিও করে পাঠালেই ভালো হয়ে যাবে। 
-  এহ! আমি জোকার না। 
-  কি আপনি ?  
-  ভালো ছেলে।   
-  ভালো ছেলেরা কি করে? 
-  শুধু গার্লফ্রেন্ডের জন্য নাচে। আমার গার্লফ্রেন্ড হবেন? তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারি।     
-  আমার বয়ফ্রেন্ড আপনার হাড় গুড়ো করবে। 
-  বয়ফ্রেন্ড সন্ত্রাস নাকি?    
-  জি, না। ভদ্রলোক । 
-  ভদ্রলোক হলে রিক্সায় আপনার সাথে এতো চাপাচাপি  করে বসে কেন?
-  আপনিও তো ছেলে খারাপ। সেদিন চোখ মারলেন কেন? 
-  নীল রঙে আমার এলার্জি আছে। নীল শাড়ি পরেছিলেন তাই চোখ চুলকাচ্ছিল।  
-  চোখের ডাক্তার দেখান।  নইলে রাস্তায় পাবলিকের মাইর খেয়ে মরবেন।
-  গরীব মানুষ। টাকা নাই।
-  রাস্তার মোড়ে বসে পড়েন। ভাঙা থালার ব্যবস্থা করে দিব? 
-  সে কি! আপনার এই অভ্যাস আছে নাকি? ভাঙা থালাও আছে আপনার কাছে! 
-  উফ! আপনার মাথা ফাঁটাব। 
-   মাথা আছে নাকি আমার? 
-  কেন? মাথা কই গেল?
-  খেয়েছেন আপনি। 
-  ওমা, সে কি কথা! কখন খেলাম? 
-  সেই কবে!  কোন এক ফাল্গুনে। বান্ধবীদের সাথে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে বের হলেন যেদিন।
-  এতকিছু খেয়াল আপনার? 
-  খেয়াল করেই কি লাভ? রিক্সায় চাপাচাপি  করে তো আর আমার সাথে বসবেন না। 
-  লাভ একটা আছে বৈ কি,
-  কি লাভ?     
-  আমার বিয়ের দাওয়াত পাবেন। 
-  আপনার দাওয়াত লাগবে  না। আমাকে এমনিতেই আসতে হবে। 
-  ছ্যাচড়া নাকি? দাওয়াত ছাড়া আসবেন।
-  নিজের বিয়েতে আবার দাওয়াত লাগে নাকি? 
-  নিজের বিয়ে মানে? 
-  ওই তো দু’দিন পর আপনার ভদ্দর লোক   বয়ফ্রেন্ড পালাবে। তখন আমি ছাড়া আপনার গতি কি??
-  আহা! দিবাস্বপ্ন আপনার।   
-  স্বপ্ন না। 
-  কি তবে?
-  জ্যোতিষ শাস্ত্রে আমার বিশেষ দখল আছে।
-  তো আপনার জ্যোতিষ শাস্ত্র কি বলে? 
-  বলে যে, আপনার ছুঁচো প্রকৃতির বয়ফ্রেন্ড  এই রোমান্টিক আবহাওয়ায় আপনাকে রেখে অন্য কোথাও রোমাঞ্চ করছে। তাই আপনার মন খারাপ।   

  জানি না সে এতদূর থেকে এত বড় একটা  সত্য  কিভাবে  অনুভব করল।  তাই কোন এক দ্বিধা থেকে কি উত্তর  দিব বুঝতে পারছিলাম  না। হঠাৎ করে দু’চোখ জুড়ে জলোচ্ছ্বাস নামল,  মিনিট পাঁচেক মেসেজ সিন করে রেখে তারপর উত্তর দিলাম।

-  জ্যোতিষী সাহেব,  এ বিদ্যায় আপনার ভবিষ্যৎ অন্ধকার । অন্যদিকে নজর দিন। 
-  আপনার উওর দেবার মাঝখানের  সময়টুকুই বলে দিচ্ছে এ শাস্ত্রে আমার  ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। 
-  রাত অনেক হলো, বাজে না বকে ঘুমান এবার।
-  সুন্দরী কেউ  নক দিলে পর পর দু’রাত ঘুম আসে না।
-  তাহলে  বসে বসে আকাশের তাঁরা গুনুন। আমি গেলাম। 
-  বয়ফ্রেন্ড ডাকছে বুঝি?
-  হুম, 
-  আবার যেদিন বয়ফ্রেন্ড ভুলবে, ফিরে আসবেন সেই প্রত্যাশা রইল। গুড নাইট। 
- গুড নাইট।

Tuesday, September 1, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৯

বৃহস্পতিবার  ৫ই ভাদ্র ১৪২৭, ২০ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা


আজাদ হোসেন

না গল্প না কবিতা


মুঠোফোনটা হতে নিয়ে, পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে টিপ টিপ করে হাঁটছি।

এই পথটা আমার খুব চেনা।

রাস্তার দু’পাশে বুনের ঝাড়, ফির ফির করে বাতাস বইছে।

বাতাস লেগে কাঁচা ধানের পাতায় যেন সাগরের ঢেউ উঠেছে।

ভাবছি দু’লাইন লিখি,

হঠাৎ চোখ পড়লো সামনের দিকে।

মনে হচ্ছে আকাশ থেকে এক নীল পরী নেমে এসেছে।

কপালে লাল টিপ, কানে ঝুমকো, দুটি ঠোঁট গোলাপি রঙে আঁকা।

এক গুচ্ছ চুল এসে বারে বারে তার গাল ছুঁয়ে দিচ্ছে।

আরো একটু সামনে এগিয়ে যেতেই আমি থমকে দাঁড়ালাম,

কে ওটা?

চোখে চোখ পড়তেই আমার বুকের ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠে।

নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করে বসলাম।

কেমন আছো মিথিলা?

কেমন কাটছে তোমার নতুন ভুবন?

আমায় কি ভুলে গেছো?

থমকে গেলাম, এতো দিন পরে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারছি না।

উত্তর দেয়ার সময় দিচ্ছি না।

চুপ করে আছো কেনো কিছু বলবে না?

কথা বলার ইচ্ছে নেই এমন করে উত্তর দিলো ভালো আছি।

তার উত্তর শুনে মনের ভেতর যেন আর ঝড় বইছে। তবে কি মিথিলা ভালো নেই?

কোথা থেকে আসছো?

শশুর বাড়ি।

মিথিলা : তুমি কেমন আছো?

এই আছি।

বিয়ে করেছো?

মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছে ফিরে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম বিয়ে?

না সেটা আর হবে না।

মিথিলা : কেনো?

তুমি এ কথা আমায় বলছো?

কেনো তুমি সব ভুলে গেছো?

তুমি যে দিন আমার জীবন থেকে চলে গেছো দিন থেকেই আমার সব ইচ্ছে মরে গেছে।

আর যেনো কথা বলার ইচ্ছে নেই

থাকো আমি যায় বলেই পাশ কাটিয়ে এক ধাপ দু’ধাপ করে এগিয়ে গেলো।

মিথিলা আমাদের কি আর দেখা হবে না?

সামনে হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দিলো না।

উত্তর শুনে আমি বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। ধীরে ধীরে আড়ালে চলে গেল। আমি আমার মনটাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না মিথিলা আর কোনো দিন ফিরবে না।


সাঈদুর রহমান লিটন

সময় বড়ই নিষ্ঠুর মুসাফির


কার কথায় কি আসে যায়?

সময় থেমে নেই, সময় এক ভয়ংকর মুসাফির,

কারো আদর, ভালবাসায় কিংবা রক্তচক্ষু

থামাতে পারেনা।

মাঝে মাঝে দুই একটা ঘটনা ঘটায়,

বিবেক নাড়িয়ে দিয়ে, চোখের নোনা জলে প্লাবন ঘটিয়ে দেয় দৌড়।

সময় সত্যি এক নিষ্ঠুর মুসাফির,

ভাষার জন্য রক্ত নিল, স্বাধীনতার জন্য

রক্ত গঙ্গায় ভাসলাম, আজ স্বাধীনতা রক্ষায় রক্ত নিচ্ছে,

আজ সিনহারা মরছে, সাধারণ মানুষ তো

দুধে ভাত।

সময় ঠিকই চলে যাচ্ছে, থামবার প্রয়োজন বোধ করছে না।


রাহুল বর্মন

মায়ার বাঁধন...


রাত একটু গভীর হলে,

আমার সূক্ষ্ম সত্ত্বাটা স্থূল দেহ ছেড়ে

বাইরে বেরিয়ে আসে।

এক ঝলক ঘুমন্ত আমি’টাকে দেখে,

তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়,

জীবন-মৃত্যুর চরম অনিশ্চয়তায় ভাসে।।

চারিদিকে কি সুন্দর ঠাণ্ডা হাওয়া,

কখনও বা পূর্ণিমার স্নিগ্ধ চাদর,

কখনও বা মেঘলা আকাশ, ভীষণ বৃষ্টি।

সূ² সত্ত¡াটাকে মৃত্যু টানতে থাকে,

জীবনের সুতো আলগা হতে থাকে,

সেই সময়ই কুয়াশার মতো এক ঝাঁক মায়ার সৃষ্টি।।


কতগুলো দায়িত্ববোধ, কত কত স্বপ্ন...

কয়েকটা প্রিয় মানুষ.. মায়ার বাঁধন দৃঢ় হতে থাকে।

ওই পাড়ের আকর্ষণ আলগা হয়, জীবন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।

সূক্ষ্ম সত্ত্বাটা স্থূল দেহটার কাছে ফিরে আসে,

মা-বাবার ঘুমন্ত, ক্লান্ত মুখটা দেখি,

আমি ছেড়ে যেতে পারি না, ফিরে যাই জীবন প্রান্তরে।।


অণুগল্প

নিয়াজ মাহমুদ

একজন রিদম


এক নাগাড়ে তৃতীয়বারের মতো ঝাঁঝালো প্রকম্পনে পরিচিত রিংটোন শুনতে পেয়ে শিশিরাচ্ছন্ন দূর্বা ঘাসের মতো অনিয়মিত ভেজা শরীর নিয়েই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এল রিদম। বেলা দ্বিপ্রহরের। অসময়ের এই ক্লান্তি লগ্নে ঝিম ধরা শরীরে হঠাৎ তাজা শকুনের নবাগত প্রাণ চাঞ্চল্য গোত্তা খেতেই মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠল বন্ধু আরিফের নাম। পাড়ায় আয়োজিত বাৎসরিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আজ বিকেলে, এটা নিয়ে কথা বলতেই ফোন দিয়েছিল আরিফ। দীর্ঘ এক মাস কঠোর অনুশীলন আর ধারাবাহিক সফলতায় সেমি-ফাইনাল জিতে ফাইনালে উঠে রিদমের দল। রিদম তার দলের দলনেতা। কে জানতো, ভিনদেশী এক আণুবীক্ষণিক আগন্তুকের কাছে পরাস্ত হয়ে এভাবে নির্মল ব্যাধি জর্জরিত ভঙ্গিমায় আত্মগোপন করবে সবাই নিজেকে! রিদম স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয় আরিফকে, ফাইনাল ম্যাচটা আপাতত হচ্ছে না এবার। ঠিক যেমন গতকাল এক দাপ্তরিক ঘোষণায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অনির্দিষ্টকাল বিবেচনায় বন্ধের প্রজ্ঞাপন মিলেছিল খানিকটা অপ্রস্তুত মেজাজে। শুধু কি তাই? কয়েকদিন হলো পারভিন খালাকে বাসায় কাজ করতে আসাও বারণ করে দিয়েছে রিদমের বাবা। রহমান চাচার ভোরে সাইকেলের টুং-টাং শব্দে দুধ দিতে আসাও বন্ধ। হয়তো দুদিন পরে খবরের কাগজ দিতে আসা ছেলেটাও মলিন চেহারায় বিদায় নিবে রিদমের বাবার কড়া বাক্যে। বিশ্বজুড়ে মহামারির এই জাঁহাবাজ পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্ভ‚ত দুশ্চিন্তা গ্রাহ্য করাও শক্ত ব্যাপার এখন রিদমের।


পড়াশোনার চলমান নিথর যুদ্ধেও অবহেলার ছোপ পড়েছে প্রকৃতির অদ্ভুত নিয়মে। চাইলেও ইচ্ছেঘুড়ি যে হাওয়ার টানে গোত্তা খায়, সে হাওয়ায় রং খেলা দুরহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির আগাগোড়া মেনে চলেও এ অভ্যস্ত শহরকে বশ করতে না পেরে এক সীমাহীন প্রচ্ছন্ন বিক্ষোভের প্রাদুর্ভাব ধরা দেয় রিদমের মনে। তাক বোঝাই করা বইয়ের সংগ্রহশালা হতে একটি দুটি করে অপ্রয়োজনীয় বইগুলোও যেন রিদমের এখন সময়ের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। বিকেলে মাস্ক পরে বাড়ির ছাদ ভ্রমণই এখন সারাদিনের মূখ্য সাফল্য রিদমের। দম বন্ধ হয়ে আসলে পরিহিত মাস্কের এক ফিতা থাকে রিদমের পাঁচ আঙুলের অনামিকার ভাঁজে, আরেক ফিতা দোল খায় গোধূলির মুক্ত বাতাসে! 


ধারাবাহিক গল্প

সাবিত্রী শিল্ড ফুটবল ফাইনাল

বিপুল রায় 


তিন

হাফ টাইমের হুইসেল ফুঁকলেন রেফারি। খেলোয়াররা মাঠে বসে পড়ল। এই সময় আমার কাছে একটু অন্য রকম। আমি চলে গেলাম জামদা দলের কাছে। খেলোয়াড়দের গা দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। মুখে নুন লাগানো একখন্ড পাতি লেবু। কোনো খেলোয়াড় মাথা নামিয়ে আছে, কেউ আবার আকাশ দেখছে। বালাজীকে লক্ষ্য করলাম। বলিষ্ঠ ছ’ফুটের যুবক। গালে চাপ দাড়ি। ডান হাতে স্টিলের মোটা বালা। কপালের বাঁ দিকে গভীর শুকনো ক্ষত। মাথার চুল এক করে ঝুটি বাঁধা। সেই ক্ষতে হাত ঘষতে ঘষতে ফিসফিস করছে, চুতিয়া, “মুঝে নেহি পাতা। মেঁ পয়সা লোংগে অউর উসি উসুল করুঙ্গা। এ এক ছোটি টিপ হ্যায়।”

বালাজীর শরীর ঘামে ভেসে যাচ্ছে। চোখ দিয়ে আগুন বেরুচ্ছে। 

দ্বিতীয় অর্দ্ধের খেলা শুরু হল। আমি জায়গা পাল্টালাম। আগের জায়গাটা অপয়া ছিল। আমি উল্টো দিকে এসে দাঁড়ালাম। খুব কাছেই মৃগাঙ্ক স্যার। আনন্দে স্যারের চোখ নাচছে। হুইসেল । খেলা শুরু। চিৎকার, খিস্তি, সিটি , ঠেলাঠেলি। শিক্ষক ছাত্র সব একাকার। কোথা থেকে উড়ো মেঘ এসে টিপ টিপ বৃষ্টি ছড়িয়ে দিচ্ছে। গোল, গোল। কানাই তিনজনকে কাটিয়ে গোল দিয়েছে। হাততালি, গলা ফাটা গগনভেদী চিৎকার। মাঠ ঢুকে ছাতা ফুটানো, ডিগবাজি। এই সুযোগে দৌড়ে মাঠে ঢুকে আমি বালাজির গায়ে একবার হাত বুলিয়ে এলাম। কী শক্ত শরীর, কী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুখ! খেলা এক এক। সমান সমান। এবার টান টান উত্তেজনা। এতক্ষণ ঝিমিয়ে থাকার পর জামদা পুরোপুরি চার্জড। ঘড়ির কাঁটা ঘুরে যাচ্ছে। পিছন ফিরে মৃগাঙ্ক স্যারকে দেখলাম। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে দুর্যোধন যেন ।  

একটু অন্যমনস্ক হয়েছিলাম। গোল গোল চিৎকারে সম্বিত ফিরে পেলাম। বালাজী অসম্ভবকে সম্ভব করে মাঝ মাঠ থেকে পাঁচজনকে কাটিয়ে গোল করেছে। নিমাইভুটি মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে, বিপিনকুঁজো কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

মনের মধ্যে একটা তীব্র অভিমান ছিল মৃগাঙ্ক স্যারের বিরুদ্ধে। স্যার আমাকে ক্লাসে ইচ্ছা করেই অনেকবার ছোট করেছেন। তার একটা মোক্ষম জবাব দেওয়ার সুযোগ আমার সামনে। দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়লাম। জীবনে প্রথম ডিগবাজি খেলাম। নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। মৃগাঙ্ক যে আমাকে বিশ্রী ভঙ্গিমা করে দেখিয়েছিল। সেটা কী ফেরত দেব? 

দিতে পারলাম না। লাইন্সম্যান আমাকে হাত টেনে মাঠের বাইরে করে দিল। সেই সাবিত্রী শিল্ড ফাইনাল ট্রাই ব্রেকার পর্যন্ত গড়িয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জামদাই শিল্ড পেয়েছিল। বালাজীর সেই মরণপণ খেলা আজো মনে রেখেছি। আজ কত পেশাদারীত্বের কথা শুনি। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান তো আছেই আরো বিদেশী কত লিগের খেলা। মান্চেষ্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল , বার্সেলোনা, ..। কত দামী খেলোয়াড় রোলান্ডো, মেসি, এমবাপ্পে... 


মাত্র তিন বছর আগে গিয়েছিলাম সেই শহরে। মাঠটার পাশেই ছিলাম সরকারী বাংলোয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে মাঠে গেলাম। সব শেষ। পাঁচিল ভেঙে গেছে। টিকিট কাটার ঘরটা নামমাত্র অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। সেখানে দেয়ালে রাজনৈতিক স্লোগান। মাঠে গরু, ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। নিঝুম, নিস্তব্ধ, নিরালা চারপাশ। যেন কোনো শ্মশানে দাঁড়িয়ে আছি। একদিন এই মাঠেই না কত রেষারেষি, লড়াই, ঘাত -প্রতিঘাত দেখেছি। বালাজীর মতন পেশাদারী খেলোয়াড়কে সবাই ভুলে গেছে। আমি কিন্তু মনে রেখেছি। তার জন্যই না মৃগাঙ্ক স্যারকে ...।

খবর পেলাম স্যার মারা গেছেন। তবে শেষ দিন পর্যন্ত খেলা খেলা করে গেছেন। এনারাই না আমাদের এত জীবন্ত করে রাখেন। (সমাপ্ত)

Monday, August 31, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৮

বুধবার  ৪ঠা ভাদ্র ১৪২৭, ১৯ই আগষ্ট ২০২০ 



কবিতা


কাজী শোয়েব শাবাব

ঘুড়ি সিরিজ ২


সুতো ছিঁড়ে গেছে।

গোত্তা খেয়ে নামছে নীল ঘুড়িটা। 

খসে পড়া টুকরো আকাশ ধরতে

মাঠ ভেঙে দৌড়ে চলেছে ছেলেটা।


সজল রানভী

সমসাময়িক প্রেম


গোলাপ গোলাপ প্রেমটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। তুমি বরং একটা সিগ্রেট, একটা দেশলাই দিতে পারো। রুমালে সেলাই করা ডাকনাম কিংবা চিঠির ভাঁজে লিখে দেয়া একবিঘা চুমু ফ্রিজে তুলে রেখে তুমি বরং জ্যোৎস্না বিলাতে পারো হোয়াটসঅ্যাপে, মেসেঞ্জারে।

তুমি বরং আফিম নাভিতে প্রার্থনা করতে পারো গন্দমের লোভ লালসা।

ঐসব বাড়ির সামনে দিয়ে বেলা অবেলা হেঁটে যাওয়া, টিফিন পিরিয়ডে চোখাচোখি, অংকের খাতায় বাপ দাদার পৈতৃক ছন্দ বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। তুমি বরং মদের দোকানে একটা বিকেল গিলতে পারো গোগ্রাসে। একটা সন্ধ্যা গিলতে পারো কফি কাপে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বান্ধবীর বাসায় দেখা করা ব্যাকডেটেড। তুমি বরং আবাসিক হোটেলে লুফে নিতে পারো দেড়শ মিনিটের মেগাপিক্সেল প্রেম।।


অনার্য নাঈম

কমা


একটি ‘কমা’, তোমার প্রস্থানের জন্য যথেষ্ট নয়;

প্রস্থানের জন্য চাই দুঃখভারাক্রান্ত দাড়ি।

একটি ‘সেমিকোলন’ আমাকে আরোকিছু

বলার জন্য যথেষ্ট নয়; দিতে পারো

লাজুক অভিব্যক্তির আড়ালে লুকিয়ে রাখা

বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক।


আমি হ্যাঁ বললে, তুমি

সরল বাক্যের মতো নিঃশব্দে

প্রচলিত ভাবের দরজা দিয়ে

ঢুকে পড়বে তোমার নিজস্ব ঘরে।

দুটি বন্ধনীর মধ্যে ‘বাকিটা জীবন’।


অপার অরণ্য

শাড়ি সম্ভাব্য সৌজন্যতা এবং খুন


হঠাৎ হাওয়ায় দীর্ঘতম রোদ নামলে মার শাড়ির সাথে

বনশ্রী মিলিয়ে দেখা যায়

কোনটার রঙ থকথকে সুরমাÑ তো কোনটার নাম

কামরাঙা শোক। কোনটা যেন অশ্রæহীন দুর্ভিক্ষপীড়িত

গোলাপÑ কোনটা আবার বিদগ্ধ সুখ।

স্নানের পর যে শাড়িটা দিয়ে মা স্তন প্যাঁচায়

মাঝেমাঝে লক্ষ্য করি সিঁদুরমেঘে দুর্বোধ্য আঁকা

সপুষ্পক রেণু দিয়ে ঢেকে আছে পাতার কোলাজ

সবকটা ঋতুর যৌবন মার শাড়ির আঁচলে সুনিপুণ

নকশায় ঢেউ তুলে আনে

সেখানে চাষ হয় কোলাব্যাং আর মৌরিফুলের ঘ্রাণ

বিশ্রæত চাঁদ নামলে আয়নায় মা দাঁড়ায় নি কোনদিনÑ

কখনো কোন ভ্রমরজাত গান গাঁথা হয়নি চিকন চুলের

বেণীতে সে-কথাও জানি

তবু সযতেœ যে শাড়িটা আজও শরীর সাজায় তার নাম অলকানন্দা সংসার।

গায়ে জড়ালেই ঘরময় মুহুর্মুহু ধ্বনি বিষাদের নিসর্গ

শ্লোক হয়ে বাজে। যেন তৃণবৎ ঝর্ণাধারা পাহাড়তলি

নেমে যায় ক্ষতবিক্ষত সুরঙ্গের কোল।

চিত্রাহরিণ শাড়িটা আজ অব্দি মা বুকের সিন্ধুকে

তালাবন্ধ রেখেছেনÑ খোলা যায়নি তার রহস্যপাখি

ফুঁপিয়ে বলেনÑ দেখিস, আমি স্ট্রোক করে মরব।


মার পোষা শাড়িটার নাম দুঃখ। আহত জ্যোৎস্না ও

অমাবস্যার মাঝামাঝি রং। মার মনখারাপ হলে

আলনা ছেড়ে কোমরের কুঁচিতে ঝুলে ধূলোধূলো

একটা শাড়ি। পৃথিবীতে অমনি উড়ালপঙ্খি ডানায়

কোন পাখি আর উড়ে না

বনস্পতি অন্ধকার চিকচিক করে জ্বলে। পৃথিবীর

আযান ও শঙ্খের নৈবেদ্য মার পায় লুটোপুটি খায়

তখন প্রলয় এসে ফিরে যায় পানশালার চৌকাঠ।


আর আমি; জানালায় দেখি দাউদাউ নিস্তব্ধ রাত

আঁচলের কারুকর্মখচিত দিগন্তের গহŸর চোখ থেকে

মুছে গেছেÑ চামড়া থেকে চিৎকার এবং ঋতু

শাড়িজমিন আকাশে ছিট ছিট নীলোৎপল তারা

হৃৎপিÐের মৃত্যু দেখেছি বহুকোটি বছর

এবার পূণ্য লেখা হোক,

যমদূতকে স্বর্গে পাঠালাম


সোয়েব মাহমুদ

তবুও ওরা এরোপ্লেন দ্যাখতে আসে!


#ইস্তাম্বুল

২০০৯.


নিদারুণ মধ্যবিত্ততায় জিতে যায় পতাকা, হেরে যায় মুদ্রাস্ফীতি! 


#ওয়েষ্টব্যাংক, বেথেলহাম

২০১১


এই বাংলাদেশ পূনর্বাসিত পতিতার ভাগাড়, অথচ বেশ্যালয় ঈশ্বরের খুব অ- প্রিয়!


#ঢাকা

২০০২


বেশ্যা আর পতিতার মাঝে,  জরায়ু আর যোণীর মধ্যকার সুক্ষতম ফারাক বিদ্যমান। বিদ্যমান এখানে সব পতিতা, বেশ্যালয় মনে করে ভুলে যেখানে চলে এসেছি আমি।


#জাতিসংঘ আঞ্চলিক সমন্বয় অফিস

বার্লিন।

২০০৮


রবীন্দ্র - তলস্তয়- সেক্সপিয়ার সব শালাক ভন্ড সাহিত্য ব্যবসায়ী আমরা তার বোকা ক্রেতা। সব শালাই বগলে বাইবেল নিয়ে উস্কে দিয়ে ধর্মান্ধতা সাজে অবতার সাম্যবাদের - অসাম্প্রদায়িকতার।


#কলকাতা

২০০৫


যে শহর ঘুমাতে দেয় না আমায়, জাগিয়ে রাখে কোমল বৃন্তে হাটিয়ে নিয়ে যায় উদ্দাম ক্রেমলিন সুবহে সাদিকের শরীরে। যেখানে একটা ফুল একটা নাভী ফুল ফোটে ক্যাসিনোর ফোর অফ আ কাইন্ড উচ্ছাসে।


#আইয়ানাপা

২০০৯.


ধর্মের ভেতর ঈশ্বর নয় শিশ্ন জেগে থাকে।


#তিবলিশ

২০১২


কবিতাঃ বিশ্বভ্রমণকালীন সময়ের হাতঘড়িটা


ধারাবাহিক গল্প

সাবিত্রী শিল্ড ফুটবল ফাইনাল

বিপুল রায় 


দুই

বিকাল চারটের সময় মাঠে গিয়ে পোঁছলাম। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হবে। টিকিটের মূল্য বারো বছর পর্যন্ত এক সিকি আর তার উপর হলে আধুলি। আমার পকেটে দুটো সিকি পয়সা। বয়স আমার পনের। সুতরাং আধুলি দিয়েই টিকিট কাটতে হবে। আমি চালাকি করলাম। সিকি গলিয়ে দিয়ে টিকিট নিলাম। অন্য সিকিটা ঘুগনি খাওয়ার জন্য বাঁচালাম।  

ব্যস, যা হবার তাই। মেন গেটে আটকে গেলাম। আমার জানা অন্য ছোট গেট ছিল। সেই ছোট গেটে গেলাম। গম্ভীর মুখে টিকিট ধরালাম। টিকিট চেকার আমাকে দেখে মৃদু হেসে বলল, মেন গেট ছেড়ে এদিকে এলি কেন? আটকে দিয়েছে তাই না? 

আমি কাতর স্বরে বললাম, কাকু আর যে পয়সা নেই। তাহলে পাঁচিল ডিঙিয়ে ঢুকব কি? 

কি ভেবে লোকটা আমাকে মাঠে ঢুকতে দিল। খেলা শুরু হব হব। দৌড়ে গিয়ে দর্শকদের ঠেলে চুনের ধারে দাঁড়ালাম। জুলাই মাস। আকাশে এই মুহুর্তে তেমন মেঘ নেই। ঘন্টা দুয়েক আগে এক পশলা ভারী বৃষ্টি হয়ে গেছে। ফুরফুরে হাওয়া। তবে বয়স্কদের সবার হাতে ছাতা। মাঠ থেকে মেঠো গন্ধ ভেসে আসছে। আমার উল্টোদিকে ছাউনি টাঙানো হয়েছে। শোভা পাচ্ছে বিশাল মাপের সাবিত্রী শিল্ড। শহরের গণ্যমান্যরা চেয়ারে বসে আছে। 

হাততালি, সিটি, ছাতা নাচানো, উৎসাহিত করার মতন কিছু চোখা শব্দ। 

বাজুরডোবা মাঠে নামল। নিমাইভুটি, বিপিনখুড়ো, দেবুষাঁড়, ইমরানবেঁটে- এমন কত কি নামে তাদের ডাকছে দর্শকরা।  

আবার হাততালি, সিটি, চোখা শব্দ বাণ। জামদা নামছে। কানাইছুট, নির্মলবুড়ো, সুধীরচোর, জব্বরধারী, বালাজী।

আমি টানা হাততালি দিলাম। আজ জামদার দিন, আজ কানাই-এর দৌড়, বালাজীর ভেলকি। আজ মৃগাঙ্ক স্যারকে যোগ্য জবাব। রেফারি হুইসেল ফুঁকলেন খেলা শুরুর। চিৎকার, হুল্লোড়, মানুষের কুটিল চিন্তা, বিদ্বেষ, হিংসা, লালসা, প্রেম, ভালবাসা, সহমর্মিতা এক সাথে আছড়ে পড়ল ফুটবলারদের পায়ে, হাতে, মাথায়। খুব তাড়াতাড়ি বাজুরডোবা জামদার গোলে বল ঢুকিয়ে দিল। গোলটা দিল সমর। ছেলেটা যে জামদার গোলে হেড দিয়ে বল ঢুকিয়ে দেবে আচমকা তা কেউ ভাবতে পারেনি। বাজুরডোবার সমর্থকদের সেকি উল্লাস। গগনভেদী চিৎকার। এতক্ষণ চোখে পড়েনি এবার দেখলাম মৃগাঙ্ক স্যারকে। দৌড়ে তিনি মাঠের ভিতর ঢুকে পড়লেন। তারপর ছাতা ফুটিয়ে আর বন্ধ করে কি কদাকার ভঙ্গিতে কোমর দুলিয়ে নাচলেন! পরিস্কার শুনলাম মৃগাঙ্ক স্যার বললেন, শালা কেমন ঢুকিয়ে দিলাম? বাজুরডোবার তোরা... পারবি না। 

একি বলছেন স্যার? স্যারের মুখে এমন ভাষা! 

অনেকেই উদ্বেলিত, পুলকিত... কিন্তু আমার লক্ষ্য স্যারের দিকে। স্যার কি আমাকে দেখিয়ে ছাতা ফোটাচ্ছেন ?

খেলা জমে গেল। বাজুরডোবা যেন অপ্রতিরোধ্য। বালাজী তেমন সুবিধা করতে পারছে না। কখনো নিচে নেমে যাচ্ছে আবার কখনো উপরে উঠছে। পায়ে বল পেলেই কেউ না কেউ ছিনিয়ে নিচ্ছে। জামদার সমর্থকরা বলাবলি করছে, এ কাকে নিয়ে এল বে?... মারাতে আর খেলোয়াড় পেলো না?... খেলোয়াড়। 

হঠাৎ বালাজী বল পায়ে নিয়েই বিদ্যুৎ গতিতে বাজুরডোবার গোলের দিকে ছুটতে শুরু করল। চিৎকারে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু একি! নিমাইভুঁটি বিশ্রী ফাউল করল। মুখ থুবড়ে পড়ল বালাজি। (চলবে...)

Friday, August 28, 2020

শিল্প সাহিত্য ১২৭

শুক্রবার  ৬ই ভাদ্র ১৪২৭, ২১ই আগষ্ট ২০২০



কবিতা


মোহাম্মদ আবদুর রহমান

স্বপ্ন


আমার সকল স্বপ্ন গুলিকে তালা বন্দি রেখেছি

আর শুধু তোমার সব স্বপ্ন গুলিকে আপন করে নিয়েছি।

তাই তোমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য 

সংসারের উপত্যকায় চলেছি দুরন্ত গতিতে।

অনেক অচেনা ঝড় আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চাই

সকল চেনা সুখ গুলি আসতে আসতে লুকিয়ে গেছে জানি না কোথায়?

দুঃখ গুলি নাচতে নাচতে ঘিরে ফেলেছে হৃদয় ভুবন

তবুও কোন দিন বুঝতে দিনি 

তবে তুমি শুধু আমার ব্যর্থতা গুলি খুঁজে পাও।

ব্যর্থতার জন্য যদিও আমি দায়ী নয়

ঠিকই করেছি পরিশ্রম 

কিন্তু সফলতা আমাকে করেছে তাচ্ছিল।

তোমাকে ভাবা উচিৎ

আমার সকল স্বপ্ন গুলি কঙ্কালময় হয়ে গেছে যত্নের অভাবে

তারা রোজ রাতে আমার পা ধরে কাঁদে

একটু খাদ্যের জন্য ।

কিন্তু তোমার দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে শুনি তাদের কথা আর চোখ দিয়ে ঝরে ব্যার্থতার জল।

জানিনা কবে তা তুমি বুঝবে

সেই দিনের অপেক্ষায় কেটে যায় রাত।


এম,এম বাহাউদ্দীন

লুকিয়ে গেছি


মনের বনে পোকা লেগে খেয়ে গেছে সব ফুলের পাপড়ি,

তাই রিক্ত হাতে তোমার কাছে আর আসতে পারিনা।

লজ্জায় মুখ লুকিয়েছি ডাস্টবিনে ফেলা ফুলের মত।

তোমার আমার দেখা হওয়া ফেসবুকের রাস্তা ছেড়েছি,

বদলে ফেলেছি চলার পথ, যাতে দেখা না হয় কখনও।

এই জুকারবার্গীয় লেনে কত জনই আসে, চলে যায়,

দেখেছি আমি এক কালের স্বাক্ষী, ভাবতাম কেন?

আজ নিজের পথ বদলে নিয়ে বুঝেছি, আমিই ভুল,

ক্ষমা করো তুমি, আর খুজোনা আমায় এ পথে।

হাঁটতে হাঁটতে দেখা হবে আবার নতুন কোন বন্ধুর সাথে,

আলাপ চারিতায় হয়তো দু’একদিন প্রসঙ্গ হবো আমি,

তারপর ইতিহাসের মত করে মনের সেল্ফে ফেলে রেখো

ধুলো পড়ে চাঁপা পড়ে যাবো আমি একদিন এই পথে।

তবু ফুল হাতে আর ভুল করে দাঁড়াবোনা পথের বাকে।


তন্ময় পালধী

সম্পর্কের চাবি


সম্পর্কের সুরবাহারে সবকটি তান

মিলেমিশে গেলে

তার জাদুতে মুগ্ধতার আবহমানতা

সেই প্রবাহিত শব্দস্রোতে 

একে একে জড়ো হয় হাসি কান্না মিলন বিরহ।


ধরে নাও সম্পর্ক একটা তালা

তোমার হাতের চাবিগোছা দিয়ে

পরীক্ষার মঞ্চে অবতীর্ণ হলে

মাত্রাজ্ঞানে খুলে যেতে পারে দিগন্ত।

আর আনাড়ির মত

একবগ্গা হলে

দুঃখের রাত গভীরতর হতে থাকে।


এখন চাবি তোমার

যদি তুমি ষড়জ নিষাদের তফাত না বোঝ

কোমল শুদ্ধে খাপছাড়া হয়ে

হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ভেঙে ফেলতে চাও

তালা হয়ত খুলে যেতে পারে

কিন্তু সে আঘাতের প্রাবল্যে

সপ্তক বেসুরো হয়ে যাবে

সম্পর্কগুলোও ক্লিশে হয়ে যাবে।


মজনু মিয়া 

ক্ষণিকের পথ চলা 


মানচিত্রে বিশ্বের দেশের নাম আঁকা সীমা থাকে 

অফুরন্ত সময়ের কোনো সীমারেখা নাই 

কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে কত নাম সুনাম। 

জলছবি হয়ে চোখের কোণে আটকে আছে 

নোনা জলছাপ। 

রুপান্তর হয় যুগ যুগান্তরের বদল হয় চলার পথ, 

ক্ষণিকের পথ চলা জীবন আয়ু দিয়ে সীমাবদ্ধ।

তবুও চলছে মানুষ পৃথিবীর পথে ঘাটে 

কারো শেষ হয় আবার কারো হয় শুরু।


আশিক আকবর

নতুন ধারার কবিতা


এক

একজন ডিসির ফেইস বুক প্রোফাইল দেখলাম

অশ্লীল লাগলো

বমি আসলো

এতো এতো উপচে পড়া মাংস আর পোষাকের উৎসব

ছিঃ

মনের গরীব কামলাটির জন্য আমার মায়া লাগলো 


দুই

একজন কলেজের পিনসিপাল

আমাদের ঘন্টা তিনেক সময় খাইলো

গেজাইলো

খাওয়াইলো চা সিঙ্গারা

আমরা তার কাছে গেছিলাম

অতিথি কবিদের এক বেলা ভাতের জোগারে

তিনি আমাদের বিদায়ের কালে ব্যাগ ভরে বিবমিষা দিলেন

যা এখন স্মৃতির উজ্জল ছাই

এখানে আমরা শ্রেণী অবস্থান 

ও ক্ষমতার লেজুর কে সুচিহ্নিত দেখে ছিলাম


তিন 

ডাকসাইটে বুদ্ধিজীবির বাসায় গেছিলাম

তার আঙ্গিনাতেই স্থাপিত তার ভাস্কর মূর্তি

ড্রয়িংয়ে তিনি এলেন

বললেন

তুমি যেন কে? আবার এলে ফোন করে এসো।

ততোক্ষণে ফ্রিজের শিরা লাগা মিষ্টি এসে গেছে। 

তিনি বললেন, খাও।

এখন আমার বাথরুমে যাবার সময়।

ঐখানে আজকাল আমার অনেক বেশী টাইম লাগে।


মো.আরিফুল হাসান

আরেকটি জলকনার বুকে


আরেকটি জলকনার বুকে আশ্রয় নিই

ডুবাই কান্না

আমার চিন্তারা সব একঘরে হয়ে আছে

যেনো তামাকের ঘুম

সব কিছু ব্যতিব্যাস্ত

সবকিছু হতাশা সারাৎসার।


ধারাবাহিক গল্প

সাবিত্রী শিল্ড ফুটবল ফাইনাল

বিপুল রায় 


এক

“যাবি তো? আমি কিন্তু ভাত খেয়েই বেরিয়ে পড়ব।” শঙ্কর দূরমনস্ক হয়ে বলল।

আজ ফাইনাল। সাবিত্রী শিল্ডের শেষ খেলা। জামদা ভার্সেস বাছুরডোবা। এর আগে কোনো খেলা মিস করিনি। আমি এবার জামদার সমর্থক। টিমটা গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেছে। ওদের কানাই মান্ডি তো অনবদ্য। এত সুন্দর পায়ের কাজ, পাসিং, হেডিং। তাছাড়া ইমরান কম যায় না। ইমরানকে পরাস্ত করে গোল দেওয়া খুব দুরূহ। ছেলেটা বলকে চুম্বকের মতন বুকে ধরে নেয়। 

ইস্কুলে মন বসল না। সহপাঠীদের মুখে আজকের ফাইনাল ম্যাচ। যারা বাজুরডোবায় থাকে তারা বাজুরডোবার সমর্থক আর যারা জামদায় থাকে তারা জামদার সমর্থক। আমি বাজুরডোবা বা জামদায় কোথাও থাকি না। কিন্তু জামদার দলটাকে কেন জানি না ভালো লাগে। জামদার কমলা রঙের জার্সি, নীল সর্টস, সবুজ মোজা দারুণ চোখ টানে। তুলনায় বাজুরডোবার হলুদ আর সবুজ জার্সি, কালো সর্টস, নীল মোজা ম্যারমেরে লাগে। তাছাড়া আমাদের ভ‚গোলের টিচার মৃগাঙ্ক স্যার বাছুরডোবার সমর্থক। মানুষটা খুব বদ। হিংসুটে। আমাকে ইচ্ছে করেই হেয় করে। কঠিন পড়া বেছে বেছে আমাকেই জিজ্ঞেস করে। স্যার আমার মতন ফুটবল মাঠে কিন্তু নিয়মিত। বাজুরডোবার ম্যাচ হলে তো কথাই নেই। অবাক হয়ে আমি মৃগাঙ্ক স্যারকে বাজুরডোবা গোল দিলেই দু’হাত আকাশে তুলে মাঠে ঢুকে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে নাচতে দেখেছি। 

আজ মৃগাঙ্ক স্যারের ক্লাস আছে। কিছুটা দেরী করেই তিনি এলেন ক্লাসে। আমি দ্বিতীয় বেঞ্চে বাম ধারে। তিনি এসে তাচ্ছিল্যের সাথে বিড়বিড় করলেন, কমলেশদা বলে কিনা জামদা আজ বাজুরডোবাকে তিন শুন্য গোলে হারাবে? এত সোজা! খেলার কি বোঝে কমলেশদা? কে একজন জামশেদপুর থেকে বালাজী না খালাজী আসবে, সেই নাকি খেলার ভোল পাল্টে দেবে! এত সোজা? আমাদের নিমাই, বিপিন, দেবু , জব্বর কি ছেড়ে দেবে নাকি? বাজুরডোবা আজ বরং চার শুন্য গোলে জিতবে। 

বুঝলাম আজ টিচারদের কমন রুমে সাবিত্রী শিল্ড ফাইনাল নিয়েই তর্ক বিতর্ক চলছে। শহরের ফুটবল প্রেমিদের মুখে আজ শুধুই ফাইনাল ম্যাচ। 

হঠাৎ মৃগাঙ্ক স্যার আমাকে বললেন, এই লম্বু, তোকে তো মাঠে দেখি। পড়াশুনায় অষ্টরম্ভা এদিকে খেলার মাঠে খুব দর্পাতে দেখি। তুই কোন দল? জামদা নাকি রে? 

মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ, স্যার। দলটা অল্প বয়সী খেলোয়াড় নিয়ে তৈরী। বোঝাপড়াটা খুব ভালো। 

আবার শুনছি বালাজী বলে জামশেদপুর থেকে কোন একজন পাঞ্জাবী খেলোয়াড় হায়ার করে নিয়ে আসছে। জামদার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না বাজুরডোবা। 

মুখটা লাল হয়ে গেল মৃগাঙ্ক স্যারের। কিছুক্ষণ আমার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। কমন রুমে তর্কে তিনি অঙ্কের টিচার কমলেশ স্যারের কাছে হারতে পারেন, কিন্তু ছাত্রের কাছে? 

তিনি তার সমস্ত রাগ আমার উপর ঝাড়লেন। 

কর্কশ স্বরে বিদ্রুপ করে বললেন, খুব খেলা বুঝিস। হায়ার প্লেয়ার একা কি করবে রে? নিমাইকে টপকে যেতে পারবে? নিমাই বাজুরডোবার চিনের পাঁচিল - বুঝলি। জামদা আজ নাকানি - চোবানি খাবে দেখে  রাখিস। ইমরান গোল দেবে। 

তারপর তিনি আমাকে প্রশ্ন করে বসলেন, বল তো মিশরকে নীল নদের দান কে বলেছিলেন? 

বাজুরডোবা জামদা সাবিত্রী কাপ ফাইনালের সাথে নীল নদীর সম্পর্ক ঠিক বুঝলাম না। মৃগাঙ্ক স্যার ভ‚গোল নেন। আর আজ মিশর চ্যাপ্টার নিয়েই পড়া। ভাগ্যিস উত্তরটা আমার জানা ছিল। গড়গড় করে মুখস্ত বললাম, নীলনদকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতা গড়ে ওঠেছে বলে ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস মিশরকে নীলনদের দান বলে অভিহিত করেছেন।

ক্লাস পিন ড্রপ সাইসেন্স। স্যার মুঠি পাকাচ্ছেন। আমাকে বাগে পেয়েও ধরতে পারলেন না। (চলবে...)

সর্বশেষ

শিল্প সাহিত্য ১৩৩

সোমবার   ৯ই ভাদ্র ১৪২৭ , ২৪ই আগষ্ট ২০২০   কবিতা বিনয় কর্মকার ছবির গল্প   ভাতের ছবি আঁকতেই, ছিটকে পড়ে কালির দোয়াত! লালরঙা স্রোত, সাঁতারকাট...

সর্বাধিক